শেখ হাসিনা কি অন্তর্বর্ত্তী সরকারের প্রধান হওয়ার দাবী ছেড়ে দেবেন?
লিখেছেন লিখেছেন ফারহানা শারমিন ২০ মার্চ, ২০১৩, ০২:৩৭:৫০ দুপুর
দড়ি টানাটানিটা চলছে মূলত: নির্বাচনের পর সরকার গঠন করবেন কে তা নিয়ে। শেখ হাসিনা চাইছেন তিনি, বেগম জিয়া চাইছেন তিনি। মোদ্দা কথাটা হচ্ছে শেখ হাসিনা পরের পাঁচ বছরও ক্ষমতায় থেকে যেতে চান, বেগম জিয়া সেটা মানছেন না। ২০০৬ সালে বেগম জিয়া ভাগের ভাগ শেখ হাসিনাকে না দিয়ে পরের পাঁচ বছরও চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন- শেখ হাসিনা তা মানেন নাই। গোল বাঁধিয়ে ওয়ান ইলেভেন ডেকে এনেছিলেন। এবার শেখ হাসিনা যা চাইবেন বেগম জিয়া তা মানবেন না, এটাও সরল অংকের হিসাব। আমাদের দেশের রাজনীতির এই হিসাবটা দেশের ষোল কোটী মানুষ বোঝে এবং মানে, শুধু মানতে চাইছেন না মাননীয়া শেখ হাসিনা। পরের পাঁচ বছরও তার চাই।
এইযে সংবিধান সংশোধন করে তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া, অনির্বাচিত কারও কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ডংকা নিনাদ, অন্যান্ন গনতান্ত্রিক দেশের মত ক্ষমতায় থেকেও নির্বাচন করানোর স্বপ্ন, ওয়ান ইলেভেনের জুজুর ভয় দেখানো, সব কিছুরই লক্ষ্য একটা- পরের পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় থেকে যাওয়া। একটা ব্যপারে মাননীয়া শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া একমত- তত্বাবধায়ক বা দল-নিরুপেক্ষ ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি অনিবার্য। সে কারনেই শেখ হাসিনা চাইছেন না দল-নিরুপেক্ষ ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন হোক, সে কারনেই বেগম জিয়া চাইছেন দল-নিরুপেক্ষ ব্যবস্থাপনায়ই নির্বাচন হোক। কে দাবী ছাড়বেন? শেখ হাসিনা কি মেনে নেবেন বেগম জিয়া আবার রাজ সিংহাসনে আসীন হয়ে ছড়ি ঘোরান! বা বেগম জিয়া কি রাজী হবেন শেখ হাসিনা পরের পাঁচ বছর ধরেও সড় মাখন খেয়ে যান! দু’জনেরই তো কথা একটা- তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনার হরিণটা চাই। সোনার হরিণ যদি দু’টো হতো দুইজনকে দিয়ে দিলে ল্যাঠা চুকে যেতো। এ হরিণ কেটে যদি দ্বিখন্ডিত করা যেতো ঢাকা উত্তর ঢাকা দক্ষিনের মতো দেশটাকেও দুই ভাগ করে দুইজনকে দিয়ে দেয়া যেতো। দেশ একটা সরকার একটা গদী একটা, ভাগীদার দুইজন। এই জন্যেই আমরা এমন একটা সিস্টেম বের করে নিয়েছিলাম এই পাঁচ বছর আপনি পরের পাঁচ বছর আপনি। কিন্তু দূর্ভাগা জাতি- ’৯১-এর পর দুই টার্ম চললেও তৃতীয়বার এসে আর কাজ করলো না তা। একজন সিস্টেম মানতে চাইলেন না। সব গন্ডগোল হয়ে গেলো।
আমেরিকার মত বাংলাদেশে এখন দ্বি-দলীয় রাজনীতি দাঁড়িয়ে গেছে। আসলে দ্বি-দলীয় নয় দ্বি-নেত্রীয়। আমেরিকায় গনতন্ত্র আছে রাজনৈতিক দলগুলো দেশ চালায়, আমাদের দেশে গনতন্ত্রের ভড়ং আছে দুই নেত্রী দেশ চালান। মিউজিক্যাল চেয়ারের মত একবার ইনি একবার উনি চেয়ার পান। আমার দৃড় বিশ্বাষ এই দুই মহান নেত্রী যত দিন রাজনীতিতে সক্ষম থাকবেন তত দিন ধরেই চলতে থাকবে এই রাধাচক্কর। ওয়ান ইলেভেনওয়ালারা গায়ের জোড়ে ‘মাইনাস টু’ বা দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কাজ দেয় নাই। উল্টো বুমেরাং হয়ে গেছে। দুই নেত্রী ছিলেন এবং আছেন। বিশ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতায় একথা বললে অত্যুক্তি হবেনা এনারা যত দিন ধরে সরকার চালাবেন গনতন্ত্রের নামে এই ধাপ্পাবাজী চলতেই থাকবে উন্নয়নের নামে লুটপাটও চলতেই থাকবে। গনতন্ত্র যখন কাজ করবেনা চুরি ডাকাতি লুটপাটই যখন ভবিতব্য তাহলে আর উপায় কি! অযথা ভ্যাজাল না বাঁধিয়ে মিলেমিশে ভাগজোক করে খান। তার জন্য একটা সিস্টেম আমরা বের করে দিলাম। এ পাঁচ বছর আপনি পরের পাঁচ বছর আপনি!
ফর্মূলাটা দিয়েছিলেন ‘যুদ্ধাপরাধি’ অধ্যাপক গোলাম আজম, শেখ হাসিনা তা লুফে নিয়েছিলেন। ফর্মূলাটা হচ্ছে- তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, যাতে সরকারি দল হেরে যাবে বিরোধী দল গদী পাবে। বেগম জিয়াকে ঘাড়ে ধরিয়ে ব্যবস্থাটা কায়েম করালেন কে, মাননীয় শেখ হাসিনা। এখন তিনিই তা মানছেন না! কেন! ওই ফর্মূলার নির্বাচনে গেলে গদী খোয়াতে হবে। যেহেতু গদী হারাতে হবে অতএব সে ব্যবস্থা খারাপ। বেগম জিয়া বলতেই পারেন, আপনি যখন গদীতে যাবেন তখন তত্বাবধায়ক ভাল আর আমার টার্ম এলেই তত্বাবধায়ক খারাপ- এটা তো কোন ভদ্রলোকের কথা হলো না!
তত্বাবধায়কের ফাঁক ফোকর গলিয়ে নাকি আবার একটা ওয়ান ইলেভেন এসে যাওয়ার আশংকা আছে। যদি তাই হয় সে ফাঁক ফোকরগুলো বন্ধ করলেই হতো। নাকি এবারের ওয়ান ইলেভেনকে ভয়! আগের বারেরটা ছিল ‘আন্দোলনের ফসল’ গদী পেতে সাহায্য করেছিল, এবার যদি তা বেগম জিয়ার আন্দোলনের ফসল হয়ে যায়! হাতে ধরে তাকে গদীতে বসিয়ে দিয়ে যায়! অন্যান্ন গনতান্ত্রিক দেশে মেয়াদ শেষে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশ কি কোন গনতান্ত্রিক দেশ? আমেরিকায় ওবামা প্রেসিডেন্ট পদে থেকেই নির্বাচন করছেন, এ দেশে কি প্রশাসনের বিন্দুমাত্র অবকাশ আছে নির্বাচনে ওবামার পক্ষে প্রভাব বিস্তার করার? ভারতে নির্বাচন করায় একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের সময় সরকারে কে থাকলো তারা তার থোড়াই পরোয়া করে। আমাদের দেশের প্রশাসন কি নিরুপেক্ষ? নির্বাচন কমিশন কি দুদকের মত সরকারের আজ্ঞাবহ আর একটি নখদন্তহীন ব্যাঘ্র নয়? পুলিশ কি আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডার বাহিনী নয়? আইন আদালত কি সরকারের নির্দেশে উঠবোস করতে বাধ্য নয়? গনতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো থাকে স্বাধীন, প্রশাসন থাকে নিরুপেক্ষ, নির্বাচন কমিশন থাকে পর্যাপ্ত ক্ষমতার অধিকারি। সে কারনেই সেসব দেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও কিছু যায় আসেনা। কথাটা হচ্ছে ভয়ভীতি প্রলোভন বা সরকারদলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ আছে কিনা, মানুষ নিজের পছন্দের প্রার্থীকে অবাধে ভোট দিতে পারছে কিনা।
আমাদের দেশে সে অবস্থা নাই। স্বাধীনতার পর থেকে কোন একটা সরকার মানুষের মনে এমন ধারনা দিতে পারে নাই দলীয় সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু অবাধ বা নিরুপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের লোকজন প্রতিপক্ষ ক্যান্ডিডেটকে মনোনয়নপত্রই জমা দিতে দেয় নাই, হাইজ্যাক করে নিয়ে গেছে। জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ না ভোটের বাক্স ভরে দিয়েছে সরকারি কর্মচারিরা, সংসদ নির্বাচনের ফলাফল তৈরী করেছে ডিজিএফআই। এরশাদ সাহেবের আমলে চালু হয় ভোটকেন্দ্র দখল ইচ্ছামত সীল মারার সংস্কৃতি। এইসব বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতেই ’৯০-এ দুই নেত্রী দল নিরুপেক্ষ কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে পরের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী তুলেছিলেন। ’৯১-এর নির্বাচন হয়েছিলও বিচারপতি শাহাবউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি অবৈধ সরকারের অধীনে। দুই নেত্রী তাতে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর থেকে গত নির্বাচন পর্যন্ত তিনটি নির্বাচন হয়েছে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এখন মাননীয়া শেখ হাসিনা বললেই দেশের লোক তা মেনে নেবে কেন? এই বুজরুকি বা ফেরেববাজী যে মানুষ ধরতে পারবেনা তাই বা মনে করা হবে কেন! দেশ এনালগ যুগে থাকলে নাহয় কথা ছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশের আওয়াজ তো মাননীয় শেখ হাসিনাই তুলেছেন! এখন মানুষ যদি ডিজিটাল হয়ে ওঠে তাদেরকে কি দোষ দেয়া যায়!
না, কেউই মানে নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কিছু চ্যালাচামুন্ডা এবং রামরাজত্ব হাতছাড়া হবার ভয়ে আতংকিত কিছু টাউট বাটপার ছাড়া দেশের পনের কোটি মানুষই মনে করে পরের নির্বাচন দল-নিরুপেক্ষ ব্যবস্থাপনায় হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগের দু:শাষনে অতীষ্ঠ যারা তারা তো আছেনই আওয়ামী লীগের ভেতরেই ত্যক্ত বিরক্ত যারা তারাও মনে করেন এতই যদি সাফল্য আমাদের তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে জনগনের কাছে যেতে ভয় কেন! ভয়ই তো একটা। আমার ধারনা গোটা আওয়ামী লীগ মহলে যদি একজনও বুঝে থাকেন ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচনে গেলে কি অবস্থাটা দাঁড়াবে-, তিনি হচ্ছেন মাননীয় শেখ হাসিনা।
এখন পর্যন্ত স্টেলমেট অবস্থা। সরকার বা সরকারি দলে মাননীয় শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ‘মোঘলে আজম’। তিনি যা চান তাই হয়ে যায় তিনি যা বলেন তাই ওহী তিনি যা ইচ্ছা প্রকাশ করেন তাই আইন। এক কথায় তিনিই সরকার। তিনিই কুন ফায়াকুন। আমাদের এই গনতন্ত্রে তিনিই দন্ডমুন্ডের মালিক। বাদবাকি যারা আছেন তারা হচ্ছেন সারিন্দা পার্টি। এদের একমাত্র কাজ মালিকের ইচ্ছায় কীর্তন গাওয়া, তার যে কোন বাণীবচনে ‘আহা বেশ বেশ’ বলা, আওয়াজ পাওয়ামাত্র ‘হক্কাহুয়া’ রবে সমস্বরে চেঁচিয়ে ওঠা। এতদিন মাননীয়া শেখ হাসিনা বলে এসেছেন ‘নো কম্প্রোমাইজ’ নির্বাচন আমার সরকারের অধীনেই হবে। চারিদিকে একই সুরে ‘হুক্কাহুয়া’ রবে কানপাতা দায় হলো। সেদিন লন্ডনে গিয়ে সুর একটু নরম করে বললেন চাইলে মন্ত্রী সভায় বিরোধী দলও কিছু লোক পাঠাতে পারে। অমনি শুরু হয়ে গেল উল্টো সুর। আমাদের কাল বিড়ালমন্ত্রী সুরঞ্জিত দা’ও বললেন আহা কি মহান আমাদের নেত্রী! দয়া করে বিরোধী দল থেকে দুই চারটা মন্ত্রী নিতে রাজী হয়েছেন বেগম জিয়ার উচিত লাফিয়ে এসে সে সুযোগ গ্রহন করা।
আমি এইসব চামচা চাটুকার তেলবাজ ধান্ধাবাজদের কথার কোন গুরুত্ব দেইনা। কাল যদি প্রধানমন্ত্রী বলেন থুক্কু, এরা বলবে থুক্কু। যদি বলেন তত্বাবধায়ক মেনে নেয়া হলো তখন তো গনতন্ত্রের জন্য নোবেল পুরষ্কারের দাবীতে সারা বিশ্বজুড়ে আন্দোলন সংগ্রামই গড়ে তুলবে! এদের কোন ব্যক্তিত্ব নাই রাজনৈতিক চরিত্র নাই আত্মসম্মানবোধ নাই। এদের কথায় দেশের রাজনীতিতে কিছু যায় আসেনা। সে কারনে এইসব হাতা চামচাদেরকে আমি কখন হিসাবে ধরিনা।
যেটা হিসাবে ধরতে হবে- এতদিন পর এসে মাননীয়া শেখ হাসিনা তার অবস্থান থেকে সড়ে এলেন কেন। সড়ে আসাই তো। এ যাবতকাল বলে এসেছেন নির্বাচন তার সরকারের অধীনেই হবে এখন হঠাৎ করে ‘সর্বদলীয় সরকারের’ ফর্মূলা হাজির করা আগের অবস্থান থেকে সড়ে আসাই না! কথা হচ্ছে এই সময়ে এসে বাজারে এই আইডিয়াটা ছাড়ার হেতু কি! এক সময় বলা হতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিরোধী দল না এলেও অসুবিধা নাই, যারা আসবে তাদেরকে নিয়েই নির্বাচন হবে। শোনা গেল গৃহপালিত বিরোধী দল তৈরীর জন্য এরশাদ সাহেবকে নাকি ঘাস বিচালি খাইয়ে লালন পালন করা হচ্ছে। বিএনপিতে ভাঙন ধরিয়ে এক পক্ষকে টেনে আনা হবে। তাহলে কি ওই ফর্মূলা বাদ!
একটা ব্যপার পরিষ্কার এই সরকার আন্তর্জাতিক মিত্রহারা হয়ে পড়েছে। হয়তো এত দিনে কারও কারও রোষানলেও পড়ে গেছে। পশ্চিমাদেরকে খুশী করতে তাদের সমর্থন ধরে রাখতে ‘ইসলামপন্থী’দের ওপর ক্রাকডাউন করায় মুসলিম বিশ্ব সরকারকে সন্দেহের চোখে দেখে। ড: ইউনুসকে নিয়ে টানাহ্যাচড়া করে আমেরিকা বিলা। এই দেশটি যে কত রুষ্ট তার প্রমান পাওয়া গেল স্টেট ডিপার্টমেন্টের দেয়া কালকের বিবৃতিতে। একটি দেশ কি পরিমান বিরক্ত হলে আর একটি দেশের সরকারকে কি করতে হবে বলে নসিহত করতে পারে এই বিবৃতিটি হচ্ছে তার প্রকৃষ্ট প্রমান। দূর্নীতি করে ধরা খেয়ে উল্টো বিশ্বব্যাংককেই দূর্নীতিবাজ কমিশনখোর বলে গালাগালি করায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে হাসি ঠাট্টার পাত্র হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত একমাত্র ভারত আছে পক্ষে। কিন্তু তারাই বা কতদিন এইসব ছাগলামি গোয়ার্ত্তুমি হুকরামি সমর্থন করে যাবে বলা যায়না।
এই প্রেক্ষাপটে তাবৎ আন্তর্জাতিক মহল বলে আসছে নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে, নাহলে সে নির্বাচন গ্রহনযোগ্য হবে না। এই ‘সকল দল’ বলতে যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বোঝানো হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। তার অর্থ কি! এমন একটা নির্বাচন হোক যাতে বিএনপি অংশ নিক। অর্থাৎ নাটের গুরুরাও চাইছেন বিএনপিকে নিয়েই নির্বাচন। বিএনপি অংশ নেবে যদি দল-নিরুপেক্ষ ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন হয়। আর এমন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে বিএনপি সরকারে আসবে- এ হিসাবটা দেশের মানুষ যেমন বোঝে আন্তর্জাতিক মহলও তার চেয়ে কম কিছু বোঝেনা। তাহলে কি পশ্চিমারা চাইছে মেয়াদ শেষে শেখ হাসিনা বিদায় হয়ে যান? আর যেন ক্ষমতা ফিরে না পান! শেখ হাসিনা কি ব্যপারটা ধরতে পেরেছেন! এটা তো ঠিক মুরুব্বীরা না চাইলে আমাদের দেশে কেউ ক্ষমতায় যেতে পারেনা থাকতেও পারেনা। তাহলে কি মনে করতে হবে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে শেখ হাসিনার এটা একটা মরীয়া চেষ্টা!
বেগম জিয়া প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দিয়েছেন। হয়তো শেখ হাসিনার দূর্বলতাটা তিনি ধরে ফেলেছেন। মনে করছেন আর একটু চাপ দিলেই কাজ হয়ে যাবে। প্রবীন আইনজীবি ব্যরিষ্টার রফিক মাননীয় শেখ হাসিনার প্রস্তাবটিতে ইতিবাচক উপাদান খুঁজে পেয়েছেন। একটা জগদ্দল স্টেলমেটের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাবকে বরফ গলার আলামত বলে মনে করছেন। একই সাথে তিনি এ প্রশ্নও রেখেছেন রাজনীতিকদের নিয়ে সে অন্তবর্ত্তী সরকারের প্রধান কে হবেন।
কথাটা এখানেই। প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা বিশ্লেষন করলে দেখা যায় সরকার তার নেত্রীত্বেই থাকবে বিরোধী দল থেকে কয়েকজন মন্ত্রী তাতে তিনি অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন। তাহলে তো যে লাই সেই কদুই। আসল ব্যপারটাই তো ওখানে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কে থাকছেন। তাছাড়া দলীয় লোকজনকে নিয়েই যদি সরকার হয় তা তো দল-নিরুপেক্ষ হলো না!
বেগম জিয়া সড়াসড়ি প্রস্তাবটা প্রত্যাখ্যান করে দিলেও আমি মনে করি ঘোর অমানিশায় অনিশ্চিত আলোর প্রত্যাশায় বসে থাকার চাইতে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব নিয়ে কথাবার্তা চলতে পারে। আমাদের দেশে নিরুপেক্ষ বলতে আর কেউ অবশিস্ট নাই, গত বিশ বাইশ বছরে দুইটি রাজনৈতিক দল সব মিয়ারই লেজ কেটে দিয়েছে। কালবিড়ালমন্ত্রী সুরঞ্জিত দা’ যথার্থই বলেছেন রাজনীতিকরা কেউ নিরুপেক্ষ নন, হতে পারেন না। এই ধরনের একটা কথা বলেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া ’৯৫ সালে। তিনি বলেছিলেন একমাত্র পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরুপেক্ষ নন। সেদিন সুরঞ্জিত দা’রা নিরুপেক্ষ লোক খুঁজে পেয়েছিলেন। আজ এতদিন পর বুঝতে পেরেছেন তারাই ছিলেন সেই নিরুপেক্ষ, পাগল আর শিশু!
বেগম জিয়া বলেছেন তত্বাবধায়ক বা যে নামেই হোক নির্বাচন হতে হবে দল-নিরুপেক্ষ ব্যবস্থাপনায়। কিন্তু এই দল-নিরুপেক্ষ লোকই দেশে কেউ নাই। এ মনে করবেন একে দল-নিরুপেক্ষ উনার কাছে তিনি গ্রহনযোগ্য হবেন না। যদি সাবেক তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়েও আনা হয় সরকার প্রধান হবেন রিলিফখাওয়া বিচারপতি খায়রুল হক। বেগম জিয়া তাকে মানবেন না। তিনি যাকে দল-নিরুপেক্ষ মনে করবেন শেখ হাসিনার কাছে তিনি গ্রহনযোগ্য হবেননা। তার চেয়ে এ দল ও দল থেকে টুকিয়ে এনে যদি নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য একটা অন্তবর্ত্তীকালীন প্রশাসন মেনে নেয়া হয় সমস্যার একটা আপাত: সমাধান খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। শুধু দৈনন্দিন কার্যাবলী পরিচালনা ছাড়া এই প্রশাসনের থাকবেনা কোন নির্বাহি ক্ষমতা। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে হতে হবে শক্তিশালী এবং ক্ষমতাধর। কিন্তু শেখ হাসিনা যে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছেন এদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন নয়, এরা অভিজ্ঞ তো নয়ই কোন দিক দিয়েই দক্ষ বা যোগ্যও নয়। এদেরকে বাদ দিয়ে বিগত চারটি তত্বাবধায়ক সরকার আমলের প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচন পরিচালনা প্যানেল গঠন করে দেয়া যেতে পারে। এদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান মনোনীত করে তাদের নেতৃত্বে নির্বাচন হতে পারে। আমার ধারনা এমন একটি বডি যথেষ্ঠ কার্যক্ষম হবে এবং এদেরকে নিয়ে বিতর্কও উঠবে কম। এই রকম একটা সমঝোতায় আসতে পারা গেলে দেশে ভবিষ্যত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরী হতে পারে বলে আমার ধারনা। তাতে করে দেশে অনাকাংখিত গোলযোগ নৈরাজ্য এড়ানো সম্ভব হবে।
তবে তার জন্য যেটা প্রয়োজন হবে- অন্তর্বর্ত্তী প্রশাসনের প্রধানের পদ থেকে শেখ হাসিনার সড়ে আসা। মাননীয় শেখ হাসিনা কি মেনে নেবেন তা!
কৃতজ্ঞতাঃ তারেক সাইদ, প্রথম আলো, আমাদের সময়।
বিষয়: রাজনীতি
১৬৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন