জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে কেন মুক্তি দেয়া হবে না?---আইনের বিশ্লেষণ
লিখেছেন লিখেছেন শামস্ আমিন ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৫৯:০৩ রাত
যারা বলছেন, কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়া উচিত 'আবেগ/ধূর্ততা' ছাড়া আর কি যুক্তি আছে সে দাবির পক্ষে? আমি বলছি, কি কারণে কাদের মোল্লাকে বেকসুর
খালাস দেয়া হবে না। আজ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম, সরকার যদি হাইকোর্ট বিভাগের
গৃহপালিত বিচারপতিদের দিয়ে (যেমন-মানিক, জাকির, হাসান ফয়েজ, শেখ আরিফ,
রহিম, খুরশীদ, গোবিন্দ) আপিল বিভাগ গঠন না করে, তবে সুপ্রিমকোর্টের সেই
আপিল বিভাগ কাদের মোল্লাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে।
একমাত্র জামায়াতের রাজনীতি করা ছাড়া তার আর কোন অপরাধ সরকারের নিয়োগ দেয়া
আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে প্রমাণ করতে পারেনি। একটি ইসলামি দলের নেতা হওয়ার
অপরাধে নিশ্চয়ই কারো ফাঁসি হতে পারে না?
'ছাত্রজীবনে কাদের মোল্লা ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, মুক্তিযুদ্ধে ট্রেনিং
নিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে ছিলেন,
স্বাধীনতার কিছু সময় পর ৭২ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর মুজিব
তাকে সেখানে চাকরি দিয়েছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) উদয়ন স্কুলে
৭২-৭৫ সালে শিক্ষকতা, পাশাপাশি পড়াশোনাও করেন তিনি। এ ছাড়া ৭৫ সালের ১৫
আগষ্ট ঢাবির সমাবর্তনে মুজিবের হাত থেকে পুরস্কার নেয়ার কথা ছিল তার।
কিন্তু ১৪ আগষ্ট রাতে এক গণঅভূত্থানে মুজিব নিহত হন।' তারপও কি করে তিনি
যুদ্ধাপরাধী হন? আমি এসব দাবির পক্ষে যাব না। লেখা লম্বা হয়ে যাবে। শুধু
আইনি দিক নিয়ে কিছু কথা বলব।
ধরেন, কাদের মোল্লা একজন খুনী। আপনি যদি আইন মানেন- তবে সে যে খুন করেছে
তার সপক্ষে আপনাকে প্রমাণ হাজির করতে হবে। অকাট্য প্রমাণ ছাড়া আইনের বিচার
চলে না। শাহবাগের গঞ্জিকাসেবিদের আদালতে সে বিচার চলতে পারে। কিন্তু শুধু
গঞ্জিকাসেবি দিয়ে কিন্তু দেশ চলে না, বিশ্ব চলে না, মনে রাখতে হবে। এখানে
হত্যা, ধর্ষণ, গণহত্যাসহ ফৌজদারী অপরাধের (ক্রিমিনাল অফেন্স) ছয়টি অভিযোগ
আনা হয়েছে আসামির বিরুদ্ধে। কিন্তু ছয়টি অভিযোগের একটির সাপেক্ষেও কোন
প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হাজির করতে পারেনি সরকার।
' জন্মের পর আমি শুনেছি আমার বাবার কাছে, আমার বাবা ৭৪ সালে পত্রিকা পড়ে
জেনেছেন, কাদের মোল্লা গণহত্যার সাথে জড়িত ছিলেন'
'আমি মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে ফিরে এসে গ্রামের মানুষের কাছে শুনলাম পল্লব
হত্যাকাণ্ডের সাথে মোল্লা জড়িত'
'আমি আমার গাড়ির ড্রাইভারের কাছে শুনেছি, কাদের মোল্লা আবার বাবার হত্যার
সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন'
এমন সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে, একটা মানুষকে কি দুনিয়ার কোন আদালত সাজা
দিতে পারে! ওহ্ কাদের মোল্লাকে কিন্তু শোনা কথার উপর ভিত্তি করেই সাজা দেয়া
হয়েছে। এখানে বিচারপতিরা আইনের চেয়ে আবেগকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।
অতিউৎসাহি হয়ে বারবার রাজনীতিকে টেনে এনেছেন। (ট্রাইব্যুনাল বৈধ কি না, এর
বিচারপতিদের মান এসব নিয়ে কিছু বলব না।)
কিন্তু আপনি যদি কোন মানুষকে বিচার করে সাজা দিতে চান তবে আপনাকে আইনে মনে
সে বিচার করতে হবে। আপনারা জানেন, এ ট্রাইব্যুনাল চরম বিতর্কিত। নামে
আন্তর্জাতিক হলেও বিচার নাকি হচ্ছে দেশীয় (ডমেসটিক/গোয়ালঘর টাইপ) আইনে। আর
আজব আজব সব আচরণ করছেন বিচারপতিরা। বিচারের সময় আসামীদের ন্যূনতম সুযোগ
সুবিধা দেয়া হয়নি।
আসলে বিচরাপতিরা আইন মানেননি বলে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন।
তারা যদি শতকরা ১ ভাগ আইনও মানতেন, তবে মোল্লাকে অভিযোগ থেকে খালাস দিতে
বাধ্য হতেন। আক্ষরিক অর্থে বিচারের রায়টা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের একটা
রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যা বিচারপতি কেবল পড়ে শোনান। আমরা জানি, রায় লেখা
হয়েছে, সরকারের এক দফতর থেকে।
এক মিনিট সাজা দেয়ার মতো কোন প্রমাণও তার বিরুদ্ধে হাজির করতে পারেনি
সরকার। তিনি আসলে রাজনীতির পাঠার বলি। জামায়াতে ইসলামি করেন বলেই তাকে সাজা
দেয়া হলো। যুক্তি একটাই-মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াত পাকিস্তানের পক্ষ
নিয়েছিল। তাই যে এই দলটি করে সেও যুদ্ধাপরাধী!
মিরপুরের রাজাকার কসাই কাদেরের সব অপবাদ ও অপকর্ম আজ একজন নিরীহ রাজনীতিকের
উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। মিডিয়ার বদৌলতে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকেই জোর
করে বানানোর চেষ্টা চলছে ৭১ এর অপরাধী সেই কসাই কাদের। এভাবে মিথ্যার উপরেই
চলছে বিচারের নামে তামাশা। এত কাহিনীর কি দরকার বুঝলাম না। সরকার আর
মিডিয়া মিলে তাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রক্যাশ্যে গুলি করে মারলেই পারে।
এখানে কথিত বিচারের কি আছে। আসলে এর পেছনে রাজনীতি আছে। এটা আওয়ামী লীগের
নির্বাচনি বৈতরনি পার হওয়ার একটা ট্রামকার্ড। এ কার্ড ফুরিয়ে গেলে সরকারি
দল বাআল যদু-মদু, রাম-সাম খেলবে কাকে নিয়ে?
দেখেন তার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ আনা হলো। সে সব অভিযোগ সবই লোকমুখে শোনা।
দু'জন সাক্ষীকে সরকারপক্ষ প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে দাবি করলেও পরে
প্রমাণিত হয় তারাও শুধু শুনেছেন। কে হত্যা করেছে বা কে অপরাধী তা দেখেননি।
তারপও মানুষটাকে যাবজ্জীবনের মতো সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হলো।
নাটকের এখানেই শেষ না। সরকার পুলিশ প্রটেকশনে কিছু গঞ্জিকাসেবিদের শাহবাগে
নামিয়ে দিল। তাহারা বুনো আদিমদের চেয়েও হিংস্রভাবে কাদের মাল্লার ফাঁসি
চায়। কিন্তু কি দোষ তার তা বলতে পারছে না। এভাবে সরকার যখন তার একটি
ক্রীড়নক গোষ্ঠিকে একজন নিরীহ মানুষের পেছনে লেলিয়ে দেয় তখন বুঝতে হবে
রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়েছে। দেশ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। আশা করি বিপর্যয়
থেকে দেশকে রক্ষা করতে দেশপ্রেমিক জনতা জেগে উঠবে।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগ কাল্পকি ও উদ্ভট প্রমাণ করে আরেকটি
সবিস্তর পোস্ট দেব, এ আশা রেখে বিদায় নিলাম।
বিষয়: বিবিধ
১৮০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন