মায়ের কাছে খোলা চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে বেলাল ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৫৩:৩৮ রাত
প্রিয় মা,
মা তোমার চাঁদ মুখখানি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে! কেমন আছো? জিজ্ঞেস করলেই তো বলবে—এসে দেখে যা! কিন্তু এখন যে আসতে পারবো না! খুব কষ্টে আছি মা! ভীষণ কষ্টে। সত্যকে ‘নাশে’ মিথ্যার জঙ্গি আস্ফাালন দেখে কে ভালো থাকে মা! তোমার লাখো সন্তান আজ ভালো নেই!
মা, টিভিতে সংঘর্ষের দুঃসংবাদ দেখলেই মোবাইলে কাঁপা কাঁপা স্বরে জানতে চাও ‘বাবা, কেমন আছো!’ উপদেশ দাও, ‘কোনো দিকে বের হইয়ো না বাবা, সব মায়ের বুক ভরা থাকুক’! আমি বলি সমাজ অন্ধদের অধিকারে চলে গেলে মায়ের বুক ভরা থেকে কী হবে মা?
শৈশবে শিখিয়েছিলে, ‘মিথ্যা কথা বলব না, মিথ্যার প্রশ্রয় দিব না।’ বলো মা, এই যে দেখছো মিথ্যাবাদীরা একতাবদ্ধ হয়ে অদম্য সত্যকে নাশ করার উচ্চাবিলাসী দিবাস্বপ্ন দেখছে তা সহ্য করা যায়?
মা, মিথ্যা আসলেই ঠুনকো ফেনায় ভাসে। দেখো, শাহবাগে জড়ো হওয়া হাজারও তারুণ্যের আবেগকে প্রতারিত করে তাদের বিশ্বাসে ধুয়া দিয়ে কীভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র মিথ্যাকে সত্যরূপে প্রতিপন্ন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে?
প্রগতির নামধারী উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল জনবিচ্ছিন্ন কিছু আদর্শচ্যুত বামপন্থী শাহবাগের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে। অথচ এরা গত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতীকে নির্বাচন করে জামানত বাঁচিয়েছে। টেলিভিশনে ‘ধরো ধরো, জবাই করো/জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো’র মতো জঙ্গি মার্কা স্লোগান দিচ্ছে।
মা, এরা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বিভ্রান্ত করে জনবিচ্ছিন্ন বানানোর পাঁয়তারা করছে। যারা একাত্তর সালের অবিসংবাদিত বঙ্গবন্ধুকে ’৭৫ সালে ‘বঙ্গশত্রু’ বানিয়ে তার গায়ের চামড়া দিয়ে ‘ডুগডুগি বাজানোর’ দুঃসাহস দেখিয়েছে। ওরা, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে পরামর্শ দিচ্ছে। বাতিল করতে বলছে সংবিধানের কোরআন ও ইসলামবান্ধব সব আইন।
আদর্শগতভাবে দেউলিয়ারা ধর্ম বিশ্বাসের বিরোধিতা করে আসছে এবং করবে। তাই বলে যারা কোরআন, ইসলাম, দেশপ্রেমের কথা বলে যৌবনের স্বর্ণালী সময়গুলো কাটিয়ে বার্ধক্যের অলঙ্কৃত জীবনে পৌঁছেছেন তাদের মৃত্যুদণ্ড কামনা করে! এটা স্বয়ং আল্লাহ কীভাবে সইছেন? বলতে পারো মা?
মা, ভোর যখন বাড়তে থাকে শেয়াল কী তখন মিথ্যাবাদীদের মতো এমনই আস্ফালন দেখায়? নিরপেক্ষ সাংবাদিকরা (!) সাংবাদিকতার নৈতিকতার চরম-লঙ্ঘন করে কথিত আন্দোলনে সর্বসমর্থন যুগিয়ে যায়!
মা, ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা প্রতারিত হাজারও মানুষ যখন ৫০ বছর পরও আসল সত্য জানতে পারবে, তখন কী জবাব দেবে এই মিথ্যাবাদীরা? যদি সমাধিস্থল থেকে উঠিয়ে এসব প্রতারক, মিথ্যাবাদী, ভণ্ড, সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকের কাছে জবাব চাওয়া হয় কী উত্তর দেবে তারা?
মা, দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো বস্তুনিষ্ঠ (!) হলেও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো একেবারেই অসত্! ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ ক’দিন আগে স্কাইপ কেলেঙ্কারি প্রকাশ করে দিল, শাহবাগের পাতানো নাটককে বলল সংবাদ মাধ্যমের ব্যাপক প্রচার এবং সরকারের সহযোগিতার ফল। জানিয়ে দিল বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আন্দোলনে অংশ নেয়া তরুণদের অজ্ঞতার কথাও।
সত্য কথা বলার লোক বাংলাদেশে নেই বললেই চলে, থাকবে কেন? কে চায় ‘খতম হয়ে যেতে’? কে চায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা খেয়ে বন্দি জীবনযাপন করতে? আবার যে ক’জন বলতে চাইছেন তারাই তো হয়ে যাচ্ছেন দেশদ্রোহী, রাজাকার! তুলে নেয়া হচ্ছে তাদের পিঠের চামড়া! মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হিসেবে প্রাপ্ত উপাধি কেড়ে নেয়ার হুমকি।
হ্যাঁ মা, এই দেশে এখন সরাসরি জনসমাবেশেই কোনো পত্রিকার সম্পাদককে ‘খতম করার’ হুমকি দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘পিঠের চামড়া’ তুলে নেয়ার ধৃষ্টতা দেখানো হয়।
মা, এতগুলো কথা বললাম কেনো? যাতে বোঝো তোমার খোকা মানিক এখন দেশ নিয়ে ভাবতে শিখেছে। শুধু ভাবতে শিখেনি। তোমার লাখো খোকারা এখন দেশ আর বিশ্বাসের জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত! কী মা চোখে পানি কেনো?
কাঁদতে নেই মা, একাত্তরে এমন লাখো মা অশ্রু ঝরিয়েছিল বলেই আজ আমি তোমার উদর বেয়ে সুন্দর পৃথিবীতে। আবার না হয় একাত্তর আসুক! আবার এমন লাখো মা কাঁদুক!
দোয়া করো মা! যে লড়াই শুরু হয়েছে, সে লড়াই বিশ্বাস, দেশ আর মাটি বাঁচানোর। আমরাই চূড়ান্ত জয়ী হব।
চাঁদের হাসি ঢাকা পড়ুক মাগো তোমার হাসিতে
তিমির আঁধার হারিয়ে যাক ধ্রুব আলোর রাশিতে।
published at daily Amar Desh
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/02/25/189438#.USt6D_L9_z8
বিষয়: বিবিধ
১২৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন