জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এর প্রতি খোলা চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন আবুলকালাম ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:৩২:১৭ বিকাল
আস্সালামু আলাইকুম।
০২. আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভাল আছেন। বাংলাদেশে ইসলামকেন্দ্রিক আন্দোলন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যুগে যুগে, কালে কালে, দেশে দেশে ইসলামকেন্দ্রিক আন্দোলনগুলোর মাঝে এটি একটি চরম মিল। আর বিরোধীদের এই চরম অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের স্টীম রোলার অতিক্রম করার মাধ্যমেই আমরা, ইনশাআল্লাহ, যেমনি অর্জন করতে পারব আমাদের রবের সন্তুষ্টি তেমনি মিলবে কুরআনী শাসন। বাংলাদেশে ইসলামকেন্দ্রিক আন্দোলনের পথ-পদ্ধতি, অর্জন-অগ্রগতি নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও আন্দোলনে আপনাদের জীবনব্যাপি ত্যাগ ও কুরবাণি নিয়ে কোন কারো মনে কোন সন্দেহ-সংশয় নেই। আন্দোলনের জন্য আপনাদের আন্তরিকতা, দরদ ও ভালভাসা নিয়েও জনশক্তিদের মাঝে কোন প্রশ্ন নেই। আন্দোলনে আপনাদের অবদান নি:সন্দেহে একটি ইতিহাস।
০৩. আমরা বিশ্বাস করি, মানুষ স্বভাবতই ভুলপ্রবন; তাই কেউই ভুলত্রুটির উর্ধ্বে নয়। ভুল সবাই করে; তবে যারা ভুল বুঝতে পারার পর সংশোধন করে তারাই অতিমানব। মানুষ ভুল করে কখনো জেনে, কখনো না জেনে। এই ভুল কখনো ব্যক্তিক, কখনো সামষ্টিক। কখনো ব্যক্তিক ভুলের কারনে সামষ্টিক বা সাংগঠনিক ক্ষতি হয়, আবার কখনো সামষ্টিক ভুলের কারনে ব্যক্তিক, সামষ্টিক বা সাংগঠনিক ক্ষতি হয়। ব্যক্তিক / সামষ্টিক ভুলের কারনে কখনো বেশি, কখনোবা কম ক্ষতি হয়। এই জাতীয় ভুল কখনো মৌলিক, কখনো অমৌলিক, কখনোবা গৌণ। মৌলিক ভুল কখনো আবার প্রাইমারী (বেশি গুরুত্বপূর্ণ), কখনো সেকেন্ডারি, কখনোবা টারশিয়ারি (কম গুরুত্বপূর্ণ) লেভেলের। কিছু ভুলের ক্ষতিপূরণ শুধুমাত্র ইহলৌকিক, কিছু ভুলের ক্ষতিপূরণ শুধুমাত্র পরলৌকিক আবার কিছু ভুলের ক্ষতিপূরণ ইহলৌকিক ও পরলৌকিক উভয়ের সাথেই জড়িত। কিছু ভুলের প্রভাব ক্ষণস্থায়ী, কিছু ভুলের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। কিছু ভুলের প্রভাব ননমাল্টিপ্লায়িং, কিছু ভুলের প্রভাব মাল্টিপ্লায়িং (যা ক্রমাগত অন্য বিষয়ের উপর তার ক্ষতিকারক প্রভাব রেখে যায়)। কিছু ভুলের প্রভাব শুধুমাত্র একটিমাত্র বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ, কিছু ভুলের প্রভাব আবার একটিমাত্র বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ নয় বরং তার প্রভাব আনুসঙ্গিক সকল বিষয়কে নেগেটিভলি প্রভাবিত করে যাকে তুলনা করা যায় ক্যানসারের জীবাণুর (জার্ম) সাথে।
০৪. আর এমনি একটি ভুল- যা মৌলিক, যার প্রভাব ইহলৌকিক ও পরলৌকিক উভয়ের সাথেই জড়িত, যে ভুলের প্রভাব মাল্টিপ্লায়িং, যার প্রভাব আনুসঙ্গিক সকল বিষয়কে নেগেটিভলি প্রভাবিত করে এবং যাকে তুলনা করা যায় ক্যানসারের জীবাণুর (জার্ম) সাথে (আমাদের দৃষ্টিতে)- হচ্ছে বিগত চারদলীয় সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত জমি (প্লট) (আপনারা) ব্যক্তিগত নামে বরাদ্দ (দখলে) নিয়ে সেই প্লটে বহুতল ভবন নির্মাণ করে আপন আপন বউ (স্ত্রী) এর নামে নামকরন (‘মিশন নাহার’ ও ‘মিশন তামান্না’) করে সেখানে বউ, ছেলের বউ, মেয়ের জামাই ... .. .. .. নিয়ে মহাসুখে বসবাস !!!!! ছি! ছি!! ছি!!! ছি!!!!
Figure 1: Mission Nahar at Banani (Wife of Mao. Motiur Rahman Nizami)
Figure 2: Mission Tamanna at Uttara (Wife of Ali Ahsan Mohammad Mujahid)
০৫. এখানে (নেতাদের ব্যক্তিক) ভুল হয়েছে মূলত দুইটি:
(ক). সরকারি যে প্রক্রিয়ায় জমি বরাদ্দ দেয়, সেটি নিয়ে সিভিল সমাজে নানান কুবচন প্রচলিত রয়েছে। সেটির রয়েছে নানান নেগেটিভ বিতর্ক, নানান নেগেটিভ সমালোচনা। সরকারি প্রক্রিয়ায় জমি বরাদ্দসহ নির্বাচিত এমপিদের অগ্রাধিকার কোটায় যে সকল সূযোগসুবিধা দেয়া হয়, সেগুলো সম্পর্কে এদেশে গণতন্ত্রের নামে নির্বাচিত যে সকল এমপি অর্থ-সম্পদ অর্জনের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন তারা ছাড়া সকলেই বিরোধীতা করেন, এ সকল সূযোগসুবিধা বন্ধ করার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। কাজেই সরকারি প্রক্রিয়ায় বরাদ্দকৃত জমি নেয়া কোনভাবেই ঠিক হয়নি।
(খ). বরাদ্দপ্রাপ্ত জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে আপন আপন বউ (স্ত্রী) এর নামে নামকরন করে সেখানে বউ, ছেলের বউ, মেয়ের জামাই নিয়ে বসবাস কোন ভাবেই ঠিক হয়নি।
০৬. বিকল্প যা হতে পারত:
(ক). সবচেয়ে ভাল হতো সরকারি যে প্রক্রিয়ায় জমি বরাদ্দ দেয় প্রত্যাখান করে জমি বরাদ্দ না নেয়া।
(খ). বরাদ্দপ্রাপ্ত জমি বিক্রি করে পুরো টাকা সংগঠনের বায়তুল ফান্ডে জমা দেয়া।
(গ). বরাদ্দপ্রাপ্ত জমি বিক্রি করে পুরো টাকা দিয়ে কোন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা হাসপাতাল জাতীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে দেওয়া।
(ঘ). অথবা সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির রেস্ট-হাউজ হিসাবে ব্যবহার করা।
(ঙ). সবচেয়ে খারাপ যেটি হতে পারতো তা হলো বরাদ্দপ্রাপ্ত জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সবচেয়ে মুরুব্বী এবং অর্থনৈতিকভাবে অপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের অথবা বিগত ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবরের কিছু শহীদ বা চরমভাবে পঙ্গু গাজী ভাইদের নামে উইল করে দেওয়া।
০৭. সরকারি জমি ব্যক্তি নামে বরাদ্দ নেয়ার ক্ষতিকর দিকসমূহ:
(ক). সরকারি যে প্রক্রিয়ায় জমি বরাদ্দ দেয়া হয় সেটি নিয়ে সিভিল সমাজে নানান সমালোচনা ও নেগেটিভ বিতর্ক রয়েছে; কাজেই পুরো সংগঠনের বিরুদ্ধে এমন জঘন্যভাবে সমালোচিত প্লট ব্যক্তিস্বার্থে / দলীয়স্বার্থে গ্রহনের অভিযোগ উত্থাপিত হবে।
(খ). সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার কোটায় প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়, যেমন- মন্ত্রী, এমপি। এখানে যে বিষয়টি মৌলিক তা হচ্ছে-অন্যান্য দলের মন্ত্রী বা এমপি নির্বাচন এবং জামায়াতের মন্ত্রী বা এমপি নির্বাচন এর মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য দলের মন্ত্রী বা এমপি নির্বাচিত হয় কিন্তু জামায়াতের মন্ত্রী বা এমপিদেরকে নির্বাচিত করা হয়। জামায়াতের কোন এমপি বা মন্ত্রী কে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে যে সময়, শক্তি, শ্রম, সম্পদ ও মেধা ব্যয় হয় তা এদেশের (কিংবা প্রবাসের) হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ সমর্থক, কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের অবদান। অন্যান্য দলের মন্ত্রী বা এমপি নির্বাচনের মতো ব্যক্তিক কোন যোগ্যতা বা ক্যারিশমার অবদান এখানে গৌণ। কাজেই অন্যান্য দলের নির্বাচিত এমপি বা মন্ত্রীর ন্যায় জামায়াতের মন্ত্রী বা এমপিদের রাষ্ট্রপ্রদত্ত সূযোগ-সুবিধাদি ব্যক্তিক/ পারিবারিকভাবে ভোগ করার কোন অধিকার নেই।
(গ). জামায়াতের নমিনেশন পাওয়া নির্বাচিত এমপি বা মন্ত্রী যদি অগ্রাধিকার কোটায় প্লট বরাদ্দ পেয়ে ব্যক্তিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করেন, তাহলে নমিনেশন পাননি অথবা নমিনেশন পেয়েও নির্বাচিত হতে পারেননি; তাদের ত্রুটি কোথায় ?
(ঘ). নির্বাচিত এমপি বা মন্ত্রী যদি অগ্রাধিকার কোটায় প্লট বরাদ্দ পেয়ে ব্যক্তিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, তাহলে পরবর্তীতে সবাই নির্বাচন করতে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত হবে। শুধু তাই নয়, যে এলাকায় নির্বাচন করলে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেই আসনের প্রতি সকলের পরোক্ষ দৃষ্টি থাকবে।
(ঙ). জনশক্তিরা সাংগঠনিক কাজের নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলবে। তাদের মাঝে সবার অলক্ষ্যেই পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা, দলাদলি ও নেপোটিজমের জন্ম নেবে।
(চ). এক প্রজন্ম (জনশক্তি) সাংগঠনিক কাজের জন্য সময়, শক্তি, শ্রম, সম্পদ, মেধা ও জীবন উৎস্বর্গ করবে আর অন্য প্রজন্ম (নির্বাচিত এমপি বা মন্ত্রীর সন্তান) তা ভোগ করবে; এটি ইসলামি ইথিকস এর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বরং যে জনশক্তি সাংগঠনিক কাজের জন্য সময়, শক্তি, শ্রম, সম্পদ, মেধা ও জীবন উৎস্বর্গ করবে তারাই এর চাইতে বেশি হকদার।
(ছ). আমীরে জামায়াত ও সেক্রেটারি জেনারেল কোটায় যদি এটা মেনে নেয়া হয়; তাহলে পরবর্তীতে এই দুইটি পদের জন্য আন-ইথিক্যাল সাইকোলজিক্যাল লড়াই শুরু হবে যা ইসলামি আন্দোলনের মূল স্পিরিট/ চেতনাকে সমূলে ধ্বংস করবে।
(জ). এই ঘটনার ফলে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন লেভেলে জামায়াতের নির্বাচিত সকল প্রতিনিধি একই পথ অবলম্বন করবে।
(ঝ). ইসলামি-ইথিকস বেজড্ রাষ্ট্রব্যবস্থায় সামাজিক সুবিচারের যে শ্লোগান আমরা দিচ্ছি তা অংকুরেই মুখ-থুবড়ে পড়বে।
(ঞ). বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার নানাবিধ আইন-কানুনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়-সম্পদের যে লুটপাট, আত্মসাৎ, ডাকাতি ও দস্যুবৃত্তি চলছে তা বন্ধ করার যে ঘোষণা আমরা দিচ্ছি- কোটার মাধ্যমে নির্বাচিত এমপি বা মন্ত্রীর জনগণের সম্পত্তি অপদখল প্রক্রিয়া তার পুরোপুরি বিপরীত।
(ট). এই প্রত্রিয়া জামায়াত-শিবিরের শত শত গাজী, শহীদ এবং তাদের পরিবারের সাথে একটি চরম বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ আচরণ।
(ঠ). যে দলের এমপি-মন্ত্রীরা (তথাকথিত) আইনের নামে বৈধতার অজুহাত দিয়ে জনগণের সম্পত্তি লুটপাট করতে দ্বিধা করেনা তাদের মুখে আর যাই হোক ইসলামের কথা জনগণ শুনতে পছন্দ/ রুচি করবেনা।
০৮. বর্তমানে যা করণীয়:
(ক). আমীরে জামায়াত ও সেক্রেটারি জেনারেল উভয়েই অগ্রাধিকার কোটায় প্রাপ্ত প্লটে নির্মিত ফ্লাটসহ সরকারকে ফিরিয়ে দেয়া ।
(খ). বরাদ্দপ্রাপ্ত জমিতে নির্মিত ফ্লাটসহ জমি বিক্রি করে পুরো টাকা সংগঠনের বায়তুল ফান্ডে জমা দেয়া।
(গ). ব্যক্তিক মালিকানার বাইরে যে কোন যৌক্তিক উপায় অবলম্বন করা।
০৯. (আমীরে জামায়াত ও সেক্রেটারি জেনারেল নিজ হাতে উক্ত সম্পদ ফিরিয়ে দিলে) উপকারিতা:
(ক). শুধুমাত্র বাংলাদেশের ইসলামকেন্দ্রিক আন্দোলনেই নয় বরং বিশ্ব ইসলামি আন্দোলনের জন্য এটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
(খ). বাংলাদেশের চলমান ধারার জাতীয় রাজনীতিতে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।
(গ). পরবর্তীতে আনুষঙ্গিক অন্যান্য সকল ক্ষতি হতে বাংলাদেশের ইসলামকেন্দ্রিক আন্দোলন ও ইসলামকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল(সমূহ) রক্ষা পাবে।
১০. আমীরে জামায়াত ও সেক্রেটারি জেনারেল এর নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব:
আলোচিত বিষয়টি আপন আপন পরিবারে আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করত: বিষয়টি আমীরে জামায়াত ও সেক্রেটারি জেনারেল এর দৃষ্টিতে নিয়ে আসা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা সমাধান এর উদ্যোগ নেয়া।
১১. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় শুরার সমালোচনা:
(ক). উপরোক্ত ঘটনাটি যদি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় শুরার অগোচরে ঘটে থাকে, তাহলে তা খুবই দু:খজনক কারণ সে ক্ষেত্রে তারা তাদের দায়িত্বের চরম অবহেলা করেছেন।
(খ). আর যদি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির কেন্দ্রীয় শুরার সামষ্টিক সিদ্ধান্তেই ঘটে থাকে, তাহলে তা আরো বেশি দু:খজনক, কিছুটা লজ্জাজনকও, কারণ সে ক্ষেত্রে তারা তাদের দায়িত্বের শুধু চরম অবহেলাই নয় বরং চরম অবমাননাও করেছেন। সেক্ষেত্রে শুধু এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, তারা আন্দোলনের সামষ্টিক ও সুদূরপ্রসারী ফলাফলের প্রতি লক্ষ্য না রেখে ‘ব্যক্তিবাদ- জিন্দাবাদ’ নীতির অনুসরন করেছেন যা বিএনপি, আওয়ামী লীগ ইত্যাকার রাজনৈতিক দলে ‘অয়লিং বা তেলবাজি’ হিসাবে নন্দিত বা নিন্দিত এবং যা দলগুলোর নৈতিক অবক্ষয় ও দেওলিয়াত্বের অন্যতম প্রধান কারণ।
১২. বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রীসংস্থার সমালোচনা:
সকল দেশেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানচর্চার, জ্ঞানসাধনার পাদপীঠ হিসাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে কোন পলিসি বা মূলনীতির গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারে। এবং বিশ্ববিদ্যায়ের ক্লাসে তাই সকল বিষয়ের সমালোচনা (পজেটিভ / নেভেটিভ) শোনা যায়। আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠন হিসাবে ছাত্রশিবির ও ছাত্রীসংস্থার কর্মীদের এসব গঠনমূলক সমালোচনা নিঃসন্দেহে জ্ঞাত থাকার কথা। জামায়াতের শুরা সদস্যরা জনগণের শ্রবনসীমার বাইরে থাকলেও ছাত্রশিবির ও ছাত্রীসংস্থার কর্মীরা জনগণের হস্তসীমা ও শ্রবনসীমার মাঝেই থাকে। সরকারি জমি/ প্লট ব্যক্তিস্বার্থে / ব্যক্তিনামে বরাদ্দ নেয়ার মত এমন সমালোচিত ঘটনা জামায়াতের নির্বাচিত এমপি বা মন্ত্রীর ক্ষেত্রে ঘটে গেল, অথচ ছাত্রশিবির ও ছাত্রীসংস্থার কর্মীদের নিকট হতে কোন প্রতিক্রিয়া দৃষ্টিগোচর হলোনা। সত্যিই বড় বিচিত্র (!) এ দেশের তথাকথিত ইসলামভিত্তিক আন্দোলনের ধ্বজাধারীরা।
১৩. .. .. .. .. ..এবং ভবিষ্যত:
আজ যদি এই সমস্যার সমাধান না হয় তবে এতটুকু বলেই শেষ করি যে, “ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ইসলামকেন্দ্রিক আন্দোলনের নৈতিক বাধ্য-বাধকতার কারণে অবশ্যই এই সমস্যার সমাধান হতে হবে এবং সেদিন হয়তো বিষয়টি (বর্তমান) আমীরে জামায়াত ও (বর্তমান) সেক্রেটারি জেনারেল কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যদের এত মহানুভবতা প্রদর্শনের সূযোগ থাকবেনা”
১৪. কাউন্টার লজিক ও লজিশিয়ান:
১৪.১ কাউন্টার লজিক: (ক) মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ যথাক্রমে জামায়াতের আমীর ও সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন, (খ) এটি একটি মানবিক ব্যাপার, (গ) এটি বৈধ, (ঘ) এই প্লট তো সরকার তাদের দায়িত্ব পালনের পুরস্কার হিসেবে দিয়েছে, (ঙ) এটি শুরার সিদ্ধান্ত মোতাবেক হয়েছে, (চ) যারা পরশ্রীকাতর তারা এইসব লিখালিখি করছে।
১৪.২ কাউন্টার লজিশিয়ান: (ক) যে সকল জামায়াত কর্র্মী ঢাকায় নিজস্ব প্লটসহ ফ্লাটের মালিক, (খ) যে সকল জামায়াত কর্র্মী দেশের বাইরে অবস্থান করেন, (গ) যে সকল জামায়াত কর্র্মী ঢাকায় অনেক টাকার মালিক, (ঘ) যে সকল জামায়াত নেতাকর্র্মীদের ভবিষ্যতে এমন প্লটসহ ফ্লাটের মালিক হবার সম্ভাবনা রয়েছে, (ঙ) যে সকল জামায়াত নেতাকর্র্মীরা হাঁ হুজুর- জি হুজুর করে সংগঠন করেন, (চ) যে সকল জামায়াত সমর্থকরা শুধু টাকা-পয়সা দিয়ে সংগঠন করেন, রক্ত ঝরান না, (ছ) যারা শুধু রক্ত ঝরান, সংগঠনের ভবিষ্যত চিন্তা করেননা, (জ) যারা নিজেদের সকল সিদ্ধান্তকে ভুলত্রুটির উর্ধ্বে মনে করেন।.. .. ..
এ প্রসঙ্গে শুধু এটুকুই বলি যে, এসব দূর্বল লজিক ও লজিশিয়ানদের অযৌক্তিক যুক্তির কোন উত্তর আশা করি পাঠকদের দিতে হবেনা।
১৫. মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের নেতৃবৃন্দদ্বয়কে হেফাজত করুন এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সরকারি প্রক্রিয়ায় বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লটে নির্মিত ফ্লাটগুলোকে সরকারকে ফিরিয়ে দেবার অথবা উপরে বর্ণিত যে কোন অল্টারনেটিভ উপায় গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইসলামকেন্দ্রিক আন্দোলনকে কলংকমুক্ত করার সূযোগ দান করুন। এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরকে সকল প্রকার লোভলালসা ও সংকীর্ণতার উর্ধ্বে থেকে ইসলামকেন্দ্রিক আন্দোলনের বৃহত্তর কল্যাণে নেতৃবৃন্দদ্বয়কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করার তাওফিক দান করুন। এবং নেতৃবৃন্দদ্বয় এর ঘনিষ্ঠ লোকজন যারা ফেসবুক বা ব্লগে রয়েছেন তাদেরকে এই খোলা চিঠির একটি কপি তাঁদের নিকট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করার তাওফীক এনায়েত করুন। আমীন। সুম্মা আমীন।
১৬.আমার কৈফিয়ত: অনেক দিন পর গেলাম আপন গ্রাম। দীর্ঘ দিন পর গ্রামে যাওযায় কথা উঠল নানান বিষয় নিয়ে। ইসলামের দাওয়াতী কাজের কারণে দল-মত র্নিবিশেষে ছোট বড় সব বয়সী মানুষের সাথেই ছিল আনাগোনা। কাজেই বাড়ী গেলেই সবার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপচারিতা জমে উঠত। এবারো তার ব্যতিক্রম হলোনা। অন্যান্য বিষয়ের সাথে এবার যুক্ত হলো জামাত হতে সদ্য নির্বাচিত পৌরসভার চেয়ারমানের ও কমিশনারদের ভুমিকার কথা। জামাত কর্মী- সমর্থকদের (রুকনসহ) মুখে নানান মুখি কথা শুনে হতাশ হয়ে গেলাম। এবার সাধারণ জনগণ ও বিরোধীদলীয় লোকদের সাথেও এ বিষয়ে কথা বললাম। তাদের মুখে যা শুনলাম তাতে হতাশ হয়ে গেলাম। কারণ ও সমাধান কী হতে পারে তা জানার জন্য স্থানীয় কয়েকজন রুকনের সাথে বিস্তারিত কথা বললাম। সমাধানের কারণ হিসাবে তারা যে গুলো বললেন সেগুলো যথেষ্ঠ বলে মনে হলোনা। সমস্যার মূল খুঁজতে গিয়ে ভাবলাম বিষয়টিকে একাডেমিক এ্যাপ্রোচ এ নিয়ে আসি। তাই পড়লাম এবং লিখতে বসলাম “চাই পরিকল্পণা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণও মূল্যায়ণ বিভাগ” এই শিরোণামে। লিখতে গিয়ে মনে হলো মাথার পচন দূর করতে না পারলে অন্যান্য অঙ্গের পচন রোধ করা সম্ভব নয়। তাই পূর্বের লিখা সমাপ্ত না করেই শুরু করি এই লিখা। একে বাংলায় তারপর কম্পোজের ঝামেলা; সব মিলিয়ে শেষ হলো এখন- আর তাই বর্তমান সময়ে ব্লগে প্রকাশ। তাছাড়াও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকারের জামাত-শিবির বিরোধী কার্যক্রম নানাভাবে আমাদের এই প্রাণপ্রিয় সংগঠনকে নানানভাবে শক্তিশালী করলে ও জামাত থেকে নির্বাচিত প্লট বা ফ্লাট দখল (তথাকথিতভাবে বৈধ!!!) জাতীয় ঘটনা সংগঠনকে কুঁড়ে কুঁড়ে সবার অলক্ষ্যেই ধ্বংস করে ফেলবে; আর এ চিন্তা থেকেই সবিনীত আত্মপ্রকাশ। প্লিজ, প্লট বা ফ্লাট দখলকারীদের (!!!) সাহায্য করুন, যাতে তারা তাদের নিকট প্রত্যাশিত ভুমিকা পালন করতে পারেন এবং সংগঠন যেন এ জাতীয় সর্বাত্মকভাবে অকল্যাণকর কাজ থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যতে সুরক্ষিত হয়।
বিষয়: বিবিধ
৩৩৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন