আমাদের জাতীয় পরিচয়

লিখেছেন লিখেছেন আবদুল হক ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:৫৯:২৯ বিকাল

পাথরের আত্মীয়স্বজন নেই, প্রাণ নেই বলে; ধূ ধূ হাওড়ের মাঝখানে দাঁড়ানো বুড়ো হিজল বা অন্ধ আকাশের মরা চাঁদ নিঃসঙ্গ নয়, কারণ সঙ্গ-নৈঃসঙ্গের বোধ ওদের নেই। সঙ্গ প্রাণের, সম্পর্ক প্রাণীর গুণ। মানুষ শ্রেষ্ঠ প্রাণী ─ সম্পর্কের বিস্তারে তার শ্রেষ্ঠত্ব বিস্তীর্ণ হয়েছে, সম্পর্কের গৌরবে তার মনুষ্যত্ব উত্তীর্ণ হয়েছে।

বস্তুর সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনের সম্পর্ক, মানুষের সঙ্গে প্রয়োজনের এবং প্রাণের। জন্ম ও যৌনসম্পর্কে পরিবার, অবস্থা ও অবস্থানসম্পর্কে সমাজ এবং অবস্থান ও কৃষ্টিসম্পর্কে গড়ে উঠেছে দেশ ও জাতি। পরিবার আদি প্রতিষ্ঠান, সমাজও; যেমনই থাক, মানুষের উদ্ভবকাল থেকেই এগুলো আছে। দিনে দিনে মানুষ সংখ্যায় বেড়েছে, সভ্যতায় এগিয়েছে, দূরে দূরে ছড়িয়ে পড়েছে। গোষ্ঠী থেকে হয়েছে জাতি, বানিয়েছে দেশ। আজকের পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষেরই দেশ আছে, সবাই ভাষিক বা সাংস্কৃতিকভাবে বিশেষ জাতিভুক্ত। দেশ ও জাতি কোথাও কোথাও এক মোহনায় মিশে সমার্থক, কোথাও একটি অপরটিকে ছাড়িয়ে গিয়ে দ্ব্যর্থক। দেশের স্পষ্ট সীমা আছে, মানচিত্র আছে, তাই দেশ নিয়ে ক্লেশ নেই ─ কিন্তু জাতির সীমানা সূক্ষ্ম ও অদৃশ্য, জাতীয়তা নিয়ে তাই পাকিয়ে গিয়েছে জট; বাংলাদেশে এই জট ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠেছে।

আজকের বাংলাদেশে আমরা যারা বাস করছি, আমাদের জাতীয় পরিচয় কী? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন, অন্তত যতক্ষণ ‘জাতীয় পরিচয়’-এর পরিচয় নিয়ে আমাদের দ্বিধা আছে। ঐতিহ্যগতভাবে আমরা (সংখ্যাগুরু) বাঙালি, ধর্মে (প্রধানত) মুসলিম এবং রাষ্ট্রিকভাবে বাংলাদেশি। আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্য আমরা চেতনায় লালন করি, ধর্ম পালন করি এবং স্বদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করি। এ তিন পরিচয়ের মধ্যে কোনটি উচ্চতম, যা পৃথিবীতে একটি বিশেষ জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের সামষ্টিক পরিচয়কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে পারে?

মানুষের মানসদেশের বেশিভাগ এলাকা জুড়েই ধর্মের শাসন, সচেতন বা অবচেতনভাবে, প্রতিষ্ঠিত। আমাদের বোধবিশ্বাসের যতটা গভীরে ধর্ম পৌঁছয়, তত আর কিছুই নয়। নিজস্ব শক্তিবলেই ধর্মগুলো নিতে পেরেছে এ বিপুল বিস্তার। কিন্তু এ বিস্তার কোনো সীমাবদ্ধ জনগোষ্ঠীর স্বকীয়তা ও ঐতিহ্যের বাহক নয়। দৈশিকতা ও জাতীয়তা স্থানকালনির্ভর, কিন্তু ধর্ম স্থানকালের বাঁধনে বাঁধা পড়তে রাজি নয়। ফলে, ইসলামের ইতিহাসে একই পতাকাতলে অর্ধ-পৃথিবী ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দৃষ্টান্ত সত্ত্বেও, আজকের পরিবর্তিত সমাজবাস্তবতায় ধর্মভিত্তিক বিশ্বরাষ্ট্র দুর্ঘট। তেমন ঘটনা ঘটলে একনিষ্ঠ ধার্মিকরা একে কল্যাণকর বলে আনন্দের সঙ্গেই গ্রহণ করতেন এবং যূথবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলতে পারতেন ঐকধর্মিক বিশ্বভ্রাত্রিক জাতিসত্তা। কিন্তু যেহেতু তেমন ঘটনা এ অঞ্চলে ঘটে নি বা কোথাও ঘটছে না, তাই, এবং আরো কিছু সঙ্গত কারণে, ধর্মগত ‘মুসলিম’ পরিচয়কে বাংলাদেশবাসীর ‘জাতীয় পরিচয়’ বলে দাবি করা বাস্তবসম্মত নয়।

ইসলাম চিরায়ত মানুষের মাহাত্ম্যের পোষক, লোকায়ত বাঙালির গৌরবের ঘোষক নয়।

তবে কি আমরা প্রথমত এবং প্রধানত বাঙালি? মূল্যবোধ বাদ দিয়ে, দেশের সীমানা না-মেনে, গড়ন-ভাষা-কৃষ্টির ভেদজ্ঞানেই কি পৃথিবীতে আমরা স্বাক্ষরিত করব আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব? যদি করি, তাহলে সে কি বিজ্ঞানসিদ্ধ, বাস্তবানুগ, যুক্তিগ্রাহ্য এবং প্রয়োগযোগ্য হবে? জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব কি সমার্থক? যদি তা-ই হয়, তাহলে এ দু'য়ে শব্দভেদ, অর্থভেদ ও প্রয়োগভেদ কেন? যদি সমার্থক না হয়, তবে শব্দ দু'টোর সংজ্ঞা কী, পরিসর কত, প্রায়োগিক পার্থক্য কোথায়? মানবেতিহাসের ঠিক কোন্ লগ্নে কীসের ভিত্তিতে কিছু মানুষকে আলাদা করে বাঙালি বলে চিহ্নিত করা শুরু হয়েছিল? সর্বোপরি আজ যে এদেশের মানুষ রাজনীতিতে ‘বাঙালি না বাংলাদেশি’ প্রতর্কে দুই মেরুতে ভাগ হয়ে গেল, এর কি কোনো সারবত্তা আছে? কারা আছে সত্যের কাছে, শেকড়ের কাছে? আমাদের মুখ্য জাতীয় পরিচয় শনাক্ত করতে হলে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে এবং বুঝতে হবে।

সংবিধিবদ্ধ জাতীয়তা:

বাংলাদেশের জনগণের জাতীয় পরিচয় বিষয়ে দেশের সংবিধানে গৃহীত সিদ্ধান্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। কেননা জাতির সংবিধান জাতীয় নীতি ও চেতনার ধারক। তবে দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের সংবিধান গোড়া থেকেই একটি প্রশ্নবিদ্ধ ও দুর্বল সংবিধান বলে সমালোচিত। ক্রমাগত সংশোধনের প্রকৃতি ও পরিমিতি, এমনকী সংবিধানভুক্ত জাতীয়তাবিষয়ক মৌলিক সিদ্ধান্তের অস্থিরতাতেও এ দুর্বলতা প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৭০ ও ১৯৭১-এর নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ১৯৭২-এর ২৩ মার্চ গঠিত ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’-এর হাতে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনার দায়ভার অর্পিত হয়। ৪৩০ সদস্যবিশিষ্ট ওই পরিষদের প্রথম অধিবেশনে তখনকার আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্য নিয়ে তৈরি হয় ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি’, যা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশের সর্বস্তরের নাগরিকের আদর্শ ও আশার সর্বাধিক প্রতিফলনের নিশ্চয়তার জন্যে পর্যাপ্ত সময় ও যথেষ্ট সুযোগ না দিয়েই তাড়াহুড়ো করে শেষ করে সংবিধানের খসড়া রচনা এবং গণপরিষদে উত্থাপনের মাত্র ২৪ দিনের মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান বলে গৃহীত হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এত কম সময়ে কোনো প্রজাতন্ত্রের সংবিধান রচনার এটাই বোধহয় একমাত্র নজির। এই সংবিধানই বাহাত্তরের সংবিধান বলে পরিচিত, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী যার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও তখনকার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক আ. স. ম আবদুর রব যাকে একটি ‘বাজে সংবিধান’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া ডান-বাম সকল দল ও সংগঠন কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত ও আপত্তিকর সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও সংবিধানটি কার্যকর হয়েছিল, কারণ সংখ্যাগুরুত্বের জোরে আজকের মতো তখনও আওয়ামী লীগ ছিল একদলীয় মনোভাবে উদ্ধত, ফলে তারা সংবিধান বিষয়ে জনগণের মনের কথা শুনবার খুব একটা প্রয়োজন বোধ করে নি। নিজের মতো করেই সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত রচনা করেছে যে, এদেশের সব মানুষের জাতীয়তা হবে বাঙালি। ভাবখানা এমন যেন বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী চাকমা, সাঁওতাল, মণিপুরী প্রভৃতি অপরাপর সমস্ত জাতি বা উপজাতির লোকজনকে বাকশালীয় পদ্ধতিতে জোর করে বাঙালি বানানো হবে।

বাহাত্তরের সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদে জাতীয়তাবাদ বিষয়ে যে- বাক্যটি যুক্ত হয়েছে, তা অস্পষ্ট এবং অশুদ্ধ। বলা হয়েছে: “ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সঙ্কল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।” কেন ওই বিধিবাক্যটি অস্পষ্ট ও অশুদ্ধ, সংক্ষেপে হলেও তা বলা দরকার।

এক. বাঙালি জাতির চার হাজার বছরের ইতিহাস আছে। যুগে যুগে বহু ত্যাগ, শ্রম, সাধনা ও সংগ্রামের মাধ্যমে আত্মপ্রতিষ্ঠা করেছে বাঙালি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধই তার প্রথম বা একমাত্র যুদ্ধ নয়। এ হল সেই জাতি, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার যাদের শৌর্যবীর্যের খবর শুনে পিছু হটে গিয়েছিলেন। কাজেই ১৯৭১-এর মুক্তিসংগ্রাম ও তজ্জনিত সংহতি বাঙালির গৌরবের ইতিহাসের অংশ, তার অস্তিত্বের ভিত্তি নয়। একাত্তরকে বাঙালির জাতীয়তার ভিত্তি বলার অর্থ ইতোপূর্বকার আবহমানকালের বাঙালিকে ‘ভিত্তিহীন’ সাব্যস্ত করা।

দুই. বাঙালি কেবল বাংলাদেশেই বাস করে না, অন্য দেশেও আছে। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, বিহার, উড়িষ্যা, আরাকান প্রভৃতি বাংলাদেশের বাইরে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বাস করছে কোটি কোটি বাঙালি। বাহাত্তরের সংবিধানে ‘সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি’ বলে অধুনাতন বাংলাদেশের বাঙালির আঞ্চলিক সংহতিকে চিরকালের সকল স্থানের সমস্ত বাঙালির জাতীয়তার ভিত্তি সাব্যস্ত করা হয়েছে, যা নিতান্তই ছেলেমানুষিগোছের হাস্যকর প্রস্তাব।

তিন. জাতিসত্তা গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভাষা ও সংস্কৃতি। সংস্কৃতি শব্দটি এতোই ব্যাপক অর্থবোধক যা মানবজীবনের প্রায় সবকিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে। তবু, দেহকাঠামো এর বাইরে। কারণ সংস্কৃতি হলো মানুষের সুন্দর ইচ্ছার প্রকাশ আর দৈহিক গঠন ইচ্ছাধীন নয়। জাতীয়তাবাদের সবচে’ কার্যকর উপাদান ভাষা, কিন্তু সর্বাপেক্ষা মৌলিক উপাদান হলো নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য। সেটি এখানে বাদ পড়েছে।

চার. ‘সংগ্রাম করিয়া.. যুদ্ধের মাধ্যমে’ মানে কী, ঢের কসরত করেও আমি তার মর্মোদ্ধার করতে পারি নি।

পাঁচ. বাঙালি ছাড়াও বাংলাদেশের সাঁওতাল, চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা, মুরং, হাজং প্রভৃতি প্রায় পঞ্চাশটি অবাঙালি জাতিগোষ্ঠীর অগুনতি মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে নানাভাবে অংশ নিয়েছে, দা-কুড়োল-তীর-ধনুকের মতো সেকেলে অস্ত্রপাতি নিয়ে হানাদারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণোৎসর্গ করেছে দেশের জন্যে। উত্তরবঙ্গে পাকিস্তানিদের প্রধান ঘাঁটি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণের পুরোভাগে ছিলো সাঁওতালরা। ওরাওঁ-সাঁওতাল-মিলিত মুক্তিসেনা দিনাজপুরে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। বৃহত্তর সিলেট জুড়ে ছড়িয়ে থাকা মণিপুরীদের উল্লেখযোগ্য অবদান আছে মুক্তিযুদ্ধে, নন্দেশ্বর সিংহ-বিজয় সিংহের মতো যুবকরা বড় সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, মহেশখালি প্রভৃতি এলাকায় রাখাইনসহ বহু ক্ষুদ্র জাতির মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন হায়েনাদের। চাকমা নেতা মানবেন্দ্রনারায়ণ লারমা সংগঠক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের। আরো বহু বহু উজ্জ্বল নাম আমরা জানতে পারি এবং অনেক নাম জানি না। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, শেরপুর, রাজশাহী ─ সমস্ত দেশ জুড়েই যেখানে যেখানে অবাঙালি জাতিগোষ্ঠীর বসতি, সামান্য ব্যতিক্রম বাদে সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক অনুসন্ধানমূলক বই বেরিয়েছে এ নিয়ে। কাজেই ‘একক সত্তাবিশিষ্ট’ বাঙালি জাতিই কেবল সংগ্রাম করে নি, অবাঙালিরাও এক-আধটু করেছে। সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তাবাদ সন্নিবেশ করে এদেরকে অস্বীকার এবং অসম্মান করা হয়েছে। এটি বাঙালিত্বের কাজ হয়েছে কি না জানি না, তবে মনুষ্যত্বের কাজ যে হয় নি তাতে সন্দেহ নেই।

বাহাত্তরের সংবিধানের এ অনুচিত অনুচ্ছেদটি ১৯৭৭ সালে গৃহীত পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিলোপ করা হয়। সেই সঙ্গে ৬ অনুচ্ছেদে লিখিত ‘বাংলাদেশের নাগরিকরা বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেন’ বাক্যটি শুধরে প্রতিস্থাপিত হয় এ সিদ্ধান্ত যে, ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হইবেন।’ কিন্তু ২০০৫ সালে উচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ৯ অনুচ্ছেদ পুনর্বাসিত হয় এবং ৬ অনুচ্ছেদের নাগরিকত্ববিষয়ক ‘বাংলাদেশের নাগরিকরা বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেন’ বাক্যটি ফিরে পায় নাগরিকত্ব। উচ্চ আদালতের এ রায়ে সঙ্গত কারণেই প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীগণ বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপত্তি উত্থাপন করেন। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসে, উচ্চ আদালতের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধের আদেশ যথার্থ; তবে ‘বাঙালি’ নয়, ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হইবেন।’

অতএব বর্তমানে, অন্তত আরো একটি সংশোধনী যদ্দিন না আসছে, আমাদের বাংলাদেশবাসীদের সংবিধানসম্মত জাতীয় পরিচয় হলো ‘বাংলাদেশি’। তবে সংশোধনী আসবে এবং আসতেই থাকবে। সংবিধান সংশোধনের দুয়ার খোলা, এ অবকাশ কেউ নাকচ করে না। মজার ব্যাপার হলো, যদি ভুল করে আবার ‘বাংলাদেশি’কে 'বাঙালি’ বানানো হয়, তবে সেই ‘ভুল’কেও বলা হবে ‘সংশোধনী’। সংবিধান বড়ই আশ্চর্য বস্তু ─ এটি আজন্মকাল ধরে ক্রমাগত সংশোধনের পর সংশোধন হতে থাকে, তবু এ পাক কিতাবে ভুলত্রুটি আছে বলে দাবি করবার সুযোগ থাকে না।

জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব:

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিট্যানিকায় জাতীয়তার সংজ্ঞা: ‘মেম্বারশিপ ইন অ্যা ন্যাশন অর সভেরেইন স্ট্যাট’ ─ জাতি বা সার্বভৌম রাষ্ট্রের সদস্যতা; আর উইকিপিডিয়া বলছে: ‘ন্যাশনালিটি ইজ দ্য লিগ্যাল রিলেশনশিপ বিটুয়িন অ্যান ইনডিভিজ্যুয়াল হিউম্যান অ্যান্ড অ্যা স্ট্যাট’ ─ ব্যক্তিবিশেষ ও রাষ্ট্রবিশেষের মধ্যকার বিধিগত সম্পর্কই জাতীয়তা। উইকিপিডিয়ায় নাগরিকত্ব সম্পর্কেও ওই একই কথা, অর্থাৎ জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব সমান। তবে প্রথমোক্ত বিশ্বকোষে নাগরিকত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি রাষ্ট্রের প্রতি ব্যক্তির নিষ্ঠা, অধিকার, দায়িত্ব ও জবাবদিহিমূলক সম্পর্ক।

বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃত এ দু’টি বিশ্বকোষ ‘জাতীয়তা’র সংজ্ঞায় ‘দেশ’কে জুড়ে দিয়েছে। কেন দিয়েছে, আমরা তা ব্যাখ্যা করতে পারি। দূর অতীতে একসময় রাষ্ট্র ছিল না, মানুষ তখনো ছিল জাতিভুক্ত। জাতি আছে আজো, কিন্তু আজ তা প্রথাগত পরম্পরাগত ঐতিহ্যগত ─ অবধারিত নয়। সময় বদলে গিয়েছে এবং ক্রমে তখনকার জাতির অনিবার্য জায়গা দখল করে নিয়েছে এখনকার রাষ্ট্র। আধুনিক পৃথিবীতে বহুজাতিক রাষ্ট্র আছে, বহুরাষ্ট্রিক জাতিও আছে। আরব জাতি একটি বহুরাষ্ট্রিক জাতি এবং ভারত একটি বহুজাতিক রাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত। কোনটি বড়, জাতি না রাষ্ট্র? রাষ্ট্র। ব্যবহারিক বিচারে, গুরুত্বের নিরিখে, রাষ্ট্রই বড়। কেননা রাষ্ট্র স্পষ্ট, জাতির চে’। সুচিহ্নিত গঠন ও উজ্জ্বল স্বাতন্ত্র্যের বলে নতুন রাষ্ট্রকাঠামো পুরাতন জাতিত্ব ছাপিয়ে দিনে দিনে বলীয়ান হয়ে উঠেছে। যোগাযোগপ্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির ফলে জাতিতে জাতিতে মিশ্রণ ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটছে বিশ্বময়। বিচিত্র সম্পর্কে মানুষ আসছে মানুষের কাছে অবাধে, ক্রমে কমে আসছে নৃবৈজ্ঞানিক-সাংস্কৃতিক দূরত্ব। হাজার বছর আগে যেমন এখনকার মতো দেশ ছিল না, হাজার বছর পরে তেমনি জাতিভেদ থাকবে না। মানুষ ফিরে যাবে তার শেকড়ে। সে হবে মূলতই মানুষ, কেবলই মানুষ। সৃষ্টির প্রভাতে মানুষ যেমন মানুষ ছিল, মানুষ ফিরে যাবে তার সেই আদি ও আসল পরিচয়ে। বাঙালি-বিহারি অস্ট্রালয়েড-নিগ্রোয়েড মিলেমিশে একাকার হবে সেই দিন। শক হুন দল পাঠান মোঘল এক দেহে হবে লীন। প্রতিষ্ঠা পাবে মানুষের জাতীয়তা, মানবিক জাতীয়তাবাদ।

আসলে ‘মানুষ’ ছাড়া মানুষের আর যত পরিচয়, কিছুই মানুষের মতো নয়। ক্ষণিক ও কৃত্রিম সেগুলি। সত্যেন্দ্রনাথের কথায় সেসব কেবল ‘বাহিরের ছোপ’। ‘জাতীয় স্বকীয়তা’ আপাতচোখে সুন্দর, কিন্তু কবির গভীর চোখে তা সুন্দর নয়। তিনি একে বলেছেন ‘কৃত্রিম ভেদ’। বলেছেন ─

জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে সে জাতির নাম মানুষ জাতি;

এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত একই রবি-শশী মোদের সাথী।

.. .. ..

বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ ভিতরের রং পলকে ফোটে,

বামুন শূদ্র বৃহৎ ক্ষুদ্র কৃত্রিম ভেদ ধূলায় লোটে।

বংশে বংশে নাহিক তফাত বনেদি কে আর গর-বনেদি,

দুনিয়ার সাথে গাঁথা বুনিয়াদ দুনিয়া সবারই জনম-বেদী।”

সেই মহা ঐক্যের পথেই হাঁটছে পৃথিবী, সন্তর্পণে। সীমারেখা ম্লান করে অনেক দেশ এক হয়ে গড়ছে বৃহত্তর সাম্প্রীতিক বলয়। ভাষায় ভাষায় বাড়ছে বিনিময়, ঘটছে মেলবন্ধন। দেশ ও দেশাত্মবোধ এবং জাতি ও জাতীয়তা তো এসেছে শৃঙ্খলার প্রয়োজনে। কিন্তু অপরিমেয় সময় ও সম্ভাবনা পড়ে আছে মানবজাতির সামনে। এমন কোনো বিশ্বব্যবস্থা যদি কখনো রচিত হয় যেখানে শান্তি-শৃঙ্খলার জন্যে দেশের দরকার নেই, কিংবা যদি পরিচয় হয় ভিনগ্রহবাসী বুদ্ধিমান কোনো প্রাণীর সঙ্গে, তখন পরস্পরের সকল ভেদ ভুলে এ সবুজ পৃথিবীর মানুষজাতি এক জাতিতে পরিণত হতে দ্বিধা করবে বলে মনে হয় না।

এভাবে চিন্তা করলে আমরা দেখি যে, শৃঙ্খলা ছাড়া জাতীয়তার আর কোনো তাৎপর্য নেই।

এ জাতীয়তা থেকে ─ যার অর্থ আমরা নিয়েছি জাতির সদস্যতা ─ এসেছে জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদ মোটেই এক জিনিস নয়। কার্যত এ দুয়ে দুস্তর ফারাক, তবে তা সূক্ষ্ম, ফলে শাব্দিক পার্থক্য সব ভাষায় লভ্য নয়, যেমন ইংরেজিতে জাতীয়তার জন্যে ন্যাশনালিটি আর জাতীয়তাবাদ বুঝাতে ন্যাশনালিজম শব্দ প্রযোজ্য, কিন্তু আরবীতে উভয়ের জন্যেই ‘ক্বাউমিয়্যা’ বা ‘জিনসিয়্যা’; আসলে গূঢ় শব্দগত ও সংজ্ঞাগত পার্থক্য পরিষ্কার করে দেখানো কঠিন কাজ। রাষ্ট্রতত্ত্বের পণ্ডিতরা শব্দ দু’টোর সংজ্ঞা যেভাবে দেন, পাশাপাশি রেখে পরীক্ষা করলে জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদে কোনো ফারাক আছে বলে মনে হয় না, অথচ তা আছে। যেমন ব্রিটিশ রাষ্ট্রতত্ত্ববিদ হ্যারল্ড জোসেফ লাস্কি বলেছেন: “জাতীয়তা একটি মানসিকতার ব্যাপার যা কোনো জনগোষ্ঠীকে অবশিষ্ট মানবজাতি থেকে আলাদা করে।” জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞায়ও ওই একই কথা একটু টেনে বলা হয়েছে : “জাতীয়তাবাদ হল কোনো জনসমাজের মধ্যকার মানসিক অনুভূতি ও পারস্পরিক বন্ধনের চেতনা, যার ফলে তারা নিজেদেরকে অভিন্ন সত্তার অধিকারী এবং অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র বলে মনে করে।” অর্থাৎ ‘মনে করা’ই জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদের সারমর্ম ─ নিজেদেরকে ‘এক’ এবং অন্যদের থেকে ‘আলাদা’ মনে করা। কিন্তু আমরা মনে করি, যেহেতু দু’টি বস্তুতে বস্তুতই বিশাল ভিন্নতা বিদ্যমান, তাই এগুলোর সংজ্ঞাতেও ব্যবধান দরকার। কাজেই আমরা প্রতিপাদ্য দু’টো বিশ্লেষণ করব এবং এগুলোর মর্ম, কর্ম ও তারতম্য ধরতে চেষ্টা করব।

জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদ:

জাতীয়তা মানে শ্রেণিচৈতন্য। যে-কোনো মানবগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তরাই অবস্থা ও বৈশিষ্ট্যের ঐক্যের নিরিখে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক আত্মীয়তা বা নৈকট্যের বিশেষ বন্ধন অনুভব করে ─ এ বৈশিষ্ট্যের বোধ ও পারস্পরিক বন্ধনের চেতনার নামই জাতীয়তা। কিন্তু এটি জাতীয়তাবাদ নয়। কেননা শ্রেণিচৈতন্য মাত্রকেই জাতীয়তাবাদ বলা যায় না। সে কারণেই দলবদ্ধভাবে জীবনযাপনকারী জীবমাত্রেই জাতীয়তা আছে, এমন সবাই ‘জাতীয়’ জীব, কিন্তু সকলেই জাতীয়তাবাদী নয়। কারণ তাদের মধ্যে জাতীয়তা থাকলেও জাতীয়তাবাদ নেই।

জাতীয়তাবাদ হল, জাতীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ এমন জনগোষ্ঠীর পৃথক, অনন্য ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত জাতিসত্তা হিসেবে বিদ্যমানতার বোধ ও উৎকর্ষের আকাক্সক্ষা। জাতীয়তার বোধ থেকেই জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়, যখন তাতে উৎকর্ষের আকাক্সক্ষা ও শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকা যুক্ত হয়। অতএব এটা স্পষ্ট যে, জাতীয়তা ছাড়া জাতীয়তাবাদের অস্তিত্বই অসম্ভব; অপরপক্ষে, জাতীয়তার সম্ভাবনার জন্যে জাতীয়তাবাদের কোনো প্রয়োজন নেই।

আমাদের জাতীয় পরিচয়:

বাংলাদেশে প্রায় ষোল কোটি মানুষ। পৃথিবী জুড়ে যে- মানুষজাতি আছে, আমরা ষোল কোটিও তাদের সঙ্গে আছি, তাদের অন্তর্ভুক্ত আছি। তবু আমাদের আরো কিছু আছে, যা দিয়ে ‘আমরা’ বোধ ও শব্দটি গঠিত হয়েছে, যা আমাদের সংহত ও একাত্ম করেছে। সে আমাদের জাতীয় পরিচয়, স্বীয় স্বকীয়তা, জাতীয় নাম। কী সেই নাম? মুসলিম, না বাঙালি, নাকি বাংলাদেশি? এ প্রশ্নের উত্তরে বিতর্ক অনেক হয়েছে, এবার সতর্ক হওয়া দরকার। বোঝা দরকার, পরিচয় অনেক হতে পারে, তবে প্রধান জাতীয় পরিচয় একটাই হওয়া চাই ─ আর তা হওয়া উচিত সত্যিই প্রাধান্যের যোগ্য, যৌক্তিক, বাস্তবভিত্তিক এবং এ নিয়ে সংশয় ও অনৈক্য কাক্সিক্ষত নয়। এখন, ‘আমাদের প্রধান জাতীয় পরিচয় কী’ এ প্রশ্নের উত্তরের আগে, উত্তরটির শুদ্ধতা যাচাইয়ের মাপকাঠি কী সেটা জানা দরকার। আপনি যদি সচেতন ও বুদ্ধিমান হন, তাহলে নিশ্চয়ই বলবেন: ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের মুখ্য জাতীয় পরিচয়বাচক নামটি অবশ্যই এমন ব্যাপক হওয়া দরকার যা বাংলাদেশের সব মানুষকে ধারণ করতে পারে। কিংবা হয়ত, দূরদর্শী জ্ঞান থেকে আরেকটু যোগ করবেন: ‘যার আওতা দেশের একজন মানুষকেও বাইরে রাখবে না এবং বিদেশি-বিজাতীয়দের অন্তর্ভুক্ত করবে না।’

এই সর্বজনীনতার নিরিখে, আমরা বাঙালি হলেও আমাদের জাতীয় পরিচয় বাঙালিত্ব নয় ─ কারণ বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ বাঙালি, তাই বাঙালিত্বকে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় সাব্যস্ত করলে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, গারো, মণিপুরি প্রভৃতি অন্তত ২৭টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১৪ লাখ নাগরিককে জাতিবহির্ভূত গণ্য করে উপেক্ষা করা হয়, অথচ তারা এদেশে পুরুষপরম্পরায় দীর্ঘ দীর্ঘ কাল ধরে বসবাস করছে এবং দেশ গঠন ও উন্নয়নে সাধ্যমতো ভূমিকা রেখে আসছে। একইভাবে, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ অধিবাসী মুসলিম এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম পরিচয় আমাদের রাষ্ট্রীয় পরিচয় নয়, কেননা এর ফলে দেশজ অমুসলিমদেরকে বহির্গত ধরা হয় এবং ইসলামী আন্তর্জাতিক উম্মাহ-চেতনার দাবি অনুযায়ী দুনিয়ার দু’শো কোটি মুসলিমের সঙ্গে একাকার হয়ে যেতে হয়। স্বীকার্য যে, বাংলাদেশের জনগণ সরল ধর্মনিষ্ঠ এবং নিত্যকার জীবনাচরণে আমাদের মুসলিম সত্তাই সর্বত্র প্রকটিত; একই সঙ্গে বাঙালি হিসেবেও আমরা হাজার হাজার বছরের গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক, আমরা বিশ্ব-ইতিহাসে স্বীকৃত খ্রিস্টপূর্বকালীন গঙ্গাঋদ্ধির ঋদ্ধ ও পরাক্রমশালী জাতির বংশধর, সাম্প্রতিক চল্লিশ-সাতচল্লিশ-বায়ান্ন-ছেষট্টি-ঊনসত্তর-একাত্তরের কালপঞ্জির পাতা আমাদের ত্যাগে কীর্তিত, রক্তে রঞ্জিত ও গৌরবে আলোকিত হয়ে আছে ─ কাজেই ইসলামের শাশ্বত শান্তিময় জীবনাদর্শ আত্মায় প্রতিষ্ঠা করে যেভাবে আমরা আমাদের বৈশ্বিক আত্মপরিচয় অর্জন করেছি, তেমনি শক্তিমান বাঙলাভাষা ও সমৃদ্ধ বাঙালি সভ্যতা-সংস্কৃতি-শিল্প-সঙ্গীতের উত্তরাধিকার বহন করে আমরা গৌরবান্বিত হয়েছি। কিন্তু মুক্তিসংগ্রাম সার্থক করে যখন আমরা আমাদের ভূখণ্ডকে স্বাধীন করেছি, গড়েছি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ, তখন থেকে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় আমাদের নতুন পরিচয় দাঁড়িয়েছে ─ আমরা বাংলাদেশি। এ বাংলাদেশি পরিচয় নিয়েই আমরা দু’শো কোটি মুসলিম জনতার ভিড়ে নিজস্ব মানচিত্র দিয়ে আত্মচিহ্নিত হতে পারি, বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে দাঁড়িয়েই কেবল ছাব্বিশ কোটি বাঙালির মধ্যে আমরা সার্বভৌম জাতিসত্তা হিসেবে আমাদের বিশিষ্ট পরিচয়কে ঊর্ধে তুলে ধরতে পারি। অতএব ইসলাম আমাদের মূল্যবোধের উৎস ও জীবননীতির নির্দেশক, বাংলাভাষা ও বাঙালি কৃষ্টি আমাদের গৌরবময় উত্তরাধিকার এবং ‘বাংলাদেশি’ আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়।

──────────────────

আবদুল হক; কবি ও প্রাবন্ধিক। মুঠোফোন: ০১৭৩৫৫৩০০০০ ইমেইল:

বিষয়: সাহিত্য

১২৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File