মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের করুণ আকুতি- যৌন কেলেঙ্কারীর নায়ক ড. শাহিনকে প্রো-ভিসি নিয়োগ দিয়ে আত্মত্যাগকারী মেধাবী ছাত্রী লিপির আত্মাকে কষ্ট দিবেন না
লিখেছেন লিখেছেন নাওমী ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:০৫:৩১ রাত
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
আপনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা। দেশ পরিচালনায় আপনার বিচক্ষণতা সর্বমহলে প্রশংসিত। আর্ন্তজাতিক বিশ্বেও ঈর্ষার পাত্র হয়ে উঠেছে আপনার দুঃসাহসী নেতৃত্ব। একজন নারী হিসেবে আপনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রীর ‘মা’। দেশের নারীদের সম্মান-সম্ভ্রম রক্ষার দায়িত্ব আপনার। ক্ষমতাধর হওয়া সত্বেও আপনি ভিকারুন্নেছা স্কুলের ছাত্রীকে ধর্ষনকারী নরপশু পরিমলকে শাস্তির আওতায় এনেছেন। আপনার শাসনামলে নারী জাতির প্রতি অবমাননাকারী কোন নরপশু পুরুস্কৃত হয়নি। কিন্তু একটি সংবাদ আজ আমাদের মাঝে আতঙ্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সেটি হলো বহু ছাত্রীকে যৌন নিপিড়নকারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক ড. শাহিনুর রহমানকে আপনার অজ্ঞাতে ইবির প্রো-ভিসি পদে নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা। আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি ড. শাহিনুর রহমানকে ইবির প্রো-ভিসি নিয়োগ দিতে পাইল এখন আপনার দপ্তরে রয়েছে। ইবির সাংবাদিকরাও ড. শাহিনুর রহমানের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নিরব রয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের শেষ ভরসা আপনি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহায় ছাত্রীরা আপনার একটি সিদ্ধান্তের প্রহর গুনছে। আমাদের বিশ্বাস আপনি নারী নির্যাতনকারী শিক্ষক নামের কোন নরপশুকে পুরুস্কৃত করবেন না। ড. শাহিনুর রহমানকে প্রো-ভিসি পদে নিয়োগ দিয়ে ইবির আত্মহত্যাকারী মেধাবী ছাত্রী লিপির আত্মাকে কষ্ট দিবেন না। নিম্মে ড. শাহিনুর রহমানের অনৈতিক কার্যক্রমের কিছু তথ্য আপনার জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হলো।
ইবির ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক ড. শাহিনুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক যৌন কেলেঙ্কারী, পিএইচডি জালিয়াতি, একাডেমিক দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, অর্থ আত্মসাতসহ অন্তত: এক ডজন গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অসংখ্য নাটকীয় ঘটনার জম্ম দিয়েছেন এই শিক্ষক। যৌন কেলেঙ্কারীর কারণে প্রথম স্ত্রী তালাক দিয়েছেন এই শিক্ষককে। পরবর্তীতে নিজ বিভাগের ছাত্রীকে ব্ল্যাক মেইল করে বিয়ে করে তাকে আবার ইংরেজী বিভাগের শিক্ষকও বানিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ১০ অক্টোবর শাহিনুর রহমানের প্রতিহিংসার বলি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধাবী ছাত্র মহসিন বহিস্কৃত হয়েছেন। মুলত: ইংরেজী বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মহসিনের প্রেমিকা সালমা সুলতানাকে আস্থায় আনার জন্য ড. শাহিন ষড়যন্ত্র করে মহসিনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করিয়েছেন।
লিপির আত্মহত্যা
২০০৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী রহস্যজনকভাবে ইংরেজী বিভাগের ৪র্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্রী তানজুর নাহার লিপি আত্মহত্যা করে। মেধাবী ছাত্রী লিপির আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে। ওই সময়কার জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় লিপির আত্মহত্যার কারণ নিয়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশিত হয়। শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্য থেকে অভিযোগ ওঠে প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমানের যৌন লালসার শিকার হয়ে মেধাবী ছাত্রী লিপি আত্মহত্যা করে। এনিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে লিপির আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানের দাবি জানায়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তৎকালীন বিএনপিপন্থী ভিসি প্রফেসর ফয়েজ মুহাম্মদ সিরাজুল হক এব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করে। লিপির লাশের ময়না তদন্ত ছাড়াই কবর দিয়ে দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। লিপির আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কের জেরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ছুটি নিয়ে ড. শাহিনুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। সেখানেও একাধিক বিতর্কের জম্ম দিয়ে যোগ দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। লিপির আত্মহত্যার ঘটনার জেরে আজ পর্যন্ত কার্যত: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্বাসিত জীবন-যাপন করছেন এই শিক্ষক।
পিএইচডি জালিয়াতি
২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমানের পিএইচডি জালিয়াতি প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সিন্ডিকেট সদস্যের সমন্বয়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে ড. শাহিনুর রহমান দোষী প্রমাণিত হন।
২০০৫ সালের ২৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮২তম সিন্ডিকেট সভায় পিএইচডি জালিয়াতির অভিযোগে ড. শাহিনুর রহমানকে শাস্তি স্বরুপ তার পিএইচডির সুপারভাইজার শীপ বাতিল করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ আমজাদ হোসেন ও একই অফিসে শাখা কর্মকর্তা আরিফ মোল্যাকে ওএসডি করা হয়। ড. শাহিনুর রহমান সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিটের পরিপেক্ষিতে আদালত তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে মামলাটি দীর্ঘ দুই বছর ঝুলে থাকে। এই সময়ের মধ্যে তৎকালিন ভিসি প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম এর স্থলে ইংরেজী বিভাগের প্রফেসর ফয়েজ মুহাম্মদ সিরাজুল হক ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান। বিএনপিপন্থী ভিসি প্রফেসর ফয়েজ মুহাম্মদ সিরাজুল হকের আর্শিবাদ পেয়ে তারই সহকর্মী ড. শাহিনুর রহমান পিএইচডি জালিয়াতি থেকে অব্যাহতি পান।
অভিযোগ রয়েছে ভিসি প্রফেসর ফয়েজ মুহাম্মদ সিরাজুল হক পিএইচডি জালিয়াতির অভিযোগ থেকে কৌশলে ড. শাহিনুর রহমানকে বাঁচিয়ে দেন। রিটের বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শক্তিশালী ভূমিকা না রেখে পর পর দুটি শুনানিতে অনুপস্থিত থাকে। ভিসি প্রফেসর ফয়েজ মুহাম্মদ সিরাজুল হকের আর্শিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় এ মামলায় ইচ্ছেকৃত ভাবে হেরে যায়। শুধু তাই নয় মামলা চলাকালিন অবস্থায় বিএনপিপন্থী ভিসির অনুকম্পায় ২০০৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানবিক ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন নিয়োগ পান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
আমরা জানি ড. শাহিনুর রহমানের কালো হাত অনেক সম্প্রসারিত। তাই আজকের এই চিঠিতে আমাদের নাম পরিচয় উল্লেখ করতে পারছি না। অনুগ্রহ করে আপনি সকল বিষয় পর্যালোচনা করে এবং ড. শাহিনুর রহমানের ব্যাপারে সকল তথ্য নিয়ে আমাদেরকে মুক্তি দিবেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন