প্রতিটি পদক্ষেপই সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস্ নামছেঃ জনগণের পাল্স বুঝে রাষ্ট্র পরিচালনা করাই শ্রেয়।
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ রবিউল ইসলাম ১৮ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৩৩:২৪ রাত
সত্য মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরকাল থাকবে। মিথ্যায় অসত্য সাময়িকভাবে চাপা থাকলেও তা স্ফূরণ হবেই। নির্বাচন বর্তমান সমাজের গণতান্ত্রিক অধিকার। এই গণতন্ত্রের মাধ্যমে শাসক পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকার এই গণতান্ত্রিক ধারাটিকে গলা টিপে ধরার চেষ্টা করছে। তারা যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন দেশে লেভেল পেলেয়িং অবস্থা ছিল। তারা ডিজিটাল দেশে গঠনের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। আর সেই ডিজিটালের কিছু উপাদানগুলি ছিল ১০ টাকা চাউলের কেজি, বিনামূল্যে সার, ঘরে ঘরে চাকুরি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, ইসলাম ধর্মে কোনরুপ আঘাত না করা, ইসলাম বিদ্বেষী কোন আইন পাস না করা ইত্যাদি। আজ এগুলি সস্তা বুলিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশের মানুষের সাথে শতভাগ প্রতারণা করেছে। তারা দেশের মানুষের বোকা বানিয়ে দেশেটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। চারিদিকে অমানিষার ঘনঘটা। যে বিপুল উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে মানুষ ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল, সেই ভোটাররাই আজ আবার তাকিয়ে আছে কবে সেই মহেন্দ্রক্ষণ আবার আসবে যাতে করে নব উদ্দীপনায় আওয়ামীলীগকে তারা চিরতরে দেশের মানুষের মাঝে পরাজিত শক্তি হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে।
আজ সব মানুষের জীবন বিপন্ন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনকে দাঁপিয়ে তারা দেশ বাসীকে কাঁপিয়ে তোলার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন।
মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়গুলি আজ ন্যায় ভ্রষ্ট।
রায়গুলিকে যথারীতি রাজনীতির বিষয়বস্তু বানিয়ে ফেলা হয়েছে।
আধুনিক ছেলেপেলেরা পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় দেয়া ট্রাইব্যুনালের রায়কে ‘ন্যক্কারজনক’ আখ্যা দেয়ার, প্রত্যাখ্যান করার এবং আদালতের প্রতি অসম্মান দেখানোর ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই কথা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না।
প্রথমে বিগত মাস খানেকের মধ্যে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন এবং প্রতিটিতে সরকারি দলের শোচনীয় ভরাডুবির কথা স্মরণ করতেই হবে।
খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে হেরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত ‘গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে’ এবং ‘প্রমাণিত হয়েছে যে, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে’ ধরনের নানা মধুর বাণী শুনিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান ‘ঘাঁটি’ গাজীপুরও হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শান্ত বা ধীরস্থির থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেছেন, তাদের প্রার্থীরা নাকি ‘অপপ্রচারের কাছে’ হেরে গেছেন। এভাবে ১৯৭৫-পরবর্তীকালেও তারা নাকি একই ‘অপপ্রচারের কাছে’ হেরে এসেছেন! অপপ্রচারকারী সে চক্রই নাকি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে! চক্রটির পরিচিতি সম্পর্কেও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার ভাষায় এটা ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের চক্র’!
বর্তমান সরকারের ওপর নির্বাচনের ব্যাপারে যে আস্থা ফিরে এসেছে সে আস্থা কোনোভাবেই নস্যাত করা যাবে না এবং এ সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে তারা বদ্ধপরিকর।
ভারতীয় কূটনীতক ও ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে তিনি বলেছেন, তার দলের যারা দুর্নীতি করেনি, যারা ‘সৎ’ এবং ‘ক্লিন ইমেজের’ তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জিততে পারেননি। কিন্তু জিতেছে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী এবং আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি ও খুনের সঙ্গে জড়িতরা।
আরও কিছু বিষয়ে কঠোর বক্তব্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। মনের ঝাল ঝেড়েছেন হেফাজতে ইসলামীর আমির আলামা শাহ আহমদ শফির ওপরও। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে প্রাধান্যে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর হাহাকার—এত উন্নয়ন করার পরও ভোটার জনগণ কেন তার দলের ‘সৎ’ এবং ‘ক্লিন ইমেজের’ প্রার্থীদের জেতায়নি!
“পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে সরকারের দুর্নীতি ও টালবাহানায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল, ঢাকা বিভাগসহ দেশের মানুষের প্রাণের দাবী পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম করার জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ অপরিহার্য। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী মহাজোটের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। কিন্তু সরকারের কার্যকালের সাড়ে চার বছর অতিক্রম করলেও পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। দেশের জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে সরকারের দুর্নীতির কারনেই আজ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। সরকারের দুর্নীতির কারনেই দাতাগোষ্ঠী বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর নির্মাণে তাদের অর্থ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বার বার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে দুর্নীতির ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু সরকার তা আমলে না নেয়ায় অবশেষে বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থ দানের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। এর পর এডিবিও অর্থ দানের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সরকারের দুর্নীতির কারনে বিশ্ববাসীর নিকট বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ভুলুণ্ঠিত হয়েছে।
বিদ্যুতের কথা উল্লেখ করলেও প্রধানমন্ত্রীকে বরং লা-জবাব হতে হবে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী যখন হাজার হাজার, সাত-আট হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়ানোর কেচ্ছা শোনাচ্ছিলেন তখনও দেশের বেশিরভাগ এলাকায় চলছিল লোডশেডিং।
শেয়ারবাজারের লুণ্ঠন থেকে পদ্মাসেতুকেন্দ্রিক দুর্নীতি, হলমার্ক ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারি এবং সবশেষে জামায়াত-শিবিরের পরপর হেফাজতে ইসলামের ওপর চালানো গণহত্যা পর্যন্ত অসংখ্য ‘জাতীয়’ ইস্যু তো ছিলই, এসবের সঙ্গে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিটি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী বুঝতেই চাচ্ছেন না যে, জনগণের ওপর মনের ঝাল মিটিয়ে লাভ নেই, ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করতে হলে তাকে তত্ত্বাবধায়ক তথা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে।
তার নিশ্চয়ই মনে পড়ে গেছে, ২০০৮ সালের ‘ডিজিটাল’ নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক কোন পন্থায় তারা ক্ষমতায় এসেছিলেন। অন্যদিকে তাদের ভোট যে মোটেও বাড়েনি বরং অনেক কমে গেছে সে সত্যেরই প্রমাণ পাওয়া গেছে সিটি নির্বাচনগুলোতে। এজন্যই প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত আগেভাগে ভবিষ্যতের পথ তৈরি করতে চাচ্ছেন। কে জানে, সেটা সম্ভব না হলে দেশে আবারও লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাস চালানো হবে কিনা, আবারও নতুন কোনো ‘উদ্দিন’ সাহেবদের নিয়ে আসা হবে কিনা!
আমরা কিন্তু মনে করি, এর-ওর ওপর দোষ চাপানোর পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর উচিত আগে নিজের ঘর সামলানোর চেষ্টা করা এবং তারপর তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানো।
এমনিতেই মানুষের মন-মেজাজ ভালো নেই। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে বহু আগেই। এখন শুধু আশাটুকুই সম্বল। কিন্তু চারপাশে যা ঘটে চলেছে, তাতে আশার সেই প্রদীপটাও জ্বালিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের হর্তাকর্তারা সকাল-বিকাল আইনের শাসনের কথা বলে মুখে ফেনা তুললেও বাস্তবে কোথাও নিয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইনের রক্ষকরাই ভক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন আছে, আইনের প্রয়োগও আছে। তবে তা অন্যের জন্য। নিজের লোক হলে সাত খুন মাফ। এমনই চলছে দেশের বর্তমান হালঅবস্থা।
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, ঠিক তখনই এসে লেগেছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রবল ধাক্কা। সেই ধাক্কায় বাস-ট্রাক-ট্যাক্সির ভাড়া শুধু নয়, আরেক দফা বেড়ে গেছে জিনিসপত্রের দামও। জ্বালানির দাম যতটা বেড়েছে, যানবাহনের ভাড়া ও দ্রব্যমূল্য বেড়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ। দীর্ঘদিন থেকে এ অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে, গত ক’বছর ধরে জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই তার সঙ্গে তাল রাখতে পারছে না। ফলে বাড়তি উপার্জনের আশায় তারা এখন উদ্ভ্রান্তের মতোই দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে। কিন্তু ঝুঁকিমুক্তভাবে বাড়তি অর্থ উপার্জনের সেই সুযোগও সীমিত হয়ে আসছে ক্রমে।
বাস্তবতা হলো, দীর্ঘদিন থেকে ধনী-গরিব, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও পেশাজীবী থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত কেউ ভালো নেই। ভালো থাকার জন্য সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীলতা এবং ইতিবাচক অগ্রগতি দরকার তার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বরং তথাকথিত ভয়াবহ বিপর্যয় সামনে ওঠার আগেই রাজনীতির আকাশ আবারও মেঘাচ্ছন্ন হতে শুরু করেছে। অর্থনীতির অবস্থাও ভালো নয়। বছরের পর বছর ধরে কয়েক কোটি কর্মক্ষম মানুষ বেকার। তাদের কর্মসংস্থানের অর্থবহ কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে প্রায় স্থবির হয়ে আছে শিল্প ক্ষেত্র। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আমরা হা-হুতাশ করি। কিন্তু সরকারি দফতরে ছোটাছুটি করে আর নীতি-নির্ধারকদের নানা প্রতিশ্রুতি শুনে শুনে স্থানীয় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাও হয়রান হয়ে গেছেন। জ্বালানির অভাবে তাদের কারখানার চাকা ঘুরছে না ঠিকমত। দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস-বিদ্যুত্ সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৪২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, এটা মোটেও বেশি সময় নয়। তবে ভিন্নমতও আছে। তারা মনে করেন, সময়টা নেহাত কমও নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, এখানে সময়ের হিসাব ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, সবকিছু সঠিকভাবে চলছে কিনা সেটাই হলো আসল। চলার গতি যদি শ্লথও হয়, তবু দেশ ঠিক পথে চললে সাধারণ মানুষ স্বস্তি বোধ করে। আর না চললে তারা উদ্বিগ্ন হয়, আতঙ্কিতও বোধ করে অনেক সময়।
পৃথিবী বদলে গেছে। গুটিকয় ব্যতিক্রম বাদ দিলে, অর্ধশতক আগের আত্মকোন্দলে জর্জরিত শ্লথগতির সেই পৃথিবী এখন জাদুঘরে ঠাঁই নিতে চলেছে। পরিবর্তনের এই বিশ্ব মিছিলে শামিল হতে হলে আমাদেরও দ্রুত বদলানো দরকার। সাধারণ মানুষ তার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তার অকাট্য প্রমাণ হলো—যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই তারা পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে। রাজনীতিকদের দিনবদলের ডাকে সাড়া দিয়ে বার বার নেমে এসেছে রাজপথে। রক্ত ও ঘামও ঝরিয়েছে অনেক। কিন্তু ফলাফল অভিন্নই থেকে গেছে। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন হয়েছে। সবই হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায়, সুপরিকল্পিতভাবে। কারা করেছে, কীভাবে করেছে তা কমবেশি সবাই জানেন। আর ক্ষমতার কলকাঠি যাদের হাতে, তাদের আশীর্বাদ ছাড়া যে কিছুই হয় না তাও কারও অজানা নয়। কেলেঙ্কারি নিয়েও এখন যথারীতি চলেছে ব্যাপক কাদা ছোড়াছুড়ি। চাপানোর চেষ্টা চলেছে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে।
আবার কখনও বা নিজের করে নিয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। উভয় ক্ষেত্রেই তার খেসারত দিতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। কারণ রাষ্ট্রীয় সম্পদের জোগানও আসে জনগণের পকেট থেকেই।
পাশাপাশি এও সত্য যে, প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও নিজেদের স্বার্থেই এক পর্যায়ে ঠিকই লাগামও টেনে ধরেছে তারা। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
সঙ্গত কারণেই মনে হয়, দিনবদল দূর অস্ত। তবে আমেরিকা-ইউরোপেও নিজস্ব লোককে নানাভাবে টাকা বানানোর সুযোগ করে দেয়ার উদাহরণ একেবারে কম নয়। বুশ-ব্লেয়ার চক্রের আগ্রাসী বোমায় বিধ্বস্ত ইরাক-আফগানিস্তান পুনর্গঠন সংক্রান্ত বেশিরভাগ ঠিকাদারি কারা পেয়েছিল তা এরই মধ্যে সবারই জানা হয়ে গেছে। সবই করা হয় নিয়ম মেনে এবং আইনসিদ্ধভাবে। যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন, আইন অমান্য করে সেখানে কারও পার পাওয়ার সুযোগ নেই। সদ্যবিদায়ী আইএমএফ প্রধানের রাতারাতি আকাশ থেকে পাতালে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ঘটনাই তার একমাত্র দৃষ্টান্ত নয়। উন্নয়নশীল অনেক দেশের চিত্রও অবশ্য খুব একটা আলাদা নয়।
সব মিলিয়ে, জনগণের পিঠ যে দেয়ালে ঠেকে গেছে তাতে সন্দেহ নেই। তবে তার চেয়েও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, নিকট অতীতের ইতিহাস থেকেও শাসকরা কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করেননি বা করছেন না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, তারা নিজেদের যতটা বুদ্ধিমান মনে কবেন, জনগণকে ঠিক ততটাই বোকা ভাবেন। ক্ষমতায় থাকাকালে জনগণকে তো তারা গ্রাহ্যই করেন না, এমনকি এটাও তারা ভুলে যান যে গত কয়েক দশকে দেশ পরিচালনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন এমন শত শত মন্ত্রী ও সচিব এদেশেই বসবাস করেন। আছেন আরও অনেক ডাকসাইটে লোক—ক্ষমতার অন্ধিসন্ধি সব যাদের নখদর্পণে। কোথায় কী হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, কিছুই তাদের অজানা নয়।
এখন কথা হলো, সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। এ প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহল থেকে রাজনৈতিক ‘সুনামি’ কিংবা ‘মহাপ্রলয়’-এর যে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় একটাই। সেটি হলো, সব ক্ষেত্রে আইনের শাসন নিশ্চিত করা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে রাজনীতিমুক্ত রাখা এবং সব ধরনের সীমা লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। অতএব, যত তাড়াতাড়ি নিজেদের লাগাম টেনে ধরা যায় ততই মঙ্গল। নাকি ভুল বললাম।
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন