জামায়াতে ইসলামী; নাকি ইসলামের শত্রু ? জামায়াতে শয়তানীর অনৈ্সলামিক আমলনামা (ধারাবাহিক) পর্ব -৩। মওদুদী ইসলাম: ইসলামের নামে ব্যবসা নয় কি ?শরীয়তের দৃষ্টিতে “হরতাল” যা সম্পূর্ণ হারাম এবং কুফরীর নামান্তর।তার পরে ও জামাতে শয়তানীরা কিভাবে হরতাল পালন করে ?????

লিখেছেন লিখেছেন ছাগু ও পাকি বিরোধী ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৩৭:২৭ রাত

শরীয়তের দৃষ্টিতে “হরতাল”

=======================================

(অনুরোধ, আগে এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন, পরে মন্তব্য করুন, আর হ্যাঁ এই পোষ্টটি কোন রাজনৈতিক দলের ফায়দার জন্য দেয়া হয়নি, যারাই হরতাল করুক না কেন তাদের উপর এই হুকুম বর্তাবে, ধন্যবাদ)



হরতাল শব্দের অর্থ বিশৃঙ্খলা, অত্যাচার, স্বেচ্ছাচার, অবাধ্যতা, অরাজকতা, প্রতিবন্ধকতা, প্রতিরোধ ইত্যাদি।

হরতালের ব্যাখ্যায় বলা হয়, বিক্ষোভ প্রকাশের জন্য যানবাহন, হাটবাজার, দোকানপাট, আফিস-আদালত ইত্যাদি বন্ধ করা।

হরতাল গুজরাটি শব্দ। ‘হর’ অর্থ প্রত্যেক। ‘তাল’ অর্থ তালা। অর্থাৎ প্রতি দরজায় তালা।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীন

কাল হতেই দাবী আদায়ের কৌশল হিসেবে নানা প্রকার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যেমন- আমেরিকার ফিলাডেলফিয়াতে ১৭৮৬ সালে ছাপাখানার কর্মচারীরা, জার্মানে ১৯২০ সালে রাজনৈতিক কারণে, বৃটেনে ১৯২৬ সালে কয়লা শ্রমিকরা, এছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকার নানা স্থানে বিভিন্ন গোষ্ঠি তাদের দাবী আদায় করার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করেছিল, তার নাম দেওয়া হয়েছে স্ট্রাইক।

ভারত উপমহাদেশে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, বৃটিশদের রাউলাট আইন বাতিল করার জন্য, তার প্রতিবাদে যে পদ্ধতি অবলম্বন করে, তার নাম দেয়া হয় হরতাল। এই হরতাল পালিত হওয়ার কথা ছিল ১৯১৮ সালের ৩০শে মার্চ। পরে এই তারিখ পিছিয়ে ৬ই এপ্রিল করা হয়। ফলে কোন স্থানে ৩০শে মার্চ আবার কোন স্থানে ৬ই এপ্রিল সর্ব প্রথম হরতাল পালিত হয়।

বলাবাহুল্য হরতাল গুজরাটি শব্দ। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কট্টর হিন্দু, সে দাবী আদায়ের পদ্ধতির নামকরণ করে হরতাল।

মূলতঃ স্ট্রাইক শব্দের প্রবর্তক হলো- ইহুদী-নাছারা। আর হরতাল শব্দের প্রবর্তক হলো- মুশরিক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

আমাদের দেশে যে হরতাল করা হয়, তা শরীয়ত সম্মত নয়। এ হরতাল নাজায়েয, হারাম। ইসলামী দল বা অনৈসলামী দল অর্থাৎ যে কোন দলই হোক না কেন, তারা যদি গণতন্ত্রের নামেই হোক আর ইসলামের নামেই হোক, হরতাল আহ্বান করে, তা শরীয়ত সম্মত হবে না। হরতাল গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিক্ষোভ প্রকাশের একটি প্রক্রিয়া বিশেষ।

হরতাল হারাম হওয়ার উৎস ও কারণ হলোঃ-

-----------------------------------------

(১) বিজাতীয়দের উদ্ভাবিত পন্থা।

(২) জন-জীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি।

(৩) জান-মালের ক্ষতি।

(৪) একজনের অন্যায়ের শাস্তি অন্যকে দেয়া।

(৫) হারাম পন্থায় ইসলাম কায়েমের চেষ্টা।

(১) বিজাতীয়দের উদ্ভাবিত পন্থাঃ

--------------------------

হরতাল হচ্ছে ইসলামী রীতিনীতি বহির্ভূত বিজাতীয় ধ্যান-ধারণা ও অপকৌশল। যাতে শান্তি তো না-ই বরং অশান্তির পথকে প্রশস্ত করে। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ধর্ম। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনুল করীমে বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট একমাত্র মনোনিত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।” (সূরা আল ইমরান/১৯)

মহান আল্লাহ পাক আরো বলেন, “যে বেক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনোই তার থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” (সূরা আল ইমরান/৮৫)

আল্লাহ পাক আরো বলেন, “ইহুদী ও নাসারারা কখনোই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, আপনি তাদের ধর্মের (নিয়ম-নীতির) যতক্ষণ পর্যন্ত অনুসরণ না করবেন। বলে দিন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়াত।

আপনার কাছে সত্য ইলম (অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম) আসার পরও যদি আপনি তাদের নফসের বা মনগড়া নিয়মনীতির অনুসরণ করেন, তবে আপনার জন্য আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে কোন অভিভাবক বা সাহায্যকারী নাই বা পাবেন না।” (সূরা বাকারা/১২০)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ অনুযায়ী আমাদের কোন আমল করতে হলে, বিধর্মী ও বিজাতীয় কোন পন্থা অনুসরণ করা যাবে না বা তাদের থেকে কোন নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা যাবে না। শুধুমাত্র কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী আমল করতে হবে। আর এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন উমর ইবনে খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, (ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, ওটার কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদন্দ্বে রয়েছো? যে রকম ইহুদী নাছারারা দ্বিধাদন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মসনদে আহমদ, বায়হাক্বী)

সুতরাং উক্ত হাদীস শরীফ হতে বুঝা গেল যে, কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস ছাড়া অন্য কোন বিজাতীয় পন্থার অনুসরণ করা হারাম। মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই দলভূক্ত হবে।” (সূরা মায়েদা, ৫১ আয়াত)

ইহুদী, হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ বা অন্যান্য বিধর্মীদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা, এর অর্থ হলো- তাদের রীতি নীতির অনুসরণ না করা, তারা যেভাবে দাবি আদায় করে, সেভাবে দাবী আদায় না করা, তারা হরতাল করে মানুষকে কষ্ট দেয় জান-মালের ক্ষতি করে, যা সম্পুর্ণরূপে হারাম, কারণ এগুলো মহান আল্লাহ্ পাক ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশিত পথ নয়। এই আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভূক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)

এই হাদীস শরীফের প্রসঙ্গে নিম্নক্ত ওয়াকেয়া তফসীরে উল্লেখ করা হয়। মহান আল্লাহ পাক হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস সালাম-এর উপর ওহী নাযিল করলেন, হে আমার নবী! আপনার উম্মতের মধ্যে এক লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধ্যে ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত (গোমরাহ্)। তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস সালাম বললেন, “হে আল্লাহ পাক ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে কিন্তু বাকী ৪০ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন আল্লাহ পাক বললেন, “যেহেতু তারা ঐ গুণাহে লিপ্ত লোকদের সাথে মিলা-মিশা ও ওঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে আর গুণাহের কাজে বাধা দেয় না, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে।”

উপরোক্ত আয়াত শরীফ, হাদীস শরীফ এবং তার ব্যাখ্যার দ্বারা এটাই সাবেত হলো যে, বিজাতীয় বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক ও সীরত-সুরত কোনটাই অনুসরন-অনুকরণ করা যাবে না। যদি কেউ করে তবে তার থেকে সেটা আল্লাহ্ পাক গ্রহণ করবেন না বা কোন সওয়াবও দেবেন না এবং আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে কোন মদদ পাবেনা। যার ফলে সে ইহকালে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং পরকালেও তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে যাদেরকে সে অনুসরণ করত। কাজেই হরতাল কোনমতেই জায়েজ নেই।

(২) জন-জীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টিঃ

--------------------------

হরতাল হারাম হওয়ার আর একটি কারণ হলো- এতে মানুষের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম ব্যহত করে, জনজীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। আল্লাহ পাক বলেন,

ولا تفسدوا فى الارض.

“তোমরা জমীনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করোনা।”

আল্লাহ পাক আরো বলেন,

الفتنة اشد من القتل.

“ফিৎনা-ফাসাদ কতলের চেয়েও খারাপ।”

হরতালের ফলে যারা দিন-মজুর, রোজ কামাই করে রোজ খায়, তাদের কষ্ট হয়। বরং কষ্টে দিনাতিপাত করে, রোগীদের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে যায়। অথচ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ايذاء المسلم كفر

“কোন মুসলমানকে কষ্ট দেয়া কুফরী।”

হরতাল এক ধরণের জুলুম, যা শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই নয় বরং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও হয়।

আল্লাহ পাক বলেন, “আল্লাহ্ পাক জালিমদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আল্ ইমরান/৫৭)

এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক অন্যত্র বলেন, “তোমরা অত্যাচার করোনা এবং অত্যাচারিত হইওয়া।” (সূরা আল ইমরান্/১৪০)

যে সমস্ত জালিমরা গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ়, তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন, “আর আল্লাহ পাক জালিমদেরকে হিদায়াত দেন না।” (সূরা আল ইমরান্/৮৬)

অর্থাৎ যে সমস্ত জালিম সম্প্রদায় তাদের জুলুমের মধ্যে দৃঢ় থাকে, তারা কখনো আল্লাহ পাক-এর হিদায়েত লাভ করতে পারবে না।

মূলতঃ হরতাল আর জুলুম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজেই যেখানে হরতাল হবে, সেখানেই জুলুম হবে। জুলুম ব্যতীত কোন হরতাল সংঘটিত হতে পারে না। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে জুলুম করতে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করেছেন। অতএব, হরতাল করা জায়েয নেই, তা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

(৩) জান-মালের ক্ষতিঃ

----------------

হরতালের ফলে জান-মালের ক্ষতি হয়, মানুষের সম্পদের ক্ষতি হয়, গাড়ী ভাংচুর করা হয়, গরীব সাধারণের আয়ের সম্বল রিক্সা ভেঙ্গে দিয়ে আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। হরতালের ফলে হতাহতও সংঘটিত হয়ে থাকে। যাদের হরতাল ডাকার কারণে এ সমস্ত নিহত-আহত হবে, তারাই হত্যাকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে ও দায়ী হবে। পবিত্র কুরআন শরীফে আছে, “যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই চিরকাল থাকবে।” (সূরা নিসা/৯৩)

আর পবিত্র হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, “কোন মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী, আর কতল করা কুফরী।” (পবিত্র বুখারি শরীফ)

বিদায় হজ্বের পবিত্র খুতবায় হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “একজনের জান-মাল, সম্পদ, রক্ত অন্যজনের জন্য হারাম।”

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা মু’মিনদের নিকট থেকে জান ও মালকে বিহিশতের বিণিময়ে খরিদ করেছেন।” (সূরা তওবা/১১১)

হরতালকারীরা স্বাভাবিক কাজ কর্মে বাঁধা দেয়ার জন্য স্থানে স্থানে একত্র হয়ে যে পদক্ষেপ নেয়, (যেমন- ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, চড়াও ইত্যাদি) তাকে পিকেটিং বলা হয়ে থাকে। ১৮৫৯ সালে গ্রেট বৃটেনে পিকেটিং প্রথার প্রবর্তন হয়। যদিও তখনকার পিকেটিংকে শান্তিপূর্ণ পিকেটিং বলে অভিহিত করা হয়। মূলতঃ এটা খৃষ্টানদের প্রথা, তাই পিকেটিং করাও জুলুম করার শামিল, যা সম্পূর্ণ হারাম জান ও মালের ক্ষতি তো হয়ই বরং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে। কাজেই হরতাল করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয ও হারাম।

(৪) একজনের অন্যায়ের শাস্তি অন্যকে দেয়াঃ

-------------------------------------

মূলতঃ হরতাল যে কারণে করা হয় অর্থাৎ অপরাধীকে শাস্তি দেয়া তা মোটেই হয়না। অপরাধী অর্থনৈতিক ও মানবিক সব দিক থেকেই বহাল তবিয়তে অবস্থান করে থাকে। কিন্তু শাস্তি ভোগ করে জনসাধাণ, যারা অপরাধী নয়। অথচ হরতালের ফলে একজনের অপরাধের শাস্তি অন্যজনকে চাপিয়ে দেয়া হয়, এটা ইসলামের বিধান নয়। বরং মহান আল্লাহ পাক-এর হুকুম হলো, “একজনের গুণাহের বোঝা অন্যজন বহন করবে না।” (সূরা আনআম/১৬৪)

অর্থাৎ একজনের অপরাধের শাস্তি আরেকজনকে দেয়া যাবেনা, যা মূলতঃ নিষেধ। কাজেই শরীয়তের দৃষ্টিতে হরতাল সম্পূর্ণ হারাম।

(৫) হারাম পন্থায় ইসলাম কায়েমের চেষ্টাঃ

----------------------------------

হারাম উপায়ে ইসলাম প্রচারের কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ ও ফিক্বহের কিতাবের কোথাও নেই। ইসলাম প্রচার করতে হলে মহান আল্লাহ পাক-এর বিধান অনুযায়ী করতে হবে।

যেমন মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

و ان احكم بينهم .عا انزل الله ولا تتبع اهوا عهم.

“তারা আপনার নিকট কোন মোকদ্দমা নিয়ে আসলে, তার ফয়সালা শরীয়ত অনুযায়ী করুন। আর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।”

এ পবিত্র আয়াত শরীফ হতে বুঝা যায় যে, সর্ববিধ ক্ষেত্রেই আল্লাহ্ পাক-এর বিধান অনুযায়ী ফয়সালা করতে হবে। আর যারা আল্লাহ পাক-এর বিধান অনুযায়ী চলবেনা, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, “আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন, তদনুযায়ী যারা ফয়সালা করেনা, তারাই কাফের।”

অন্য আয়াত শরীফে যারা আল্লাহ পাক-এর বিধান শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালা করেনা, তাদেরকে ফাসেক, জালিম ইত্যাদি বলা হয়েছে। কেননা আল্লাহ পাক হারামকে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের প্রতি যা হারাম করা হয়েছে, আল্লাহ পাক তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন।” (সূরা আনআম/১২০)

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াত শরীফের তাফসীরে বলেন, “হালাল স্পষ্ট এবং হারাম স্পষ্ট। যা সন্দেহজনক, তা ছেড়ে দাও। যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই, সেদিকে ধাবিত হও।” (পবিত্র বুখারি শরীফ)

এ হাদীস শরীফের দ্বারা এটাই প্রতিয়মান হয় যে, যা হারাম তাতো অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। আর যা সন্দেহজনক, তা থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে শরীয়তের উসূল হলো- “যা হারামের দিকে নিয়ে যায়, তাও হারাম।”

কাজেই যে সমস্ত কাজ মানুষকে হারামের দিকে নিয়ে যায়, তা পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। তাই সকলকে অনুসরণ করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক তাঁর পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে বলেন, “হে বিশ্বসীগণ, তোমরা আল্লাহ্ পাক-এর ইত্বায়াত কর ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরও ইত্বায়াত কর। আর উলীল আমরগণের অনুসরণ কর।” (সূরা নিসা/৫৯)

আর নিষেধ করেছেন ঐ সমস্ত লোকদেরকে অনুসরনণ করতে, যাদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা, যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফেল ও যে প্রবৃত্তির (নফসের) অনুসরণ করে এবং যার কাজসমূহ শরীয়তের খিলাফ।” (সূরা কাহাফ/২৮)

কেননা মহান আল্লাহ পাক বলেন, “যা নাপাক, তা থেকে খারাপ ব্যতীত কিছুই বের হয়না।” (সূরা আরাফ/৫৮)

উদাহরণস্বরুপ বলা যায়- প্রস্রাব দ্বারা কাপড় ধুলে কাপড় পরিষ্কার হবে ঠিকই, কারণ তাতে এসিড রয়েছে কিন্তু পবিত্র হবেনা। কাজেই বাহ্যিকভাবে কোন জিনিসের মধ্যে যদিও ফায়দা দেখা যায় কিন্তু তা যদি শরীয়তের খিলাফ হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবেনা। কেননা, মহান আল্লাহ পাক বলেন, “হে হাবীব! আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, মদ ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন, মদ ও জুয়ার মধ্যে মানুষের জন্য ফায়দা রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুণাহই বড়, কাজেই এগুলি হারাম।” (সূরা আল বাকারা/ আয়াত শরীফ-২১৯)

এখানে লক্ষ্যনীয় যে, আল্লাহ্ পাক নিজেই বলেছেন যে, মদ ও জুয়ার মধ্যে ফায়দা রয়েছে। মদ পান করলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, জুয়া খেললে রাতারাতি অনেক টাকা পাওয়া যায়। তথাপি এগুলোর মধ্যে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ বেশী বলে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। হরতাল করা ও হারাম পন্থায় ইসলাম কায়েমের চেষ্টার মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে যদিও ফায়দা দেখা যায়, কিন্তু তা মদ ও জুয়ার মত আল্লাহ্ পাক-এর হুকুমের খিলাফ হওয়ার কারণে হরতাল হারাম। তাই বিনা তাহ্বক্বীকে কোন কাজ করা যাবেনা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন, “তোমাদের নিকট যা আছে, তাকে তোমরা মিছামিছি এটা হালাল, এটা হারাম বলে অভিহিত করোনা। এতে আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি তোমাদের মিথ্যা অপবাদ দেয়া হবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তারা কখনই সফলকাম হয়না।” (সূরা নহল/১১৬)

অতএব, হরতাল করলে বিজাতীয়দের অনুসরণ করা হয়, জনজীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, জান-মালের ক্ষতি হয়। একজনের শাস্তি অন্যজনের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় এবং হারাম উপায়ে ইসলাম কায়েমের কোশেশ করা হয়, তাই ইত্যাদি কারণে হরতাল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাক্বারা/২০৮)

কোন কোন তাফসীরকারক, এ আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার ক্ষেত্রে একটা ঘটনা উল্লেখ করেন। একদা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে বসা ছিলেন। এমন সময় উটের গোশতসহ কিছু খাদ্য হাজির করা হলো। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন যে, তিনি পূর্বে ইহুদী পন্ডিত ছিলেন এবং সেই ধর্মে উটের গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ বিধায় তিনি তা গ্রহণ করতেন না। কাজেই এখনো তিনি উটের গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে চান। হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে থাকলেন এবং আল্লাহ্ পাক-এর বিধানের অপেক্ষায় রইলেন। কেননা, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেন না।” (সূরা নজম/৩,৪) তখন আল্লাহ্ পাক এ আয়াত শরীফ নাযিল করলেন।

এখানে লক্ষ্যনীয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উঠের গোশত খাওয়াকে হারাম মনে করতেন না বরং হালালই জানতেন, তাতেই আল্লাহ্ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন, “(তোমরা যখন ইসলামে দাখিল হয়েছোই) তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হও।” কাজেই আজকাল যারা হরতালের মত জঘণ্য হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে তারা ইসলামের ভিতরে কতটুকু রয়েছে, আর কতটুকু ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে, তা ভাববার বিষয়? অথচ প্রত্যেক জাতি তার স্বাতন্ত্রবোধ ও কৃষ্টি-কালচার বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট। যেমন- গান্ধী, সে হিন্দুয়ানী কৃষ্টি-কালচার বজায় রাখার জন্য স্ট্রাইককে হরতাল নামে রূপান্তরিত করে। অথচ আজকাল কিছু কিছু মুসলমান তাদের নিজস্ব স্বাতন্ত্রবোধ, কৃষ্টি-কালচার সব কিছু বিসর্জন দিয়ে, কট্টর মুসলমান বিদ্বেষী হিন্দু মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নীতি বাস্তবায়নে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে, আত্মতৃপ্তি বোধ করছে, এ আত্মতৃপ্তি বোধের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে আবার আল্লাহ পাক-এর শুকরিয়াও আদায় করছে। (কেননা আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে, হারাম কাজে শুকরিয়া আদায় করা কুফরী) অথচ যা সম্পূর্ণ হারাম এবং কুফরীর নামান্তর।

বিষয়: রাজনীতি

৩০৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File