একাধিক সুন্দরী রমনীকে নিয়ে কচুয়ায় আসতেন সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী!
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ রবিউল ইসলাম ২৬ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:০৩:৪৭ সন্ধ্যা
‘ডেমোক্রেসি ইজ দ্যা বুলেট, বাই দ্যা বুলেট, ফর দ্যা বুলেট’
মহিউদ্দীন খান আলমগীর সরকারের সদ্য গদি হারানো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশের ধর্মভীরু এবং অলি-আউলিয়ার পুণ্য ভূমি ‘উজানীনগর’ কচুয়ায় প্রকাশ্যে সুন্দরী রমনীদের নিয়ে আসায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের হৃদয়ে যেমনি কুঠারাঘাত করেছে, তেমনি আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতাও তলানিতে ঠেকেছে। মন্ত্রী থাকাকালে তিনি প্রতিবারই তার সফরসঙ্গী হিসেবে একাধিক সুন্দরী রমনীকে তার গাড়িতে করে কচুয়ায় নিয়ে আসতেন। জনশ্রুতি রয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এসব কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতেই তার স্ত্রী সিরাতা আলমগীর দীর্ঘদিন আমেরিকায় স্বেচ্ছায় নির্বাসনে রয়েছেন।
মহিউদ্দিন খান আলমগীরের সাথে সুসম্পর্কের কারণে ‘র’ অর্ধাক্ষরের এক মহিলা পুলিশে নিয়োগ-বদলি আর অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে সিন্ডিকেট করে ৫৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার গুঞ্জন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তার অনুকম্পায় কচুয়ার বাসের হেলপার জাহাঙ্গীর আর টোকাই লিটন এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক। এরা সকলেই এখন নিজস্ব গাড়ি এবং ফ্ল্যাটে বসবাস করেন।
এদিকে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পতন আন্দোলনে কলেজ ছাত্র জিয়াউর রহমান রাজুকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছিল। ওই সময় দেশে গণতন্ত্র না থাকায় রাজুর হত্যাকা-কে স্বৈরাচারী হত্যাকা- বলা হয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় চাঁদপুরে কখনো পুলিশের গুলিতে রাজনৈতিক হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেনি। তিনিই একমাত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন যার সাথে পুলিশ সদর দফতরের ভাল সম্পর্ক ছিল না। নানা অনৈতিক অধ্যায়ের কারণে পেশাগত পুলিশ কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপর।
কিন্ত হঠাৎ করেই বছর খানেক আগে চাঁদপুরে জমদূতের মতো আর্বিভূত হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর। শুরু হয় পুলিশের গুলিতে একের পর এক হত্যাকা-। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি চাঁদপুর শহরে ১৮ দলীয় জোটের গণমিছিলে পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী লিমন ছৈয়াল ও বিএনপি কর্মী আবুল হোসেনের মৃত্যু ঘটে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত এই হত্যাকা-ের রেশ কাটাতে না কাটাতেই গত ২৫ অক্টোবর ১৮ দলীয় জোটের গণমিছিলে ফরিদগঞ্জে যুবদলের ৩ কর্মীর মৃত্যু হয়। সব শেষে ওই জোটের ৬০ ঘন্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন ২৮ অক্টোবর চাঁদপুর পুরাণবাজারে পুলিশের গুলিতে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়।
একই সাথে মহিউদ্দিন খান আলমগীর তার নির্বাচনী এলাকা কচুয়ায় ক্রসফায়ারে ৪ যুবদল নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে চাঁদপুরে ‘ক্রসফায়ার’ এর কালিমা লেপন করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সব ক্ষমতার উৎস বলা হয় রাষ্ট্রের জনগণকে। সুতরাং সরকারের ক্ষমতার উৎসও জনগণ। গণতন্ত্র নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক উক্তি, ‘ডেমোক্রেসি ইজ এ গভর্মেন্ট, অব দ্যা পিপল, বাই দ্যা পিপল, ফর দ্যা পিপল।’ অর্থাৎ ‘গণতন্ত্র হলো জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য।’ কিন্তু বর্তমান সময়ে চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে রাজনৈতিক হত্যায় অনেকেই ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘ডেমোক্রেসি ইজ দ্যা বুলেট! বাই দ্যা বুলেট!! ফর দ্যা বুলেট!!!’ বুলেট কখনো গণতন্ত্র ও সরকার রক্ষার কবজ হতে পারে না। আলোচনা, সমঝোতা এবং সহনশীলতার মাঝে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব এমন অমিয় বাণী বেমালুম ভুলে গেছেন জনাব খান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পরই হিংস্র হয়ে ওঠেন মহিউদ্দীন খান আলমগীর। প্রতিশোধের নেশায় মত্ত জনাব খান পুলিশের পছন্দের লোকদের পদায়ন, অপন্দের লোকদের (দু’এসআই) মামলা দিয়ে হয়রানি, জেলার ৩ থানার ওসিকে স্ট্যান্ডরিলিজ করেন। যদিও পরবর্তীতে স্থানীয় এমপিদের চাপে ফরিদগঞ্জ থানা ছাড়া বাকি দু’জনের স্ট্যান্ডরিলিজ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আতঙ্কে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন প্রাণ ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। গত ৫ বছরে তার নির্বাচনী এলাকা কচুয়ার ১০ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা করে বাড়ি ছাড়া করেছেন।
মহিউদ্দীন খান আলমগীরের সাথে সুসম্পর্কের কারণে কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী পাটওয়ারী, সেক্রেটারী সোহরাব হোসেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুন নাহার ভূঁইয়া ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এডভোকেট মো. হেলাল উদ্দিন গোটা জেলায় প্রশাসনের উপর অস্বাভাবিক খবরদারি, তদবির, নিয়োগ বাণিজ্য, জায়গা দখল এমনকি জামিন অযোগ্য আসামির জামিন এবং জামিনযোগ্য আসামী জামিন বাতিলের ক্ষেত্রে আদালতে প্রভাব বিস্তারের গুঞ্জন রয়েছে। পুলিশ চাকরিতে পদায়ন, বদলির ক্ষেত্রে তারা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। কাক্সিক্ষত সুযোগ না পাওয়ায় অনেক ক্ষতিগ্রস্তরাই এখন বেকায়দায়।
কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে দু’প্রার্থী সমান ভোট পেলেও পরবর্তীতে মহিউদ্দীন খান পুনঃসম্মেলন কিংবা ভোটাভুটি ছাড়াই তার পছন্দের ব্যক্তিকে সভাপতি নির্বাচিত করেন তার আজ্ঞাবহ জেলা কমিটির মাধ্যমে। এ শোক সইতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অল্পক’দিন পর মৃত্যুবরণ করেন ঢাকা মনোয়ারা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সভাপতি প্রার্থী মীর ইকবাল। অথচ নবম সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েও শেষ সময়ে এসে মীর ইকবাল তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়ে ড. খানকে প্রার্থী হওয়ার বিরল সুযোগ করে দেন।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগে কোন্দলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তিনি। নিজ নির্বাচনী এলাকা না হলেও তার আজ্ঞাবহ জেলা সভাপতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। শুধুমাত্র ফরিদগঞ্জ উপজেলায় গত ৫ বছরে ইউএনও এবং ওসিসহ সবচে বেশি সরকারি কর্মকর্তা বদলি/পরিবর্তন হয়েছেন। সেখানকার আওয়ামী লীগ এখন প্রকাশ্যে বিভক্ত।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক বাহবা নেয়ার জন্য প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও মতলবের নারায়ণপুর এলাকাকে ‘পৌরসভা’ করার ব্যবস্থা করেন। উচ্চ আদালতের আদেশে পৌরসভার কার্যক্রম বন্ধ এবং মামলার কারণে বিএনপি দলীয় স্থানীয় চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় দু’টি ইউনিয়নের জনগণ এখন জনপ্রতিনিধি শূন্য।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা তার মালিকানাধীন ভবনে (কচুয়ায়) বেশী ভাড়ায় স্থানান্তর এবং শাখা চালু করতে তিনি বাধ্য করেছেন। কথিত আছে তার মালিকানাধীন ফার্মার্স ব্যাংক চালু করতে নিজ জেলা চাঁদপুর থেকে বিভিন্ন উপায়ে প্রচুর মূলধন সংগ্রহ করেছেন। এক্ষেত্রে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িত চাঁদপুরের একজন তরুণ ধর্নাঢ্য ব্যক্তির কাছ থেকে প্রচুর অর্থ গ্রহণের গুঞ্জন রয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে এসআই ও কনস্টেবল পদে নিয়োগ এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি করে ব্যাংকের টাকা জোগাড় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সদ্য অতীত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ক’জন নেতা জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং সিএনজি চালিত অটোরিক্সা রেজিস্ট্রেশন দেয়ার ক্ষেত্রে কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। এছাড়া চাঁদপুরে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণ কাজে মহিউদ্দীন খান আলমগীরের লোকজন জড়িত হয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করার ঘটনায় চাঁদপুরে খোদ আওয়ামী লীগে রয়েছে অসন্তোষ।
সংবাদ সংগ্রহ
http://www.digholianews24.com/?p=632
বিষয়: রাজনীতি
১২৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন