সমাজের দায় সকলের
লিখেছেন লিখেছেন মাহমুদ১২১৩ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৫১:১১ রাত
সমাজের কোন কাজই এককভাবে হয় না । প্রত্যেকটা কাজ কিংবা ঘটনা হলো অন্য একটি বা একাধিক কাজের ফলাফল ।তবে বিষয়টি সবসময় খালি চোখে অনুধাবন করা যায় না, মনে হয় ঘটনাটি আপনা আপনিতেই ঘটেছে । কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে বিন্ধু বিন্ধু করে যে এই ঘটনার জন্য মঞ্চ তৈরি হয়েছে তা আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে যায়। আমাদের আপত দৃষ্টি ওই তাৎক্ষনিক কারনটিকেই দোষারোপ কিংবা দায়ী করতে থাকে ।
চলুন, ভূমিকা বাদ দিয়ে বিষয়টিকে আরো দু কদম সামনে গিয়ে দেখা যাক ।
যদি দেশের রাজনীতিকে উদাহরন হিসেবে ধরি তাহলে বোধহয় বিষয়টি সবচেয়ে স্পষ্ট হয়। যেমন আমরা ক্যাম্পাসে, চায়ের দোকানে, বাসায় বসে রাত-দিন রাজনৈতিক অবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের চৌদ্দগোষ্টির মন্ডুপাত করি। এটা করতে আমাদের ভালো লাগে । না করলে চা খাওয়াটা ঠিক জমে না । আমাদের বিনোদন জলিল সাহেবের সিনেমার চেয়ে রাজনৈতিক আলাপে বেশি হয়। অনেক দিন আগে কোথায় যেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের একটা ঘটনা পড়েছিলাম। ১৯৫৪ সালের সাধারন নির্বাচনের সময় যুক্তফ্রন্টের নেতা হিসেবে শেরে বাংলাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো-
“আপনারা কী প্রাথী মনোনয়নের সময় তার দুর্নীতিমুক্ত চরিত্র বা সততার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন”?
উত্তরে হক সাহেব উচ্চ হাসির সঙ্গে বলেছিলেন-
“ও মিয়া, মুরগি কেবল প্রসব করছে পচা আন্ডা, ভালো আন্ডা কোথায় পাব!!”
এখানে ফজলুল হক সাহেব মুরগির কথা বললেও ধরে নিবেন না এটা বাজার থেকে কেনা ১৬০ টাকা কেজির ফার্মের মুরগি কিংবা আন্ডা মানে হোস্টেল লাইফে প্রতিদিন সকাল-বিকাল খাওয়া মুরগির বহু প্রেম-ভালবাসার ফসল ডিমকে!!
মুরগি এবং আন্ডা দুটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ।
মুরগি বলতে তিনি সমাজকে বুঝিয়েছেন এবং সমাজ যে আগের মতো সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যাক্তি জন্ম দিচ্ছেনা সে দিকেই তিনি ইঙ্গিত করেছেন।
আমরা যাদেরকে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাই অথবা যারা আমাদের নেতা হন তারা তো সবাই আমাদের সমাজের অংশ। কেউ কেউ আমাদের নিকটতর প্রতিবেশি বা আত্নীয়। আমাদের সমাজেই ফসল। তো সে ব্যাক্তি যেমন পার্টামেন্টে গিয়ে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে ঠিক তার দুর্নীতি তার অসৎ আচরনও আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে।
এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি সম্মুখে থাকেন বলে তাকে সবাই দায়ী করে নিজেদের ওপরের দায়টা এড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তার কাছ থেকে ভোটের আগে টাকা নেয়া কিংবা অবৈধ সুবিধা লাভের আশায় ভোটটা বিক্রি করে দেয়াকে আমরা চায়ের টেবিলে আনতে নারাজ। সাংসদ বা চেয়ারম্যান তো অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জন করবেনই কারন ভোটের আগে তাকে পূরন করতে হয়েছিলো আপনার আমার অসৎ চাহিদাকে।
আমরা যতোই ঢেকে রাখি না কেনো এ কথা সত্যি যে একজন দুর্নীতি পরায়ন চাল ডাল গম খোড় জনপ্রতিনিধি ওই সমাজের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের প্রতিচ্ছবি। আবার ঠিক একইভাবে একজন সৎ আর্দশিক ন্যায়পরায়ন জনপ্রতিনিধি একটি সুন্দর সমাজ ও তার জনসাধারনের জীবনবোধকে তুলে ধরে।
সমাজ যেহেতু ব্যাক্তির সমাহার, তাই সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ যতো ভালো হবে সমাজ ততো ভালো হবে, ঠিক একইভাবে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ যতো খারাপ হবে সমাজ ততো খারাপ হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন