নবীদের নিষ্পাপতা নিয়ে মাওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগের তাত্ত্বিক পর্যালোচনাঃ-
লিখেছেন লিখেছেন বিভীষিকা ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:০৯:৫৯ রাত
بِسۡمِ ٱللهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
نحمدهُ ونستعينهُ ونستغفرهُ ونؤمن به ونتوكل عليه و نعوذبالله من شرور انفسنا ومن سيءات اعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلله فلا هادي له ونشهد ان لا الٰه الا الله وحده لاشريك له و نشهد انّ سيد نا و حبيبنا و حبيب ربنا وطبيب قلوبنا داولٰنا ومولٰنا محمدا عبده ورسوله. امّا بعد! نان خير الحديث كتاب الله وخير الهدي هدي محمّد صلي الله عليه وسلم وشرالامور محدثاتها وكل محدثت بدعة وكل بدعة ضلالة وكل ضلالة في النار.
انبياء عِصْمَة নবীদের নিষ্পাপতা
যে সমস্ত মাসআলার উপর ভিত্তি করে মাওলানা মওদূদী (রাহঃ) কে কাফির, পথভ্রষ্ট, খারিজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে সে গুলোর মধ্যে انبياء عِصْمَة বা নবীদের নিষ্পাপতা অন্যতম। মাওলানা মওদূদী (রাহ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “তাফহীমাত” দ্বিতীয় খন্ডের ৪৩ নং পৃষ্ঠায় হযরত দাউদ (আঃ) এর কিচ্ছা বর্ণনা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে এ সম্পর্কে লিখেনঃ
“এবং এটি একটি সূক্ষ্ম রহস্য যে, আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করে প্রত্যেক নবী থেকে কোন না কোন সময় তার হেফাজত উঠিয়ে দিয়ে দু-একটি ভুল-ত্রুটি হতে দিয়েছেন, যাতে মানুষ নবীদেরকে খোদা না বুঝে এবং জেনে নেয় যে, এরা খোদা নন বরং মানুষ।” মাওলানার উল্লিখিত কথা গুলোই হচ্ছে তাকে এ জঘন্য ও মারাত্মক আখ্যায় আখ্যায়িত করার মূল কারন।
সন্মানিত পাঠক বৃন্দ, আসুন আমরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নির্ভরযোগ্য কিতাব এবং নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কিরামদের মতের সাথে মাওলানার কথাগুলো মিলিয়ে দেখি সত্যিই কি তিনি এ ধরণের বিষেশণে বিশেষিত হওয়ার যোগ্য?
আল্লামা তাফতাজানীর অভিমতঃ
আল্লামা সা’দুদ্দীন মাসউদ তাফতাজানী (রাহঃ) তার লিখিত “শারহে আকা’ঈদে নাসাফী”তে (যে কিতাবটি এ উপমহাদেশের সরকারী, আধাসরকারী এবং কওমী মাদ্রাসাগুলোতে পড়ানো হয়) বলেনঃ
اِن الانبياء معصومون عن الكذب خصوصا فيما يتعلق بامر الشرائع وتبليغ الاحكام وارشاد الامه – امّا عمادا ………. فبا لا جماع واما سهوا فعند الاكثرين – وفى عصمتهم عن سائرالذنوب تفصيل وهوانهم معصومون عن الكدرقبل الوحى وبعد لا بالا جماع وكغاعف تعمد الكباىرعند الجمهور خلا فالاحشوية وانما الغلاف فى امتنا عه بذليل السمع او (؟؟؟؟) وامّا سهوا فجوزه الاكثرون – امّا الصغائر فيجوز عمدا عند الجمهور خلا فاللجبائ واتباعه ويجوج سهوا بالا تغاق الاما يدل على الخسة كسرقة لقمة والتطفيف بحبة لٰكن المحقين اشترطوا اف ينبهوا عليه فينتهوا عنه – هٰذا كله بعد الوحى واما قبله فلا دليل علىٰ امتناع صدور الكبيرة – (شرح العقائدللنسفى)
নবীগন মিথ্যা হতে পবিত্র। বিশেষ করে শরীয়ত ও রিসালত প্রচারের সহিত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির মধ্যে তারা মিথ্যা হতে সম্পূর্ন পবিত্র। ইচ্ছাকৃত মিথ্যা হতে পবিত্র হওয়ার ব্যপারে সকলেই একমত,তবে ভুলবশতঃ অনিচ্ছাকৃত মিথ্যা হতে পবিত্র হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে।
অধিকাংশ আলেমদের মতে তারা এই প্রকার মিথ্যা হতেও পবিত্র। অপরাপর যাবতীয় গুনাহ হতে নবীগণ পবিত্র হওয়া সম্পর্কে আলোচনা আছে। উহা এই যে, তাঁরা কুফরী হতে সম্পূর্ন পবিত্র। অহি আসার পূর্বে হউক কিংবা পরে। এতে কারও মতভেদ নেই। অনুরুপভাবে তারা জমহুর বা অধিকাংশ উলামাদের নিকট ইচ্ছাকৃত কবীরা গুণাহ হতেও পবিত্র।
হাশাবিয়া সম্প্রদায় এর বিপরিত মত পোষণ করে। তবে মতভেদ রয়েছে এ কথার মধ্যে যে,কবিরা গুনাহ হতে পবিত্র থাকা ও বিরত থাকা কি বর্ণিত দলীলের দ্বারা প্রমানিত, না বিবেকের দ্বারা। আর ভুলবশতঃ কবীরা গুনাহ হওয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ উলামাদের মত হল যে উহা জায়েয ও সম্ভব আছে।ছগীরা গুনাহ জমহুর উলামাদের মতে নবীগন হতে ইচ্ছাকৃতও হতে পারে।
কিন্তু জুব্বাই ও তাহার অনুসারীদের অভিমত এর বিপরিত। আর অনিচ্ছাকৃত ভুলের দ্বারা ছগীরা গুনাহ হওয়া সকলের ঐক্যমতে জায়েয আছে, কিন্তু যা ঘৃণিত স্বভাবের পরিচয় দেয় ঐ প্রকারের ছগীরা জায়েয নয়। যেমন- এক লোক যা চুরি করা ও ওজনে কম দেওয়া এ ব্যাপারে মুহাক্কে’ক বা নির্ভর যোগ্য আলেমগণ শর্ত করেছেন যে, তাদেরকে এর উপর যেন সতর্ক করা হয়। যাতে তারা বিরত থাকতে পারেন। এ সব মতভেদ অহি নাযিল হওয়ার পরের অবস্থায়। কিন্তু অহি নাযিল হওয়ার পূর্বে নবীগণ হতে কবীরা গুনাহ নিষিদ্ধ ও অসম্ভব হওয়ার কোন দলীল নেই। ( দেখুন শারহে আকা’ঈদে নাসাফী, ইছমতে আম্বিয়া আলোচনা।)
আল্লামা তাফতাজানীর উল্লিখিত আলোচনা থেকে যে কথাগুলো স্পষ্ট ভাবে জানা যায় সে গুলো হচ্ছেঃ-
১। নবীরা সর্বাবস্থায় কুফরী হতে পবিত্র।
২। জমহুর উলামাদের মতে তারা ইচ্ছাকৃত কবীরা গুনাহ হতেও পবিত্র। কিন্তু ভুলবশতঃ কবীরা গুনাহ নবীদের থেকে হতে পারে।
৩। জমহুর উলামাদের মতে নবীদের থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
৪। সকল উলামাদের ঐক্যমতে নবীদের থেকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযীর অভিমতঃ-
ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী তার লিখিত “ইছামানুল আম্বিয়া” নামক কিতাবে বলেনঃ-
والذى نقول: ان الانبياء عليهم الصلوٰة والسلام معصومون في زمان النبوة عن الكبائر واصغائر بالعمد امّا علٰى سبيل السهو فهوجائز -
এবং আমরা যা বলি তা হচ্ছে যে, আম্বিয়ায়ে কিরাম নবুয়াত প্রাপ্তির সময় থেকে ইচ্ছকৃত কবীরা এবং ছগীরা গুণাহ থেকে পবিত্র। কিন্তু ভুল বশতঃ কবীরা ও ছগীরা গুণাহ হতে পারে। (দেখুন পৃষ্ঠা নং-২৮)।
হযরত আদম (আঃ) এর ইছমত সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী উল্লেখ করেনঃ-
وانما قلنا انه كان عاصيا لقوله تعاليٰ (وعصيٰ اٰدمُ ربّه فخويٰ ) وانما قلنا ان العاصي صا حب الكبيرة لوجهين: (احدهما) ان النص يقتضي كونه متعا …. وهو قولهٔ تعاليٰ (ومن يعصي اللهَ ورسولهٔ وتعدّ حدودهٔ يدخله نارًَا خالدًَا فيها) ولا معني لصاحب الكبيره الامب فعلًَ فعلاًَ يعاقب عليه – (وثانيهما) ان العصيان اسم زمّ فلا يطلق الا عليٰ صاحب الكبيره
এবং আমরা বলি যে, তিনি আছী (অবাধ্য) ছিলেন। কারন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, “আদম (আঃ)তার রবের অবাধ্য হন অতঃপর পথ ভ্রষ্ট হন।“ আমরা আ’ছীকে দু’কারণে কবীরা গুনাহগার বলি।
১। কোরআন শরীফের আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আদম (আঃ) শাস্তি প্রাপ্ত ছিলেন কারন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্যতা করবে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে তাকে দোজখে প্রবেশ করাবেন এবং ওখানে সে সদা সেখানে থাকবে। আর কবীরা গুনাহগার ঐ ব্যক্তিকেই বলা হয় যে, এমন কাজ করে, যে কাজের উপর তাকে শাস্তি দেওয়া যায়।
২। ইছয়ান (অবাধ্যতা) এমন একটি খারাপ কাজের নাম যা কবীরা গুনাহগার ছাড়া অন্য কারও উপর প্রয়োগ করা হয়না। (দেখুন পৃষ্ঠা নং-৩৬)।
আল্লামা আলুসীর অভিমতঃ-
আল্লামা আলুসী (রাহ) তার বিখ্যাত তাফসীরে রুহুল মা’আনীতে লিখেনঃ-
فان الصغائرالفيرا المشهره يا لخسه يحوزصدورها منهم محمدًَا بعدالبعثه عندالحمهور عليٰ مادكره العلامه التفتاراني – الثاني في شرح العقائد ويجوز صدورها سهوًَابا لاتفاق
জমহুর (অধিকাংশ) উলামাদের মতানুসারে নবুওয়াত প্রাপ্তির পরও নবীদের থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে। কিন্তু যা ঘৃণিত স্বভাবের পরিচয় দেয় ঐ ধরণের ছগীরা গুনাহ হতে পারেনা। আর অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা সকলের ঐক্যমতে হতে পারে। আল্লামা তাফতাজানী ও তার শারহে আকাঈ’দে নাসাফীতে এভাবে উল্লেখ করেছেন। (দেখুন পৃষ্ঠা নং ২৭৪, খন্ড নং-১৬)
আল্লামা আলুসী কোরআন শরীফের আয়াত فعصيٰ اٰدمُ ربّه فغويٰ এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেনঃ-
طاهر الايٰة يدل عليٰ ان ما وقح منه كان من الكبائر وهو المفهوم من كلام الامام –
বাহ্যিক ভাবে আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আদম (আঃ) থেকে যা সংগঠিত হয়েছিল তা কবীরা গুনাহ ছিল। ইমাম ফখরুদ্দিন রাযীর কথা থেকেও এমনটিই বুঝা যায়। (দেখুন পৃষ্ঠা নং ২৭৪, খন্ড নং-১৬)।
হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর (রঃ) অভিমতঃ-
মুফতি মোহাম্মদ শফী (রাহ) তার লিখিত “মাজালিসে হাকীমুল উম্মত” নামক কিতাবে থানবী সাহেবের অভিমত উল্লেখ করেনঃ-
"আল্লাহ তায়ালা নবীদেরকে তার নৈকট্যের যে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন এবং তাদেরকে সমস্ত গুনাহ থেকে পবিত্র রেখেছেন, যেমন এটা তার রহমত ও নিয়ামত, এমনি ভাবে কোন কোন সময় নবীদের থেকে কোন কোন ব্যপারে ভুল ত্রুটি হওয়ার যে ঘটনা সমুহ কোরআন শরীফের মধ্যে উল্লিখিত হয়েছে এগুলোও প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তায়ালার হেকমত ও রহমত। এর মধ্যে এক বড় ফায়দা এটাও যে, মানুষের যেন নবীদের খোলা হোয়ার সন্দেহ না হয়। ভুলত্রুটি হওয়া এবং এর উপর আল্লাহতায়ালার সতর্ক করা এটাই পরিষ্কার করে দেয় যে, নবীরাও আল্লাহ তায়ালার বান্দাহ"। (দেখুন পৃষ্ঠা নং- ৬৫)
মুহতারাম পাঠক বৃন্দঃ হযরত থানবী (রাহ) এর কথা গুলো মাওলানা মওদূদী (রাহ) এর কথা গুলোর সাথে মিলিয়ে দেখুন শব্দ ও অর্থগত দিক দিয়ে প্রায় মিলে যাচ্ছে। আমরা উল্লিখিত আলোচনা থেকে যে কথা গুলো স্পষ্টতঃ জানতে পারলাম সেগুলো হচ্ছেঃ -
১। আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’য়াতের সকল উলামায়ে কিরাম এ কথার উপর একমত যে, নবীদের থেকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
২। জমহুর উলামাদের মতানুসারে নবীদের থেকে ইচ্ছকৃতভাবেও ছগীরা গুনাহ হতে পারে।
৩। জমহুর উলামাদের মতানুসারে নবীদের থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে কবীরা গুনাহ হতে পারে।
মাওলানা মওদূদী (রাহ) কিন্তু গুনাহ শব্দ ব্যবহার করেন নাই। তিনি বলেছেন নবীদের থেকে “লগজিশ” বা ভুল ত্রুটি হতে পারে। এতটুকু বলার কারনেই তাকে কাফির, গুমরাহ, খারেজী, ক’দিয়ানী আরও কত কিছু বলা হয়েছে। কবি কি সুন্দর বলেছেনঃ “আমরা একটু আঃ শব্দ করলেই তা হয়ে যায় বদনামের কারন। আর তারা হত্যা করলেও এর কোন আলোচনা হয় না”।
মাওলানা মওদূদী (রাহ) এর কথাগুলোর উপর মাওলানা হোসাইন আহমদ মদনী (রাহ) এর সমালোচনা ও তার জবাবঃ
মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (রাহ) মাওলানা মওদূদী (রাহ) এর কথাগুলোর উপর সমালোচনা করতে গিয়ে তার লিখিত “মওদূদী দস্তুর” নামক কিতাবে লিখেনঃ
“এখন বলুন উপরোল্লিখিত আ’কীদা (যা তাফহীমাতে উল্লিখিত আছে) যা প্রত্যেক নবী সম্পর্কে, যাদের মধ্যে জনাব রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও আছেন, কতটুকু ইসলামের মূলনীতি ও আ’কীদার সাথে সামঞ্জস্যশীল? যাতে প্রত্যেক নবী থেকে ইছমত এবং হেফাজত উঠিয়ে নেওয়া এবং ইচ্ছে করে ভুল ত্রুটি করানো স্বীকার করা হয়েছে। এমতাবস্থায় কোন নবীই সত্যের মাপকাঠি থাকতে পারেন না। এবং কোন নবীর উপর সর্বদা ভরসাও করা যায় না। যে হুকুমই হোকনা কেন এতে এ সন্দেহ থাকবে যে, হয়ত এটা ইছমত ও হেফাজত উঠিয়ে নেওয়ার সময়ের। এখন বলুন এ মতভেদ মৌলিক না আংশিক এবং বলুন জামায়াতে ইসলামী এবং উহার প্রতিষ্ঠাতা মুসলমান কিনা?”
মাদানী (রাহ) এর সমালোচনা থেকে তিনটি কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
১। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করে তার হেফাজত উঠিয়ে প্রত্যেক নবী থেকে ভুলত্রুটি হতে দিয়েছেন, এটা ইসলামী আ’কীদার বিরোধী।
২। এমতাবস্থায় কোন নবীই সত্যের মাপকাঠি হতে পারেন না এবং তাদের উপর কোন সময়ই ভরসা করা যায় না। কেননা তাদের প্রত্যেক হুকুমেই সন্দেহ থাকবে যে, হয়ত এটা হেফাজত উঠিয়ে নেওয়ার সময়ের।
৩। মাওলানা মওদূদী ও জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা মুসলমান নন।
হযরত মাদানী সাহেবের কথাগুলো কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না, কারনঃ-
১। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়া’তের সকল উলামায়ে কিরামের ঐক্যমত যে, ভুল বশতঃ নবীদের থেকে ছগীরা গুনাহ হতে পারে এবং জমহুর উলামাদের মতে ইচ্ছাকৃতভাবেও ছগীরা গুনাহ হতে পারে। এমতাবস্থায় যদি হেফাজত উঠানো না হয়, তবে বুঝা যাবে যে, একদিকে আল্লাহর হেফাজত আছে, আর অন্যদিকে নবীদের থেকে ভুল ত্রুটি তথা ছগীরা গুনাহ প্রকাশ পাচ্ছে। এটা কিন্তু অসম্ভব। কারন এতে পরোক্ষ ভাবে আল্লাহ তায়ালা হেফাজতের উপর পুর্ণ সক্ষম নন বলে প্রকাশ পায়। (নাউজুবিল্লাহ) অতএব মানতেই হবে যে, যখনই নবীদের থেকে কোন ত্রুটি বিচ্যুতি প্রকাশ পায় তখন আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করে তার হেফাজত উঠিয়ে তা করতে দেন।
২। মুহাক্কেক বা নির্ভরযোগ্য উলামাদের মতানুসারে যখনই নবীদের থেকে কোন "লগজীস" হয় তখনই তাদেরকে অবহিত করা হয়। যাতে তারা এ থেকে বিরত থাকেন। আল্লামা তাফতাজানী এ সম্পর্কে বলেছেনঃ-
لٰكن المحققين اشترطوا ان ينبهوا عليه
মুহাক্কে’ক উলামাগন শর্ত করেছেন যে, তাদেরকে এর উপর (লগজিশের) যেন সতর্ক করা হয়।
আল্লামা আলুসী বলেছেন-
لٰكن المحققين اشترطوا ان ينبهوا عليه فينتبهوا –
মুহাক্কে’ক উলামাগন শর্ত করেছেন, তাদেরকে যেন এর উপর অবগত করানো হয়। যাতে তারা এ থেকে বিরত থাকেন। (দেখুন রুহুল মা’আনী খন্ড নং-১৬ পৃষ্ঠা -২৭৪)।
সাদরুশশারিয়া বলেনঃ-
وهو فحل من الصغائر يفحله من ڠير قصد ولابد ان ينبه عليه توضيح))
"লগজিশ" ছগীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। যা ইচ্ছা ব্যতিরেকেই হয়ে থাকে। কিন্তু এটা অত্যাবশ্যকীয় যে, এর উপর যেন তাদেরকে অবগত করানো হয়।
আল্লামা সায়িদ সুলাইমান নদভী সাহেব বলেনঃ-
মানুষ হিসেবে তাদের থেকে ও ভুল ত্রুটি হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তার ওহীর দ্বারা এ সমস্ত ভুল ত্রুটিরও সংশোধন করে থাকেন। (দেখুন সিরতুন্নবী, খন্ড নং- ৪ পৃষ্ঠা নং-৭০)।
কোরআন শরীফে এর অনেক উদাহরণ আমরা দেখতে পাই।
১। তাবুকের যুদ্ধের সময় কিছু সংখ্যক মুনাফিক কৃত্রিম ওজর পেশ করে রাসুল করীম (সঃ) এর নিকট যুদ্ধে গমন হতে নিষ্কৃতি চেয়েছিল, রাসুল (সঃ) স্বীয় স্বভাবজাত নম্রতা-সহনশীলতার কারণে এরা মিথ্যা বাহানা করতেছে জেনেও তাদেরকে রুখছত দিয়ে দিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এটা পছন্দ করেন নাই এবং এরুপ নম্রতা সমীচীন নহে বলে সাথে সাথে ওহী দ্বারা সতর্ক করলেনঃ
عفا الله عنك لم أذنت لهم حتىٰ يتبيّن لك الذين صدقواْ وتعلم الكٰذبين
হে নবী, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। তুমি কেন এ লোকদের অনুমতি দিলে? যদি না দিতে তা হলে তোমার নিকট সুস্পষ্ট হত যে, কোন লোকেরা সত্যবাদী, আর মিথ্যেবাদীদেরকেও জানতে পারতে।
(সুরা-তাওবা, আয়াত নং-৪৩)।
২। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মুনাফিকের মৃত্যুর পর তার ছেলের অনুরোধে রাসুলে করীম (সঃ) ঐ মুনাফিকের জানাযার নামাজ পড়াতে উদ্যত হয়ে গেলেন। সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা ওহী দ্বারা তাকে সতর্ক করলেন এবং নামায পড়ানো থেকে বিরত রাখলেন।
ولا تصلِّ عليٰٓ أحد منهم مات ابدا ولا تقم عليٰ قبره – انهم كفرواْ
بالله ورسولهِ وماتواْ وهم فسقون (٨٤)
তাদের কোন লোক মরে গেলে তার জানাযা তুমি কখনই পড়বেনা তার কবরের পাশেও দাঁড়াবেনা। কেননা তারা আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে কুফরী করেছে। আর মরেছে তারা ফাসেক অবস্থায়।
(সুরা-তাওবা, আয়াত নং ৮৪)।
৩। রাসুল করীম (সঃ ) তার কোন স্ত্রীর মনস্তুস্টির জন্য মধু পান না করার কসম করেন। হালাল খাদ্য গ্রহণ না করার কসম করা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর জন্য শোভন নহে, তাই আল্লাহ তায়ালা তাকে ওহী দ্বারা অবগত করলেন।
ياآيّها النبىّ لم تحرِّم مآ أحلّ الله لك – تبتغى مرضات أزوٰجك – والله غفوررحيم (١)
হে নবী। আল্লাহ তায়ালা যা তোমার জন্য হালাল করেছেন তা তুমি কেন নিজের জন্য হারাম করলে। তুমি কি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাইতেছ? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা-তাহরীম, আয়াত নং-১)।
৪। হযরত নূহ (আঃ ) সেই ঐতিহাসিক তুফানের সময় তাঁর কাফের ছেলেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন করলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কাছে তা পছন্দনীয় হল না, তাই সাথে সাথে ওহী নাযেল করলেনঃ-
قال يا نوح انّه ليس من اهلك – انّه عمل غير صالح – فلا تسئلن ما ليس لك به علم – إنىّٓ أعظك أن تكون من الجٰهلين (٤٦)
আল্লাহ বলেন: হে নূহ! সে তোমার পরিবারভুক্ত নহে। সে অসৎ কর্ম পরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নাই, সে বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করনা। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি অজ্ঞদের অন্তরভুক্ত না হও। (সুরা-হূদ আয়াত নং- ৪৬)।
৫। হযরত মুসা (আঃ) যখন এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলেন তখন নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন – هذا من عمل الشيطان – এটা শয়তানের কান্ড।
এ ছাড়াও কোরআন শরীফে অনেক উদাহরণ রয়েছে। সুতরাং হযরত মদনী (রাহঃ) এর একথা ঠিক নয় যে, “এমতাবস্থায় কোন নবীই সত্যের মাপকাঠি হতে পারেন না এবং তাদের উপর কোন সময়ই ভরসা করা যায় না। কেননা তাদের প্রত্যেক হুকুমেই সন্দেহ থাকবে যে, হয়ত এটা হেফাজত উঠিয়ে নেওয়ার সময়ের”।
মাওলানা মওদূদী (রাহ) ইছমতে আম্বিয়া সম্পর্কে কোন কথা কোরআন হাদীস কিংবা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আ’কিদার খেলাফ বলেন নি। সুতরাং হযরত মাদানীর (রাহ) এর কথা অত্যন্ত মারাত্মক যে, জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা এবং মাওলানা মওদূদী (রাহ) মুসলমান নন। আমরা বলতে বাধ্য হব যে উপরোল্লিখিত তিনটি ব্যপারে মাদানী সাহেবের ইজতেহাদী ভুল হয়েছে।মাওলানা মওদূদী (রাহ) যথার্থই এক মর্দে মুমিন, এবং একথা বললে ভুল হবে না যে, এ বিংশ শতাব্দীর তিনি এক উজ্জল নক্ষত্র। সুতরাং এমন এক ব্যক্তির ব্যপারে “মুসলমান নন” শব্দটি ব্যবহার করা মুসলিম মিল্লাতের দুর্ভাগ্যই বলতে হয়।
সন্মানিত পাঠকবৃন্দঃ – হযরত হোসাইন আহমদ মদনী (রাহ) এর ফতোয়াটি যদি মেনে নেয়া যায়, তাহলে আল্লাম্মা তাফতাজানী, আল্লামা আলুসী, ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী, হাকীমুল উম্মাৎ মাওলানা আশরাফ আলী থানবী, এমন কি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়া’তের সমস্ত উলামায়ে কিরামদের ব্যাপারে আপনারা কি বলবেন?
কবি কি সুন্দর বলেছেনঃ “আমরা একটু আঃ শব্দ করলেই তা হয়ে যায় বদনামের কারন। আর তারা হত্যা করলেও এর কোন আলোচনা হয় না”।
Note: লেখাটি মাওলানা বশিরুজ্জামান লিখিত “সত্যের আলো” নামক বই থেকে নেয়া হয়েছে।পৃষ্ঠা ১৭-২৩ .
বিষয়: বিবিধ
২৯২১ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যেমন দরুন গত ৪ বছর আগে আমাদের দেশের মাইজ ভান্ড়ারী ভন্ড় রা জামাতের একটা অনুস্ঠানের একটা উপমাকে কেন্দ্র করে দেশে হৈ চৈ পেলে দিল।
রফিকুল ইসলাম খান নাকি মাওলানা নিজামি,সাঈদী সাহেব এদের কে নবীর সাথে তুলনা করেছেন।চাদপুরের আরেক ভন্ড় মামলা করে দিলেন মাওলানা নিজামি,সহ অনেকের বিরুদ্ধে ।
উপমা না বুঝে যা হবার তাই হয়েছে।মাওলানা মওদূদীর খ্যাতি যশ দেখে উপমহাদেশের কিছু আলেম রা মিথ্যা ফতোয়া দেওয়া শুরু করলেন।
শুধু না বুঝার কারনে এই বদনাম গাওয়া।
এখন এই টা তাদের অব্যাশে পরিনত হয়েছে।ছোট ছোট ছেলেদের প্রথম মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধে কথা শুনায় তার পরে ক্লাশ।
আমি নিজে ও প্রথম ঐ মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম।
ঐ এক রোখা স্বভাব আমাকে আচ করতে পারে নাই।
সিলেটের মাওলানা মনিরুজ্জামানের লিখিত একটি বই আছে (সত্যের সন্ধানে)এই বইতে মাওলানা মওদূদীর বিরুদ্ধ বাদিদের অনেক প্রশ্নের জওয়াব দেওয়া হয়েছে।
আপনার লেখাটি প্রিন্ট করে নিলাম।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আমাদের সবাই কে হেদায়েত নসিব করুন আমিন।
মাওলানা মওদুদি সাহেবের বই পড়েই সঠিক ইসলামকে জানতে পেরেছি । আল্লাহ তাঁহাকে জান্নাত দান করুন ।
যাজ্জাকাল্লাহ খায়ের
মন্তব্য করতে লগইন করুন