কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন
লিখেছেন লিখেছেন রিপোর্টার ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:৪৪:০৭ দুপুর
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২। তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণীত হয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এর দু’টি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। বাকি অভিযোগে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। প্রমাণীত না হওয়ায় অন্য অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
বিচারপতি এম ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে সকাল সাড়ে ১০টার পর ১৩২ পৃষ্টার এই রায় পড়া শুরু হয়। রায়ের ৩৫ পৃষ্টার সারসংক্ষেপ এর প্রথম অংশ পড়েন বিচারপতি শাহিনুল ইসলাম। দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া। দুপুর ১২টার দিকে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ওবায়দুল হাসান। অভিযুক্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতেই এই রায় ঘোষণা করেন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের প্রথম অংশে মুক্তিযুদ্ধের সময় আবদুল কাদের মোল্লার মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ভূমিকা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। দ্বিতীয় অংশে তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ছয়টি প্রমাণীত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ প্রমাণীত হওয়ায় চূড়ান্ত রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
এর আগে সকাল ১০ টার দিকে আবদুল কাদের মোল্লাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সাদা পাঞ্জাবি পড়া কাদের মোল্লার হাতে ছিল একটি পানির বোতল। রায় পড়া শুরুর আগে কাদের মোল্লা কথা বলার জন্য ট্রাইব্যুনালের অনুমতি চান। তবে ট্রাইবুন্যাল তাকে কথা বলার অনুমতি না দিয়ে রায় পড়া শুরু করেন।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল থেকে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াতের সদস্যদেরও ট্রাইব্যুনালে মোতায়েন করা হয়।
সকালে ব্যাপক তল্লাশি করে ট্রাইব্যুনালে ঢুকতে দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের আশপাশেও ছিল কয়েক স্থরের নিরাপত্তা।
প্রায় তিন বছর আগে শুরু হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে এ প্রথম জামায়াতের কোন শীর্ষ নেতার ব্যাপারে রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এর আগে দলটির বহিষ্কৃত নেতা মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। তিনি বর্তমানে পলাতক। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১০ সালের ২১শে জুলাই। একই বছরের ২রা আগস্ট তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই বছর ১৮ই ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এ মামলাটি প্রথমে ট্রাইব্যুনাল-১এ বিচারাধীন ছিল। পরে তা দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়। এ মামলায় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রথম অভিযোগে বলা হয়, কাদের মোল্লার নির্দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে আটক মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে একাত্তরের ৫ই এপ্রিল গুলি করে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৭শে মার্চ কাদের মোল্লা তার সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তার মা ও দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, ২৯শে মার্চ বিকালে আরামবাগ থেকে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বাসস্ট্যান্ডে গেলে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা তাকে ধরে গলা কেটে হত্যা করে। এছাড়াও আরও তিনটি ঘটনায় হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে আবদুল কাদের মোল্লার রায়কে ঘিরে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই দেশজুড়ে হরতাল পালন করছে জামায়াতে ইসলামী। কাল থেকে লাগাতার হরতালের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দলটি।
রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে ট্রাইব্যুনালের পাশে হাইকোর্টের সামনে বিভিন্ন সংগঠন বিচারের পক্ষে কর্মসূচি পালন করে। এসব সংগঠনের কর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দেন।
http://mzamin.com/details.php?nid=NDE0MTE=&ty=MA==&s=MzY=&c=MQ==
বিষয়: বিবিধ
১০০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন