ওখানে তো সাজা মাত্র ছয় মাস। আমরা এখানে ব্যবস্থা নেব। তাড়াতাড়ি সংশোধন করে দেন, রুল দিয়ে দেই।

লিখেছেন লিখেছেন এম আয়ান মিয়া ১৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:২৬:১৭ সকাল



-ফিরে দেখি ৪মাস আগের উচ্চ আদালতের নির্দেশ।

১. ট্রাইব্যুনালের আদেশ : [১৩-১২-২০১২] দুপুরের বিরতির পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে,

কাদের মোল্লার সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়ার শুরুতেই প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত ট্রাইব্যুনালে ‘আমার দেশ’ ও ‘সংগ্রাম’ পত্রিকায় স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশের কথা উল্লেখ করে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চান।

এসময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান বলেন, আপনারা তো এ বিষয়ে ট্রাইবু্যুনাল-১-এ গিয়েছিলেন। সেখানে কি হলো? জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব থাকতে সেটি করা হয়েছিল। এখন তিনি নেই, এজন্য এখনও পেন্ডিং আছে।

প্রসিকিউটর এসময় দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক সংগ্রাম-এর দুটি কপি ট্রাইব্যুনালে জমা দেন। ট্রাইব্যুনালের ওপর সদস্য শাহিনুর ইসলাম প্রসিকিউটরের কাছে জানতে চান, ব্যক্তিগত সংলাপ কি শিরোনাম হতে পারে? জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো ট্রাইব্যুনালের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করা।

এসময় চেয়ারম্যান বলেন, আপনি যে জিনিসটা আনলেন, সে বিষয়ে আমরা তিনজন একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা ১০ মিনিটের জন্য আদালত মুলতবি করছি।

বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্য চেম্বারে যান এবং ৩টা ১০ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল আবারও বসে।

চেয়ারম্যান বলেন, আমরা তিনজন দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা এখন একটা আদেশ পাস করব।

চেয়ারম্যান আদেশে বলেন, বিচারপতি মো. নিজামুল হকের স্কাইপ সংলাপ প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো।

বাংলাদেশের সব প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন পত্রিকা ওই সংলাপ প্রকাশ করতে পারবে না। এ আদেশের অনুলিপি দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক এবং বিটিআরসি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

২. হাইকোর্টের আদেশ : বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কোর্টে [১৩-১২-২০১২] বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্কাইপ হ্যাকিং এবং তা প্রকাশের জন্য আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া।

আবেদনটি প্রথম উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট একেএম শফিউদ্দিন। তিনি বলেন, প্রকাশিত সংবাদে গোপনীয়তার শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। সংবিধানের লঙ্ঘন হয়েছে।

আদালত বলেন, এখানে তো ফৌজদারি অপরাধও হয়েছে। আইটি আইনের লঙ্ঘন হয়েছে।

বিচারপতি মানিক আবেদনটি সংশোধন করে দিতে বলেন । একইসঙ্গে আইটি অ্যাক্ট দেখতে চায়।

এরপর আইটি আইনের ধারা সংবলিত বই চেম্বারে ফেলে এসেছেন বলে অ্যাডভোকেট একেএম শফিউদ্দিন চলে যান।

সোয়া ৪টার দিকে আবেদনটি নিয়ে আবার তিনি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কোর্টে আসেন ।

এসময় বিচারপতি মানিক জানতে চান—‘হ্যাকিংয়ের জন্য শাস্তি কি, জেল কত’।

জবাবে আইনজীবী বলেন, সর্বোচ্চ ১০ বছর।

বিচারপতি বলেন, এটাতো পরিষ্কার কেউ অপরাধ করলে সাজা হবে। কেউ যদি এ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তিনিও এ অপরাধে অপরাধী হবেন।

এরপর আদালত এক আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলে, সিদ্দিক সাহেব বলুন কিছু। ওই আইনজীবী কিছু বলতে চান না জানালে আদালত বলে, না শুনলেও রুল দিয়ে দেব।

মি. অপূর্ব বলবেন কিছু। এসময় ওই আইনজীবী দাঁড়িয়ে বলেন, মাই লর্ড, আমরা ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানাচ্ছি। এ আইনের মাধ্যমে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৬ ও ৫৭ ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

জবাবে আদালত বলে, কেন এর মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয় না? জবাবে আইনজীবী বলেন, হয় মাই লর্ড। সংবিধানের ৪৩ নং ধারা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।

একপর্যায়ে আদালত আইনজীবী শফিউদ্দিনকে আবেদনটি সংশোধন করতে ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, তাড়াতাড়ি সংশোধন করে দেন, রুল দিয়ে দেই।

এরপর আদালত দায়িত্বরত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে (ডিএজি) উদ্দেশ করে বলেন, ডিএজি সাহেব এ ব্যাপারে কিছু বলুন।

ডিএজি উঠে দাঁড়ালে বিচারপতি মানিক বলেন, ডিএজি সাহেব বলেন, কী ব্যবস্থা নেয়া যায়।

আদালত বলে, যদি সিকিউরিটি ক্ষুণ্ন করা হয়ে থাকে, ‘হোয়াই ইজ দ্য গভর্নমেন্ট সাইলেন্ট’। তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

জবাবে ডিএজি বলেন, যে কেউ এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করতে পারে। তাছাড়া ট্রাইব্যুনালও ব্যবস্থা নিতে পারে।

এসময় বিচারপতি মানিক বলেন, ওটা তো আদালত অবমাননা। ওখানে তো সাজা মাত্র ছয় মাস। আমরা এখানে ব্যবস্থা নেব।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের চাঞ্চল্যকর স্কাইপ সংলাপ প্রকাশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

একইসঙ্গে ওই সংলাপ প্রকাশের দায়ে আমার দেশ সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে গ্রেফতারে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও জানাতে বলেন।

আমার দেশ মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘন করেছে কিনা, তা জানাতে রুল জারি করেন ঢাকার ডিসির প্রতি।

রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণাত্মক কোনো সংবাদ প্রকাশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেন।

৩. রাতে সিএমএম কোর্টে মামলা : [১৩-১২-২০১২] আদালতের কার্যক্রম শেষ হওয়ার ৩ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এর প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সাহিদুর রহমান এ মামলা করেন।

তার আগেই সিএমএমের খাস কামরায় আওয়ামীপন্থী আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হীরুসহ কয়েকজন আইনজীবী বসা ছিলেন।

সাড়ে ৭টার দিকে সিএমএম এ মামলাটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আশিকুর রহমান আদালতে পাঠানন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাদী সাহিদুর রহমানের জবানবনন্দি গ্রহণ শেষে অভিযোগটি আমলে নিয়ে আদেশ দেন।

একই সঙ্গে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। বাদীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নজীবুল্লাহ হিরু। এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারক, রেজিস্ট্রার এবং সরকারদলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম উপস্থিত ছিলেন।

মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, গত ৮ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চারদিন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ‘স্কাইপি’তে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও বেলজিয়ামে অবস্থিত ড. জিয়াউদ্দিনের কথোপকথন প্রকাশিত হয়, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল ও একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অপরাধ।

বাদী আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৬ ও ৫৭ ধারাসহ দণ্ডবিধির ১২৪, ১২৪(ক), ৫০৫(ক), ১২০(বি) ও ৫১১ ধারার অভিযোগ এনে [১৩-১২-২০১২] এ নালিশি মামলা করেন।

সুত্র:Click this link

বিষয়: বিবিধ

১২২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File