প্রিয়তমাকে লেখা শেষ প্রেমপত্র!!
লিখেছেন লিখেছেন কাজী যুবাইর মাহমুদ ২৪ জুলাই, ২০১৩, ০১:২৪:১১ রাত
প্রিয়তমা,
মিস শিউলি খানম
লিপির প্রারম্ভে তোমাকে জানাই দুপুরের কড়া রোদে শুকিয়ে বাসি হয়ে যাওয়া গান্ধা ফুলের বিস্তর শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। কেমন আছো তুমি? আমি কিন্তু ভাল নেই। আর ভাল থাকিইবা কী করে! শুনলাম তুমি নাকি আমাকে ভুলে তোমার দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই আলামত উল্যাহ আবুলের সাথে প্রেম করছো। শিউলি, আমি ভেবে পাই না; ইতিহাস বিখ্যাত প্রেমিকা লাইলী বানুর প্রেমিক মজনু মিয়ার চাচাতো ভাইয়ের শ্যালকের নাতির আপন ভাতিজা এই কাজী যুবাইরকে তুমি কি করে ভুলে গেলে? ভাবতে বড় অবাক লাগে যে তুমি একদিন আমাকে বলেছিলে আমাকে ছাড়া তুমি এক মূহুর্তও বাঁচবে না আর সে তুমি আজ আমাকে দেখলেই বাঁচ না। শিউলি তোমার মনে আছে কি? আমাদের ভালবাসার প্রথম দিবসে তুমি আমার হাতে তোমার ঠ্যাং রেখে; থুক্কু হাত রেখে কথা দিয়েছিলে- "প্রয়োজনে বঙ্গপোসাগরের বেবাক পানি শুকাইয়া পোলাপাইনের ফুটবল খেলার স্টেডিয়াম হয়ে যেতে পারে তবুও তোমার হদয়ে যে ভালবাসার ঘর আছে সেখানে আমি ছাড়া আর অন্য কেউ বসত করতে পারবে না।" কিন্তু হায়!! পিরিতের কী নির্মম বাইছলামি, আজ তোমার বর্তমান প্রেমিক আবুল সেই ভালবাসার ঘর থেকে আমাকে বের করে ঘরখানা ভেঙেচুড়ে গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে তোমাকে নিয়ে কানামাছি খেলছে। অবশ্য এজন্য তোমাকে আমি দোষ দিই না। কারণ, কোন এক নাম না জানা প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়া অখ্যাত সাহিত্যিক তার একটি অখ্যাত উপন্যাসে লিখেছিলেন -নতুন প্রেমে পড়া যুবক যেমন ঘন্টায় ঘন্টায় জামা পাল্টায় নিজেকে প্রেমিকার কাছে জটিল হ্যান্ডসাম প্রমান করার জন্য তেমনি প্রেমে অভিজ্ঞা নারীরা কিছুদিন পরপর তাদের প্রেমিক পাল্টায় নতুন প্রেমিকার কাছ থেকে ফায়দা লুটার জন্য। আর শিউলি, মি তো সেই নারীদেরই একজন তাই নয় কি? সুতরাং, তোমাকে দোষ দিই কি করে বল তো। শিউলি, যতদূর জানি, বিগত ১৪ ই ফ্রেব্রুয়ারী, অর্থাৎ ভালোবাসা দিবসের দিন তোমার সঙ্গে দেখা করিনি বিধায় তুমি আমার উপর অভিমান করে আমাকে ভুলে গেছ। আর এখন আবুলের সাথে প্রেম করছো।। ঐ দিনের পর থেকে তুমি আর একবারো আমার সঙ্গে দেখা করোনি কিংবা কথা বলোনি। কিন্তু শিউলি, সেদিন কেন তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি তা কি তুমি জান? তাহলে শোন, আমাদের অনেক প্রেম আলাপের নীরব সাক্ষী তোমাদের বাড়ির পেছনের সেই বাঁশ বাগানে তোমার কথা মতো তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য সেদিন আমি ঠিকই এসেছিলাম। তুমি সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আসতে বললেও আমি তার কিছুটা আগে চলে এসেছিলাম। আর তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় দেখলাম বদনা হাতে কে যেন বাঁশ বাগানের দিকেই আসছে। দেশব্যাপি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ ও খোলা জায়গায় ইয়ে... করার বিরুদ্ধে এত গণআন্দোলন, গণ সচেতনতার মধ্যে কে খোলা জায়গায় তথা বাঁশ বাগানে পায়খানা করার দু: সাহস দেখায় তাকে দেখার জন্য আমি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালাম। কিন্তু হালকা চাঁদের আলো বদনাধারী লোকটির মুখের উপর পড়তেই আমার কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। কারণ, বদনাধারী লোকটি আর অন্য কেউ নয়, তোমার শ্রদ্বেয় আব্বাজান। কি আর করা উনি টের পাওয়ার আগেই দ্রুত আমি বাঁশ বাগানের আড়ালে লুকিয়ে গেলাম। কিন্তু , তোমার আব্বারও কান্ড জ্ঞান বলতে বোধহয় কিছু নেই। বে-আক্কেলের মত ঠিক আমার সামনাসামনি জায়গায় বদনা নিয়ে বসে পড়লেন। শিউলি, তুমি একদিন বলেছিলে, তোমার আব্বার নাকি সব সময় পেট খারাপ থাকে । আর সে পেট খারাপের প্রভাবেই হোক কিংবা অন্য কোন কারণেই হোক চারপাশের আকাশ-বাতাস ভারী করা কোন মানষের ইয়ের.....মধ্যে যে এত মারাত্মক বদ খুশবু থাকতে পারে তা জীবনে প্রথম বারের মত ঐ পরিস্থিতিতে তোমার বাবার সৌজন্যে উপলব্ধি করতে পারলাম। প্রচন্ড বদ খুশবুতে আমার পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে বমি আসার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু তবুও ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আমি ধৈর্য্য সহকারে নাক-মুখ চেপে ধরে তা দমিয়ে রাখলাম। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেলেও তোমার বাবার ইয়ে..... করা শেষ হওয়ার কোন খবর নেই। আর এদিকে দুর্গন্ধে আমার "ছেঁড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি" অবস্থা। অবশেষে আমি আর পারলাম না। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে ''ওয়াক থু'' শব্দ করে থুথু ফেললাম। আর আমার থুথু ফেলার শব্দ শুনে তোমার বাবা চমকে উঠে চিৎকার করে বলে উঠলেন-কোন শালারে এখানে? জবাবে তোমার বাবাকে- "আমি শালা নই, আপনার মেয়ের হবু জামাতা" -এই কথাটি বলার ইচ্ছা থাকলেও ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে পা থেকে আমার ব্রিটিশ আমলের জুতা দু'খানি খুলে বগলে নিয়ে সোজা দিলাম একটা ম্যারাথন দৌড়। কিছুদূর দৌড়ে যাওয়ার পর আমার প্যান্ট ভিজা মনে হচ্ছিল। কিন্তু এই সন্ধ্যাবেলা ঝড় নাই ,তুফান নাই তাহলে প্যান্ট ভিজা ক্যান? ব্যাপারখানা আমার নিজের কাছেও কেমন জানি ঘাপলা লাগছিলো। কিছুক্ষন ভাবার পর বুঝলাম , তোমার বাবার ভয়ে আমি এত জোরে দৌড়েছি যে, দৌড়ের সময় কখন যে প্যান্টের মধ্যে ইয়ে.....করে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছি তা নিজেও টের পাইনি। আর ঐ মারাত্নক অবস্থায় এরপর তোমার সঙ্গে দেখা করার কোন পরিস্থিতি ছিল কিনা তা তুমিই বল? শিউলি, এখানে আমি যা বলেছি তার এক বিন্দুও মিথ্যা বলিনি। তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না? তবে সত্য কথা আমার পেটে থাকে না। আর তোমার সাথে যেহেতু এখন আমার আর কোন সম্পর্ক নেই , তাই তোমাকে হারানোরও ভয় নেই। সুতরাং আরও দু-একটি সত্য কথা শুনে রাখো। তোমার বাবার সদ্য কেনা হিরো মোটরসাইকেলখানা ও তোমাদের হাল চাষের স্বাস্থ্যবান বলদ দুটোর প্রতি আমার ভীষন লোভ ছিল। মূলত: ওগুলো পাওয়ার আশায় তোমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু তা তো তুমি হতে দিলে না। যা হোক, ও সব বলে তো আর লাভ নেই। তবে শিউলি, তোমার জীবনে হয়তো এর আগেও অনেক প্রেম এসেছিল কিন্তু তুমি ছিলে আমার প্রথম প্রেম। আর সে কারণে, প্রথম প্রেমের স্মৃতি আমি আজও ভুলতে পারিনি বিধায় তোমার শোকে পাথর হয়ে এখন আমি ব্যানসন সিগারেট ছেড়ে আবুল বিড়ি ধরেছি। কিন্তু সিগারেট ছেড়ে এত বিড়ি থাকতে আবুল বিড়ি কেন খাচ্ছি জানো? কারণ, তোমার বর্তমান প্রেমিকের নাম হচ্ছে "আবুল"। আর ঐ হারামজাদা আবুলরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছি মনে কমি প্রতিনিয়ত আবুল বিড়ি টানি। শিউলি, তোমাকে লেখা হয়তোবা এটাই আমার শেষ প্রেম পত্র। তোমাকে হয়তোবা আর কোনদিন পত্র লেখার সৌভাগ্য আমার হবে না কিংবা পত্র লেখার প্রয়োজনও হবে না। তুমি আমার এ পত্রখানা পড়বে কিনা জানিনা। তবে এটা জানি যে, আমার পত্রখানা তুমি যদিও বা পড় তবে ছিঁড়ে ফেলে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে দুনিয়া থেকে এক্কেবারে নাই করে দেবে। তবুও আমার সান্ত্বনা এই যে, আমার লেখা শেষ প্রেম পত্রখানা প্রেমিকাররূপী কোন ছলনাময়ী প্রেম ফেরিওয়ালীর হাতে ছিঁড়েছে কিংবা পুড়েছে। যা হোক, অনেক কিছুই তো লিখলাম। আজ আর বিশেষ কিছু লিখে তোমার মূল্যহীন সময় কে মূল্যবান করতে চাই না। .....পরিশেষে, তেমার আব্বা-আম্মা কে আমার সালাম খাওয়াইয়া দিও এবং বাড়ির ছোট ছেলে-মেয়েদের হাতে হাতে আমার আদর ও স্নেহ ধরাইয়া দিও। তো ভাল থেকো, সুখে থাক আর পারলে আর একাধিক জনের সঙ্গে প্রেম করিও। এই প্রত্যাশায় চিরতরে বিদায়
ইতি : কিছুকাল আগেও তোমার প্রিয়তম ছিলাম
কাজী যুবাইর মাহমুদ
বিষয়: বিবিধ
১৯১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন