সময় এসেছে লড়াইয়ের, জাগতেই হবে....
লিখেছেন লিখেছেন লেখক ভাই ৩০ মার্চ, ২০১৫, ০৬:০৫:৪৪ সন্ধ্যা
বাংলাদেশ। বিশ্বমানচিত্রে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকৃতির হলেও আলোচনায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে এই একটি মাত্র জাতি, যারা প্রাণ দিয়েছে ভাষার জন্য, যারা প্রাণ দিয়েছে অধিকারের জন্য, প্রাণ দিয়েছে স্বাধীনতার জন্য। অসম্ভবকে করেছে সম্ভব। কিন্তু সেই জাতিই আবার অপার সম্ভাবনাময়কে করেছে ভূলুণ্ঠিত। স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও পারেনি সম্ভাবনার সিকি অংশ পূরণ করতে। সকল গৌরবের জন্যও যেমন এই জাতিই অংশিদার, তেমনি এইসকল ব্যর্থতার জন্যও এই জাতিই দায়ী। আছে অনেক প্রশ্ন, যার কোন উত্তর নেই।
ক্রিকেট এই জাতিকে অনেক কিছুই দিতে শুরু করেছে। গৌরব, সম্মান, সম্পদ, একাত্নতা, ভাতৃত্ববোধ। ক্রিকেটের একেকটি ম্যাচ জয় এই জাতিকে করেছে একাত্ন। সেই সাথে একেকটি ম্যাচের পরাজয়ও এই জাতিকে করেছে বেদনাহত। এই জাতির রাজনৈতিক বিভেদ কিংবা আদর্শিক বিভেদ যতই প্রকট হোক না কেন, ক্রিকেট নিয়ে এই জাতি হেসেছে একসাথে, কেঁদেছেও একসাথে। একটি ম্যাচের বিজয়ে, মূহুর্তেই সমগ্র জাতি একসাথে আনন্দে মিছিল করেছে বিজয়ের, আবার একটি ম্যাচের প্রহসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেও এক কাতারে দাড়িয়ে গেছে সমগ্র জাতি।
ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রমেই হয়ে উঠছে শক্তিশালী ও পরাশক্তিদের অংশীদার। যা ক্রমেই কোন কোন মোড়লের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। ক্রিকেটে বাংলাদেশ এই শক্তিশালী হয়ে ওঠা ঠেকাতে কিংবা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অপমান করতে উঠেপড়ে লেগেছে কোন কোন শক্তি। তারই অংশ হিসেবে আমরা দেখেছি, ২০১৫ বিশ্বকাপে কি নির্লজ্জভাবে আমাদেরকে বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের মাধ্যমে কোয়ার্টার ফাইনালা থেকে বিদায় করে দেওয়া হলো। কারণ, আমাদের চাইতে ওই শক্তির ক্রিটেক থেকে আয় অনেক বেশি। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অপমানিত করতে আইসিসি সভাপতি আ.হ.ম মোস্তফা কামাল'কে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের বাহিরে রাখা হলো, কারণ তিনি একজন বাংলাদেশী। আ.হ.ম মোস্তফা কামালের রাজনৈতিক পরিচয় ও আদর্শ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই ভিন্নতা থাকতে পারে, সেটা রাজনৈতিক বিষয়। কিন্তু অনুধাবন করার বিষয় হলো, আ.হ.ম মোস্তফা কামাল'কে অপমানের মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশকে অপমান করা হলো।
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে গর্ব করে, সাফল্য কামনা করে, আমাদের দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানী ও বিদেশি মোবাইল কোম্পানীগুলোকে দেখেছি বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসাহ ও উদ্দিপনামূলক বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করতে। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, বাংলাদেশে ব্যবসারত ভারতীয় মোবাইল কোম্পানী "এয়ারটেল" এ ধরনের কোন বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণ করেনি। সারাদিন বন্ধু.. বন্ধু.. বন্ধু.. নিয়ে মেতে থেকেছে! সেই সাথে এটাও লক্ষ্য করা যায় যে, আমাদের ক্রিকেটারদেরকে কিংবা ক্রিকেটকে তারা কখনোই স্পন্সর করেনা। আমার দেশে ব্যবসা করে লভ্যাংশ সব ওপারে পাচার করবে, কিন্তু দেশের জন্য কিছুই করবে না, এটা তো মেনে নেওয়া যায়না!
বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের একটা বড় বাজার। খাদ্যদ্রব্য, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিক্স সহ বিভিন্ন পণ্য আমাদের দেশে রপ্তানি করে বিশাল মুনাফা তারা অর্জন করছে, আবার সুযোগমতো আমাদের দেশকে অপমান করতেও তারা পিছপা হচ্ছেনা। তাই প্রতিবাদের বড় একটি ভাষা হতে পারে ভারতীয় পণ্য বর্জন। সবকিছুতেই আমাদের দেশেই বিকল্প আছে। তারপরও যদি প্রয়োজন হয় তবে, খাদ্যদ্রব্যে বিকল্প আছে মায়ানমার, কসমেটিকসে বিকল্প আছে থাইল্যান্ড, ইলেকট্রনিক্সে বিকল্প আছে চীন, এয়ারটেলকে উচিত শিক্ষা দিতে আছে অন্য মোবাইল কোম্পানীগুলো, এভাবে প্রায় সবকিছুরই বিকল্প আছে আমাদের। আমাদের সুযোগ থাকা সত্বেও কেন আমরা ভারতকে সাধ্যমতো জবাব দিতে পারব না?
অনেক আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশে ব্যবসা করছে বাংলাদেশী কোম্পানী প্রাণ-আএফএল গ্রুপ। মুনাফা অর্জন করছে বাংলাদেশ থেকে, আর দেদারসে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে ভারতীয় সিরিয়াল গুলোর স্পন্সরের জন্য। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে দেশীয় মিডিয়াগুলো। জানিনা প্রাণ-আএফএল গ্রুপ তাদের পণ্য ভারতে রপ্তানী করে কিনা। যদি রপ্তানী করে থাকে, তবে তার পরিমান কত? আর সেই রপ্তানীর লভ্যাংশের কতটুকু বাংলাদেশ সরকারকে তারা দিচ্ছে? বিষয়টি জনগণকে জানানো উচিৎ। এই প্রাণ-আএফএল গ্রুপও বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সরাসরি কোন স্পন্সর করেনা। কেন? দেশের ক্রিকেটের জন্য কি তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই? প্রাণ-আএফএল গ্রুপ যদি তাদের এই ভারতপ্রীতি থেকে সরে না আসে তবে তাদেরকেও বর্জন করতে হবে। প্রাণ-আএফএল এর বিকল্প অনেক কিছুই আছে আমাদের কাছে।
পরিশেষে একটিই কথা, ক্রিকেট যেহেতু জাতির জন্য দিচ্ছে, তাই ক্রিকেটকেও দেশবাসীর ও দেশের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু দিতে হবে। দেশের ক্রিকেটের জন্য কোন অবদান না রাখলে উচিত শিক্ষা দিতে হবে বিদেশি কোম্পানীগুলোকে। আর দেশীয় কোম্পানীগুলো বিদেশিদের দালালী করলেও তাদেরকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে পণ্য বর্জনের মাধ্যমে। নিজের দেশকে স্বাবলম্বী করার এই লড়াইয়ে সাধ্যমতো অংশীদার হই।
বিষয়: বিবিধ
১১৫২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার পর সারাদেশে ইসরাইলি পণ বন্ধে সবাই সোচ্চার হয়ে উঠে, কিন্তু এখন????? আবার চলছে ঠিক সবকিছু আগেরি মত!
ওদের পন্যের বিপরীতে আমাদের নিজেদের কয়টা পন্য আছে? যা আছে, তাও কি সবার কাছে সহজ লব্য দামে পৌঁছানো হচ্ছে? ওরা অল্প দামে বেশি সার্ভ করে, তাই তাদের জিনিস মানুষ খায় বেশি!
আর কামালের জন্য এতো দরদ দেখানোর কিছু নেই! কামালতো তাদের স্নেহের ছোট ভাই, বড় দাদারা ভাইকে অপমান করেছে, তাতে আমাদের কষ্ট পাওয়া কিছু দেখি না!
যখন ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলা হয়, ঐসময়ে ভোক্তারা ইউনিলিভারএর পণ্য বর্জন করা শুরু করলে, তখন ইউনিলিভার তার প্রায় প্রত্যেকটি পণ্যের সাথে "ফ্রি" দিতে শরু করেছিল। সেই সাথে প্রচুর বিজ্ঞাপন। কোম্পানীগুলো যেমন তাদের পণ্যের প্রচারণা চালিয়ে যাবে, তেমনি আমাদেরকেও ওইসব কোম্পানীর পণ্য বর্জনের প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে।
আমি ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলেছি, সকল বিদেশি পন্যের কথা বলিনি। তবে এটা ঠিক ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে দেশে ভালমানের পণ্য উৎপাদন করা উচিৎ।
আমি কামালের জন্য কোন দরদ দেখাইনি। শুধু বলেছি, কামাল'কে অপমানের মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশকে অপমান করা হলো।
সহমত
মন্তব্য করতে লগইন করুন