বাবা-মায়ের মানসিক প্রস্তুতি

লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ০৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৯:১৬:৩৮ সকাল

সন্তান আগমনের সাথে সাথে পরিবারের ওপর একটা চাপের সৃষ্টি হয়। একথা সত্যি যে পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব একটি অসামান্য পাওয়া, কিন্তু এর অভিজ্ঞতা সবসময় রোমাঞ্চকর হয় না। বাবা-মা হবার সাথে সাথে দম্পতিকে মেনে নিতে হবে যে, জীবনটা আর আগের মত থাকবে না; সেই সাথে সামনে যেসব সমস্যা আসবে তার জন্যও নিজেদেরকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে। বাবা-মাকে সন্তানদের স্বার্থে নিজেদের অনেক স্বার্থকেই বিসর্জন দিতে হবে, এমনকি তাদের পিতা -মাতা হবার যোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। বাবা-মা’দের জন্য, বিশেষ করে মা'দের জন্য শিশুর অবিরাম চাহিদা পূরণের ধকল ও ক্লান্তিকে মেনে নেয়া সহজ ব্যাপার হবে না। অপরদিকে বাবারা ঘরে ফিরে হয়তো দেখবেননা স্ত্রীর আনন্দময় মুখ, হাসিখুশী শিশু অথবা গুছালো পরিপাটি ঘরদোর। অনেক বাবাই নিজের স্ত্রীকে অধিক কাজের চাপে বিধ্বস্ত দেখবেন এবং পূর্বের মতো স্ত্রীকে তাদের প্রতি অতটা যত্নশীল পাবেননা।

মাতৃত্বের সাথে যুক্ত থাকে শারীরিক, আবেগ-আনুভূতিক ও মানসিক ক্লান্তি। অল্প ঘুম এবং অবিরত শিশুর যত্ন অনেক মজবুত সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বৈবাহিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

সন্তানের যত্নের পাশাপাশি দম্পতি যখন পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খায় তখন অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। বিবাহিত জীবনের উপর এসব কিছুর প্রতিকূল প্রভাব পড়তে পারে। ফুল টাইম চাকরী করেন এমন বাবা-মায়েদের জন্য এসময়টা অনেক বেশী কঠিন হয়ে পড়ে। আবার কিছু বাবা-মা সন্তানদের চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে (Child care centre) না রেখে পালাক্রমে ভিন্ন ভিন্ন শিফটে চাকরী করেন যাতে সবসময় কোনো একজন শিশুর সঙ্গে বাসায় থাকতে পারেন। যদিও এটা শিশুর জন্য ভালো, কিন্তু স্বামী স্ত্রীর জন্য সবসময় অনুকুল হয় না। এক্ষেত্রে বাবা মার মধ্যে দ্রুত সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। কার ভাগে ঘর পরিস্কার করা বা বাসন কোসন ধোয়া পড়েছে এ ধরনের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিবাদ এবং অসম্মানজনক মানহানিকর প্রতিদ্বন্দিতা দেখা দিতে পারে। অপরদিকে যেসব বাবা মার মধ্যে সন্তানের সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটাতে না পারার অপরাধবোধ কাজ করে - তারা ‘দাম্পত্য সময়’টা কমিয়ে ‘সন্তানের জন্য সময়’কে বর্ধিত করতে পারেন। আবার কিছু মা-বাবা সেটা পুষিয়ে নিতে চান সন্তানদের উপহার, টাকা এবং অস্বাস্থ্যকর ফাস্ট ফুড দিয়ে যা পরিনামে বাচ্চাদের নষ্ট করে, আর বাবা-মা আরো বেশী সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে পরেন।

এ ধরনের চাপ বৈবাহিক সম্পর্ককেই প্রতিকূলতার মুখে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন দম্পতি তাদের সীমিত সময় আন্তরিক আলাপের চেয়ে পরস্পরের প্রতি অনুযোগ-অভিযোগ করেই অতিবাহিত করে। বাবা-মার মধ্যকার বৈবাহিক দ্বন্দ সন্তানের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। যথেষ্ট পরিমান পারস্পারিক যোগাযোগের অভাবে অনেক বাবা-মায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং তা তাদের অবিরত দ্বন্দ্বের দিকে ঠেলে দেয়।

নিচে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো- বাবা-মাকে তাদের প্যারেন্টহুড তথা অভিভাবকত্বে উত্তরণের ক্ষেত্রে সাহায্য করবার জন্য: আশা করা যায় স্বামী-স্ত্রী থেকে বাবা-মা হওয়ার পথে পরিবারের গতিময় পরিবর্তনে এই পরামর্শগুলো অনেকটা চাপ কমাবে।

১. দৈনিক কিংবা সপ্তাহে স্বামী-স্ত্রী একসাথে নিজস্ব সময় কাটানোর জন্য কিছু সময় বরাদ্দ করুন। একসাথে বেড়াতে যান, কিছু কাজ একসাথে করুন, কিংবা রাতের খাবারটা একসাথে খান। দিনের বেলা প্রয়োজনীয় ফোনালাপ সেড়ে ফেলে অথবা সকালে কিছুটা আগে জেগে কিছু সময় সঞ্চয় করুন- যাতে পরষ্পরের দিকে দৃষ্টি দেয়ার কিছুটা সময় বের করতে পারেন। শিশুর দেখাশুনার দায়িত্বটা অন্য কোনো বিশ্বস্ত বাবা-মার সঙ্গে নেয়াটাও একটা ভালো ব্যবস্থা।(যেমন ধরুন সেই দম্পতির সাপ্তাহিক বেড়াতে যাবার সময়টায় আপনারা তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করলেন আবার তারা আপনাদের সময়ে আপনাদের সন্তানদের ভার নিলেন)।

২. জীবনসঙ্গীর সাথে প্রত্যাশাগুলো ভাগাভাগি করে নিন। প্যারেন্ট হিসাবে নতুন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যা আপনি লক্ষ্য করছেন সেইসব উদ্বেগের বিষয় তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। আপনার স্বাস্থ্য, পারষ্পারিক সম্পর্ক এবং চাকুরীর উপর প্যারেন্টহুডের প্রভাব নিয়ে কথা বলুন।

৩. জীবনসঙ্গীর সাথে একত্রে খাদ্য গ্রহণ, ইবাদত, যৌন মিলন এবং শরীর চর্চায় সময় দিন। যদিও শিশুর চাহিদা আপনার সময়ের প্রায় সবটুকু নিয়ে নেয় তারপরও জীবনসঙ্গীর জন্য সময় বের করে নিন। এমনকি ময়লা কাপড় অথবা অপরিষ্কার বাসনকোসন ধোয়ার জন্য পড়ে থাকলে তেমন ক্ষতি নেই ।

৪. আপনার মতবিরোধ প্রকাশ করুন; দ্বন্ধকে গুরুত্বহীন ভেবে এড়িয়ে যাবেন না। কোনো ব্যাপারে বিবাদকে সম্পর্কের মধ্যকার কোন ফাটলের ইঙ্গিত হিসাবে নিন এবং দুজনে মিলে পরামর্শ (counselling) পাবার চেষ্টা করুন।

৫. বিশ্বস্ত বন্ধু বা অভিজ্ঞ সহকর্মীর সাথে কথা বলুন যার- বাবা/মা হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। এটা আপনার বিষন্নতা দূর করতে সাহায্য করবে। কথা বলার জন্য একই লিঙ্গের ব্যক্তি নির্বাচন করুন এবং কোনো অবস্থাতেই আপনার স্বামী বা স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত ও গোপনীয় কোনো বিষয় প্রকাশ করবেন না।

(অনুবাদ: Parent-child relations)

বিষয়: বিবিধ

১৪৮২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

356451
০৮ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:৪৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার শিক্ষনিয় পোস্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমাদেরদেশের অধিকাংশ মানুষই এই জন্য প্রস্তত থাকেন না। বিশেষ করে মেয়েরা এই পরিবর্তন কে অ্যাডজাষ্ট করতে চাননা। সন্তান এর জন্য সবসময় দিতে গিয়ে অনেকে নিজের জিবন থেকে অনেক কিছু বাদ দেন। কিন্তু এতে তাদের মানসিক যে সমস্যা সেটা সন্তান এর অনেক বেশি ক্ষতি করে।
356452
০৮ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৩০
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন :
কোনো অবস্থাতেই আপনার স্বামী বা স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত ও গোপনীয় কোনো বিষয় প্রকাশ করবেন না।


লেখাটা যেহেতু অনুবাদ করেছেন, তাই বলব, মূল লেখকের এই পরামর্শটা দারুণ লেগেছে। এই বিষয়ে অধিকাংশ মানুষেরই হুশ জ্ঞান থাকেনা, তাই পরামর্শ পেয়ে উপকারের বদলে ক্ষতিই বয়ে আনে।

অনুবাদটা অত্যন্ত চমৎকার হয়েছে। বিদেশি লেখকদের এইরকম আরও কিছু অনুবাদ আশা করছি।
356484
০৮ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৪১
শেখের পোলা লিখেছেন : সুন্দর পরামর্শ৷ সংসার যৌথ হলে কিছুটা সহজ হয়৷ লেখাটি বাংলা দেশের প্রেক্ষপটে নয়৷ বিদেশে এ পরামর্শ অবশ্যই সুন্দর৷ বাঙ্গালীদের মাঝেও বিদেশী ঢং কিছু এসেছে আবার অনেক বাবা মা উভয়কেই বাধ্য হয়ে বাইরে কাজ করতে যেতে হয়৷সমস্যা সেখানেও দেখাদেয়৷ ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File