ঘটনার মারপ্যাচ!
লিখেছেন লিখেছেন কাজী যুবাইর মাহমুদ ১৮ জুন, ২০১৩, ০৫:২৫:১৫ বিকাল
১.
গতকাল সকালে ফটিকছড়ি গ্রামের বাড়ি থেকে জরুরি একটা কাজে রওয়ানা হয়েছিলাম খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার উদ্দেশ্যে। হেয়াকো বাসস্ট্যান্ড দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর খাগড়াছড়ির বাসে উঠি। কিন্তু সমস্যা ঘটে অন্য জায়গায়। বাসটা রামগড় পর্যন্ত বেশ অর্ধেক পৌঁছানোর পর আর যাচ্ছে না। না, গাড়ির কোনো সমস্যা না। সমস্যা হলো- পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালী ঝগড়া লাগে, বাঙালী ২ জন নেতাকে কিছু পাহাড়ি গুম করে রাখছিলো। আর এ সমস্যায় ওখানে বাঙালীরা এর প্রতিবাদে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে রাখে পুরো খাগড়াছড়ির আশেপাশে সব রাস্তাঘাট।
যা হোক, রামগড় পৌঁছানোর পরও বাসের কোনো যাত্রী জানতো সেখানের মূল ঘটনা। এতো সিরিয়স মনে করিনি আমরা।
রামগড় থেকে বাস আর সামনে না যাওয়ায় বাস থেকে নেমে আমি আমার সাথে একজন মুরুব্বী একটি সিএনজি খুঁজছিলাম। মুরুব্বির সাথে একটু কথা বলেই কেন যেন তাঁকে একটু ভালো লাগল, পাঞ্জাবী-পায়জামা পড়া। আমরা অনেক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর খালি একটি সিএনজি পেয়ে ডাক দেই। সাথে সাথে আরও কয়েকজন সিএনজির আশপাশ ঘিরে ফেলে; সবাই যাওয়ার জন্য। কিন্তু সিএনজিতে সীট সর্বোচ্চ ছয় জনের। সিএনজির ড্রাইভার আগেই বলে দিয়েছিল সর্বোচ্চ ছয় জন বসতে পারবে। আমরা দু’জন আগে আগে সীটে বসে যাই, আরও পাঁচজনও খুব দ্রুত সীটে বসতে চাইল। কিন্তু সাতজন তো এক সিএনজিতে বসা যাবে না। ছয়জন বসার পর একজন বাকি পরে গেলো। কোনোমতেই বসানো যাচ্ছে না আরেকজন। যেহেতু তাকে যেতেই হবে, তাই ঘনঘন করে পিছনে বসে যাই সে। তার বয়স ২৬/২৭ হবে। ফিটন্যাস বডি। একটু শ্যামলা হলেও মুখে খোঁচাখোঁচা আধা ইঞ্চি দাড়ি। তাই চেহারা দেখে মায়া লাগলেও কথা শুনে মনে হয় খুবই ভয়ঙ্কর! বসতে বসতেই ড্রাইভারকে অনেক গালাগালি করে, বলতে চাইছে- সেও তো ড্রাইভার আগে বলছিল, তবে এতো কষ্ট করে যাবে কেন সে? ড্রাইভার সাহেব কী করবে এখন! কাউকেই নেমে যাওয়ার জন্য বলতে পারছে না, কেউ ইচ্ছে করে নামতেও চাইছে না। গাড়ি স্টার্ট দেয়।
খুব কষ্ট করে লোকটা চিপায় একপাশে বসে থাকে। আর বকবক করছে ড্রাইভারের সাথে। এক পর্যায়ে লোকটা খুব গরম হয়ে গেলো অটোমেটিক! সম্ভবত বসতে তার খুবই কষ্ট হচ্ছিল। যার কারণে সইতে না পেরে ড্রাইভারকে আবোল তাবোল বকে যাচ্ছে, গালিগালাজ করে যাচ্ছে।
তখন একটা পাহাড়ি রোড হাই স্পীড দিয়ে উঠছিল ড্রাইভার। এমন সময় লোকটার কষ্ট মনে হয় আরও চরম হয়ে উঠে। তাই ড্রাইভারকে একটা কড়া হুমকি দিয়ে দেয়- “তুই খালি জালিয়াপাড়া যাইয়া ল- দেখবি কী হয়?”
প্রথমে আমার মনই আঁৎকে উঠে। ভয় পাইছলাম! আর ড্রাইভার তো ভয়ে একেবারে গলেই গিয়েছিল। পাহাড়ি টিলাটা উঠার পরপরই ড্রাইভার সিএনজির স্টার্ট বন্ধ করে দেয়! আর বলে- “আফনে আমারে জালিয়াপাড়া গেলে কি করবেন? আফনে আমারে হুমকি দিতাছেন কেন? আমি যামু না আর…”
আমরা ড্রাইভারকে অনেক সান্তনা দিয়ে এগিয়ে নিলাম। তবু ভয়ে ভয়ে গেলা ড্রাইভার সাহেব।
যাওয়ার পথে অনেকেই হুঁশিয়ার করে দেয় সামনে না যাওয়ার জন্য, জালিয়াপাড়ার পরে নাকি সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে রাখছে, গাড়ি গেলে ভেঙে ফেলতে পারে। এই ভয়ে ভয়ে জালিয়াপাড়ার এক কি:মি: আগে এসেই দেখি সব গাড়ি সেখানে থামছে। আর এগুচ্ছে না। সামনে কোনো গাড়িই নাকি যেতে পারছে না। বাঙালীরা অতি উত্তেজিত হয়ে আছে তাদের নেতাকে ধরিয়ে নেয়ার জন্য।
আর এদিকে সবাই এক কি:মি: হেঁটে হেঁটে জালিয়াপাড়া দিকে যাচ্ছে। আমরা সবাই নেমে গেলাম সেখানেই, আমাদেরও হাঁটতে হবে। নেমে সবাই ৫০ টাকা করে ড্রাইভারকে ভাড়া দিচ্ছিলাম। কিন্তু ওই শালা নেমেই সোজা চলে যাচ্ছে! যে চিপাচিপি করে আসছে, তার কথা বলছি। আমরা দেখেই ড্রাইভারকে বললাম ওই লোক তো চলে যাচ্ছে! সাথে সাথেই চিল্লানি দিয়ে ড্রাইভার তাকে ডাক দেয়-
ড্রাইভার : কি বেফার, ভাড়া না দিয়া যাইতাছে না কেন?
সে : কি? কিসের ভাড়া
ড্রাইভার : কিসের ভাড়া মানে? সিএনজির ভাড়া
সে : ভাড়া দিমু না, কি করবি তুই?
ড্রাইভার : (ভয়ে ভয়ে, কেঁদে দিতে চাইল)
সে : তুই এখান থেকে কোথাও যাবি না, দাড়া এখানে…
এই বলে কাকে যেন ফোন দিয়ে সেখানে আসতে বলে কয়েকজনকে। আমরা অবাক! দেখছিলাম তার কীর্তিকর্ম। কিছুই বলছিলাম না। আমরা বুঝতে একটুও জটিল হয়নি যে, সে ক্ষমতাসীন দলের কোনো সাপোর্টার, বা সহযোগী। ড্রাইভার তাকে আবারও ভাড়া দিয়ে বলে। আর আমার পাশে যে মুরুব্বি ছিল সেও খুব নম্র ভাষায় বলে- “বাবা, গরীব মানুষ, ড্রাইভারের কয়েক টাকা ভাড়া খাইয়া লাভ কি, দিয়া দে।” এ কথা সে একদম কানে দেয় নাই, খুব হুমকি নিয়ে মুরুব্বিকে একটা ধমকি দেয়!
সাথেই সাথেই!
টাস, টাস….!!!
কঠিন একটা থাপ্পর! আমরা আরও অবাক! অর্থাৎ মুরুব্বি তাকে থাপ্পর দেয়! খুব জোরশে দিয়েছে। এর আগে আমি এত্ত কঠিন কাউকে থাপ্পর মারতে দেখি নাই। তারপর সেও মুরুব্বির সাথে বলাবলি করতে চাইল তার আগেই আমি ছাড়া সাথে আরও যে ক’জন ছিল একসাথে তাকে আচ্ছেমতো পিটানি দেয়, আমর খুবই ভাল্লাগছিল এ পিটানি। প্রায় আহত করে ফেলে ড্রাইভার তাকে মেরে। ৫ জনের সাথে সে একা কিছুইতেই পারা সম্ভব হচ্ছিল না। ড্রাইভারকে মারার হুমকি দেয়াতে সবাই তাকে উত্তেজিত হয়ে খুব মারছিল। শেষে মুরুব্বির পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা কার্ড দেখায়। আমরা আরও অবাক! সে একজন আর্মি!
তারপর মনের মধ্যে একটা আনন্দ আসে যে, বহুদিন পর একজন ক্ষমতাসীন লোককে মারতে সরাসরি মারতে দেখলাম, ইচ্ছে ছিল আমিও কয়েকটা কিল-ঘুষি মারি। একটা ব্যাগ থাকায় আর পারলাম না। শেষে লোকটা মুরুব্বির কাছে ক্ষমা চেয়ে ছুটতে চাইল। আর আমরা সবাই হাঁটা শুরু করি জালিয়াপাড়ার এক কি:মি: পথ।
তারপর আরও সুন্দর কাহিনী!
(বাকিটা এরপর পোস্ট দিব, যদি কেউ পড়ে বিরক্ত না হন)
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন