অনন্তর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে রাহার আত্মহত্যা!
লিখেছেন লিখেছেন দুষ্টু পোলা ২৪ মার্চ, ২০১৩, ০৮:২৫:৪৪ রাত
নায়ক অনন্ত জলিলের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন মডেল ও অভিনেত্রী সুমাইয়া আজগার রাহা (২০)।
আর এ কারণেই পুলিশ ও গোটা চলচ্চিত্র পাড়ার লোকজনকে আড়াল করে গোপনে রাহার দাফন সম্পন্ন করে তার পরিবার। এমনকি আজিমপুর গোরস্থানে দাফনের সময়েও রাহা ও তার বাবার প্রকৃত নাম-ঠিকানা গোপন করা হয়।
চলচ্চিত্র পাড়ার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তবে রাহার পরিবার মৃত্যুর কারণ অজ্ঞাত বলে বাংলামেইলকে জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত ২০১০ সালের ১৬ এপ্রিল মুক্তি পাওয়া ‘খোঁজ দ্য সার্চ’ ছবিতে নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় করেছিলেন এমএ জলিল অনন্ত। নায়িকা ছিলেন বর্ষা। ওই ছবিতে সহঅভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছিলেন সুমাইয়া আজগার রাহা। ছবিটিতে অভিনয়ের সূত্র ধরে রাহা এবং অনন্তের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়।
কিন্তু পরে আকস্মিকভাবে বর্ষার সঙ্গে অনন্তর বিয়ে হয়ে যায়। এ কারণে বেশ কিছু সময় ধরে রাহা-অনন্তর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, গত দেড় বছর ধরে ‘পরকীয়া’ রূপে আবারো রাহা-অনন্তর প্রেম শুরু হয়। তারা বিভিন্ন শ্যুটিং স্পট এমনকি বিশেষ বিশেষ দিনে দেশের নামীদামী হোটেলগুলোতে একত্রিত হতেন। সময় পেলেই অনন্তর কাছে রাহা ছুটে যেতেন তার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি এলাকায়। এ খবর বর্ষার কানে গেলে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়।
একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জানান, রাহার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে অনন্তর গভীর সম্পর্কের বিষয়টি দু’জনের পরিবার পর্যন্ত গড়ায়। তবে অনন্ত বরাবরই রাহাকে একজন সহকর্মীর চোখে দেখছেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। এসব নিয়ে তিনি মিডিয়ার কাউকে পাত্তা দিতেন না। এ কারণে পারিবারিকভাবে বিষয়টি আরো জটিল হয়। এর এক পর্যায়ে বর্ষা রাহাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এ নিয়ে অনন্ত বর্ষাকে মারধর করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় অনন্ত-বর্ষা পাল্টাপাল্টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর স্বামীর পরকীয়ার কারণে রাগে ও ক্ষোভে বর্ষা চলে যান সিরাজগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে।
সূত্র জানায়, স্বামী-স্ত্রীর মারামারি আর মিডিয়া পাড়ায় প্রেমের বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় অনেকটা অভিমান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন রাহা।
তবে রাহার বাবা তার মেয়ের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কিছুই বলতে পারেননি।
রাহা তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের চাঁনমিয়া হাউজিংয়ের ২ নম্বর সড়কের ৪১/সি মেঘহিল ভবনের চতুর্থ তলার বি-১০ ফ্লাটে বসবাস করতেন।
তবে আজিমপুর গোরস্থানে দাফনের আগে লাশ নিবন্ধনের খাতায় ভুয়া ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের ২৯/১৫ নম্বর বাড়ি।
আর রাহার ডাক নাম বাদ দিয়ে লিখা হয় সুমাইয়া আক্তার। বাবার নাম ‘মো.আলী আকবর’। আর তাকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয় হাঁপানি রোগে স্বাভাবিক মৃত্যু।
রোববার বিকেলে রাহার বাবা শেখ আজগার আলী তার মোহাম্মদপুরে বাসায় বাংলামেইলকে জানান, শুক্রবার গভীর রাতে রাহা ঘুম যায়। শনিবার সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়ালেও রাহা ঘুম থেকে ওঠেনি। এ কারণে অনেক ডাকাডাকি করেও তার কক্ষ থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। এ কারণে আমি নকল চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখি রাহা নিথর হয়ে পড়ে আছে। তার চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
শেখ আজগার আলী বলেন, ‘পরে আমি এবং আমার স্ত্রী ফাতেমা বেগম মিলে দেখি রাহা আর নেই। এরপর স্বামী-স্ত্রী মিলে রাহার দাফনের উদ্যোগ নিই।’
রাহার মৃত্যু নিয়ে আজিমপুর গোরস্থানে মিথ্যা ঠিকানা এবং লুকোচুরি প্রসঙ্গে শেখ আজগার আলী বলেন, ‘আমরা চাচ্ছিলাম না মরে যাওয়া মেয়েটি কষ্ট পাক।’
এদিকে আজিমপুর কবরস্থানের মোহরার (নিবন্ধক) নুরুল হুদা বাংলামেইলকে জানান, গত শনিবার দুপুরে গোরস্থানে দু’জন নারীর লাশ দাফন হয়। এর মধ্যে একজন হলো রমনা এলাকার জনৈকা তাহসিনা আক্তার (৪৫)। তাহসিনা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান বলে তার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে লিখা ছিল। অন্যজনের লাশ আসে মোহাম্মদপুর থেকে। তার কবরস্থানে লাশের নাম নিবন্ধনের খাতায় তার নাম লেখা হয় সুমাইয়া আজগার (২২)। সুমাইয়ার বাবার নাম লেখা হয় মো. আলী আকবর।
নুরুল হুদা জানান, সুমাইয়ার নিবন্ধনে তাকে প্রতিবন্ধী এবং হাঁপানি রোগী দেখিয়ে অভিভাবকের স্থানে জামাল উদ্দিন নামে একজন স্বাক্ষর করেন। জামাল উদ্দিন নিহতের বড় ভাই বলে পরিচয় দেয়া হয়েছিল। আর মরদেহের ঠিকানায় বলা হয়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের ২৯/১৫ নম্বর বাড়ি।
নুরুল হুদা আরো জানান, সুমাইয়ার লাশের সঙ্গে আসা লোকজনের চেহারায় অনেকটা বিষণ্ণতা ছিল। তারা যোহরের নামাজের আগে এসে তড়িঘড়ি করে লাশের দাফন করে। লাশের দাফন করা হয় কবরস্থানের উত্তর-পশ্চিম পাশে।
তবে সাধারণত প্রতিবন্ধী রোগীদের মৃত্যু হলে তার আত্মীয়-স্বজনরা এতটা বিষণ্ণ থাকে না বলেও অভিজ্ঞতার আলোকে জানান কবরস্থানের এই মোহরার।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বাংলামেইলকে বলেন, সকালে পুলিশ আজিমপুরে গিয়ে সেখানে নিহতের ঠিকানা সংগ্রহ করে তাজমহল রোডের ওই বাসায় গিয়েছে। তবে ওই ঠিকানায় রাহা বা সুমাইয়া নামে কেউ বসবাস করতো না। এমনকি কেউ মারাও যায়নি। পুলিশ এ ধরনের খবর কেবল মিডিয়ার মাধ্যমেই শুনেছে বলে জানান ওসি।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন