ভুরাজনীতির কানা গলি এবং একজন ঘসেটি বেগম
লিখেছেন লিখেছেন ফারহানা শারমিন ৩১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:০৮:৩০ রাত
ভুরাজনীতির অনেক গলি কানা গলি আছে। এই গলি কানা গলিতে কাজ করে, রাষ্ট্রীয় ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভরা। একটা রাষ্ট্র আর একটা রাষ্ট্রকে বিভিন্ন ভাবে প্রেশারে রাখার জন্যে বিভিন্ন রকম চাবি ঘুরায়। এবং রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অনুসারে ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভরা অনেক ধরনের কাজ করে, যার মধ্যে একটা হইলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাপোর্ট দেয়া বা ট্রেনিং দেয়া ।
এই সব দিক থেকে সব চেয়ে সরেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত, ইরান, সউদি আরব ইত্যাদি।
বাংলাদেশের কখনো প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিচ্ছিনতাবাদীদের সহায়তা দেয় কিনা এই নিয়ে সব সময় একটা গুজগুজ ফুসফুস ছিল । এই সব খবর কখনোই মেনস্ট্রিম মেডিয়াতে আসে নাই, আসার কথাও না। সেইটা সন্দেহাতীত ভাবে প্রুফ হয়েছিল সিইউএফএল ঘাটিতে অস্ত্র ধরা পরার পর।
এইটা নিয়ে যখন মামলা হয়েছিল তখনই অবাক হয়েছিলাম। কারণ, ইন্টেলিজেন্স অপেরাসান একটা রাষ্ট্রীয় পলিসি। একটা রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকার সময় তার ভুরাজনইতিক প্ল্যান অনুসারে পলিসিটা নেয়। অপর একটা রাজনৈতিক দল ক্ষমতা বদলের পর সেই পলিসিটা বর্জন করতে পারে, গ্রহন করতে পারে । কিন্তু, পূর্বের দলের নির্ধারণ করা নীতিতে চালিত ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভকে কখনোই তারা মামলা দিয়ে সাইজ করেনা। কারণ, একটা রাষ্ট্রীয় পলিসিতে ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভরা শুধু মাত্র রাজনীতিবিদদের পলিসির মেনে চলে মাত্র। এই ধরণের শাস্তি দেয়া, একটা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং আত্মমর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাড়ায় ।
আজকে এই মামলায় ১৪ জন এর ফাঁসির রায় হয়েছে।
এই নিয়ে কিছু অবজারভেশন এবং প্রশ্ন ।
১। এই রায়টা নির্বাচন এর আগে হতে পারতো। কিন্তু হয় নাই। সরকার এই রায়টা নির্বাচন এর পরে দিয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, কেন আওয়ামী লিগ সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যে ইন্ডিয়া পাগল হয়ে গিয়েছিল। এইটা এক দিক থেকে, ইন্ডিয়ার প্রতি আওয়ামী সরকার এর প্রতিদান হিসেবেও দেখা যায় বা এই দিক থেকেও দেখা যায় যে , আওয়ামী লিগ এই রায়টা নির্বাচনের আগে না দিয়ে ইন্ডিয়ার উপর প্রেশার রেখেছে যেন ইন্ডিয়ার পক্ষে আওয়ামী লিগকে যেন তেন ভাবে ক্ষমতায় বসানো ছাড়া কোন অল্টারনেটিভ থাকে । কারণ, এই রায়টায় কঠোর শাস্তি হওয়া ইন্ডিয়ার পরিষ্কার স্বার্থ রয়েছে।
২ । সামরিক এবং বেসামরিক যে সব ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভ এবং সিউএফল এর কর্মকর্তারা এই মামলায় শাস্তি পেয়েছেন, তারা সবাই –তাদের চাকরি করছিল মাত্র। এই মামলায় নিজামী এবং বাবর কনভিকটেড হওয়াতে এইটা প্রুভেন যে, এই কর্মকর্তারা স্বউদ্যোগে কাজটা করে নাই।
রাষ্ট্রের লেজিসলেটিভ বিভাগ - যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত -তাদের ইন্সট্রাকশন মানতে যে একজিকিউটিভ বিভাগ বাধ্য – সেই শপথ নেয়া বাধ্যবাধকতায় আদেশ মেনে এই সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। এখন এই কাজ কত অনৈতিক বা কত খারাপ সেইটা অন্য প্রশ্ন – কিন্তু কোর ইস্যু হইলো তারা তাদের শপথ নিয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় নির্দেশ পালন করেছিল মাত্র।
এই ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন, যেই রাষ্ট্র তার কর্মকর্তাদেরকে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্যে( সেইটা যতই আমরা অনৈতিক আর খারাপ মনে করি না কেন ) ফাঁসি দেয় সেই রাষ্ট্রের বাকি কর্মকর্তারা যদি রাজনৈতিক ভাবে পরবর্তীতে প্রসিকিউটেড হওয়ার ভয়ে, রাষ্ট্রীয় ল ফুল কমান্ড অমান্য করে এবং সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙ্গে পরে, সেই রাষ্ট্র আসলেই রাষ্ট্র হিসেবে ভবিষ্যতে টিকে থাকবে কিনা?
৩। আজকে, হাছান মাহমুদ বলছেন , এইটা খালেদা জিয়াও জানতো। আমি অবাক হবোনা, সেইটা যদি সত্যি হয়। এমনকি তৎকালীন আর্মি চিফ এরও এইটা জানার কথা। তাহলে প্রশ্ন, এই দুই জনের কেন ফাঁসি হবেনা ?
৪। ভারতের যেই সব ইন্টেলিজেন্স অপারেটিভ , পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সময় আর্মস সাপ্লাই করেছিল, ভারত তাদের ফাঁসি দিবে কিনা ?
৫। ইন্ডিয়া আজকে বাংলাদেশ থেকে যেই ভাবে যা চাচ্ছে, সেই ভাবে সব পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। এই ইন্ডিয়া আর কখনো তার চাহিদার থেকে কম যারা দিবে, সেই ধরনের কোন শক্তিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে দিবে কিনা?
৬। আমি মনে করি, আওয়ামী সরকার ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপর সাপোর্ট প্রত্যাহার করে, ঠিক কাজ করেছে। এই ধরনের রাজনীতি থেকে বাংলাদেশকে বের করে নিয়ে আসার জন্যে আওয়ামী লিগ কে ধন্যবাদ। এই জন্য এই কাজে জড়িত যারা ছিল তাদের চাকরিচ্যুতি করা হতে পারতো অত্যন্ত সঙ্গত একটা শাস্তি।
কিন্তু তাই বলে, ইতিপূর্বে বাংলাদেশ রাষ্ট্রযন্ত্র নিজে যেই কাজ করেছিল, সেইটা ঠিক হোক ভুল হোক তার জন্যে ডিসিশন এর পুরো চেইনের লেজিসলেটিভ , একজিকিউটিভ সবাইকে ধরে রাজনৈতিক সুবিধার জন্যে ফাঁসি দেয়া ? স্বাধীন কোন জাতির এই ধরণের কাজ করার , আর কোন উদাহরনকি পৃথিবীতে আছে কিনা? থাকলে আমি দেখতে চাই।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৌভাগ্য হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে কোন গোপন ষড়যন্ত্র হচ্ছে না। যা হচ্ছে, সব প্রকাশ্যে হচ্ছে। আমরা আজ তাই বলতে পারি, ছিঃ । এই ধরনেরচ সরকারের অধীনে বাস করতে আমাদের ঘেন্না হয়।
জিয়া হাসান
বিষয়: রাজনীতি
১৫১১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাংলাদেশ কে আমার কাছে লিটারেলী লাইফ সাপোর্ট এ থাকা একটা রোগী বলে মনে হচ্ছে - যেখানে গঠিত ডাক্তারদের বোর্ড অপেক্ষা করছে কখন তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে - লাইফ সাপোর্ট টা সরিয়ে নেবার।
এ সব কেইস, খুন, গুম, ক্রসফায়ার সহ আর যা কিছু নাটক সিনেমা খবরের মাধ্যমগুলো রাত দিন খেটে চিত্রায়িত করে - তার মূল কারন যাতে বিবেক সম্পন্ন মানুষ যেন শকড কিংবা ওভার শকড না হন।
বাংলাদেশীদের অনেকে নিজেকে আশাবাদী বলে জাহির করে - ঠিক যেমন স্যাকুলার রা চুড়ান্ত ধ্বংশযজ্ঞ দেখেও মানুষকে সান্তনা দেবার নিমিত্তে বলে।
কিন্তু বাংলাদেশীদের ঐ অংশ ই বরং যথার্থ - যারা ২০০৭ এ বুঝতে পেরেছিল এবং সে জন্য জাতিকে সতর্ক করেছিল - আমার মনে হয় মানুষের উচিত তাদের কাছে গিয়ে প্রতিকারের মন্ত্রনা নেওয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন