আমরা কি সতর্ক একালের মীর জাফর, জগৎশেঠ, রাজ বল্লব প্রমূখের ব্যাপারে?
লিখেছেন লিখেছেন উদাস পথিক ২৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:৪০:৪১ বিকাল
১৭৫৭ সালে ভাগিরথী নদীর তীরে পলাশীর আম্রকাণনে নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়। ইতিহাস লিখিত হয়েছে এভাবে- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনাপতি লর্ড ক্লাইভের কাছে পরাজয় বরণ করেন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলা। সত্যি কি সিরাজ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে হেরেছিলেন? নাকি হেরেছিলেন মীর জাফর, জগৎশেঠ, রাজ বল্লব প্রমূখের বিশ্বাসঘাতকতার কাছে? আমি বলব, নবাব হেরেছিলেন বিশ্বাসঘাতকতার কাছে। সিরাজের প্রত্যক্ষ প্রতিপক্ষ ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। স্বাভাবিকভাবেই নবাব যতটা সতর্ক ছিলেন প্রতিপক্ষের ব্যাপারে হয়ত ততোটাই উদাসীন ছিলেন বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে। অনুমান করি, নবাব যতটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন তার সিকি ভাগের একভাগও যদি সতর্ক থাকতেন মীর জাফর-জগৎশেঠদের ব্যাপারে তাহলে আজ হয়ত বাংলার ইতিহাস অন্য ভাবে লেখা হত!
এ বিষয়ে লেখার উদ্দেশ্য অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা নয়, বরং ভবিষ্যতে আবার এই বাংলার স্বাধীনতা যাতে অস্তমিত না হয় সে বিষয়ে এই ব্লগের সবাইকে সচেতন করার ব্যাপারে নিজস্ব চিন্তা-চেতনা প্রকাশ করা। পুরানো সেই “ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী” হয়ত আজ নেই কিন্তু সেই পলাশী ট্রাজেডির বেনিফিসিয়ারীরা নতুন ভাবে পুরাতন নামের সামনের-পিছনের অংশ ফেলে দিয়ে বন্ধুত্বের অাড়ালে আবার বাংলার পতাকা খামচে ধরতে তৎপর।
সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা সুব্রাক্ষণিয়ম স্বামী বাংলাদেশের কাছে এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড দাবি করেছে! এর মাধ্যমে “বন্ধু” তার খায়েস গোপনে না রেখে দিবালোকে প্রকাশ করে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে, যারা সিরাজের ন্যায় দেশপ্রেমী তারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ফেসবুক-ব্লগ-টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ায় সুব্রাক্ষণিয়ম স্বামী আর ভারতের তীব্র প্রতিবাদ করছে ঠিকই। তবে পরিহাস, সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এদেশীয় চর, একালের মীর জাফরদের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যায় নি।
কেউ কি বলতে পারবেন সুব্রাক্ষণিয়ম স্বামীর এ বক্তব্যের পর বাংলাদেশের সরকার কি ভারতীয় দুতাবাসে কোন ব্যাখ্যা চেয়েছে? পররাষ্ট্র মন্ত্রানালয় কি কোন প্রতিবাদ করেছে? সিভিল সোসাইটি বলে যারা চেতনার হোল এজেন্সী নিয়েছে তারা কি কোন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের (!) বীর সেনানীদের চেতনা বিস্ফোরিত হয়েছে?
এর উত্তর যদি হয় “না” তাহলে কি বলা যাবে না যে বাংলার স্বাধীনতার আকাশে আবার সেই ঐতিহাসিক গোধুলী লগ্ন দেখা দিয়েছে?
তাই বলব, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা একালের বন্ধুবেশী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বেনিয়াদের ব্যাপারে যতটা সতর্ক থাকব ততোটাই যেন থাকি বর্তমানের মীর জাফর-জগৎশেঠ প্রমুখ দালালদের ব্যাপারে।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৪৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন