১৭ দিনের রেশমার মিল-অমিল ।

লিখেছেন লিখেছেন এম আয়ান মিয়া ১২ মে, ২০১৩, ০১:১৯:৪০ দুপুর



রেশমা, "অনেক কষ্ট করে চিপা দিয়ে চিপা দিয়ে লাঠি দিয়ে ভেঙ্গে নিচে নামছি। আমি অনেক ডাকছি, কেউই শুনে নাই।"

রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ার সময় রেশমা থার্ড ফ্লোর থেকে সেকেন্ড ফ্লোরে পড়েছিলেন।

১. ধসে পড়ার আগ মুহূর্তে আমি ছিলাম তৃতীয় তলায়।

২. ধসে পড়ার সময় একটি ভাঙা অংশ দিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যাই।

যে জায়গায় পড়েছিলেন ওই অংশটুকু বেশ বড় ছিল। সামনের দিকে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে তিনি অনায়াসে হাঁটা চলা করতে পেরেছেন। কেবল পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দিকের অংশ ধীরে ধীরে নিচু হয়ে মিশেছিল।

৩. যেখানে গড়িয়ে পড়ি সেখানে অনেক জায়গা জুড়ে খালি ছিল।

তার সঙ্গে আরও তিনজন ছিল। যাদের আগেই মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

৪. মনে হয়েছে আশপাশে আরও অনেকেই আছে। কিন্তু কয়েক দিন পর বুঝতে পারি- তাদের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হচ্ছে।

৫. অন্ধকার থাকায় বুঝতে পারিনি কত দিন পার করেছি। কখন দিন হয়েছে, কখন রাত হয়েছে কিছুই জানতে পারিনি।

রেশমার খাবার প্রসঙ্গে ।

পানি ও বিস্কুট খেয়ে বেঁচে ছিল ও।


মেজর মোয়াজ্জেম বলেন:

৬. ধসে পড়ার দিনই রেশমা সঙ্গে কোন খাবার নিতে পারেননি। কেবল তার হ্যান্ডব্যাগে ছোট চার প্যাকেট বিস্কুট ছিল। সেগুলোই অল্প অল্প করে খেয়েছেন।

মেজর দেলোয়ার হাসেন তালুকদার বলেন:

৭. রেশমার কাছে শুনেছি সঙ্গীদের ফেলে যাওয়া খাবার ও পানি সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন তিনি। প্রতিদিনই সেখান থেকে অল্প অল্প করে খেয়ে জীবন ধারণ করেছেন।

রেশমার পরিধেয় বস্ত্র প্রসঙ্গ:

বিধ্বস্ত মার্কেটের ভেতরে রেশমা কাপড় পেয়ে নিজের পরিধেয় কাপড় পরিবর্তন করেছে বলে রেশমা জানিয়েছে।

নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সরাওয়ার্দী বলেন:

৮. রেশমার ফ্লোর ভেঙে দ্বিতীয় তলায় পড়ে যান। সেখানে হয়তো গার্মেন্ট কিংবা শোরুমের কোন পোশাক পেয়েছিলেন।

৯. দীর্ঘসময় অন্ধকার কূপে অবস্থানকালে ওই পোশাক বদল করতে থাকতেও পারেন রেশমা।

রেশমার চুল প্রসঙ্গ:

ধসে পড়ার সময় রডের সঙ্গে চুল পেঁচিয়েছিল। নিজেই কেচি দিয়ে কেটে ফেলেছে।

শারীরিক অবস্থা

চিকিৎসক কর্নেল মো. আজিজুর রহমান বলেন:

ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকার সময় হয়তো ‘কিছুটা ঘুম কিছুটা জাগ্রত’ এমন অবস্থায় ছিলেন রেশমা। এটা তাঁর স্মৃতিতে বিভ্রমের সৃষ্টি করতে পারে।

১০. উদ্ধারের সময় তার চামড়ায় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। গড়াগড়ি করে নড়াচড়ার কারণে এটি হতে পারে।

পর্যবেক্ষণ

রেশমা উদ্ধারের সময় ভেতরে ক্রলিং করে পর্যবেক্ষণ করেছেন মেজর দেলোয়ার হাসেন তালুকদার। তিনি বলেন, কোথাও কোন খারাপ গন্ধ কিংবা মানুষের উপস্থিতি খুঁজে পাইনি।

১১. পূর্ব দিকে ক্রলিং করে গিয়েছি। একসময় অক্সিজেনের অভাব বুঝতে পারি। সেখান থেকে সরে এসে দক্ষিণ দিকে যাই। সেখানে সামান্য পানি দেখতে পাই। এছাড়া বিভিন্ন চেয়ার, কার্টন ও আসবাব পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। প্রায় ৪৫ মিনিট অবস্থান করে সেখানে অতিরিক্ত কোন ধুলাবালি কিংবা ময়লা দেখতে পাইনি।

১২. রেশমা যে বিমের কারণে বের হতে পারছিলেন না সেই বিমের উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ছিল। তার উপর থেকেই ধসে পড়া ছাদ নিচু হয়ে মিশে গিয়েছিল অন্যান্য ছাদের সঙ্গে।

রেশমার পারিবারিক জীবন ও আত্মীয়-স্বজন প্রসঙ্গ:

রেশমা যে বাসায় ভাড়া থাকতেন,সেই বাড়ির মালিকের স্ত্রী হাজেরা বেগমকে হাজেরা বেগম বলেন:

রেশমা এতিম। ওরা বাবা মারা গেছেন। মায়ের অন্যত্র বিয়ে হওয়ায় কেউ খোঁজখবর নিতো না। স্বামী অত্যাচার করতো। একপর্যায়ে আসবাবপত্র বিক্রি করে অন্যত্র চলে যায়। এরপর থেকেই মেয়েটি আমার কাছে আশ্রয় খোঁজে।

১৩. রেশমা উদ্ধার হওয়ার পর প্রথমেই আমাকে ফোন করে। সেনা কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন দিয়ে কথা বলে আমার সঙ্গে।

জিওসি বলেন

উদ্ধারের পর রেশমার সঙ্গে অল্পই কথা হয়েছে। তাকে বলেছিলাম, কেমন আছ? সে বলেছে, ভালো আছি।

১৪. তার কী ইচ্ছা জানতে চাইলে সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমি ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দিই। সে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চায়। এরপর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চলে আসেন। তিনি রেশমাকে সান্ত্বনা দেন।

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের রেশমার মা জোবেদা বেগম বলেন,এত দিন স্কুল-হাসপাতালে পাগলের মতো আমার মাইয়ারে খুঁজছি। পাই নাই। আল্লায় বাঁচাইয়া রাখছে। আল্লাহ, তোমার কাছে আর কিছুই চাওয়ার নাই।

রেশমা উদ্ধার প্রসঙ্গ:

উদ্ধারের দিন বিকালে আলোর দেখা পেয়েছি। যে ছিদ্র দিয়ে আলো প্রবেশ করেছে তা অনুসরণ করে কাছে যাই। বুঝতে পারি-আশপাশে লোকজন আছে। তখন চিৎকার শুরু করি। কিন্তু কেউ আমার ডাক শোনেনি। এরপর স্টিলের একটি পাইপ সংগ্রহ করি। ছিদ্র দিয়ে ওই পাইপ ঢুকিয়ে নড়াচড়া করতে থাকি।

রেশমার অবস্থান প্রথম জানতে পেরেছিলেন সেনাবাহিনীর উদ্ধারকর্মী আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন:

১৫. আমরা মিডিয়ার লোকজনকে রানা প্লাজার ধ্বংসাবশেষের ওপর নিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা পাইপ নড়ছে। মেয়েটা ভেতর থেকে একটা ছোট পাইপ বের করে নাড়ছিল। আমি আমার স্যারকে বললাম, স্যার এখানে লোক আছে নিশ্চয়ই।

১৬. আমি দৌড়ে গিয়ে পাইপটা ধরি। দেখি ভেতরে একটা মেয়ে। মেয়েটা আমাকে বললো, স্যার আমাকে বাঁচান।

উদ্ধারকর্মীরা যখন রেশমাকে জীবিত অবস্থায় টেনে বের করেন, শত শত মানুষ খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠেন।

আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে চারিদিক



bbc

mzamin

href="http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article624216.bdnews" target="_blank"]bangla.bdnews24[/url]

ittefaq

ছবি: http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2013/05/130510_mh_savar_survivor.shtml#FBM237102

http://www.mzamin.com/details.php?nid=NTQwNDE=&ty=MA==&s=MTg=&c=MQ==

http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article624216.bdnews

http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMTJfMTNfMV8xXzFfNDAwMTk=

বিষয়: বিবিধ

১৯৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File