নেট জগতের ক্রমবিবর্তন এবং ইসলামিস্টদের উত্থান...

লিখেছেন লিখেছেন তরঙ্গ ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:২০:৩২ সন্ধ্যা

একটা সময় ছিল যখন ব্লগে নাস্তিক, আধা নাস্তিক এবং ধর্মনিরপেক্ষদের ব্যাপক আধিপত্য ছিল। এখানে নাস্তিক কোন গালি নয়, আদর্শিক পরিচয় মাত্র- যিনি বাহ্যিকভাবে নিজেকে স্রষ্টায় বিশ্বাসী নন বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অবশ্য অপ্রকাশ্যে স্রষ্টা সম্পর্কে তার মনের খবর তিনিই ভালো জানেন। আধা নাস্তিক বলতে যিনি মনে করেন, স্রষ্টা একজন সম্ভবত আছেন, তবে ঐ পর্যন্তই.. সৃষ্টি করেই তিনি ক্ষান্ত দিয়েছেন। বর্তমানে আদৌ জীবিত আছেন কিনা তা নিয়ে তারা ভাবতে আগ্রহী নন। আর ধর্ম নিরপেক্ষ হচ্ছেন তারা যারা স্রষ্টায় পূর্ণরূপে বিশ্বাসী। কিন্তু স্রষ্টাকে ইবাদতখানার বাহিরে আসার অধিকার দিতে নারাজ। স্রষ্টা স্রষ্টার জায়গায় থাকবেন, মানুষ ইবাদতগাহে গিয়ে তাকে সিজদা প্রণাম দিয়ে আসবে। পৃথিবীর ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ বাস্তবতায় স্রষ্টার নাক না গলানোই স্রষ্টার জন্য ভাল, মানুষের জন্যও ভালো- এই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষদের মোটামোটি আদর্শিক অবস্থান।

এনাদের ভীড়ে যারা স্রষ্টাকে বিশ্বাস করার পাশাপাশি জীবন জগতের সবক্ষেত্রেই স্রষ্টার দিক নিদের্শনা আছে বলে স্বীকার করে এবং সে অনুযায়ী পরিচালিত হতে ও পরিচালনা করতে আগ্রহী- তারা ছিল ব্লগে কোনঠাসা। কেউ একবার তাদের পরিচয় দিয়ে ফেললে তার আর রক্ষে ছিলনা, প্রথম খেতাব ছাগু। তারপর কাঁঠালপাতা, তারপর গদাম, তারপর আরো অনেক কিছু। এক যোগে ঘেরাও করে ভার্চুয়াল পাকড়াও। তারপরও সাইজ না হলে ব্যান।

সেই সমিকরণ এখন অনেক চেইঞ্জ হয়েছে। নেট জগত দাপিয়ে বেড়ানো নাস্তিকদের সংখ্যা এখন ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। আর ইসলামীস্টরা দিন দিন বেড়ে চলছে। নাস্তিকদে সংখ্যা বাড়ার পেছনে মৌলিক কারণ হচ্ছে তাদের রিক্রুটমেন্ট কম। নাস্কিকদের শেকড় হচ্ছে কমিউনিজম... কমিউনিজমের আদর্শটাই এমন যে এখানে প্রবেশ করলে স্বেচ্ছায় কি অনিচ্ছায় নাস্তিকতাকে বরণ করে নিতে হয়। বলাই বাহুল্য কমিউনিজম একসময় ছিল মেধাবী আর মননশীল ছাত্রদের জন্য অহংকার স্বরূপ। কিন্তু নব্বইতে কমিউনিজমের চূড়ান্ত পতনের পর, মেধাবীরা কমিউনিজম থেকে মুখ ঘোরালো। এখন যারা নাস্তিক, তারা কমিউনিজম থেমে যাওয়ার পরও যে আপনা আপনি কিছুক্ষণ চলে, সেই ধারায় আগত, এদের সংখ্যা কম, দিনকে দিন আরো কমে আসছে। তবে এদের প্রত্যেকে মেধায় অনন্য, অন্তত একশ ইসলামীস্টের বিপরীতে একজন নাস্তিক, আধা নাস্তিক বা ধর্মনিরপেক্ষ যথেষ্ট।

সমস্যা হচ্ছে, ইসলামীস্টদের মধ্যেও ধীরে ধীরে মেধাবী ব্লগার বা ইন্টারনেট এ্যাকটিভিস্ট বেড়িয়ে আসছে, এবং সে সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ওই নাস্তিক বা নাস্তিকপন্থীরাই মূলত এর পেছনে দায়ী। সরকারের দমন নিপিড়নে ইসলামীস্টদের প্রিন্ট মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়াতে এবং রাজপথে নামতে না পেরে তারা ইন্টারনেট মুখি হয়েছে। প্রথমে ছিল পাঠক, পরে রাজপথের স্লোগান ও বক্তৃতা দেয়ার বিকল্প হিসেবে বেছে নিল ইন্টারনেট।

বাস্তব ময়দানে নাস্তিকও ধর্মনিরপেক্ষরা সংখ্যায় সব সময়ই ছিল ইসলামীস্টদের চেয়ে কম, কিন্তু নেট জগতে নাস্তিকদের ধারে কাছে তারা ছিলনা। তারা ইন্টারনেট জগত সম্পর্কেই ছিল অজ্ঞ। কিন্তু সরকার পিটিয়ে তাদেরকে নেট জগতে পাঠিয়েছে। নেট জগতে ঢুুকে ব্লগে ঠাঁই নিলেও সেখানেও সরকার হামলা করলো। এরপর সব ঢুুকলো ফেসবুকে। প্রথমে বাশের কেল্লা জাতীয় পেইজের ছায়াতলে ছিল, কিন্তু সেখানেও সরকার খড়গহস্ত হওয়ায় এখন নিজেরাই লেখা শুরু করলো। অবাক করার মত হলেও সত্য, কিছু ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া ইসলামিস্টও এখন অত্যন্ত চমৎকার লিখে রীতিমত সেলিব্রিটি হয়েছে। এরা মেক্সিমামই জেল খেটে বেড়িয়ে ভয়ডর খুইয়ে বেপরোয়া হওয়ায় তেজস্বী লেখক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

ইন্টারনেট জগতের এই ক্রমবিবর্তনের ধারায় নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষদের দীর্ঘ দিনের একক আধিপত্য প্রায় শেষ পর্যায়ে। মেধা বিবেচনায় নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষরা এখনও সেরা স্বীকার করতেই হবে, কিন্তু তাদের মধ্যে নতুন রিক্রুটমেন্ট শুন্যের কোটায় হওয়ায় এবং ইসলামীস্টদের সংখ্যাগত সয়লাব এবং ক্রমশ তা গুনগত মানে কনভার্ট করার দিকে যাওয়ায় এই সমিকরণে খুব শীঘ্রই ঐতিহাসিক পরিবর্তন আসছে সন্দেহ নেই। ইসলামীস্ট লেখকদের মধ্যে এখন বেশ কিছু মেধাবী দাড়িয়ে গেছে এবং যাচ্ছে যারা যে কোন বিচারে নাস্তিকদের সাথে চ্যালেঞ্জ দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন।

বলাই বাহুল্য, ইসলামীস্টরা বাস্তব রাজপথে স্মরণকালের সর্বোচ্চ পরিমান বিপর্যস্ত- এটি যেমন সত্য, তেমনি ইন্টারনেট জগতে তারা স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি সংগঠিত ও সক্রিয় এবং তা এতদিনের একছত্র রাজত্বকারী নাস্তিক - ধর্মনিরপেক্ষদের জন্য প্রথমবারের মত এক শক্তিমান আগ্রাসী প্রতিপক্ষ রূপে আবির্ভূত। এই সমিকরণের সূদূর প্রসারী ফলাফল আদর্শিক জগতের মেরুকরণকে কোন দিকে নিয়ে যায় তা দেখতে হলে কেবল অপেক্ষা করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১০৬১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

286910
২২ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৭
আলরাজি লিখেছেন : ইসলামবিরোধীদের মুসলিমদের হাতে অপদস্ত হওয়া শুধুই বোনাস। তাদের বেতন সেদিন পাবে যেদিন আল্লাহ অন্যায়ের বিচার শুরু করবেন। সেদিন তারা মনের মাধুরী মিশিয়ে আল্লাহর সাথে তর্ক করুক যে স্রষ্টা আছে কি নাই।
২২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২৩
230462
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : Good Luck Good Luck
286978
২২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২৩
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : অবাক করার মত হলেও সত্য, কিছু ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া ইসলামিস্টও এখন অত্যন্ত চমৎকার লিখে রীতিমত সেলিব্রিটি হয়েছে। এরা মেক্সিমামই জেল খেটে বেড়িয়ে ভয়ডর খুইয়ে বেপরোয়া হওয়ায় তেজস্বী লেখক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
287055
২৩ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:৩২
কাহাফ লিখেছেন :
বিশ্লষণ ধর্মী সুন্দর সাবলীল উপস্হাপনা পড়ে আশা জাগানিয়া ভাল লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল তনোমনে!
অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ আপনাকে!! Thumbs Up Thumbs Up Big Hug Big Hug

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File