নায়ক হওয়ার স্বপ্ন
লিখেছেন লিখেছেন কাজী যুবাইর মাহমুদ ২৪ জুলাই, ২০১৩, ১১:৫৩:১২ সকাল
ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম নায়ক হবো বলে কিন্তু নামের সাথে খান না থাকায় আমার নায়ক হওয়া ছিলো আমার নিজের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ আমার বিশ্বাস শাকিব খান, শাকিল খান, আমিন খান, সালমান খান, শাহরুখ খান, আমির খানসহ এমন হাজারো খানের ভীড়ে বাউণ্ডুলে কাজী নাম নিয়ে নায়ক হতে চাওয়া মানি নিজের ইজ্জতের শেষ সম্বলটুকুও খান খান করে দেওয়া। তবুও আশা ছিলো কিন্তু যেদিন পাশের বাড়ির জব্বার চাচার মেয়ে এলাকার আলতা সুন্দরী হিসেবে খ্যাত মিস শিউলি আকতার স্কুল যাওয়ার পথে ডাক দিয়ে বলেছিলো- : কাজী ভাই, গতকাল টিভিতে বানরের খেলা দেখানোর সময় কারেন্ট চলে যাওয়াতে ভালভাবে দেখতে পারিনি কিন্তু আজ আপনাকে দেখে সেই বানর না দেখার আফসোস কিছুটা হলেও কমেছে। সেদিন শিউলিকে আমি কিছুই বলিনি তবে নিজেকে বুঝাতে পেরেছি যে আর যাই হোক এই বানর মার্কা চেহারা দিয়ে নায়ক হওয়া যাবে না। কিন্তু কবির "পারিব না এ কথাটি বলিও না আর" এ ছন্দে উৎসাহিত হয়ে আমি আবারো চেষ্টা শুরু করলাম নিজের চেহারাটাকে একটু ঘসা-মাঝা করে কিছু করা যায় কিনা। সিনেমায় দেখলাম নায়কদের চুলগুলা কেমন কালার করা একটু লালচে বাদামী, আর ঠোঁটগুলো একটু লাল লাল কয়েক জন নায়কের কানে দেখলাম আবার কানের দুলও আছে। ভাবলাম নায়ক হতে হলে আমার সুরত মুবারক এদের মতো করতে হবে। বিকালে আম্মার বালিশের তলা থেকে ১২৫ টাকা চুরি করে কসমেটিকসের জন্য বিখ্যাত আমাদের স্থানীয় হক স্টোরের আব্দুল হক ভাই এর কাছ থেকে ভাবির কথা বলে একটা লিপস্টিক; একটা কানের দুল আর চুল রঙিন করার একটা হেয়ার কালার নিলাম। পরদিন সকালে উঠে গোসল সেরে নিয়ে চুলে কালার এমন ভাবে লাগিয়েছি যে চুল পুরাই লাল হয়ে গেছে। এরপর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগলাম। আমার এক কানে আগে থেকেই ছিঁদ্র করা ছিলো বলে কানের দুল পড়তেও খুব একটা সমস্যা হয়নি তবে সমস্যা হলো তখন যখন আমি ঘর থেকে বের হয়ে আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজানের সামনে পড়লাম। উনি আমাকে দেখেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন- : কাজীর মা, কই গেলা পোলা তো আমার পাগল হইয়া গেছে। কতদিন কইছি ওরে তেঁতুল গাছের তলা দিয়া রাইত-বিরাইতে একলা না হাঁটতে। মনে হয় তেঁতুল গাছের ওই পেত্নিটাই আমার পোলারে আছর করছে। তাড়াতাড়ি আসো, দেইখা যাও, তোমার পোলা পেত্নির বেশ ধরছে। আম্মা ঘর থেকে আসার আগেই আমার চাচা ও বড় মামা একটা দড়ি দিয়ে আমাকে ঘরের খুটির সাথে বেধে ফেলে। ওরা আমার কোন কথাই শুনতে চাইলো না। এদিকে ভূত নামানোর জন্য আমার দরদী আব্বাজান খুব দ্রুত এক হুজুরকে নিয়ে এলেন। হুজুরের হাতে আমাদের বাড়ির উঠান কুড়ানোর সেই ঝাড়–খানা দেখে আমি সেই যে জ্ঞান হারালাম এরপর জ্ঞান ফিরলো একদিন পর। জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম আমি খাটের উপর শুয়ে আছি আমার চারপাশে অনেক মানুষ। আব্বা-আম্মা আমার পাশে বসে আছে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক আত্মীয়-স্বজন আমাকে দেখতে এসেছে। অনেকের মধ্যে দেখলাম শিউলিও আছে। সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিতেছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ঝাড়–র আঘাতে দাগ হয়ে গেছে। সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করলাম । মাথায় হাত দিয়ে দেখি চুল নাই। আমার মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে। এরপর আর কখনো নায়ক হওয়ার সাধ জাগেনি। তবে কিছু দিনের জন্য আমি নায়ক ছিলাম এলাকার দুষ্ট ছেলেদের কাছে। ন্যাড়া মাথার কারণে ঘর থেকে বের হলে মাথায় ক্যাপ অথবা রুমাল দিয়ে বেধে বের হতাম কিন্তু তবুও এলাকার বদের হাড্ডি এই দুষ্ট ছেলেরা আমার একটা উপাধি দিয়ে দিলো- নায়ক টাক্কু কাজী।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন