দেশ ও দলের স্বার্থে সমঝোত হতে পারে- জামায়াত নেতা (পর্ব-১)
লিখেছেন লিখেছেন মুক্তপাতা ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:০২:২৯ বিকাল
দেশ ও দলের স্বার্থে আওয়ামীলিগের সাথে সমঝোত হতে পারে এমনটাই প্রকাশ করেছেন জামায়তেই ইসলামের এক প্রভাবশালী নেতা। আত্মগোপনে থাকা জামায়াতের এক প্রভাবশালী নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে শুক্রবার সন্ধ্যায় একান্ত সাক্ষাতকার দিতে রাজি হন। নিম্নে জামায়াত নেতার সম্পূর্ন কথোপকথন প্রকাশ করা হলো:-
প্রেস: আসা......। কুম।
জামায়াত নেতা: ওয়ালাইকুম.......সালাম।
প্রেস: কেমন আছেন?
নেতা: জি আলহামদুল্লিলাহ। শারীক ভাবে ভালোই রেখেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। কিন্তু দু:খের সাথে গোপনীয়তার মাধ্যেমে তোমার সাথে কথা বলতে হচ্ছে। স্নেহের সাথে তোমাকে তুমিই বলি।
প্রেস: জি, আমার কোন আপত্তি নেই।
জামায়াত নেতা: ধন্যবাদ।
পেস: আমাদের জানার ইচ্ছা তো অনেক কিছুই কিন্তু আমাদের থেকে দেশের জনগন বেশি জানতে চায় আমাদের মাধ্যেমে। স্যার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কয়েটি প্রশ্ন করতে চাচ্ছি।
জামায়াত নেতা: হ্যা, তা বুঝতে পরছি। শুরু করো তা নাহলে সময়ের সাথে পারবে না। আর আমার সাথে গ্রেফতার হলে তুমি জামাত-শিবিরের নেতা বা ক্যাডার হয়ে যেতে পারও ।
প্রেস: স্যার, চলতি শোনা যাচ্ছে চলতি মাসেই জামায়াত নেতা কাদের মোল্ল্যার আপিলের রায় ঘোষনা করা হবে। এই রায় নিয়ে জামায়াতের প্রস্তুতি সম্পর্কে যদি বলতেন।
জামায়াত নেতা: দেখো, ব্যাপারটা বিচারাধীন, আমরা আশা করিছি আদালত ন্যায় বিচার করবে। সেক্ষেত্রে ন্যায় রায়ই আমরা পাবো। এবং ন্যায় বিচারে আমরা আশাবাদী।
প্রেস: বিশেষ ট্রাইবুনালে তো তাকে কয়েকটি মামলা সন্দেহাতিত ভাবে প্রমানিত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আপনারা কি ধরনে শাস্তি পেতে পারে বলে মনে করেন।
জামায়াত নেতা: যেটাকে এই সরকার আন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বলছে সেটা মোটেও আন্তজার্তিক নয়। এটা অনেক আগেই বিতর্কীত হয়েছে। আমাদের যে সকল শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের কেউ এই অপরাধের সাথে জড়িত ছিলনা বলে আমরা মনে করি। এবং কোন স্বাক্ষীই সুনিদিষ্ট স্বাক্ষ্যে দিতে পারেনি। আর জোড় পূর্বক এই রায় বাংলাদেশের জনগন মেনে নেবেনা।
প্রেস: স্যার, কি ধরনে শাস্তি পেতে পারেন বলে আশা করেন?
জামায়াত নেতা: আমরা আশা করি আমাদের সকল নেতা খালাশ পাবেন। এবং জনগণের নেতা জনগনের মাঝেই ফিরে আসবেন।
প্রেস: স্যার, যদি সরকার পক্ষের আপিলের প্রেক্ষিতে ফাসির রায় হয় সেক্ষেত্রে আপনাদের কি ধরনের প্রস্তুতি।
জামায়াত নেতা: আমাদের সব প্রক্তুতিই নেয়া আছে সেই রায়ের পরেই দেখতে পাবে। জামায়াত জনগনের দল জনগন যদি তাদের(জামায়াতের) নেতাদের বিরুদ্ধ প্রহশনের রায় মেনে নেয় তাহলে নেবে, আর যদি জনগণ এর বিরুদ্ধে শোচ্চার হয় তাহলে এই রায় প্রহশনের রায়কে প্রত্যাখান করবে।
প্রেস: স্যার, আমরা দেখেছি ট্রাইবুনলের রায়ের দিন হরতাল রায়ের পরেও রায়কে প্রত্যাখান করে হরতাল, জ্বালাও পেড়াও কর্মসূচী করেছে। এই রায়ে কি ধ্বংসাত্বক কোন কর্মসূচী থাবে কিনা?
জামায়াত নেতা: জামাত একটি প্রতিষ্ঠিত ও গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। জাতীয় সংসদেও জামায়াতের জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছে। আর গণতান্ত্রিক দল হিসেবে দলের সাথে অগণতান্ত্রিক, প্রহশন মূলক কর্মকাণ্ড, অত্যাচার মেনে নেয়া যায়না। আর হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার সেক্ষেত্রে হরতালের মত কর্মসূচী আসতে পারে।
প্রেস: স্যার, জ্বালাও পোড়াও ধ্বংসাত্মক কর্মসুচী এর কথা বলছিলাম।
জামায়াত নেতা: জামায়তে ইসলামী কখনও জ্বালাও পোড়াও বা ধ্বংসাত্মক বিশ্বাস করে না।এই সরকার ক্ষমতা পেয়ে সকল ক্ষেত্রে যে ধরণের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে আসলে মেনে নেয়ার মত নয়। আর জামায়ত ইসলাম যদি ধ্বংসাত্মকএ বিশ্বাস করতো তাহলে একটু আড়চোখে তাকালেই সরকারে অনেক অপকর্মের ধ্বংস করে দিতো পারতো। কিন্তু তাতে দেশের ক্ষতি হবে তাই দেশের কথা চিন্তা করে বলেই জামায়তায় কোন দিন ধ্বংসের রাজনৈতিতে বিশ্বাসী নয়।
প্রেস: আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদি সহ কয়েকটি রায়ের পরেই অনেক সহিংস কর্মকান্ডে জামায়াত-শিবির জড়িত বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়। এ সম্পর্কে?
জামায়াত নেতা: মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদি শুধু জামাতের নেতা নয় কোটি কোটি মানুষের প্রাণে মানুষ। তার বিরুদ্ধে সরকার যে অন্যায় করে চলেছে তারই প্রতিবাদ জানিয়েছে মানুষ। আর কোটি কোটি মানুষ প্রতিবাদ করলে সেখানে ভংচুর হতেই পারে। ছাত্রলীগ যুবলীগ চাদার দাবীতে যে সকল অত্যাচার করে মানুষের উপর তার এক ভাগও তো সহিংসতা করেনি জামাত-শিবির।
প্রেস: স্যার শোনা যাচ্ছে জামায়াতের সাথে আওয়ামীলীগের সাথে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
জামায়াত নেতা: আওয়ামীলীগের সাথে জামায়াতের সমঝোতার কোন সম্ভাবনা নেই।
প্রেস: জামায়াতে ইসলামী যাতে নিষিদ্ধ না হয় সেই ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা চলছে, এরকম শোনা যাচ্ছে।
জামায়াত নেতা: নিষিদ্ধের ব্যপারে সমঝোতার কিছু নেই। আমরা আইন প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছি। আদালতের উপর আমাদের বিশ্বাস আছে । আশা করি আদালত কোন শক্তির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে রায় দিবে। সেই ক্ষেত্রে আমরা ১০০ ভাগ আশাবাদী জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নিষিদ্ধ হবে না।
প্রেস: নিম্ন আদালতের রায় যদি বহাল থাকে তার মানে যদি রায় বিপক্ষে যায়(নিষিদ্ধ হয়) সেক্ষেত্রে তো কিছুই করার থাকবে না। সেই সূত্রধরেই সমঝোতা হতে পারে কি?
জামায়াত নেতা: ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়, দেশের স্বার্থে অনেক কিছুই হতে পারে।
প্রেস: তাহলে সমঝোতা হতে পারে?
জামায়াত নেতা: সেই ক্ষেত্রে দলীয় নীতি নির্ধারনী ফোরামে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। দলের সিদ্ধান্তের কথা আমি তো বলতে পারিনা।
প্রেস: আপনারা তো ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল। যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারে তো বিএনপির কোন সুস্টষ্ট সিদ্ধান্ত বা জামায়াতের পক্ষে সরাসরি কোন কর্মসুচী দিতে দেখা যায়নি আপনারা কিভাবে দেখছেন ব্যাপারটি।
জামায়াত নেতা: বিএনপি তারা তাদের রাজনীতি করে। সেই সাথে যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে তাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সহ বেশ কয়েকজন নেতা আটক রয়েছে। তারা যদি মনে করে তাদের নেতারা যুদ্ধাপরাধী এবং এই ট্রাইবুনাল স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচার করছে সেই ক্ষেত্রে জামায়াতের করনীয় নেই।
প্রেস: সেই ক্ষেত্রে জোটের ভেতরে কোন ফাটল ধরার সম্বাভনা আছে?
জামায়াত নেতা: বিএনপির দলের ভেতরের কিছু শত্রু আছে তারা হয়তো বেগম জিয়াকে বুঝিয়েছেন নির্বাচনে তারা জয় লাভ করবে। আর এই কান কথায় বিএনপি আমাদের সাথে কানা মাছি খেলছে। কিন্তু এই জালেম সরকারের হাত থেকে দেশ রক্ষা করা এতো সহজ হবে না।
প্রেস: আপনারা বুঝতে পারছেন যে বিএনপি আপনাদের একটু এড়িয়ে চলছে।
জামায়াত নেতা: অনেকেই এধরনের মন্তব্য করছে। তাদের আন্দোলনের কর্মসূচীতেও কিছুটা প্রকাশ পায়।
প্রেস: তাহলে জোট ভঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে? বা জামায়াত একক নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে?
জামায়াত নেতা: সেটা বিএনপির কার্যক্রম পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন