সরকার নাকি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে না দেখুন তার নমুনা
লিখেছেন লিখেছেন মিশন ০১ মার্চ, ২০১৩, ১০:৪৯:১১ রাত
জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে দেশের বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার। ওইসব দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার বিষযে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে সরকার। এই প্রক্রিয়ায় সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন কওমি মাদ্রাসার আলেমরা। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ওই সূত্র নতুন বার্তা ডটকমকে জানায়, সরকার জানে যে, কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল আছে যারা জামায়াতে ইসলামীর চরম বিরোধী। বিরোধী দলগুলোর এই অবস্থান কাজে লাগালোর চেষ্টা করছে সরকার।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর এক আলোচনায় জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে কয়েকজন মন্ত্রীর আগাম বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামেও এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। অথচ দিন-তারিখ দিয়ে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আগাম বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।”
সূত্রে জানা যায়, ওইদিনের বৈঠকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য একজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী যাতে ধর্ম ব্যবহার করে ফায়দা হাসিল করতে না পারে, সে জন্য মন্ত্রীদের নিজ নিজ এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা ইমামদের সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এজন্যে সরকারি দলের সবাই এখন বলছে ধর্মভিত্তিক দল নয়, শুধু জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকেও এখন আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বা দলের বিরুদ্ধে কিছু বলা হচ্ছে না। বরং বলা হচ্ছে তারা ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। তাদের দাবি একটাই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক।
সরকার কওমি মাদ্রসার আলেমদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। সূত্রটি জানায়, কওমি মাদ্রাসার আলেমরা যদি সরকারের বিরুদ্ধে নামেন তাহলে তা মোকাবেলা করা কঠিন হবে।
আলেমদের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী সমর্থিত হিসেবে পরিচিত শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদকে সরকার আলেমদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করার দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। কারণ, কওমি মাদ্রাসার আলেমরা তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ। তিনি শাহবাগ গিয়ে সে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতেও তিনি জামায়াতবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন এবং শাহবাগের পক্ষে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
জানা যায়, শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করলেও পরবর্তী সময়ে ‘এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা ব্লগে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে’ এমন খবর পাওয়ার পর তিনি ‘অনুতপ্ত’ হন। তবে নতুন বার্তা ডটকমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে তার ওপর চাপ আসে। পরে তিনি আবারো একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে গিয়ে শাহবাগের পক্ষে নিজের অবস্থানের কথা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণায় আরো ক্ষুব্ধ হয়েছেন আলেম সমাজ। ইতিমধ্যে তাকে ময়মনসিংহে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে আরেকটি সূত্র জানায়, আলেমদের সঙ্গে সরকার সমঝোতায় আসতে চায়-এ কারণেই আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রাহমানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। কারণ তার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফী। এছাড়া সারা দেশের আলেম-ওলামা মাহমুদুর রহমানকে তাদের পক্ষের শক্তি হিসেবে মনে করছেন।
শুধু সরকারের কাছেই নয়, জামায়াতের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন কওমি মাদ্রাসার আলেমরা। এজন্যে দলটি ওলামা-মাশায়েখ পরিষদসহ বিভিন্ন নামে দলের নেতাদের মাঠে নামাচ্ছে।
এদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকরা জামায়াত-শিবিরের ব্যাপারে কঠোরভাবে মাঠ নামছে। এ কথার সত্যতা মেলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্যে। শুক্রবার সকালে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক বৈঠকে তিনি বলেন, “জামায়ত-শিবির সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের নেতাদের তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবেল করার নির্দেশনা দিয়েছেন।”
বিষয়: বিবিধ
১০৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন