সরকার এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবে কি?

লিখেছেন লিখেছেন মিশন ০৯ মে, ২০১৩, ১১:১০:৪৭ রাত

গত ২৪ শে এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল ৮ই মে মিরপুরের টেকনিক্যালে সোয়েটার কারখানায় অগ্নিকান্ডে নিহত হয়েছেন কোম্পানির মালিক, পুলিশের কর্তাব্যক্তিসহ উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা। এর আগে রানা প্লাজায় যখন শ্রমিকেরা ভবনে চাপা পড়ে যখন হাহাকার করতে থাকে ঠিক সেই মুহুর্তে এদেশের কিছু জঘন্য রাজনীতিবিদ বলতে শুরু করলেন তাদের সেই পুরাতন রাজনীতির আজব কল্পকাহিনী আর সেটা স্পষ্ট হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়। প্রধানমন্ত্রী ঐ ঘটনার পর বললেন ভবনের ফাটল পরিলক্ষিত হওয়ার পর আমরা শ্রমিকদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছি এবং রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা যুবলীগের সাথে জড়িত নন। যখন বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাওভাবে প্রচার করতে শুরু করল যে ভবন মালিকের নির্দেশে গার্মেন্টস মালিকেরা শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন যার ফলশ্রুতিতে এত মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রী যখন ব্যাপারটি বুঝতে পারলেন তখন তিনি জনগনকে এ থেকে বোঝাতে চাইলেন যে সোহেল রানার যুবলীগের কেউ না অর্থাৎ তিনি সোহেল রানাকে প্রকৃত অপরাধীর তালিকা থেকে সরিয়ে দেয়ার পায়তারা যেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সোহেল রানা অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন । এ থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হল একটি প্রচলিত প্রবাদ প্রমানিত হয়েছে যে প্রবাদটি হল এরকম রান্নাঘর থেকে কলা খোয়া যাওয়ার পর মাসিমা জিজ্ঞেস করাই আগেই কলা চোর বলে উঠল “মাসিমা আমি কলা খাইনি”। এরপর আসি কুখ্যাত ও বিখ্যাত হিসেবে পরিচিত আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথায়। তিনি বললেন যে হরতালকারীদের ঝাকুনিতে নাকি রানা প্লাজা ধসে পড়েছে। এই বক্তৃতার সাথে দুই-একজন একমত পোষন করলেও বেশিরভাগ লোকজনই দ্বিমত পোষন করেছেন। তার বাস্তব নমুনা দেখলাম আমি বাড়িতে গিয়ে গ্রামের কয়েকজনের কথা বলে। একজন বললেন যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই কথা বলার জন্য জুতা দিয়ে পেটানো উচিত। আমি একজনকে বললাম উনি একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যে কথাটি বলেছেন তা তো একেবাড়েই উড়িয়ে দেয়া যায় না ততক্ষনাৎ তিনি উত্তর করে বসলেন যে উনি শিক্ষিত নামের মূর্খ। উনার উচিত ঐ কথাটির জন্য জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করা। তারপর উদ্ধার কাজের ক্ষেত্রে অনেকেই সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে কারণ তারা যথোপযুক্ত সরঞ্জামাদি (অক্সিজেন, টর্চলাইট, ড্রিল মেশিন, এয়ার ফ্রেশনার) প্রভৃতিসহ জনবল সরবরাহে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। অন্যদিকে বিরোধীদলের লাশ গুমের ঘটনাও রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার ঝড় তোলে।



কত ঘটনাই তো বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে তার কোনটির বিচার করা কি আদৌ সম্ভব হয়েছে। আমি আমার ছোট্ট জ্ঞানে যতটুকু বুঝি তা হল যে যারা সন্ত্রাসী তারা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নয় এমনকি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটানোর পর তাদের কোন রাজনৈতিক দলের মধ্যে আশ্রয় দেয়া উচিত নয়। তবুও এদেশের সংস্কৃতিতে এটা দেখা যায় যে সন্ত্রাসীদের কোন পক্ষে ঠেলাঠেলি করে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই তো তাদের বিচার করা সম্ভব না তাই আমাদের জঘন্য রাজনীতিবিদেরা সে কাজটিই করে থাকেন অর্থ ও ক্ষমতার লোভে। যার ফলশ্রুতিতে নিরপররাধ খেটে খাওয়া শ্রমিকদের কষ্টে উপার্জিত টাকা দিয়ে সুখ ভোগ করেন শুধু কর্তাব্যক্তিরাই আর শ্রমিকেরা চিরদিন থেকে যান অন্ধকারের অতল গহব্বরে।

কেন সেদিনের সেই রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় কর্তাব্যক্তিরা কেউ মারাগেলেন না অথচ মিরপুরের ঘটনায় কর্তাব্যক্তিরা মারা গেলেন না হয়তো কোম্পানি ছুটি থাকার কারনে এমনটি হয়েছে। মিরপুরের ঘটনার পর হয়তোবা দেখা যেতে পারে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদেরকে আগামী অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমাদিতে বলা হবে এবং যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে কিন্তু এর চাইতেও বড় ঘটনার শিকার রানা প্লাজার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য হয়তোবা দিনের পর দিন সময় বাড়িয়ে নেয়া হবে, টেলিভিশনের টকশোতে এ নিয়ে কয়েকদিন মাতামাতি চলবে তারপর সরকার ক্ষতিগ্রস্থদের হয়তোবা কিছু আর্থিক সাহায্য- সহযোগিতা করবে, কেউবা আবার এসব ঘটনা থেকে সুবিধা নিবে এতকিছু হওয়ার পরেও হয়তো সমস্ত কোলাহল থেমে যাবে, হয়তো কিছুদিন পর অন্য কোন কারখানায় দূর্ঘটনা ঘটে যাবে। এভাবেই চলবে তারপরেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের টনক কিছুটা হলেও নড়বে কি? এসব ঘটনার প্রকৃত কারণ কি এবং কারা এসব ঘটনার সাথে জড়িত তাদের কি বিচারের আওতায় আনা যাবে কি? যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে এইসব দূর্ঘটনা রোধ করা যাবে কি? এধনের শতশত প্রশ্ন হাজার হাজার বিবেকের কাছে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

বিষয়: বিবিধ

১২৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File