প্রবন্ধ: গুম-হত্যার ছোবলে পৃথিবী ক্রমশ: নারকীয় বাসযোগ্য হয়ে উঠছে প্রব...
লিখেছেন লিখেছেন সালাহ্ উদ্দিন কাদির দোয়েল ২৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:২০:৫২ দুপুর
চারদিকে ঘোর অন্ধকার। এ অন্ধকার প্রযুক্তির নয়,মানুষের আত্মার,মনের। মানুষ ভুলে যাচ্ছে তার স্বীয় নৈতিকতাকে। নিজের বিবেককে কালো কঠিন পদার্থের আবরন দিয়ে ঢেকে রেখেছে। দুই দিন আগে শেষ করেছি ‘পৃথিবী ক্রমশ: ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে’ শীর্ষক প্রবন্ধটা। বাংলাদেশটাকে এখন আমার কাছে অদ্ভূত লাগছে,ভীতিপূর্ণ মনে হচ্ছে। পৃথিবীর ভূমিকম্প অর্থাৎ ঝুকিপূর্ণ দেশ হিসেবে ভয় তো আছে, তার মধ্যে গুম-হত্যার নাশকতা চোখ নিযে় তুলছে বিবর্ণ বিবিষীকায়। চোখে ভেসে উঠছে বাংলার মানুষদের চিন্তিত বিষন্ন মুখে আতংকের ছায়াপাত। ঘরে-বাইরের শংকা আর শংকা। মৃত্যুর ক্রমাগত আশঙ্কা। কখন জানি কি হয়? কার হাতে নি:শেষ হয় নিজের মূল্যবান জীবনটা। ভয়। ভীষণ ভযে়র মধ্যে এখনকার মানুষ। চলতে-ফিরতে ভয়। ঘরে শুয়ে থাকতেও ভয়। জীবনের অনিশ্চয়তা। জীবনের নিরাপত্তাহীনতা। ভয়াল প্রাকৃতিক ভূমিকম্প,ঝড়-ঝাঞ্ঝার চেয়েও ভয় এখন জাতি প্রকৃতির মানুষকে নিয়ে। মানুষ আর মানুষ নেই। পশুও নেই। কোন পর্যায়ে পড়েছে? কোন বিশেষণ খুঁজে পাচ্ছি না এই মুহুর্তে।
চারদিকে হত্যার তান্ডবতা। পত্রিকার পাতায় পাতায় নৃশংস হত্যার বীভৎস চিত্র। এমন কোন দিন নেই যে,পত্রিকায় ছাপা হয় না যেখানে হত্যাকান্ড নেই। কেউ গুম হয়ে হত্যার শিকার হযে়ছে। কোন নারীকে ধর্ষণ,কুপিয়ে,এসিড ঝলসে দিয়ে হত্যা করেছে ধর্ষক,দূধর্ষরা। কোন অফিসে ঢোকে কর্মকর্তাকে মেরে ফেলছে, ফ্লাটবাডি়তে বাডি়তে ঢুকে হত্যা করছে গৃহিনীকে। পাখির মত গুলি করে কাউকে হত্যা,বিষ খাইয়ে মেরে ফেলা। এটা করছে হয়তো সভ্য সমাজের মুখোশ পরা ব্যক্তি বা গ্রুপ কোন সক্ষম কিলার কে দিয়ে হত্যাকান্ড ঘটানো। নানা এই হত্যার চিত্রগুলো দেখে বুক কেঁপে উঠে,আত্মার ভিত নড়ে উঠে। নেমে আসে দু’চোখ জুড়ে ভয়ংকর কিছু। ভযে় শিউরে উঠে বুক। থর থর করে কাঁপতে থাকে হৃদপিন্ডসহ কলিজা। দূর্বল হযে় আসে শরীর-মন। নিস্তেজ হতে শুরু করে সমস্ত মনোশক্তি। দূর্বল চিত্তে ভযে়র আঁচর। শঙ্কিত চোখ-মুখ। ফ্যাকাশে মুখায়ব। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে বসবাস। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রারম্ভিক যাত্রার অনেক পূর্বেই দেখতে হচ্ছে এই ভয়াল রুপ; কোথায় আশ্রয় নিবে মানুষ! তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধে কি হতে পারে তা নিযে় মানুষ অবশ্য ততোটা চিন্তিত নয়। চিন্তিত তার ঘরের শত্রুটাকে নিয়ে। জাতি শত্রুটাকে নিয়ে। জাতি জাতির কাছে সাহায্যের আশা করতে পারে। জীবনের নিরাপত্তার জন্য কাছে থাকার আহবান করতে পারে। কিন্তু সেই জাতি বন্ধু বা বান্ধবটি যদি ঘাতক হয়!
পৃথিবী কি নারকীয় স্থান নিতে যাচ্ছে? শান্তির বসবাসযোগ্য পৃথিবীটাকে কেন মানুষ এতটা কুলুষিত,হত্যার স্থান রুপে গড়ে তুলছে। তাহলে কি মানুষ ক্রমাগত হত্যার শিকার হয়েই অস্বাভাবিক অবস্থায় মারা পড়বে! কেউ কেউ বলছেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত পশ্চিমা বিশ্ব। কোন সভ্য সমাজই নারকীয় হত্যাকান্ড দেখতে চায় না। যুদ্ধ-সংঘাতকে ঘৃণা করে। জাতি জাতির কোন্দল মিটমাট করতে প্রহসন গুনে। জোর প্রচেষ্টা চালায় নিরসনের। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় হত্যাকান্ড মানুষ বীভৎস দৃষ্টিতে দেখেছে,প্রাণের ভয়ে এক দেশ থেকে অন্যদেশে নির্বাসন নিয়েছে। ‘১৯১৪ সালে ২৮ জুন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বরে শেষ হয়। ৪ বছর ৩ মাস ১৪ দিন এই যুদ্ধে মানুষ মারা গিয়েছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ ১৬ হাজার। যার মধ্যে জার্মানীতে সর্বাধিক সংখ্যক ১৮ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছিল। এই যুদ্ধে জড়িয়ে পরেছিল অষ্ট্রেলিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, ইরাক, ইটালি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানী, গ্রীস, ভারত, জাপান, মন্টেনেগ্রো, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল, রোডেশিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, দক্ষিন আফ্রিকাসহ ২৫টি দেশ’ । এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও মানুষ শংকিত চিত্তে বিধ্বস্ত দৃষ্টিতে দেখেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ২০ বছর ৯ মাস ২১ দিন পরে ১৯৩৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। সমাপ্তি ঘটে ৬ বছর ১ দিন পর ১৯৪৫ সালে ২রা সেপ্টেম্বরে। এই যুদ্ধে মানুষ মারা গিয়েছিল প্রায় ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার’। (সুত্র:ইন্টারনেট)।
কোন হত্যাকান্ডই পৃথিবীতে অশান্তি ছাড়া আর কিছু দিতে পারে না,যার প্রমাণ সভ্যতার জ্বলন্ত বিধ্বস্ত ইতিহাস। এই প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যতলোক মারা পড়েছে অর্থাৎ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরও কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা বিভীষিকার চিন্তার বিষয়।
চলবে
[নির্বাচিত কলাম] জুন ১৩, ২০১২
বিষয়: রাজনীতি
১২১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন