যে কবিতা লিখার কারণে আম্মুর হাতে বেলনের বাড়ি খেয়েছিলাম
লিখেছেন লিখেছেন পেন্সিল ১৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:৫৭:৫৩ সন্ধ্যা
২০১২ সাল। আলিম বোর্ড পরীক্ষা চলছে। আরবী ১ম পত্র পরীক্ষার দু’দিন আগের ঘটনা। জানালার পাশে আমার পড়ার টেবিল। বিকেলবেলা পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিলাম। বিকেলবেলার নীল আকাশ, মৃদুমন্দ সমীরণ, নীড়ে ফেরা একঝাঁক পাখি দেখে পড়ায় মন বসছিল না। একদমই না।
তাছাড়া একনাগাড়ে পড়তে পড়তে বিরক্তও লাগছিল। এত পড়া যায়! টেবিলের উপর রাখা ডেস্ক ক্যালেন্ডারের সাদা পেইজে আঁকিবুকি করতে করতে ভাবছিলাম- আহা! যদি পাখি হতাম, ডানা মেলে অচিনপুরে উড়ে যেতাম! যদি নদী হতাম, সাগরের মোহনায় মিশে যেতাম!
ভাবতে ভাবতে শব্দের সাথে শব্দকে জুড়ে দিয়ে একটা ছোট্ট কবিতা (ছড়া বলাই ভালো) দাঁড় করিয়ে ফেললাম।
“দিগন্ত জুড়ে পাখির মেলা
কোন সুদূরে মেলেছে ডানা,
পাখি আমায় সাথে নেবে
মানবো না আজ কোনো মানা।
আকাশ পানে ভাসিয়ে দিলাম
তুষার মেঘের ভেলা,
যেথায় যাবে সেথায় নিও
করো নাকো হেলা।
বই-খাতা সব বন্ধ থাক
পড়াকে দিলাম ছুটি,
দেখবো সাগর, বন-বনানী
মেলে আঁখি দুটি।
বন-বাদাড়ে ঘুরবো সবে
পাতার ফাঁকে করবো লুকোলকি,
দুঃখ-ব্যথা সব ভুলে আজ
হবো চির সুখি।”
..... লিখা সবে মাত্র শেষ করেছি এমন সময় পিঠের উপর সপাং সপাং দুটো বাড়ি সাথে ঝাড়ি- “পড়ালেখা রেখে এইসব কি করছিস ফাজিল মেয়ে? দু’দিন বাদে পরীক্ষা আর উনি বসে বসে কাব্য চর্চা করছেন। এ+ যদি না পাস তাহলে তোর কবিতা লেখা দেখাবোনে” আম্মু রাগে গজ গজ করতে করতে রান্নাঘরে চলে গেলেন। আম্মু রুটি বেলছিলেন। হাতে বেলন নিয়ে আমি পড়ছি কিনা তা দেখতে এসছিলেন আর এসেই পুলিশের মত....
রাগে-দুঃখে আমার চোখে পানি চলে এলো। এভাবে মারার কোনো মানে হয়? এই অত্যাচার সহ্য করা যায় না। আর কত সহ্য করবো? ছোট হয়েছি বলে কোন দামই নেই নাকি?
এইবার ক্যালেন্ডারে আবার লিখতে শুরু করলাম। দুঃখ-অভিমান কলমের কালো কালিতে ঝরে ঝরে পড়ছে-
“পড়তে বসো পাজি মেয়ে
দুষ্টুমি কেন করো?
পড়ালেখায় ফাঁকি দিলে
হবে না তো বড়।
রোজ রোজ এক পড়ালেখা
আর লাগে না ভালো,
বড় তো বেশ হয়ে গেছি মা
আর কত বড় হবো, বলো?
পড়ালেখায় ভীষণ বাজ
কমপ্লেইন করেছে ম্যাম,
ঠিক ঠিক এখন পড়তে বসো
সামনে তোমার এক্স্যাম।
হনহনিয়ে চলে গেলো মা
ভীষণ ভাবে বকে,
খুকি তাই মুখ লুকিয়ে
কাঁদছে বসে দুঃখে।
হঠাৎ করে মনের মাঝে
প্রশ্ন জাগে তার,
পরীক্ষা নামের বিদঘুটে জিনিস
কে করেছে আবিষ্কার!”
....... খুব কান্না পাচ্ছিল। দোষ করলে আমি করেছি কিন্তু কবিতা কি দোষ করেছে? কবিতা আমার প্রাণ। কবিতাকে মন্দ বললে তা আমি সহ্য করবো কেন??
তারপর খুব মনযোগ দিয়ে পড়া শুরু করলাম। পরীক্ষা দিলাম। অতঃপর এ+ পেলাম। আম্মুকে দেখিয়ে দিলাম “কবিতা লিখলে কারো পড়ালেখার ক্ষতি হয় না, বরং মন ফ্রেশ থাকে। আর মন ফ্রেশ থাকলে পড়ায় মন বসে। আর মন দিয়ে পড়লে পরীক্ষা ভালো হয়, রেজাল্ট ঈর্ষনীয় হয়।”
(আসলে সবটাই মহান আল্লাহর দান। তিনি আমার প্রতি রহম করেছেন বলেই রেজাল্ট ভালো হয়েছে। আর এই রেজাল্ট ভালো হওয়ার পেছনে আম্মুর বেলনের বাড়িটারও দরকার ছিল। ধন্যবাদ আম্মু)
বিষয়: বিবিধ
২৮৭৪ বার পঠিত, ৬৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নতুন দুলা ভাই হওয়াও আসতে দেরী হলো বুঝি?
দুলাভাই এখনো হয়নি তাই তার ভালো থাকা বা না থাকার ব্যাপারে আমি অবগত নই;
তবে আমি ভালো আছি
পড়াকে দিলাম ছুটি,
দেখবো সাগর, বন-বনানী
মেলে আঁখি দুটি।
কবিতা দুটো বেশ মজা করে পড়লাম। সউইট হয়েছে খুব
আসলে আমি নিজেও ব্লগ আর ব্লগার সবাইকে মিস করছিলাম তাই চলে এলাম
তবে কিছুদিনের জন্য দূরে থাকতে হবে। আবার সেই বিদঘুটে পরীক্ষা
আচ্ছা পেন্সিল কি এত দিন ভোঁতা ছিলো? এতদিন পরে কেন?
আর নিজেকে কিছুটা শাণিত করার চেষ্টাও ছিল তোমাদের খুব মিস করছিলাম, দেখছনা, আবার চলে এসছি.....
নিখোঁজ সংবাদ
তোমাকে এত্তগুলা ধন্যবাদ খাপু
দুষ্টুমি করলাম। আসলে এই বয়সটাই এরকম।
আপনার সালাম পৌঁছে দিয়েছি।
আর আমাকে তুমি করে বললে খুশি হবো
আপু আশা করি নিয়মিত থাকবেন
জ্বি, ইনশাআল্লাহ্! চেষ্টা করবো। দুআ করবেন।
উফ চিকেন ভাজার থেকে এই মাইরটা মজা বেশি তবে আমি মাইর খাওয়া বিশেষজ্ঞ । মায়ের হাতের মাইর কত যে মজা । ++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
কিন্ত খাওয়ার পর যদি কবিতা বের হয় তাহলে....
বুঝতে হবে আসেলেই কবি।
কবিতা দেখতেই পারেননা। প্রবন্ধ বা গল্প দেখতে পারেন।
বয়স হয়েছে তো তাই সবকিছু মনে থাকে না
তোমাদের মনে পড়ছিলো খুব। ভালো আছো তো?
দু'আ করো আপুনি
দু'আ করবেন যেন মানুষ হতে পারি...
পরীক্ষা আর পড়ার টেবিল
সামনে এলে হায়
নিস্বর্গটা ভাবনা হয়ে
কাব্য হতে চায়।
কাব্য লেখার এমন প্রয়াস
আর পাবেনা আর!
আম্মুর হাতের বেলন বাড়ী
দারুন চমৎকার!!
ধন্যবাদ ছান্দিক মন্তব্যের জন্য
বড্ড লেগেছে না?
পড়া শুনা বাদ রেখেছ
কবিতা লিখার ফাঁকে।
ভালো লাগলো
ফাজিল ফজিল বড্ড ডেঁপো
এই বয়সে কবিতা লিখছ?
হা হা হি হি
মার পড়েছে পিঠে তোমার
আমার ভাল লেগেছে।
এত অত্যাচার সহ্য করা যায়? তারচেয়ে বরং পড়াশুনাকে ছুটি দিয়ে সংসার জীবনে ভর্তি হোন । সুন্দর হয়েছিল ছড়াটি কিন্তু।
পড়াশোনা+কবিতা+ ১/২ কেজি বেলনের বাড়ি = এ+.
গুড, বাট ভর্তি মিলেছে কোথায়? জানান দাও।
দু'আ করবেন খালামণি।
জ্বি আসবো ইনশাআল্লাহ্
অনেকদিন হল পেন্সিলকে আমি
খুজে বেড়াই ব্লগের গলি,
কবেইনা বোনটি হারিয়ে গেল
পাইনা সে ছন্দের কলি।
হঠাত করে খুজে পাইলাম
ছূটে এলাম পথ ধরে,
আহত হলাম কবিতা পাগলকে
বেলুন দিয়ে মারল বলে।
অঝোরে কেদেও ছাড়েনি কবি
ছন্দের সেই লিখন,
তুমি নিশ্চয়ই বড় কবি হবে
বলছে আমার মন।
সাথে আমি ভয় করোনা
ভেঙ্গোনা কবিতার মন
তেজোদ্দীপ্ত হয়ে জাগাতে হবে
করিতে হবে পণ।
নজরুল রবি আসিবেনা আর
আহতরা তাকিয়ে রয়,
এস হে কবি বারুদ হয়ে লিখ
কবিতার নাহি ক্ষয়।
কবি মরে কবিতা মরেনা
পাঠক জুড়ায় প্রাণ,
কবির কবিতায় ঘুমন্তরা জাগে
কবিও আল্লাহর দান।
আহতরা তাকিয়ে রয়,
এস হে কবি বারুদ হয়ে লিখ
কবিতার নাহি ক্ষয়।
কবি মরে কবিতা মরেনা
পাঠক জুড়ায় প্রাণ,
কবির কবিতায় ঘুমন্তরা জাগে
কবিও আল্লাহর দান।
অনেক শুকরিয়া মজুমদার ভাইয়া....
সত্যিই কবিতাটা অসাধারণ হয়েছে.....
মন্তব্য করতে লগইন করুন