এই ডকুমেন্টা যদি সত্য হয় তা হলে মাওলানা সাঈদীকে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা মামলায় ফাঁসী দেয়ার ক্ষমতা এ সরকারের নেই, ফাঁসী দিতে পারবে না কিস্তু হয়তো হত্যা করতে পারবে ।
লিখেছেন লিখেছেন এম আয়ান মিয়া ০৯ মার্চ, ২০১৩, ১০:০৬:০৯ সকাল
ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছিলেন পিরোজপুরে।
মমতাজ বেগমের মামলার এ ডকুমেন্ট আসামিপক্ষ ট্রাইবু্যুনালে জমা দিয়েছিলেন।
এই ডকুমেন্টা যদি সত্য হয় তা হলে মাওলানা সাঈদীকে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা মামলায় ফাঁসী দেয়ার ক্ষমতা এ সরকারের নেই, ফাঁসী দিতে পারবে না কিস্তু হয়তো হত্যা করতে পারবে ।
স্বামী ইব্রাহীম কুট্টিকে গুলি করে হত্যা করার সময় মমতাজ বেগমের হাতেও গুলি লাগে। মমতাজ বেগম এখনো জীবিত।
বিচার শুরুর আগে মমতাজ বেগমে কি জানতো তাঁর স্বামী হত্যার বিচার হচ্ছে ঢাকার আন্তরজাতিক ট্রাইব্যুনালে !
মমতাজ বেগমের হাতেও গুলি দাগ কি পরিক্ষা করে দেখা হয়েছে আসলে কি এটি গুলির দাগ না অন্য কিছু !
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা মামলায় মাওলানা সাঈদী ফাঁসী হলে কার বেশি খুশি হওয়া কথা, মমতাজ বেগমের না শাহ বাগীদের !
-------------------
মাওলানা সাঈদীর রায় পর্যালোচনা : মমতাজ বেগমের মামলার কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি রায়ে , তদন্তাধীন মামলায় মৃত্যুদণ্ড?
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যে দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার ঘটনা। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার ঘটনার সাথে চিথলিয়া গ্রামে মানিক পসারীর বাড়ি ও পারেরহাট বাজারে হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয়া এবং লুটপাটের ঘটনার বিষয়ও জড়িত। হত্যা, লুটপাট ও আগুন দেয়ার এসব ঘটনাকে ৮ নম্বর অভিযোগ হিসেবে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ৮ নম্বর অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে বৃহস্পতিবারের রায়ে।
৮ নম্বর অভিযোগে মূল বিষয় হলো ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার ঘটনা। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ১৯৭১ সালে ৮ মে পারেরহাট বাজারে ইব্রাহীম কুট্টিকে মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে পাকিস্তান আর্মি গুলি করে হত্যা করে। অন্য দিকে ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছিলেন পিরোজপুরে। সেই মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর নলবুনিয়ায় তার বাপের বাড়ি থাকাবস্থায় ইব্রাহীম কুট্টি নিহত হন। মামলায় তিনি ১৩ জনকে আসামি করেন। তার মধ্যে মাওলানা সাঈদীর নাম ছিল না। মমতাজ বেগমের মামলার এ ডকুমেন্ট আসামিপক্ষ ট্রাইবু্যুনালে জমা দিয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়ে রায়ে একটি শব্দও উল্লেখ করা হয়নি। এমনিভাবে এ অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের জমা দেয়া আরো কিছু দলিলের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি রায়ে।
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগ : মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের এ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৮ মে মাওলানা সাঈদীর নেতৃত্বে পাকিস্তান আর্মি ও শান্তি কমিটির লোকজন চিথলিয়া গ্রামে যায় এবং মানিক পসারীর বাড়ি লুট করে। এখানে পাঁচটি ঘর তারা কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় লুটপাটের পর। মানিক পসারীর বাড়ি থেকে ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজুল নামে দুজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা দু’জন মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করতেন। মাওলানা সাঈদী ও তার সাথে থাকা লোকজন এ দু’জনকে ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে পারেরহাট বাজারে নিয়ে যান। এরপর মাওলানা সাঈদীর নির্দেশে পারেরহাট বাজারে ব্রিজের কাছে পাকিস্তান আর্মি ইব্রাহীম কুট্টিকে গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। মফিজকে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েকজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। যে বাড়িতে তারা কাজ করতেন সেই বাড়ির ছেলে মানিক পসারী এবং পালিয়ে আসা মফিজও সাক্ষ্য দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছেন, মফিজ এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এ ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে মাওলানা সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ইব্রাহীমের স্ত্রী মমতাজ বেগমের মামলায় যা উল্লেখ আছে :
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম তার স্বামী ও ভাই সাহেব আলী হত্যার বিচার চেয়ে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলার এজাহারে মমতাজ বেগম উল্লেখ করেছিলেন, তার স্বামী ইব্রাহীম কুট্টি তার বাপের বাড়ি নলবুনিয়া থাকাবস্থায় শান্তি কমিটির লোকজন এবং পাকিস্তান আর্মি গুলি করে হত্যা করে। ঘটনাটি ঘটে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর। ওই ঘটনার সময় তাদের বাড়ি থেকে তার ভাই সাহেব আলীকে ও তার মা সিতারা বেগমকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পিরোজপুর। পরে তার মাকে ছেড়ে দেয়া হলেও তার ভাই সাহেব আলীকে আর ছাড়া হয়নি। তাকে পাকিস্তান আর্মি গুলি করে হত্যা করে। মমতাজ বেগম সে মামলায় ১৩ জনকে আসামি করেছেন এবং সে আসামির তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই।
মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা মমতাজ বেগমের মামলার এজাহার ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে বলেন, ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যা করা হয় নলবুনিয়ায়-পারেরহাট নয়। হত্যার তারিখও ভিন্ন। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি ৮ মে। আর মমতাজ বেগমের এজাহারে উল্লেখ রয়েছে ১ অক্টোবর। তা ছাড়া মমতাজ বেগম যে ১৩ জনকে আসামি করেন, তখন সেখানে মাওলানা সাঈদীর নাম ছিল না। কাজেই মাওলানা সাঈদী কোনো অবস্থায়ই এ ঘটনার সাথে জড়িত নন বলে দাবি করেন তারা। ইব্রাহীম কুট্টি পারেরহাট বাজারে নয়, বরং নলবুনিয়ায় তার শ্বশুরবাড়ি থাকাবস্থায় নিহত হন।
ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম যে মামলা করেন তার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে জীবন বাঁচাতে তার স্বামী ইব্রাহীম কুট্টি তাকে নিয়ে তার বাপের বাড়ি নলবুনিয়ায় চলে আসেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়। তিনি তার স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়ি থাকাবস্থায় ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর আসামিরা তার স্বামী ইব্রাহীম কুট্টিকে গুলি করে হত্যা করে। সে ঘটনায় তার হাতেও গুলি লাগে। মমতাজ বেগম এখনো জীবিত। কিন্তু তাকে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয়নি।
মমতাজ বেগম তার স্বামী হত্যা মামলায় যাদের আসামি করেছেন তারা হলেন দানেশ মোল্লা, আতাহার আলী, আশ্রাব আলী, আবদুল মান্নান, আইউব আলী, কালাম চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুল হাকিম মুন্সী, মমিন উদ্দিন, সেকান্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা। আসামিদের তালিকায় মাওলানা সাঈদীর নাম নেই। এ ছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামি করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়।
মমতাজ বেগমের মামলার এজাহারে যাদের নাম রয়েছে, আসামি হিসেবে তাদের প্রায় সবাইকেই পারেরহাটের কুখ্যাত রাজাকার ও পিস কমিটির নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষীরা যা বলেছিলেন :
ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিবরণ দিয়ে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে মোট চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, ইব্রাহীম কুট্টি তার শ্বশুরবাড়ি নলবুনিয়ায় থাকাবস্থায় আশ্বিন মাসের দিকে নিহত হন। ইব্রাহীম কুট্টির শ্বশুরের নাম ছিল আজহার আলী। এখানে আসামিপক্ষের একজন সাক্ষীর বরাত দিয়ে ঘটনাটি উল্লেখ করা হলো।
গত ৯ অক্টোবর ১১তম সাক্ষী গোলাম মোস্তাফা মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ অক্টোবর আমার গ্রাম নলবুনিয়ায় আজাহার আলী হাওলাদারের বাড়িতে একটি ঘটনা ঘটে। ওই দিন ফজরের আজানের আগ মুহূর্তে এক প্রচণ্ড শব্দ শুনে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে ওঠার পরই মসজিদে আজান হলে মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। নামাজের পরে মুসল্লিদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হতে থাকে, আজানের আগে কোথায় এই প্রচণ্ড শব্দটি হলো। এ আলাপ-আলোচনা করতে করতে আমরা মসজিদের সামান্য দূরে খালের পাড়ের রাস্তায় আসি। একটু পরই দেখতে পাই উত্তর দিক থেকে দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মাওলানা, সেকেন্দার শিকদার, রুহুল আমীন, মোমিন, আজহার আলী হাওলাদারের ছেলে সাহেব আলী এবং তার মাকে নিয়ে পারেরহাটের দিকে যাচ্ছে। তার ৫-৭ মিনিট পর নৌকায় করে আইউব আলী চকিদার, কালাম চকিদার, হাকিম মুন্সী, আবদুল মান্নান, আশরাফ আল মিলে আজহার আল হাওলাদারের জামাই ইব্রাহীম কুট্টির লাশ নিয়ে যাচ্ছে।
এরপর আমরা কয়েকজন আজহার হাওলাদারের বাড়ি যাই। সেখানে গিয়ে বাড়িভর্তি মানুষ এবং ঘরে কান্নার রোল শুনতে পাই। লোকজন বলাবলি করছে আজহার হাওলাদারের জামাইকে (ইব্রাহীম কুট্টি) মেরে ফেলেছে। ইব্রাহীমের স্ত্রী মমতাজ বেগমও সে কথা জানান।
এরপর আমরা সেখান থেকে চলে আসি। বিকেলের দিকে শুনি সাহেব আলীকে (মমতাজ বেগমের ভাই ও ইব্রাহীমের শ্যালক) ও তার মাকে রাজাকারেরা পিরোজপুরে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গেছে। পরদিন শুনি সাহেব আলীর মা সিতারা বেগম ফিরে এসেছে এবং সাহেব আলীকে পাকিস্তানি বাহিনী পিরোজপুরে গুলি করে মেরেছে।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে অন্য তিন সাক্ষীও ঘটনার প্রায় একই বর্ণনা দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী : সরাসরি ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা ও মানিক পসারীর বাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা বর্ণনা করে রাষ্ট্রপক্ষে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা হলেন মানিক পসারী, মফিজ উদ্দিন, সুলতান হাওলাদার ও মোস্তফা হাওলাদার। তাদেরসহ রাষ্ট্রপক্ষের ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে ৮ নম্বর অভিযোগ বিষয়ে। নিহত ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজ উদ্দিন মানিক পসারীর বাড়িতে কাজ করতেন। মফিজ উদ্দিন পসারীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলেও তিনি পালিয়ে আসতে সক্ষম হন বলে উল্লেখ করেন। রায়ে মফিজ উদ্দিনকে চাুস সাক্ষী হিসেবে আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে তাকে অবিশ্বাস করা যায় না।
আসামিপক্ষের সাক্ষী : ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার ঘটনার সাথে মাওলানা সাঈদী জাড়িত নন দাবি করে এবং এ ঘটনার বিবরণ দিয়ে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে চারজন সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন গোলাম মোস্তফা, আবদুর রাজ্জাক আকন, জামাল ফকির ও আবদুস সালাম হাওলাদার। এ চারজন সরাসরি ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেও রায়ে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার পর্যালোচনায় তাদের দু’জনের কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। যদিও রাষ্ট্রপক্ষের সব সাক্ষীর জবানবন্দী থেকে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিপক্ষের আবদুস সালাম হাওলাদারের জবানবন্দীর কয়েকটি লাইন এবং আবদুর রাজ্জাক আকনের জেরা থেকে সামান্য অংশ উল্লেখ করা হয়েছে; যা মূলত মাওলানা সাঈদীর বিপক্ষে যায়। সরাসরি ইব্রাহীম কুট্টির ঘটনা বর্ণনা করেছেন আসামিপক্ষের এমন সাক্ষীদের সাক্ষ্যের উদ্ধৃতি ব্যবহার না করে আসামিপক্ষের অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য ব্যবহার করা হয়েছে। এরা হলেন মাসুদ সাঈদী ও গণেশ চন্দ্র।
রায়ে সাক্ষী পর্যালোচনায় তারতম্য : ৮ নম্বর অভিযোগ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে ৯ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের জবানবন্দীর সার-সংক্ষেপ রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা পর্যালোচনা করা হয়েছে। অন্য দিকে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা, মানিক পসারীর বাড়িতে আগুন দেয়ার বিষয়ে মাওলানা সাঈদীর পক্ষে চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে এ ঘটনা বিষয়ে দু’জন মাত্র সাক্ষীর সামান্য কিছু উল্লেখ করা হয়েছে জেরা থেকে। এ ঘটনা বর্ণনা করে বাকি দু’জন সাক্ষী যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তার কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগ বিষয়ে আসামিপক্ষের আরো তিনজন সাক্ষীর বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যদিও তারা ইব্রাহীম কুট্টি বা মানিক পসারীর বাড়িতে আগুন দেয়া বিষয়ে কিছু বলেননি। এ রকম একজন সাক্ষী হলেন গণেশ চন্দ্র সাহা। তিনি তার মায়ের ভাগীরথী হত্যা বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ৮ নম্বর অভিযোগ বিষয়ে আসামিপক্ষের যে চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্য থেকে সামান্য অংশ উল্লেখ করা হয়েছে তাতে মূলত বর্ণিত আছে পাকিস্তান শান্তি কমিটির লোকজন, রাজার্কা এবং দেশীয় লোকজনের সহায়তায় পাকিস্তান আর্মি এলাকায় লুটপাট হত্যা করেছে। এ বিষয়ে তারা অবহিত। বস্তুত তাদের এ বক্তব্য মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হয়েছে রায়ে। তারা মাওলানা সাঈদীর পক্ষে যেসব কথা বলেছেন তার কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, ঘটনা যে ঘটেছে তা বোঝানোর জন্য হয়তো আসামিপক্ষের এসব সাক্ষীর উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে।
পিরোজপুরে মানিক পসারীর মামলা ও মফিজ প্রসঙ্গ : মানিক পসারীর বাড়িতে আগুন দেয়া এবং ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার ঘটনার বিষয়ে মানিক পসারী ২০০৯ সালে পিরোজপুরে একটি মামলা করেন। কিন্তু সেই মামলায় তিনি মফিজের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। যদিও মানিক পসারী, মফিজ ও অন্য সাক্ষীরা ট্রাইব্যুনালে এসে বলেছেন, ইব্রাহীম কুট্টির সাথে মফিজকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তিনি প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসেন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, একসাথে দু’জন লোককে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো। তাদের একজন পালিয়ে এলেন। সে জীবিত। কিন্তু তার বিষয়ে মানিক পসারী পিরোজপুরের মামলায় কিছু বললেন না। এটি কি করে সম্ভব হতে পারে? পরে মানিক পসারী মফিজের মামলায় পিরোজপর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দীতে বলেছিলেন ইব্রাহীমের কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। অথচ তিনি ট্রাইব্যুনালে এসে বলেছেন, তার সামনে ইব্রাহীমকে গুলি করে মারা হয়েছে। মিজানুল ইসলাম বলেন, মফিজ পিরোজপুরে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা আমরা এখানে জমা দিয়েছি এবং প্রদর্শনও হয়েছে। কিন্তু রায়ে এ বিষয়েও কিছু উল্লেখ নেই।
মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার জমা দেয়া একটি ডকুমেন্টেই আছে ইব্রাহীম কুট্টিকে নলবুনিয়া থেকে ধরে নিয়ে বলেশ্বর নদীর তীরে হত্যা করা হয়। পিরোজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে সংগৃহীত এ ডকুমেন্ট রাষ্ট্রপক্ষ জমা দিয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তা ও বাদি মাহবুবুল আলম জেরায় স্বীকার করেছেন।
তদন্তাধীন মামলায় মৃত্যুদণ্ড? : মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালে মানিক পসারী ও মাহবুবুল আলম নামে দুই ব্যক্তি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পিরোজপুরে। মানিক পসারী তাদের বাড়িতে আগুন দেয়া ও ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার অভিযোগে পিরোজপুর আদালতে ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট মামলা করেন। অন্য দিকে মাহবুবুল আলম একই বছর ৯ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা করেন তার নিজ বাড়ি লুটসহ অন্যান্য অভিযোগে। মিজানুল ইসলাম জানান, তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় স্বীকার করেছেন ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ দু’টি মামলা ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে স্থানান্তর করেছেন পিরোজপুর কোর্ট। তিনি আরো স্বীকার করেছেন সে মামলা দু’টি তদন্ত সংস্থায় এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। মিজানুল ইসলাম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন তদন্তাধীন মামলায় কী করে একজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেন একটি কোর্ট? মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে যে মামলা চলেছে, এত দিন সেটি তা হলে কিসের ভিত্তিতে এ প্রশ্নের জবাবে মিজানুল ইসলাম বলেন, মাহবুবুল আলম ২০১০ সালের ২০ জুলাই তদন্ত সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করেন এবং তার ভিত্তিতে তদন্ত সংস্থা তদন্ত শুরু করেন। মাহবুবুল আলম কর্তৃক তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ দায়ের এবং পিরোজপুর থেকে স্থানান্তর হয়ে আসা দু’টি মামলা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
মিজানুল ইসলাম আরো বলেন, চার্জ গঠন আদেশে ৮ নম্বর অভিযোগে মানিক পসারীর বাড়িতে আগুন দেয়া, লুটপাট, মানিক পসারীর বাড়ি থেকে ইব্রাহীম কুট্টি ও মফিজকে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং ইব্রাহীম কুট্টিকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ আছে। কিন্তু রায়ে ৮ নম্বর অভিযোগে যেসব ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে পারেরহাট বাজারে হিন্দুদের দোকান লুটপাটের কথা বর্ণিত করা হয়েছে। অথচ চার্জ ফ্রেমিং আদেশে এটি নেই।
02 March 2013 : http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=129560
বিষয়: বিবিধ
১৩৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন