বাংলাদেশের গণআকাঙ্খার প্রতি ভারতের শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ রবিউল ইসলাম ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:৩৩:৩৫ সকাল



বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নাক গলানোর প্রতিবাদে গত ২৫ নভেম্বর সোমবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজনে এক বিশাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সিডনির প্রাণকেন্দ্র মার্টিনপ্লেসে ব্যাপক জনসমাগম হয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রাণকেন্দ্র সিডনিতে এতো ব্যাপক এবং স্বতঃস্ফূর্ত বাংলাদেশীদের উপস্থিতি অতীতে কখনও লক্ষ করা যায়নি। ঘণ্টাব্যাপী প্রতিবাদী অবস্থান ও বক্তব্য শেষে সিডনিতে ইন্ডিয়ান কনস্যুলেটে গিয়ে একটি প্রতিবাদ সূচক মেমোরেন্ডাম হস্তান্তর করা হয়। এই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বলা হয়, বর্তমান অস্থিতিশীলতা ও হানাহানি থেকে ভারতকে তাদের ষড়যন্ত্রের হাত গুটিয়ে নিতে হবে। সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ না করে বর্তমান আধিপত্যবাদী আচরণ বজায় রাখলে একদিন ভারতকেও এর অশুভ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশের দু’জন প্রতিনিধি ভারতীয় কনস্যুলারের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। ভারতীয় কনস্যুলার জেনারেল বলেন, ভারত কখনও কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না এবং বাংলাদেশের বিষয়েও তারা একই নীতিতে অটল। (সূত্র : ২৬ নভেম্বর, আমার দেশ, অনলাইন এডিশন।)

একই দিনে ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদ’-এর প্রতিবাদে নিউইয়র্কে ভারতীয় কন্স্যুলেটের সামনে বহির্বিশ্ব বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভে বিশ্বজুড়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয় সময় ২৫ নভেম্বর সোমবার বিকালে নিউইয়র্কে ম্যানহাটনে ভারতীয় কন্স্যুলেটের সন্নিকটে বিক্ষোভ সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বিএনপির নেতারা এ আহ্বান জানান। বহির্বিশ্ব বিএনপির উদ্যোগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বক্তারা অভিযোগ করেন, পার্শ্ববর্তী ভারত নির্লজ্জভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতেই ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ অনৈতিক হস্তক্ষেপ করছে।

উল্লেখ্য, ২৫ নভেম্বর গোটা বিশ্বের ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘বহির্বিশ্ব বিএনপি’। ৪২ দেশের বিএনপি নেতাদের টেলি-কনফারেন্সে এ ঘোষণা দেয়া হয়। নিউইয়র্ক থেকে বহির্বিশ্ব বিএনপির সভাপতি আলহাজ আব্দুল লতিফ সম্রাট এ কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাসরত বহির্বিশ্ব বিএনপির সেক্রেটারি মোসলেহউদ্দিন আরিফ। কনফারেন্সের সমন্বয় করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা গিয়াস আহমেদ।

ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি প্রসঙ্গে নেতারা বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে ভারত সরকার। এজন্য বিশ্ববিবেককে ভারতের দ্বৈতনীতি সম্পর্কে সজাগ করতে এ কর্মসূচির বিকল্প ছিল না।’ ৩ ঘণ্টা স্থায়ী এ কনফারেন্সে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড: মঈন খান এবং বিএনপির জাতীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ-আল নোমান। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, জাপান, ইতালি, অস্টিন, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, মালয়েশিয়া, বেলজিয়াম, ভিয়েনা, কোরিয়া, সুইডেন ও পর্তুগালের নেতারা টেলিকনফারেন্সে অংশ নেন।

বাংলাদেশ-ভারত যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের সূত্রে বাঁধা তাতে এ ধরনের কর্মসূচি অনেকেই প্রত্যাশা করেন না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কেন? আসাম থেকে প্রকাশিত নববার্তা প্রসঙ্গ পত্রিকার ২১ অক্টোবর সংখ্যার প্রধান সংবাদের সাহায্য নিয়ে এর উত্তর দেয়া যায়। এ পত্রিকা লিখেছে, “দিল্লি চাইছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জোট আবারো ক্ষমতায় আসুক আর ইসলামাবাদ চাইছে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় বসুক। বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব পাস করেছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।”

“নতুন দিল্লির প্রতিবেদক ভাস্কর দেবের এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত নির্বাচনে এই টাকার পরিমাণ ছিল ৮০০ কোটি টাকা। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি প্রকাশিত ওই খবরে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইন্দিরা গান্ধী প্রতিনির্বাচনে ‘র’-এর মাধ্যমে ভারত সমর্থিত দলকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।”

কিংবা দ্য পাইওনিয়র পত্রিকায় হিরন্ময় কার্লেকারের ৭ নভেম্বরের লেখার শিরোনামটিও এর উত্তর হতে পারে-যেখানে তিনি বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া মাস্ট সাপোর্ট হাসিনা’।

একই লেখকের একই পত্রিকায় চলতি বছরের ৯ মার্চ প্রকাশিত এক লেখার শিরোনাম ছিল, ‘ইট ইজ আওয়ার ফাইট এজ মাচ এজ হাসিনাস।’

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। নব্বই দশক থেকে এখানে বাংলাদেশে নিজস্ব গণতান্ত্রিক স্টান্ডার্ডে ক্ষমতা পরিবর্তন হচ্ছে ভোটের মাধ্যমে। একইভাবে আগামী নির্বাচনেও কারা ক্ষমতায় আসবে তা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা এ দেশের মানুষের স্বাধীন আকাক্সক্ষা, মর্যাদা। অন্য কোনো দেশের ইচ্ছা ও কৌশল সে আকাক্সক্ষায় প্রতিবন্ধক হওয়াতেই এই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতেই বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যম সে দেশের সরকারি সূত্র ও নিজস্ব মন্তব্যে গত কয়েক মাসে যে সকল প্রতিবেদন লিখেছে তাতেই এ দেশের মানুষের মনে তাদের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ লেখায় সেসব পর্যালোচনা করা হবে।

বাংলাদেশের প্রায় সব পত্রিকা এমনকি লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইকনোমিস্ট পত্রিকাও গত মাসে নিজস্ব এক জনমত জরিপের সূত্রে জানিয়েছে, দেশের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ লোক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পছন্দ করে। এর মানে এই নয় যে দেশের শতকরা নব্বই ভাগ লোক বিএনপি-জামায়াতের সাপোর্টার হয়ে গেছে, এর মানে এই নয় যে, এ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ লোক ভারতবিরোধী হয়ে গেছে। এ জরিপ প্রমাণ করে, দেশে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের বাইরেও আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের সমর্থক অসংখ্য মানুষ এমনকি বিএনপিবিরোধী, ভারতপন্থীরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার নিজস্ব সৃষ্টি সংবিধানের দোহাই দিয়ে সে ব্যবস্থায় নির্বাচন করতে রাজি নয়। বাংলাদেশের রাজনীতির মূল সঙ্কটটি এখানেই।

শুধু বাংলাদেশের ৯০ ভাগ জনগণ নয়- জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চায়না, জাপানসহ বাংলাদেশের প্রভাবশালী বন্ধুদেশ তথা বিশ্বের প্রায় সব দেশ বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। কিন্তু বর্তমান সরকার সে প্রত্যাশাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। এ ব্যাপারে সরকারকে রাজি করানোর জন্য কূটনৈতিক চ্যানেলে ব্যাপক দৌড়াদৌড়ি হয়েছে কিন্তু প্রত্যাশিত ফল লাভ হয়নি। এ বিষয়ে সরকারকে রাজি করাতে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের বাসায় গিয়ে বৈঠক করেন। ইকনোমিক টাইমস লিখেছে, সে বৈঠকে তাদের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য হয়েছে। এরপর মজিনা দিল্লি ছুটে গিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। আনন্দবাজার পত্রিকা ২ নভেম্বর জানালো, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংহ মার্কিন ফর্মুলার সাথে এক হতে পারেননি। ৩০ অক্টোবর ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া ‘বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত মুখোমুখি’ শিরোনামের একটি রিপোর্ট করে।

অন্যদিকে ইকনোমিক টাইমস ভারতীয় অফিসিয়ালদের বরাত দিয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে লিখলো, ড্যান মজিনা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতো আচরণ করছেন। পত্রিকাটির রিপোর্টের শিরোনাম- শেখ হাসিনাকে রক্ষায় ভারতকে সব কিছু করতে হবে। (২ নভেম্বর, দৈনিক নয়াদিগন্ত)। এই সব কিছু কী?

টাইমস অব ইন্ডিয়া ১ নভেম্বরে ‘বাংলাদেশ ইন এভায়োলেন্ট ফেস অ্যান্ড ইন্ডিয়া মাস্ট ডু অল ইট ক্যান টু সি এ ফ্রেন্ডলি রেজিউম রিটার্ন টু পাওয়ার (সহিংস ধাপে বাংলাদেশ এবং বন্ধু সরকারকে ক্ষমতায় ফেরাতে ভারতের যা করা সম্ভব তার সবকিছুই করতে হবে)’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ভারতীয় সামরিক হস্তক্ষেপের কথা স্মরণ করিয়ে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ যেহেতু বিশৃঙ্খলায় নিপতিত হয়েছে তাই ভারত তার পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ভারতের এই অঞ্চলগুলোতে স্বাধীনতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। কাজেই ভারত চায় না ঢাকায় কোনো বৈরী সরকার থাকুক। অবস্থা কার্যত ১৯৭১ সাল-পূর্ব সময়ের দিকে গড়াচ্ছে যখন বাঙালি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিল।’

এ সকল সংবাদের কারণে বাংলাদেশর মানুষের মনে প্রশ্ন জন্মেছে যে, ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জনদাবি ও বিশ্বদাবিকে উপেক্ষা করার ভরসা পাচ্ছে। আর এভাবেই ভারত বাংলাদেশের জনদাবি ও জনপ্রত্যাশার বিরুদ্ধে নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশে আবারও ভারতবিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হয়ে উঠছে প্রবলভাবে। ফলে যারা বাংলাদেশ-ভারত দীর্ঘস্থায়ী সুম্পর্কের প্রত্যাশা করেন তারাও শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। নিজ দেশে গণতন্ত্রের প্রতি তার অনুগত্যের অনেক ঘটনা কিংবদন্তির মতো। প্রতিবেশী বাংলাদেশের গণমতকে তারা একইভাবে শ্রদ্ধা করবে-এটা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক জনতার প্রত্যাশা। বর্তমানে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারে বলে জাতিসংঘ, ইইউ, মার্কিন কংগ্রেস, নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন কর্নার থেকে বলা হচ্ছে। এই সন্ধিক্ষণে প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশের সুবন্ধু হিসেবে পাশে দাঁড়াবে-এমনটা এদেশের মানুষের প্রত্যাশা। কিন্তু বিজনেস স্টান্ডার্ডসহ ভারতীয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ হতে পারে বলে ক্রমাগত যেসব উস্কানিমূলক রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। আবার ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যাহত হলে, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে তা ভারতের জন্যও সুখকর হবে না। কাজেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ভারতকে এ ধরনের উস্কানিমূলক রিপোর্ট প্রকাশ বন্ধ করতে হবে এবং একই সাথে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সারা বিশ্ব যেভাবে এক সরল রেখায় পৌঁছেছে সেখানে ভারত একা যদি উল্টো রথে আরোহন করে থাকে তাহলে দক্ষিণ এশিয় রাজনীতিতে এক নয়া মেরুকরণ ঘটতে পরে-যার আলামত সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে দিন দিন। এই নতুন মেরুকরণে ভারতের অবস্থান যে সুখকর হবে না তা বলাইবাহুল্য। কাজেই ভারতকে শুধু বাংলাদেশের গণমানুষের দাবির কথা ভাবলেই চলবে না, বাংলাদেশ ও সন্নিহিত বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক বিশ্ব রাজনীতির গতিপ্রকৃতি ভেবেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাছাড়া সমগ্র বিশ্বপ্রত্যাশার বিপরীতে ভারত একা আওয়ামী লীগকে কতক্ষণ রক্ষা করতে পারবে সেটাও তাদের ভাবতে হবে।

বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা যে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে সেকথা ভারতীয় পত্রপত্রিকাতেই লেখা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। ৩০ অক্টোবর বিজনেস স্টান্ডার্ড পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, নিজেদের ক্রমাগত ভুল পদক্ষেপের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অংশত হ্রাস পাচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করার পর দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলোও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। পত্রিকাটি আরো লিখেছে, জনমত জরিপ বিএনপির পক্ষে, তারাই ফের ক্ষমতায় যাচ্ছে বলে ধরে নেয়া হয়। অথচ দলটি বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থের প্রতিকূলে।

এমনকি ‘আগামী নির্বাচনে হাসিনা ওয়াজেদের দল পরাস্ত হইবে’ শীর্ষক ৩০ অক্টোবরের আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘একের পর এক স্থানীয় নির্বাচনে ইতোমধ্যেই সংকেত মিলিয়াছে যে, আওয়ামী লীগের সরকার জনপ্রিয়তা হারাইতেছে। ইহা খুবই সম্ভব যে, আগামী নির্বাচনে হাসিনা ওয়াজেদের দল পরাস্ত হইবে এবং বিএনপি ক্ষমতায় ফিরিবে। কিন্তু সেজন্য একটি নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া দরকার। তাহার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি সরকারেরই দায়িত্ব। বিরোধী রাজনীতির কাজ গণতান্ত্রিক উপায়েই সেই দায়িত্ব পালনে সরকারকে বাধ্য করা। সংবিধান-বহির্ভূত যে কোনো বন্দোবস্তই গণতন্ত্রে অন্তর্ঘাত হানার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে এবং কায়েমি স্বার্থচক্রীদের সুযোগ করিয়া দেয়। তথাপি কেন বারংবার তদারকি সরকারের ধুয়া উঠিতেছে? প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় বিরোধী নেত্রীর সহিত কথা বলিবেন, তাহার যাবতীয় বক্তব্য, অভিযোগ, দাবি মন দিয়া শুনিবেনও। দেশবাসীর মঙ্গল চিন্তাই যদি উভয়ের বিবেচ্য হয়, তবে অহমিকা কিংবা জেদের লড়াই করিয়া তো কোনো লাভ নাই। গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও রীতি পদ্ধতি বিসর্জন দিয়া কিছু করা উচিত নয়।’

এখানে উল্লেখ্য, আজকের বাংলাদেশে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার এই ধস নামার পেছনে ভারতের ভূমিকা মোটেই গৌণ নয়। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা একের পর এক জাতীয় স্পর্শকাতর ইস্যুতে ভারতকে ছাড় দিয়েছেন। তবু বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করেছিল তিনি তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রাপ্য কিছু দাবি মেটাতে পারবেন। কিন্তু তার কোনো প্রতিদান তিনি বাংলাদেশকে এনে দিতে পারেননি। ভারতীয় ব্যুরাক্র্যাসির হিডেনহ্যান্ড শেখ হাসিনার হাত দিয়ে বাংলাদেশকে কিছু পেতে দেয়নি, শুধু নিয়েই গেছে একতরফা। আর এতে করে শেখ হাসিনা দেশের মধ্যে বিতর্কিত ও অজনপ্রিয় হয়েছে।

এ বিষয়ে গত ৩০ অক্টোবর ভারতের বিজনেস স্টান্ডার্ড পত্রিকায় ‘এবান্ডনিং ঢাকা : ইন্ডিয়া হ্যাজ কন্ট্রিবিউট টু বাংলাদেশ পলিটিক্যাল টার্মোয়েল’ শিরোনামের সম্পাদকীয়তে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আন্তঃনদী পানির অংশীদারিত্ব, সীমান্তচুক্তিসহ বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে মীমাংসায় না পৌঁছানোয় বাংলাদেশে ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, “ভারত আওয়ামী লীগের সমর্থনকে দুর্বল করতে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আন্তঃনদী পানির অংশীদারিত্ব এখন বিতর্কিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজ্য সরকারের আপত্তিতে ছিটমহলের বিনিময় ও সীমান্ত চুক্তি-২০১১ ঝুলে আছে। বছরের পর বছর ধরে সীমান্তে হত্যাকা- চলছে। দেখামাত্রই গুলি- বিএসএফের এই নীতির কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে বাংলাদেশে। কিশোরী ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুঁলিয়ে রাখার দায়ে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে খালাস করে দেয়া হয়েছে- যা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।” বিজনেস স্টান্ডার্ডের সাথে সুর মিলিয়ে এ কথা বলাই যায়, আজকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ভারতের যে প্রবল আকুতি তা মনে রেখে যদি বাংলাদেশের দাবি পূরণে ভারত এতটুকুও সম্মান প্রদর্শন করত তাহলে শেখ হাসিনা ও ভারত কাউকেই আজকের এই এতোটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না। দি হিন্দু পত্রিকার মতে, এটি সত্য, শেখ হাসিনা ভারতের ভালো বন্ধু। কিন্তু তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার বিতর্ক এবং স্থল-সীমান্ত বিষয়ে ভারত যথার্থ প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি সরকারের ওপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পেয়েছে।

তিতাসের বুক বেঁধে নিজের টাকায় বাংলাদেশ ত্রিপুরায় পণ্য ও সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সহায়তা করেছে। কিন্তু ভারতীয় পলিটিশিয়ান, ব্যুরোক্রেসির মন বাঁধতে পারেনি। ইলিশ, জামদানি, মিষ্টি সব দিয়েও শেখ হাসিনা ‘মমতার’ মনে কোনো মমতার একবিন্দু শিশির জমাতে পারেননি। বাংলাদেশের জনগণের প্রধান দাবিগুলোর একটিও ভারতের কাছ থেকে পূরণ হয়নি লীগ সরকারের পাঁচ বছরের শাসনামলে। এ যেন বাংলা সিনেমার গান, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না। আশায় আশায় দিন যে গেল আশা পূরণ হলো না।’ একতরফা ভালোবাসা দিয়ে আশা পূরণের বঞ্চনা থেকে বাংলাদেশের মানুষের মনে দিন দিন ভারতের প্রতি যে ক্ষোভ জন্ম দিয়েছে তা ভারত বিরোধিতার জোয়ারে পরিণত হয়েছে। অনুগত মিডিয়া দিয়ে যতই ছাপিয়ে রাখার চেষ্টা হোক এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গত তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার জোয়ার এখন প্রবল। বিশেষ করে ভারত কর্তৃক একতরফা শোষণ নীতির ফলে ভারতপ্রেমী বলে খ্যাত অনেককেও এখন ভারতের বাংলাদেশ নীতির সমালোচনা করে গণমাধ্যমে কথা বলতে শোনা যায়। বাংলাদেশ-ভারত স্বাভাবিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও তাদের মধ্যে এখন শঙ্কার জন্ম হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অজনপ্রিয় সরকারের প্রতি ভারতের পৃষ্ঠপোষকতা এবং তাদের সমর্থনে যদি সেই সরকার পুনঃনির্বাচিত হয় তাহলে এই ক্ষোভ আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে, তাতে সন্দেহ নেই। একতরফা নির্বাচনে জয় লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকারকে সঙ্গত কারণেই বিরোধী শক্তির ওপর নিষ্পেষণ চালিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে এবং তা থেকে সৃষ্ট জনবিক্ষোভও ভারতের বিরুদ্ধে যাবে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ২৫ নভেম্বরের মতো বা তার থেকেও বেশি শক্তিশালী পরিস্থিতি ভারতকে মোকাবিলা করতে হবে-যা কারো কাম্য নয়।

এদিকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত ভালো করেই জানে, কোনো সরকারই শেষ সরকার নয়। আওয়ামী লীগ সরকারও একদিন ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে। ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক সুনন্দ কে রায় চৌধুরী যেমন কলকাতার টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লিখেছেন, ‘তাড়াতাড়ি হোক বা বিলম্বে হোক বিএনপি ক্ষমতায় আসবেই।’ এতো কিছুর পর নতুন যে সরকার আসবে তাদেরই ভারত নীতি বিষয়ে কেমন ধারণা হবে সে বিষয়টিও ভারতকে ভেবেই করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভারতের করণীয় কি হতে পারে। এ করণীয় সম্পর্কে ভারতেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যা লেখা হয়েছে, ভারত তা অনুসরণ করতে পারে।

ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি সংবাদপত্র টাইমস অফ ইন্ডিয়া গ্রুপের বাংলা দৈনিক ‘এই সময়’-এ গত ২২ নভেম্বর ‘গণতন্ত্রের ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা’ শিরোনামে সম্পাদকীয়টি লিখেছেন মিলন দত্ত। বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি জোটের ভোট রয়েছে ৩৩ শতাংশ। এই বিপুল সংখ্যক ভোটারদের সরিয়ে রেখে ভোট করে যে সরকার গঠিত হবে তা যে জনতার কাছে বিশেষ গ্রহণযোগ্য হবে না তা ভালো করেই বোঝেন শেখ হাসিনা। তাই তাকে কোনো একটা রফায় পৌঁছতেই হবে। তাছাড়া প্রধান বিরোধীদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করে সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগের গায়ে স্বৈরাচারি ছাপ লেগে যাবে। তখন সেনা ছাউনিতে জন্ম নেয়া বিএনপির সঙ্গে তার কোনো ফারাক থাকবে না। … গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব হাসিনার, তিনি যদি তা পারেন মহিমান্বিত হবেন। রক্ষা পাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র। তিনি যদি বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়াতে ব্যর্থ হন, তাহলে গত দুই বছরের এবং আগামী কয়েক বছরের যাবতীয় অঘটনের দায় হাসিনাকেই নিতে হবে। মিলন দত্তের সুরে ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মহিমান্বিত’ হওয়ার এই সুযোগ গ্রহণ করতে রাজি করানোর চেষ্টা করতে পারেন।

গত ২০ নভেম্বর ভারতের প্রভাবশালী দি হিন্দু পত্রিকার সম্পাদকীয় পরামর্শও ভারত সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। ‘ভারতের কোনো পক্ষে যাওয়া ঠিক হবে না’ শিরোনামের এ সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, প্রধান বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের ফল হবে অন্তঃসারশূন্য। এটি দেশটিকে নতুন করে রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে। বেশ কয়েকটি দেশ এখন ঢাকার রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে হাসিনাপন্থী হিসেবে পরিচয় পাওয়া নয়াদিল্লির এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা দেখে কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব মনে হয়। প্রায় একই কথা খ্যাতিমান সাংবাদিক সুনন্দ কে রায় চৌধুরী টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলেছেন অন্যভাবে, ‘ঢাকায় যেই ক্ষমতায় থাকুন না কেন ভারতকে তার সঙ্গেই কর্মকা- চালাতে হবে। তাই শুধু এক দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে তা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটি সমস্যা সঙ্কুল ফ্যাক্টর হওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ভারতকে।’ এক্ষেত্রে ৪ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে প্রকাশিত টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ড্যাঞ্জারাস ড্রিফট’ শীর্ষক সম্পাদকীয়টি নিয়েও বিশেষভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সহায়তার প্রস্তাব করেছেন তারা। যদি এমন প্রস্তাব কাজে আসে তাহলে তা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিধাবোধ করা উচিত নয়। তার উচিত বিএনপির সঙ্গে আলোচনা শুরু করা এবং তাদের নির্বাচনে আনা। সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, বিরোধী দল বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হলে তার রাজনৈতিক পরিণতি কী, সে সম্পর্কে অজানা থাকার কথা নয় শেখ হাসিনার। এতে আরও বলা হয়, রাজনীতিবিদরা কখনো কখনো তার জনগণের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠেন। এখন বেশিরভাগ বাংলাদেশী জানেন, ক্ষমতার জন্য রাজনৈতিক লড়াই কত ভয়াবহ হতে পারে। ভয়ের বিষয় হলো এতে বাংলাদেশে শুধু জান ও মালের ক্ষতি হচ্ছে না। নৈরাজ্যের দিকে এদেশের ঝুঁকে পড়ায় যদি বাধা দেয়া না হয় তাহলে গণতন্ত্র ঝুঁকির মুখে পড়বে। যদি গণতন্ত্র ব্যর্থ হয় তাহলে যে শূন্যস্থান সৃষ্টি হবে তাতে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের উত্থান ঘটবে। অব্যাহত রাজনৈতিক সঙ্কট সন্ত্রাসীদের পুনর্গঠিত হতে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্যাবোটাজ করতে সহায়তা করবে। এটা সত্য যে, আগামী মাসে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সে নির্বাচন বৈধতা হারাবে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালে দু’দফায় বাংলাদেশ এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। তখনও বিরোধীরা নির্বাচন বর্জন করেছিল। দু’ক্ষেত্রেই নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ছিল স্বল্প সময়ের।

কাজেই গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত আরেকটি স্বল্পমেয়াদি নির্বাচনের দিকে আওয়ামী লীগকে উৎসাহিত করতে পারে না। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল। এ সহায়তা কোনো ব্যক্তি বা দলের ভিত্তিতে ছিল না। বাংলাদেশের গণমানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন করতেই তারা এ সহায়তা করেছিল। ঠিক তেমনি ২০১৩ সালের শেষপ্রান্তে এসে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষাকে অব্যাহত রাখতে ভারত বাংলাদেশের গণমানুষের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে কার্পণ্য করবে না-এ প্রত্যাশা ১৬ কোটি মানুষের।

http://www.newsevent24.com/2013/12/12/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%97%e0%a6%a3%e0%a6%86%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%8d/

বিষয়: বিবিধ

১১১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File