সঙ্গীত পরিচালক বুলবুলের ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যু : সুরতহাল রিপোর্টে নারীঘটিত বিষয়ের ইঙ্গিত (আপডেট)

লিখেছেন লিখেছেন উদাস পথিক ১১ মার্চ, ২০১৩, ১১:৩০:৩৭ সকাল

আজকের (১২।০৩।২০১২) দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার এ সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে- “মিরাজ হত্যা: তিন ক্লু নিয়ে মাঠে পুলিশ ও গোয়েন্দার”। সংবাদটিতে ক্ষিলক্ষেত থানার এস আই গোলাম ফারুক এর একটি উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। উদ্ধৃতিটির অংশ বিশেষ তুলে ধরছি-

“ক্ষিলক্ষেত থানার এস আই গোলাম ফারুক বলেন, মিরাজ পল্লবীর বাসা থেকে যেভাবে সেজেগুঁজে বের হয়েছিলেন, তাতে মনে হয়েছে তিনি কোন পার্টিতে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়েছিলেন। অথবা বিশেষ কোন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এরপরই খুনিদের ফাঁদে পড়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।”

আমার পূর্বের লেখায় আমার দেশ পত্রিকার উদ্ধৃত সংবাদে লাশের সুরতহাল রিপোর্টের সাথে মানবজমিন পত্রিকার এ সংবাদের সাথে সংগতি রয়েছে।

আমার এ আপডেট বা লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে কোন চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড সংঘটিত হবার পরই এর দায় উদোর পিন্ডি বুদোর গায়ে ফেলার যে অপতৎপরতা তাকে প্রতিবাদ জানানো। আমি বিশ্বাস করি যে কোন হত্যাকান্ডেরই সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত।

এসংক্রান্ত আমার আগের লিখাটি হচ্ছে-

লেখার শিরোনামটি আজকের দৈনিক আমার দেশ (তাং-১১-০৩-২০১২) পত্রিকার একটি সংবাদের শিরোনাম। সঙ্গীত পরিচালক বুলবুলের ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা আজকের প্রায় প্রতিটি পত্রিকার প্রধান সংবাদ শিরোনাম। তবে অধিকাংশ পত্রিকায় এ সংবাদটি একই সুরে পরিবেশন করা হয়েছে। লক্ষ্য করা গেছে যে সংবাদটি দেশের অধিকাংশ ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়ার জামায়াত বিদ্বেষী প্রচারণায় একটি মোক্ষম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এসকল মিডিয়াসমূহ সমস্বরে কোরাস করে বলছে- বড় ভাই বুলবুল মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্য দেয়ায় প্রতিহিংসার জের ধরেই মিরাজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। গোলাম আযমের মামলার ১৪তম সাক্ষী ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল।

তাবত মিডিয়ার এপ্রচারণায় সাধারণ সত্যসন্ধানী পাঠকসমাজের জন্য সঠিক বিষয়টা অনুধাবন করা জটিল হয়ে উঠে।সাধারণ মানুষ চায় প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডের সঠিক কারণ উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হোক। অপরাধী সে যে দলেরই হোক- আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত বা দলনিরপেক্ষই হোক না কেন। সাধারণ জনগণ চায় কোন হত্যাকান্ড যেন সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক দল বা হলুদ সাংবাদিকতার স্বার্থলাভের হাতিয়ার না হয়। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে প্রতিটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডই রাজনৈতিক স্বার্থের ক্রীড়ানকে পরিনত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ও রাস্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ হত্যাকান্ডের সাথে সাথেই কোন তদন্ত ছাড়াই সুবিধা লাভের জন্য প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে দোষারোপ করে। অনেক সময় ভাবটা এমন যে, হত্যাকান্ডটি ঘটবে তা আগেই জানা ছিল এবং হত্যাকান্ডের পর কি বলতে হবে তা আগেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। একই সাথে পদলেহী মিডিয়া আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তাতে রং মাখিয়ে মনের আনন্দে প্রচার করতে থাকে। এতে একদিকে যেমন আসল ঘটনা চাপা পড়ে, দেশবাসী চিনতে পারেনা প্রকৃত দোষীদের অন্যদিকে ক্ষতিগ্রন্ত পরিবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। অবশ্য কখনো কখনো ক্ষতিগ্রস্থের পরিবারকে অন্য ভাবে পুষিয়ে দেয়া হয়।

সত্যসন্ধানী বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টের ক্ষেত্রে আমার দেশ পত্রিকার ভুমিকা প্রশংসনীয়। সঙ্গীত পরিচালক বুলবুলের ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় পত্রিকাটি পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টটি হুবহু তুলে ধরে। সকলের অবগতির জন্য সুরতহাল রিপোর্টটি উদ্ধৃত করলাম-

{খিলক্ষেত থানার এস আই গোলাম ফারুক মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। সুরতহাল রিপোর্টে এস আই গোলাম ফারুক লিখেছেন ‘মৃতের বয়স অনুমান ৫৫ বছর। লম্বা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। মাথায় গোলাকৃতি টাক। মাথার পিছনে চুল আছে, চুল কালো, লম্বা আনুমানিক দুই ইঞ্চি। নাক দিয়ে ফেনাযুক্ত রক্ত দেখা যায়, যা গড়িয়ে ডান চোখের ওপর দিয়ে ডান কানে পড়েছে। চোখ অর্ধ খোলা, মুখ খোলা, সামান্য ফেনা আছে। জিহ্বা মুখের ভিতরে, শেভ করা, বুকে কাঁচাপাকা লোম বিদ্যমান। গায়ে সাদা-নীল গ্রামীণ চেকের ফুলহাতা শার্ট। পরনে কালো রঙের ফুলপ্যান্ট ও প্যান্টের ভিতরে নেভি কালারের থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট ও ক্রিম কালারের আন্ডারওয়্যার পরিহিত। পায়ে লিভাই ব্র্যান্ডের কালো শর্ট মোজা।’

সুরতহাল রিপোর্টে আরও বলা হয় ‘মৃতের হাত-পা ছড়ানো। মৃতের লাশ কনস্টেবল ১৩৬৭৮ মো. নাসিরুলকে দিয়ে উলট-পালট করিয়া দেখা যায় মলদ্বারে কোনো মল নাই। পুরুষাঙ্গ সংকুচিত। পুরুষাঙ্গে বীর্য বিদ্যমান। পিউরিক হেয়ার বিদ্যমান। ইহা ছাড়া শরীরের কোথাও কোন আঘাত বা জখমের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় নাই। মৃত ব্যক্তিকে কোন নেশাজাতীয় দ্রব্য/উত্তেজক দ্রব্য পান করানো হইয়াছিল কিনা তাহা নির্ণয়ের জন্য অনুরোধ করা হইল’।}

সুরতহাল রিপোর্টের শেষের অংশে উল্লেখিত “পুরুষাঙ্গ সংকুচিত। পুরুষাঙ্গে বীর্য বিদ্যমান।” অংশটি হয়ত মতলববাজ মিডিয়ার হালের পানিকে কমিয়ে দেবে। লক্ষনীয় হল যে, অধিকাংশ পত্রিকায় সুরতহাল রিপোর্টের এ অংশটুকু উল্লেখ করেনি।

আমরা চাই- হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি বিধান করা হোক। এটা যাতে কোনভাবেই রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার না হয়।

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File