প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিবির সভাপতি!!!!

লিখেছেন লিখেছেন রিপোর্টার ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৫:১২:৩০ বিকাল



রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়রের শপথ অনুষ্ঠানে শিবির কে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিবির সভাপতি

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়রের শপথ অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কিছু বক্তব্য রেখেছেন, যার প্রতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।

ছাত্রশিবির মনে করে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার লক্ষে চাতুরতার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের প্রতি আহবান ও করুনার ছলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মায়াকান্নার শামিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পরিস্থিতি তুলে ধরে আজকের দিনের বৈধ, গনতান্ত্রিক ও নায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দাড় করিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অনভিপ্রেত ও অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত। নিশ্চয়ই সভাসমাবেশ-মিছিল-মিটিং ও ন্যয্য দাবী নিয়ে আন্দোলন সাংবিধানিক অধিকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। রাজপথে যখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগ ও পুলিশের পোশাক পরা ছাত্রলীগের ক্যাডাররা আন্দোলনরত শিবির কর্মীদের উপর হামলা চালায়, নির্দয়-নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করে তাদের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরব থেকে প্রকারান্তরে তার দলীয় লোকদেরকে সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়ার কর্মকান্ডকেই প্রশ্রয় দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি সংবিধান রক্ষার শপথও ভঙ্গ করেছেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার লড়াই সংগ্রামকে তিনি কটাক্ষই করেননি বরং সরকারের সামগ্রিক অন্ত:সারশুন্যতাকে বড় করে তুলেছেন। নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সকল অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করতে জনসাধারনের পয়সায় ক্ষমতাসীনদের নেতৃত্বে যে রমরমা প্রচার চলছে প্রধানমন্ত্রীর ছাত্রশিবিরকে নিয়ে দরদী কন্ঠ তারই প্রতিধ্বনি করেছে।

অবশ্যই ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধের গৌরবে গৌরবান্বিত একটি ছাত্রসংগঠন। ছাত্রশিবির এটাও মনে করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যে বিচারের আয়োজন করা হয়েছে তা পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।বিশ্বের বিবেকবান মানুষ ও মানবাধিকার সংস্থা সমূহ এ বিচার প্রক্রিয়া ও আইন সম্পর্কে তীব্র আপত্তি উত্থাপন করেছেন। পাশাপাশি তারা সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা পেশ করেছেন। কিন্তু সরকার তার কোনটিই বিবেচনায নেননি। সরকারের মন্ত্রী এমপিদের বক্তব্য ও তড়িঘরি করে রায় দেয়ায় মনে হয়েছে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করাই সরকারের একমাত্র টার্গেট। অন্যায়ভাবে একজন লোককে মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগে ও অপ্রমানিত মিথ্যা সাক্ষের ভিত্তিতে সাজা দেয়া হবে আর ছাত্রসমাজ এ দৃশ্য বসে বসে দেখবে কা হতে পারেনা।

দেশে অব্যাহত সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব বজায় রেখে মাৎসন্ন্যায় কায়েম করা হয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা ও গুম করা হচ্ছে, সরকার আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় ক্যাডারের মত ব্যবহার করছে। গতকালও চট্ট্রগ্রামে পুলিশ তিন শিবির নেতাকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞাহীনতার পরিচয় বহন করে।

প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভুলে গেছেন স্বয়ং তিনিই সহিংসতা ও হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে ভুমিকা রেখেছেন। লগি-বৈঠার হত্যাযজ্ঞ তার নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছিল। একটি লাশের বিপরীতে দশটি লাশের দাবি যে তার কন্ঠেই ধ্বনিত হয়েছিল মানুষের মনে আজো তা ভাস্বর রয়েছে। অথচ তিনি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে চলমান নায্য আন্দোলনকে নৈরাজ্যপূর্ন বলে প্রচার করছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা ৭১ এর বিভৎসতা দেখিনি’- একথা ঠিক। তবে আমরা ২৮ শে অক্টোবরের বিভৎসতা দেখেছি। ২০০৬ সালের পল্টন ট্রাজেডির দায়দায়িত্বও এড়াতে পারেননা তিনি। লগি-বৈঠার হত্যাযজ্ঞে সেদিন অসংখ্য জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছিলেন। একটি লাশের বিপরীতে দশটি লাশের দাবি যে তার কন্ঠেই ধ্বনিত হয়েছিল তাকি তিনি অস্বীকার করতে পারবেন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার জন্য তার আমলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নৃসংশতার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হল:

বর্তমান সরকারের চার বছরে (২০০৯-২০১২) ৩০ জনকে হত্যা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এর মধ্যে ২৯ জন ছাত্র ও একজন সাধারণ মানুষ রয়েছে। শুধু ২০১২ সালেই দেশের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা আর এক হাজার ৭৮ জন শিার্থীকে আহত করে তারা। ২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারী বাকৃবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের রাব্বি নামে ১০ বছরের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। ৩১ জানুয়ারী বগুড়ায় ছাত্রলীগের ও পুলিশের হামলায় ৩ জন জামাত-শিবির কর্মী নিহত হয়। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ নামের এক পথচারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানীকে হত্যা করে ছাত্রলীগ। ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীবকে খুন করে প্রতিপক্ষরা। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহসভাপতি রেজানুল ইসলাম চৌধুরীকে খুন করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২০১২ সালে ৮ জানুয়ারি জাবির ছাত্রলীগকর্মী জুবায়ের আহমেদ, ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্ত, ৮ ফেব্রুরি ফারুক হোসেন, ১১ ফেব্রুয়ারি রাবির মহিউদ্দিন, ২৮ মার্চ হারুন অর রশিদ কায়সার, ১৫ এপ্রিল আসাদুজ্জামান, ১৫ আগস্ট নাসিম এবং ১৬ জুলাই সোহেল ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ-পুলিশের সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন নিরীহ ও মেধাবী ছাত্র আবু বকর। ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগ কর্মী পলাশ খুন হন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ২১ তারিখে তেজগাঁও পলিটেকনিকে ফাও খেতে গিয়ে সংঘর্ষ বাধিয়ে রাইসুলকে ও ২০ অক্টোবর চমেকে আবিদুর রহমান নামে ছাত্রলীগ এক দলীয় কর্মীকে হত্যা করে। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি শাবিপ্রবিতে জুবায়েরকে, ২১ তারিখে ঈশ্বরদীতে ছাত্রলীগকর্মী মোস্তফা কামাল শান্তকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে, ২৫ তারিখে মাগুরায় আল আমীনকে হত্যা করে। ১২ মার্চ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল আজিজ খান সজীব খুন হয়। এপ্রিল ১১ তারিখে চাঁদপুরের বিল্ললকে, ২১ তারিখে ছাত্রলীগ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষ করে। এতে একজন নিহত হয়। সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে হাবিপ্রবিতে ফাহিম মাহফুজ নামের কর্মীকে হত্যা করে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত চার বছরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৮৭টি সংঘর্ষ করেছে ছাত্রলীগ। এর মধ্যে বিভিন্ন থানা ও জেলা শাখায় হয় ৪৮টি। এতে প্রতিপরে ছাত্র আহত হয়েছেন চার হাজার ১৪৫ জন। পুলিশ, সাংবাদিক, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ছাত্রীর অভিভাবক বাদি হয়ে ও এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছে ৫৪২ জনের বিরুদ্ধে, যার মধ্যে ৪৯৫ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া অন্য সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে ৫৬টি।

ছাত্রলীগের এই তান্ডবতা সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোন বক্তব্য না থাকায় দেশবাসী বিস্মিত হয়েছে। অথচ তিনি চলমান ন্যায্য আন্দোলনকে নৈরাজ্যপূর্ন বলে প্রচার করছেন তাকি স্ববিরোধী নয়?

ছাত্রশিবির ইতিহাস ও সময়ের প্রতি দায়বদ্ধ থেকেই তার নিয়মতান্ত্রিক কর্মসুচি দিয়ে চলেছে। বরং প্রধানমন্ত্রী যদি ছাত্রলীগকে ইতিহাস থেকে পাঠ নিতে বলতেন সেক্ষেত্রে সন্ত্রাসী এই সংগঠনটির হাত থেকে হয়তো ভবিষ্যতে কিছু জীবন রক্ষা পেতো। ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলে সররকার সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছে যার সর্বশেষ নজির প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের কান্ডজ্ঞানহীন প্রলাপ। সাধারন শিক্ষার্থীদের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে নব্য স্বৈরাচার ও বাকশালী চরিত্রের এ সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বদ্ধপরিকর । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশবাসী বিশেষকরে ছাত্রসমাজ আরো দায়িত্বপূর্ণ ও গ্রহনযোগ্য বক্তব্য আশা করে। আমরা আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে বিভৎস কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখবেন এবং বিরোধী দলের উপর চলমান রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন।

http://www.facebook.com/#!/photo.php?fbid=10151235269502751&set=a.89849062750.97973.89225472750&type=1&theater

বিষয়: বিবিধ

১৪০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File