রাজীব হত্যারহস্য : সন্দেহ ৩টি

লিখেছেন লিখেছেন মাহাবুব ভূঁইয়া ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৪৫:৩৪ সন্ধ্যা



ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন খুনের ঘটনায় এখনো কোনো রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি। রহস্য উদ্ঘাটনে গোয়েন্দা পুলিশ ব্লগার রাজীবের পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সন্দেহ তিনটি :

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে ব্লগার রাজীব হত্যার তদন্ত করছেন তারা।

এই কর্মকর্তা বলেন, “প্রথম কারণ হলো, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে ব্লগে ও ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন রাজীব। এমনকি শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের পক্ষে ব্লগে প্রচার চালান তিনি। এ কারণে তাকে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হতে পারে।”

সন্দেহের দ্বিতীয় তালিকায় আছে স্ত্রীর সঙ্গে সর্ম্পকের অবনতি। নারীঘটিত কোনো কারণ ও পারিবারিক কলহ রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

কল লিস্ট :

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় ওই এলাকায় থাকা বিভিন্ন কোম্পানির অপারেটরের মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করা হবে।

ফোনগুলো ট্র্যাক করে অনেক রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে জানান ওই গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা।

৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ :

শুক্রবার খুনের পর পলাশনগর এলাকার নৈশপ্রহরী আলমগীর হোসেন, রাজীবের বান্ধবী তানজিলা ও 'আমার ব্লগ'-এর ব্লগার রাফিসহ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

এছাড়াও আরো কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রাজীব খুনের ঘটনায় 'আমার ব্লগ'-এর ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ আমিরুল মোহামেইন, নিহত রাজীবের বান্ধবী তানজিলা ও রাফিসহ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

রাজীবের বাবা ও ব্লগাররা দাবি করছেন, জামায়াত-শিবিরই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড :

পুলিশ জানিয়েছে, রাজীবকে হত্যা করাই খুনিদের টার্গেট ছিল এ ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত পুলিশ। কারণ, তার ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসেট, মানিব্যাগ কিছুই খোয়া যায়নি।

ডিবি'র সিনিয়র সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত আমরা ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। এর বাইরে তদন্তের স্বার্থে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

ডিএনএ টেস্ট :

তৌহিদুল ইসলাম জানান, দুর্বৃত্তদের সঙ্গে রাজীবের ধস্তাধস্তি হয়েছে। এ কারণে তাদের একগোছা চুল মুষ্ঠিবদ্ধ অবস্থায় রাজীবের হাতের মধ্যে ছিল। যা আলামতের তালিকায় দেখিয়েছে থানা পুলিশ। আমরা সেই চুলসহ অন্যান্য আলামত আমাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে সেই সব আলামতের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।

সবশেষ ফোন কল :

পুলিশ জানায়, শুক্রবার বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে বান্ধবী তানজিলাকে নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বরে যান রাজীব। সেখানে তারা একটি দোকানে চা পান করেন। এরপর সাড়ে ৮টার দিকে তানজিলাকে তাদের মিরপুর ১৩ নম্বর বাড়ির সামনে পৌঁছে দিয়ে পলাশনগরের বাসার দিকে রওনা হন রাজীব। পথেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডিবি পুলিশ জানায়, সবশেষ রাজীবের সাথে কথা হয় ব্লগার রাফির। রাত ৮টা ৫৮ মিনিটে রাজীব ব্লগার রাফিকে মোবাইল ফোনে কল দেন। ওই সময় রাফি ময়মনসিংহের ত্রিশালে ছিলেন।

তানজিলার সাথে পরিচয় :

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তানজিলা জানান, বছরখানেক আগে ফেসবুকে তার সঙ্গে রাজীবের পরিচয়। তার সঙ্গে রাজীব প্রায়ই ব্লগে জামায়াত-শিবিরবিরোধী লেখালেখি নিয়ে আলাপ করতেন। শুক্রবারও চা পান করার সময় ব্লগ ও ফেসবুকে বিভিন্ন লেখা নিয়ে আলাপ করেন। শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনকে আরো গতিশীল করতে কী করা যেতে পারে, এসব নিয়ে কথা বলেন।

ওদের মুখ চাদর পেঁচানো ছিল :

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে পলাশনগরে প্রবেশের ২ নম্বর গেটের নৈশপ্রহরী আলমগীর জানিয়েছেন, চাদর দিয়ে মুখ পেঁচানো অবস্থায় রাত ৯টার কিছু পর দু'জন লোক গেট দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। তাদের কাছে প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দেননি।

রাজীবরা দুই ভাই। তারা দু’জনই এশিয়ান প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষে মিরপুর-১১ নম্বরের ৫৬/৩ পলাশনগর এলাকার ভাড়া বাসা থাকতেন। দুই বছর আগে ভালোবেসে অনিকা নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন। তবে গত ৬ মাস ধরে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না বলে জানায় পুলিশ।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় শনিবারে ভোরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি পরে ডিবি'র কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি'র সাত নম্বর টিমের পরিদর্শক মাইনুল ইসলাম মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন।

সূত্র : পরিবর্তন ডট কম

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File