একদিনের জন্য বাঙ্গালী হয়ে কী লাভ?
লিখেছেন লিখেছেন পেন্সিল ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:৩৭:৩৬ সন্ধ্যা
গতকালের ঘটনা। ক্যাম্পাস জুড়ে মেয়েদের দেখলাম দু'হাতে মেহেদি পরছে, পয়লা বৈশাখে কে কী পড়বে- শাড়ী, না সালওয়ার কামিজ- সেসব নিয়ে কী জোড় আলোচনা।... ক্লাস শেষে বাসে এসে বসলাম। প্রতিদিনই বাসে এত ভীড় থাকে যে মেয়েরা বাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম!
গতকালও এর ব্যতিক্রম হলো না। এত ভীড়ের মাঝেও দেখলাম আমার সীটের পাশে দাঁড়ানো কয়েকটা মেয়ে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছে। নতুন কিছু না। কিছুক্ষণবাদে পেছন থেকে "উ লা লা উ লা লা" আরম্ভ হয়ে গেলো। এটাও নতুন কিছু না। কানে ভেসে এলো, মেয়েরা আলোচনা করছে পয়লা বৈশাখ নিয়ে তাদের নানা আয়োজনের কথা। যারা আলোচনা করছে তাদের পরনে ছিল leggings আর top....। ভার্সিটির রুলস হলো শালীন পোষাক পরিধান করা। তাই ক্লাসের সময়টুকুতে কোনরকম এ্যাপ্রোন গায়ে থাকে আর ক্যাম্পাসের বাইরে পা দেয়ার সাথে সাথে এ্যাপ্রোন ব্যাগে ঢুকে যায়। এসব পুরোনো দৃশ্য। কিন্তু কষ্ট লাগলো এখানে যে, যাদের পরনে এইসব বিজাতীয়দের পোষাক তারা কিনা বাংলা নতুন বছর উৎযাপনের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে!! চেষ্টা করছে একদিনের জন্য বাঙ্গালী হওয়ার!
ওদের বাঙ্গালী হওয়ার ধরণ দেখে দুঃখ হয়।
আরেহ! একদিনের জন্য সাদা জমীনে লাল পেড়ে শাড়ী, খোঁপায় ফুল আর হাত ভর্তি রিনিঝিনি কাঁচের চুড়ি পড়লেই কী বাঙ্গালী হওয়া যায়! সফেদ শামিয়ানার নিচে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে গলা ফাঁটিয়ে ক'খানা দেশপ্রেমের কথা বললেই কী তাঁকে বাঙ্গালী বলতে হবে! যারা একটা বাক্য বলতে গিয়ে একটা অংশ বাংলা আর আধখানা অংশ ইংরেজিতে বলে তাদেরকে কী বাঙ্গালী বলা অত্যাবশ্যকীয়! যারা গরীবের পেটে লাথি মেরে পান্তা-ইলিশের ভূরিভোজের আয়োজন করে তাদেরকে কী উপাধী দেয়া যায়? যারা একটা হিন্দি ফিল্ম দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে, তারপর তাদের মুখে মুখে থাকে সেই ফিল্মের গান! তবে তারা কোন প্রকারের বাঙ্গালী হলো? যারা বিজাতীয়দের পোষাক-সংস্কৃতিতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে তারা কতটুকু বাঙ্গালী? হা?
....আমরা ক'জনে বাংলা তারিখের খবর রাখি? যদি কোন লোককে প্রশ্ন করা হয়, 'আজ বাংলা কয় তারিখ?' সাথে সাথেই সে জবাব দিতে পারবে না। সে বাংলা তারিখ খুঁজতে ক্যালেন্ডার ঘাটবে। শুধু সে কেন, আমি নিজেই তো পারবো না। এই না পারাটা কী আমাদের ব্যর্থতা নয়?
আমরা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মস্থলে ক'দিন ক'দিন বাংলা তারিখে দিন হিসেব করেছি? জবাব আসবে কখনোই করিনি। কিন্তু কেন?
আমরা কেন একদিনের জন্য বাঙ্গালী হবো? কেন সারা জীবনের জন্য বাঙ্গালী হতে পারি না?
আমরা যদি সামান্য এইটুকু কাজই করতে না পারলাম তবে আমরা কিসের বাঙ্গালী? কেন তবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলাম? কিসের আশায়?
কেন আমরা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির নোংরা জলে খড়কুটোর মতো নিজেদের ভাসিয়ে দিচ্ছি? আমাদের নিজেদের তো একটা সংস্কৃতি আছে। আমাদের সংস্কৃতমনা বহু মানুষ আছে। আমাদের ৫৬হাজার বর্গমাইলের একটা স্বাধীন ভূমি আছে। আমাদের ধানক্ষেত আছে, নদী আছে। পাহাড় আছে, পৃথিবীর বৃহত্তম সাগর আছে। কী নেই আমাদের? কীসের অভাব আমাদের? তবে কেন আমরা অন্যের সংস্কৃতি ধার করে মিছেমিছি বাঙ্গালী সাজবো?
আমাদের কোন কিছুর অভাব নেই। শুধু অভাব সচেতনতার, অভাব ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার মানসিকতার...
আমাদের সবাইকেই এইসব অভাব কাটিয়ে উঠতে হবে। নতুবা আমরা কখনোই নিজেদেরকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না।
আমরা সবসময়ই নববর্ষে এই প্রতিজ্ঞা নিই যে, নতুন বছরে আমরা সবাই মিলেমিশে থাকবো। কোন হানাহানি, মারিমারি করবো না। অসাম্প্রদায়িক হবো না। এখানে একটা বিষয় বলে রাখা ভাল যে," জাতির মিশনের জন্যই আমি জাতিকে ভালবাসি। এবং এই মিশন আমার জাতির জন্য শুধু নয়, পৃথিবীর গোটা মানব সমাজের মঙ্গল ও মুক্তির জন্য। সুতরাং আমার জাতির মিশনকে ভালবাসি অর্থ গোটা মানব সমাজকেই আমি ভালবাসি। আর এটা সাম্প্রদায়িকতা নয়, এটা মানবতা।"
তাই আমাদের সকলেরই একথা স্মরণে রাখা উচিৎ যে, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকেই আমাদের বুকে ধারণ করা উচিৎ, বিজাতীয় সংস্কৃতি নয়।
আমরা কী আগের মতই ভঙ্গুর প্রতিজ্ঞায় নববর্ষকে বরণ করে নেবা নাকি এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় শুরু করবো আমাদের আগামীর পথ চলা- তা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে।
....সমস্ত ব্লগার বন্ধুদের জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা আর আন্তরিক শুভকামনা।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন