আরব ইসলামিক স্কলারদের চোখে মাওলানা মওদুদী
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:৩৪:০৩ সকাল
ভারত উপমহাদেশের ইসলামী আন্দোলনের একজন পুরোধা ছিলেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী। বাংলাদেশসহ বিশ্বে ইসলামী আন্দোলনে তার অবদান বাংলাদেশের কওমী ঘরানার আলেমগণসহ এপৃথিবীর অধিকাংশ আলেমই স্বীকার করেন।
আরব দেশের আলেমগণ তাকে কিভাবে মুল্যায়ন করে থাকেন তা একটু যাচাই করে দেখি। এজন্য আজকে কিছুটা যাচাই বাছাই করার পর সেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
আসুন! দেখে নিই- আরব ইসলামিক স্কলারগণ তাকে কিভাবে মুল্যায়ণ করেছেন?
ডক্টর আল্লামা ইউসুফ আল কারাদাবী:-
কাতারের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার বিশ্ব ওলামা পরিষদের প্রধান আল্লামা ইউসুফ আল কারাদাবী লিখেছেন-
"১৩৯৯ হিজরীর যিলকদ মাসের শুরুতে ২৩ শে সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ ইং বিশ্ব একজন অসাধারণ ইসলামিক চিন্তাবিদকে হারাল। যার মত লোক মুসলিম জাতির ইতিহাসে খুব কমই আসে। তিনি হচ্ছেন ভারত উপমহাদেশের জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা , পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের জন্য আলোকবর্তিকা, লক্ষ্য লক্ষ্য মুসলিম যুবক ও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যার লেখনী থেকে উপকৃত হয়েছে বহু ভাষায় অনুদিত হওয়া প্রচুর গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচয়িতা- উসতাজ আবুল আ'লা মওদুদী"।
বিস্তারিত তথ্যের জন্যঃ
http://www.qaradawi.net/life/86/4906.html
ডক্টর আল্লামা ইউসুফ আল কারাদাবী আরো বলেন:-
আর তিনি ছিলেন চিন্তাবিদ, বাস্তবে সামাজ চিকিৎসক, তার দুরদৃষ্টি দিয়ে তিনি উম্মতের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষন করতেন। শুধুমাত্র তাদের সমস্যাই দেখতেন না; বরং বিষয়ের গভীরে ডুব দিয়ে তার কারণও অনুসন্ধান করতেন। রোগ দেখে শুধু ঔষধই দিতেন না বরং, রোগের জীবানুও তুলে ফেলতেন।
আল্লামা ইউসুফ আল কারাদাবী মাওলানা মওদুদীর চিন্তাধারার ব্যাপারে তিনটি পয়েন্ট নির্দিষ্ট করেছেন। তাহল-
১. তিনি ইসলামকে পূর্ণাংগ হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন।
২. যুগের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখেছেন।
৩. বাতিলের (বুদ্ধিবৃত্তিক) মোকাবেলা করার দিকে মনোনিবেশ করেছেন।
মাওলানা মওদুদীর যেসব বিষয় আল্লামা ইউসুফ আল কারাদাবীকে আশ্চর্যান্বিত করেছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-ভারসাম্যপূর্ণ সিরিয়াল মেইনটেইন তথা অগ্রাধিকারমূলক বিষয়ে তার অসাধারণ জ্ঞান(কোন কাজটা কোন কাজের আগে করা দরকার)। অনেক দায়ী ব্যক্তিই এক্ষেত্রে উদাসীন থাকেন।
তিনি বলেন: আধুনিক জাহিলিয়্যাতকে দূরীভুত করা, মানুষকে ইসলাম ও ইবাদাতের দিকে পূর্ণাংগ ভাবে নিয়ে আসা, চিন্তাবিদ কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সহ সকলকে মানুষের শাসন থেকে আল্লাহ তায়ালার শাসনের দিকে নিয়ে আসা, উন্নত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ইসলামি আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করা ছিল তার অবদান। যা পশ্চিমা চিন্তাধারাকে তথা তাদের চিন্তাধারা অনুযায়ী নাগরিক,অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে প্রত্যাখ্যান করবে। আর পরিবর্তন কিংবা বিপ্লব গঠনে আলাদা সিস্টেম দাড় করাবে। তার সমস্ত লেখনীতে এটাই ফুটে উঠেছে। এর মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে তার দর্শন ও মতবাদ প্রকাশ পেয়েছে। আর তার জামায়াত তথা জামায়াতে ইসলামী গঠিত হয়েছে উপরোক্ত দাওয়াত ও বৈপ্লবিক মতবাদ বর্ণনা ও প্রচার করার জন্য।
সুত্র: http://www.saaid.net/aldawah/326.htm
শহীদ সাইয়্যেদ কুতুবঃ-
সাইয়্যেদ কুতুব সর্বদা তাকে শ্রেষ্ঠ মুসলিম হিসেবে উল্লেখ করতে চাইতেন।
শাইখ ওমর তিলমেসানীঃ-
ওমর তিলমেসানী মাওলানা মওদুদী ও হাসানুল বান্নার মাঝে তুলনা করতে গিয়ে বলেছেন: তারা উভয়েই ছিলেন এ প্রজন্মের অনন্য ইমাম তথা নেতা বা পথপ্রদর্শক। আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতি ও সিস্টেম ছিল এমন যে, তারা সর্বদা কুরআন ও হাদীস থেকেই মেটেরিয়াল গ্রহণ করতেন। কোন ফিলোসোফারের কাছ থেকে তা গ্রহণ করতেন না।
যারা হাসানুল বান্নার উপর আসা নির্যাতন দেখেছেন ঠিক তেমনি মাওলানা মওদুদীর উপরও একই ধরণের অত্যাচার নির্যাতন এসেছে।
আমি মাওলানা মওদুদীর মত এমন কোন ব্যক্তিকে জানিনা নতুন একটা মুসলিম প্রজন্মের উপর যার রয়েছে চিন্তা ও কর্মের দিক থেকে অত্যন্ত প্রভাব। তার দাওয়াতি কাজের ভিত্তি ছিল ইলমের উপর এবং তা ছিল রাজনৈতিক আহ্বানের চেয়েও অত্যন্ত গভীর ও শক্তিশালী। তার লেখা যুবকদের আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধারে অত্যন্ত কার্যকর ভুমিকা রেখেছে। তারা (যুবকেরা) বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে, ইসলাম সমস্ত যুগের সাথেই তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
ডক্টর রজব বায়্যুমী:-
মার্কসবাদ সম্বন্ধে উস্তাদ মওদুদীর অবস্থান উল্লেখ করার মত। তার লেখা সমস্ত ইসলামি লেখকের কাছে অস্ত্র হিসেবে ধরা দিয়েছে। কারণ, মওদুদীর জ্ঞান ব্যাপক (বিশ্বকোষের মত) তার বুদ্ধিমত্তাও অত্যন্ত চমৎকার। তার চিন্তাশক্তি অনেক কিছু উদ্ভাবন করতে পারে, তার গভীর দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে প্রাচ্যের প্রতিটি প্রান্তের বৈপ্লবিক আন্দোলনের দিকে।
.........কোন মুসলিম পরিবারের ব্যক্তিগত পাঠাগার তথা লাইব্রেরী তার বই থেকে শূন্য হবে এটা উচিত নয়। কেননা, তার বই মুসলিমকে এমন কিছু উপহার দেবে যা অন্য কোথাও সে পাবে না।
শাইখ আব্দুল্লাহ আকীলঃ-
আর আল্লামা মওদুদী ছিলেন আধুনিক যুগের ইসলামিক স্কলার, চিন্তাবিদ,দায়ীদের মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ তায়ালা তাকে হিকমত, দূরদৃষ্টি, গভীর জ্ঞান, জ্ঞানলাভে ধৈর্যধারণ, বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদি যোগ্যতা দান করেছেন।......... আর এটাই ছিল হাসানুল বান্নার কাজকর্মের অনুসৃত পদ্ধতি।
যে সমস্ত আরব উলামারা তাদের আলোচনা ও লেখনীতে আল্লামা আবুল আ'লা মওদুদীর কথার রেফারেন্স টেনে থাকেন, তাদের দু-একজনের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। যেমন-
শায়খ মুহাম্মদ হাসসানঃ-
খাদিজা (রাঃ) এর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে এক স্থানে বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা আবুল আ'লা মওদুদীর উপর রহম করুন। তিনি বলেছেন: যদি দাম্পত্য জীবনে দয়া ও হৃদ্যতা না থাকে তাহলে দাম্পত্য জীবন মৃত লাশের মত হয়ে যায়, দাফন না করার কারণে তা থেকে সর্বদা দুর্গন্ধ বের হতেই থাকে।
সুত্রঃ http://www.islamway.com/?iw_s=Lesson&iw_a=written_lesson&lesson_id=1755
শাইখ মুহাম্মদ আল হাসান ওয়ালাদ আদ দুদোঃ-
ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে প্রয়োজনে বিদেশী ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তিনি বলেছেন:
আবুল আ'লা মওদুদীকে (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল একজন মুসলিম দায়ীর ভিতরে কী মৌলিক যোগ্যতা থাকা লাগবে? তিনি উত্তরে বলেছিলেন: তোমরা কি অনেক শর্ত শুনতে চাও নাকি একটা শর্ত শুনতে চাও? তারা বললেন: একটি শর্ত শুনতে চাই। তিনি বললেন: তাকে অবশ্যই ইংরেজী ভাষায় যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ......
সুত্রঃ http://www.islamway.com/?fatwa_id=13304&iw_a=view&iw_s=Fatawa
আরবদের লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধও বইতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে মহিলাদের অংশগ্রহণ সম্বন্ধে মাওলানা মওদুদীর বইয়ের রেফারেন্স নেয়া হয়েছে।
সুত্রঃ http://akhawat.islamway.com/forum/lofiversion/index.php?t63893.html
এছাড়া আল আযহার সহ বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাওলানা মওদুদীর বিভিন্ন বই ও লেখা থেকে রেফারেন্স গ্রহণ করা হয় এবং তাকে অনেক বড় মাপের ইসলামিক স্কলার বলে গণ্য করা হয়।আরবীতে অনুদিত মাওলানা মওদুদীর কিছু বইয়ের লিঙ্ক নিম্নে উপস্থাপন করা হল।
http://www.3gypt.com/vb/thread82554.html
ইসলামের জন্য বিশাল অবদান রাখার জন্য একবার সৌদী সরকার তাকে "বাদশাহ ফয়সাল" পুরস্কারে ভুষিত করে।
কিছু দেওবন্দ উলামাদের চোখে আল্লামা মওদুদীঃ-
মাওলানা মওদুদীই একমাত্র ব্যক্তি,তাঁর আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিভা,লেখনিশক্তি,দ্বীনের সুস্পষ্ট ধারণা,অতুলনীয় নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা শুধু পাকিস্তানেই নয়,বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বেই বিরল ।অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তিনি সে সাহিত্য ভান্ডার সৃষ্টি করেছেন তার স্বীকৃতি দিতে গিয়ে বলতে হয়,
এ সাহিত্য ভাণ্ডারের তুলনায় সপ্তরাজ্যও তুচ্ছ।
আমার মনে হয়,তাঁর প্রণীত সাহিত্যের এক একটি পৃষ্ঠা এক একটি রত্নের সমতুল্য ।
মাওলানা কারী মুহাম্মদ তৈয়ব (রহ),প্রিন্সিপ্যাল দারুল উলুম দেওবন্দ-এর বাণী:-
আমি মাওলানা মওদূদীকে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের একজন মহান ইসলামী নেতা হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁর কথাকে শ্রদ্ধা করি।
উল্লেখ্য,২৪ বছরের যুবক মওদূদীর পক্ষে বিখ্যাত আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ "আল জিহাদ ফিল ইসলাম"রচনা ও তাঁর ইলমি গবেষণার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তৈয়ব সাহেব তার ব্যক্তগত পাঠাগারটিকে মওদুদীর গবেষণার জন্য ওপেন করে দিয়ছিলেন।
আজ এই পর্যন্ত, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে আল্লামা মওদুদীর বইগুলো পড়ার অনুরোধ রইলো। আসসালামু আলাইকুম............সবাইকে আল্লাহ ভালো রাখুন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আললাহ তাদের দিলকে পরসারিত করে দিন।
তবে এখনকার সময়ে যারা সমালোচনা করেন, তারা না জেনে ও উনার লেখা না পড়েই করে, যা পুরাই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত!
মন্তব্য করতে লগইন করুন