মাতৃগর্ভে বুলেটবিদ্ধ শিশু!

লিখেছেন লিখেছেন উদাস পথিক ২৯ জুলাই, ২০১৫, ০১:৪৯:২২ দুপুর





বিশ্বে এই মুহুর্তে সম্ভবত সবচেয়ে বেশী ডক্টরেটধারী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, যিনি ৫ই জানুয়ারীর ব্যতিক্রমী নির্বাচনে স্বনির্বাচিত ও বটে! তিনি ফরমাইয়াছেন- কাহারো বেড রুম পাহারা দেওয়া তাহার সরকারের এখতিয়ার বহির্ভূত। বড়ই যৌক্তিক কথা কারণ বেডরুম বা অন্দরমহল একান্তই ব্যক্তিগত জায়গা। সেখানে সরকারের নিরাপত্তা কর্মে নিয়োজিত ব্যাক্তিবর্গের অবস্থান বা গমন-প্রস্থান সবারই প্রাইভেসীতে বিরূপ প্রভাব ফেলাইবে। অতএব সবাই স্বউদ্যোগেই বেডরুমের নিরাপত্তা বিধান করিবে, সেটাই উত্তম বিবেচিত হইবে!

গত ২৩ জুলাই, বৃহস্পতিবার মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় কারিগরপাড়ায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগম। গুলি মায়ের পেটের শিশুর শরীরও এফোঁড়-ওফোঁড় করিয়া ফেলে। ফলে শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখিবার আগেই স্বনির্বাচিত ও ডক্টরেটধারী প্রধানমন্ত্রীর সোনার ছেলেদের বুলেটের (আলতো?) ছোঁয়ার স্বীকার হইয়া পৃথিবীতে সময়ের আগেই তড়িঘড়ি করিয়া চলিয়া আসে। আর মাত্র দুদিন বয়সে সংকটাপন্ন অবস্থায় ২০১ কিলোমিটার দূরে মাকে রেখে চাচা-ফুফু আর পুলিশের সঙ্গে ঢাকায় বেড়াতে আসিয়াছে। যে শহরে প্রধানমন্ত্রী বসবাস করে! তবে যেহেতু শিশুটি প্রধানমন্ত্রীরই সোনার ছেলেদের ফ্রেন্ডলি ফায়ারের স্বীকার হইয়া ঢাকায় আসিয়াছে তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত লাভের সম্ভাবনাও খুবই ক্ষীণ। অন্যদিকে শিশুটার শরীরও ভাল না। শিশুটি হয়ত কল্পনাও করিতে পারে নাই যে (যদিও তার কল্পনা করার বয়সও হয়নি), মাতৃগর্ভেও (সন্ত্রাসের) ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের সোনার ছেলেদের কামড়া কামড়ির স্বীকার হইয়া আসিতে হইবে! শিশুটির শারিরীক অবস্থা বিষয় ডাক্তার কানিজ হাসিনা বলেন, ‘বাচ্চাটির পিঠ দিয়ে গুলি ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। হাতে-গলায় জখম। চোখটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ডান চোখের ভেতর রক্ত জমা। চোখটা খুলছে না। স্থায়ী কোনো ক্ষতি হয়ে গেছে কি না, সে ব্যাপারে এখনো আমরা নিশ্চিত নই।’ আরেক ডাক্তার শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান আশরাফুল হক বলেন, “পরিবার বলছে নাজমা বেগম ৩৪ সপ্তাহর গর্ভবতী ছিলেন। শিশুটি প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে জন্মেছে। ওর ওজন দুই কেজি। স্বাভাবিকের চেয়ে এই ওজন ৫০০ গ্রাম কম। শিশুটির অবস্থা এখন স্থিতিশীল। কিন্তু অপরিণত ও কম ওজনের হওয়ায় ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।”

স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির খেতাব পাওয়ার ঝুঁকি নিয়াও বিষয়টি নিয়া ভার্চুয়াল জগতে ব্যাপক হইচই পড়িয়া যায়। কতিপয় মন্তব্য নিন্মরুপ:

”ছাত্রলীগ শেষ পর্যন্ত মায়ের গর্ভের শিশুকেও রক্ষা দিল না?”

”আহারে! যার থাকার কথা পৃথিবির সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা মাতৃগর্ভে। যুবলিগের সন্ত্রাস তাকে টেনে হেচড়ে নিয়ে আসল এই অসুন্দর পৃথিবীতে। যুবলীগ ছাত্রলীগ এর সন্ত্রাস যে কত ভয়ংকর এই ঘটনা তার সাক্ষি হয়ে থাকবে”

”মায়ের গর্ভেও শিশুটিকে নিরাপদে থাকতে দিলনা, শিশুটির মার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এর আগেও চট্রগ্রামে দুই গ্রুপের মাঝে পরে পিতার কোলে নিহত হয়েছিলো আরেক শিশু। সৈয়দ আশরাফ ঠিকি বলেছেন, ছাত্রলীগের মতো সংগঠন পৃথিবীতে আর নেই। আর থাকবেই বা কি করে, বাংলাদেশের মতো গণতন্ত্র ও আইনের শাসন যে আর কোথাও নেই।”

”লীগের সোনার ছেলেদের আরেক অমর কীর্তী... আচ্ছা, অপকর্ম আর কোনটা বাকি আছে, লীগের সোনার ছেলেদের? আমিতো অনেক ভেবেও পেলাম না যে, লীগের সোনার ছেলেরা কোন অপকর্মটি করতে বাকি রেখেছে, কেও কী বলবেন?”

”যারা এগুলো করেছে, এদের কিছুই হবেনা, কারণ এরা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, এদেশ তাদের জন্য, তারা যা খুশি তাই করবে, এ দেশ তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি। আর এদেশের মানুষ হচ্ছে প্রজা। আর যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে তারা হচ্ছে সব স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি..”

”আমাদের মমতাময়ী(!) প্রধান মন্ত্রী কিন্তু একে দেখতে যাবে না, কারন তার সোনার ছেলেরা যে আকাম করেছে।”

এই রকম হাজারো মন্তব্য রহিয়াছে যা লেখার পরিসর বড় হইয়া যাওয়ার ভয়ে এখানে উল্লেখ করা যাইতেছে না। কিন্তু এইসব স্বাধীনতা বিরোধীরা একটা কথা মোটেই মাথায় রাখিতেছেনা যে, শিশুটা মায়ের গর্ভে ছিল বটে কিন্তু শিশুটির মা তো ছিল নিশ্চয়ই বেডরুমে! আর বেডরুম পাহারার দায়িত্ব তো সরকারের না!

অবশ্য ঘটনার প্রকৃতি বিবেচনায় কেহ কেহ কিছু পরামর্শও প্রদান করিয়াছেন যাহা বিবেচনা করা যাইতে পারে। যেমন- এই হীন কাজের জন্যে সোনার ছেলেদের ‘উপযুক্ত’ শাস্তি প্রদানের ডামি রিহারসেল শুরু করুন। নাটকের শেষ দৃশ্যে না হয় রাষ্ট্রপতি নিঃশর্ত ক্ষমা করে দিবেন।

বি.দ্র: আমার ফ্রেন্ডলিস্টে ও এই ব্লগে অনেক ‘স্বাধীনতার পক্ষ’ শক্তি ও ক্ষুরধার ‘চেতনা’ সম্পন্ন বন্ধু রহিয়াছেন যাহাদের বাংলা পরীক্ষা এখনো শেষ হয় নাই!!!!! এই লেখা যদি তাঁহাদের ক্ষুরধার চেতনায় ঢিলসম আঘাত হানিয়াও তাহাদের বাংলা পরীক্ষায় ডিস্টার্ব করিয়া থাকে তাহলে আমি ক্ষমা প্রার্থী।

বিষয়: বিবিধ

১১২১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

332436
২৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:০০
বাকপ্রবাস লিখেছেন : ভাষা নেই
২৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:১১
274719
উদাস পথিক লিখেছেন : ঠিক বলেছেন বাকপ্রবাস। আস্তে আস্তে সব কিছুই যেন গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য
332460
২৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৮
হতভাগা লিখেছেন : বাচ্চাটির গুলিবিদ্ধ হওয়ার চেয়ে তার প্রি-ম্যাচিউর বর্নকে নিয়েও ডাক্তাররা কথা বলছেন বেশী । অথচ এসব বড় বড় হাসপাতালগুলোতে প্রি-ম্যাচিউর বার্থ ও তার ম্যানেজমেন্ট খুব কমন একটা ব্যাপার ।

বোঝাই যাচ্ছে যে বাচ্চাটি যদি মারা যায় তাহলে তার প্রি-ম্যাচিউর বর্নকে দায়ী করে এর কারণকে ভুলিয়ে দেওয়ার রিহার্সেল চলছে।
332477
২৯ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:৫২
উদাস পথিক লিখেছেন : আল্লাহ রহম করুন। যেভাবেই হোক বাচ্চাটি সুস্থ সবল ভাবে বেঁচে থাকুক। আপনাকে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File