দ্বৈত

লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:৫৮:৩৬ সকাল

নারীরা বসে নেই; এগিয়ে যাচ্ছে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গনে। মুসলিম নারীরা সচেতন হয়ে উঠছে তাদের হক বা অধিকার সম্পর্কে যা আল্লাহ স্বয়ং তাদের দিয়েছেন। তারা বুঝতে শিখছে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল (স: ) প্রবর্তিত এ হক কেড়ে নেবার অধিকার কারও নেই; নারীরাও আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত, ঠিক যেমনি পুরুষেরা।

আমি 'শিখেছে', 'উঠেছে'- এ ক্রিয়াগুলো ব্যবহার না করে 'শিখছে', 'উঠছে' ক্রিয়াগুলো ব্যবহার করেছি। কারণ আমার মতে এখনো এ প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি কোনো একস্থানে আমরা অবস্থান করছি। পূর্ণতা অর্জন এখনও বেশ দূর। মুসলিম নারী জাগরণের, নারীর অবস্থান পরিবর্তনের এ জোয়ার মুসলিম পুরুষদের গায়েও লেগেছে। নারীদের প্রতি তাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গীর বেশ একটা পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা এ অবস্থাকে বলতে পারি একটা Transition Period। এ অবস্থানে অধিকাংশ পুরুষের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় একটি দ্বৈত চরিত্র। একদিকে নারী জাগরণের এ সময় তারা তাদের সঙ্গীনীকে কল্পনা করেন বিদুষী, শিক্ষিত, কর্মচঞ্চল, ও সচেতন এক নারী রূপে। অন্যদিকে তাদের মনের কোঠরে বাস করে তাদের শৈশবে দেখে আসা সেসব নারী চরিত্র যারা স্বামী সেবাকেই জীবনের একমাত্র কাজ ও লক্ষ্য মনে করতেন; স্বামী বা স্বামীপক্ষের সব অন্যায়, অত্যাচার, গঞ্জনা মুখবুজে সয়ে যেতেন, মুখে 'রা' টি করতেন না। তাদের মনে রয়ে গেছে সেই 'বুক ফাটেতো মুখ ফোটেনা' - গোছের নিরীহ বধূটি। অর্থাৎ তারা এর একাংশ আর ওর অপরাংশ মিলিয়ে অদ্ভুত এক কল্পিত নারী চরিত্র তৈরী করেন যা স্বভাবগতভাবেই পরস্পর বিপরীত। যে নারী সচেতন, যে নারী বহির্জগতের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস রাখেন, সে নারী নিজ স্বামীর অবহেলা-অসম্মানকে চিহ্নিত করতে অসমর্থ হবেন, বা বুঝতে পেরেও সমাজের রক্তচক্ষুর ভয়ে গুটিশুটি মেরে যাবেন এমনটা আশা করা যুক্তিহীন।

অনেককে দেখেছি বিয়ে করার সময় বুদ্ধিমতী, চৌকষ, যোগ্য মেয়ে খোঁজেন। কিন্তু বিয়ের পরে সেই বুদ্ধিমতী মেয়েটি যখন তাকে কোনো ব্যাপারে পরামর্শ দেয় তখন অন্যদের সম্মুখে সেই পরামর্শকে মেনে নেয়াকে কাপুরুষতা মনে করেন। ভাবেন -

স্ত্রীর কথা শুনলে অন্যরা কি মনে করবে ?

সবাই বলবে আমি স্ত্রীর কোথায় উঠি-বসি।

ওরা বলবে আমি একটা স্ত্রৈণ।

অথচ এটা তো খুব স্বাভাবিক যে, যেকোনো শিক্ষিত বুদ্ধিমতী মেয়েই আশা করবে যে, তার স্বামী তার সঙ্গে পরামর্শ করবে, তার মতামতের গুরুত্ব দেবে। একদিকে বুদ্ধিমতী স্ত্রী চাওয়া অন্যদিকে স্ত্রীর মতামতকে (তা যতটা মানসম্মতই হোকনা কেন) মেনে নিলে মান যাবে এমনটা ভাবা পরস্পর বিরোধী মানসকতারই লক্ষণ।

আমার ধারণা এই Transition Period এ অনেক পুরুষই আসলে কি চাইছেন এ ব্যাপারে নিজেরাই যথেষ্ট স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না বা একধরনের দোটানায় ভোগেন। একদিকে তারা আমাদের দেশের নারীদের অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইছেন, তাদেরকে সচেতন নারী রূপে দেখতে চাইছেন, আবার একই সাথে বাস্তব জীবনে নিজের ঘরের নারীটিকে নিজ অধিকার সম্পর্কে নীরব, নিশ্চুপ, বোধহীন দেখতে ভালবাসছেন। এ দ্বৈততার ফল খুব একটা সুখকর হয়না।

নারী স্বভাবতই ধৈর্যশীল। তবে ধৈর্য্য- সহিষ্ণুতা আর উপর্যুপরী অন্যায়-অবহেলা- অসম্মান চুপচাপ মেনে নেয়া এক কথা নয়। নারীর যেমন স্বামীর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী, তেমনি স্ত্রীর সন্তুষ্টির প্রতিও স্বামীর লক্ষ্য রাখা জরুরী। স্ত্রীর অধিকার সচেতনতাকে 'বিদ্রোহ' হিসাবে দেখার সুযোগ নেই। 'স্ত্রীর আনুগত্য নয়' নয় , বরং পরস্পরের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতিই আমাদের পারিবারিক জীবনকে সফল করে তুলতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

১৪৫২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

302422
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ১২:৫২
হতভাগা লিখেছেন : একটা নির্দিষ্ট সীমা পার হয়ে গেলে স্বামী তার স্ত্রীকে প্রহার করতে পারবে ও একজন পুরুষ সামর্থ্য থাকলে ৪ টি বিয়ে করতে পারে :

পবিত্র ক্বুরআনে এ গুলো আল্লাহই বলে দিয়েছেন ।

এর বিপরীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ২য় বিয়ের আগে স্ত্রীর অনুমতি নেওয়ার যে মনুষ্য বিধান আনা হয়েছে -----


এ ব্যাপারে নারীরা কি বুঝতে শিখেছে ?

নারীদের কিন্তু পুরুষের অনুগত থাকার কথাই বলা আছে যেহেতু পুরুষরা তাদের জন্য ব্যয় করে।

তাই পুরুষের উপর নারীর কথা বলা তথা নারীকে মানা তার অনুগত হওয়া কি শরিয়তের সাথে সামন্জস্য রাখে ?

আপনার বস আপনাকে খুব পছন্দ করে তার মানে এই না যে তার পজিশনের কোন ডিসিশনে আপনি নাক গলাবেন ।

শিক্ষিত মেয়েই তো ছেলেরা চাইবে তার সংসারের জন্য , তার সন্তানের জন্য । তার সন্তানকে সঠিক ভাবে পরিচালিত করার জন্যই তো সে এসেছে তার সম্পদের হেফাজত করতে তার অবর্তমানে আল্লাহর হেফাজতের মাধ্যমে।

এখানে স্ত্রী যদি বিয়ের পর তার জ্ঞানের বহর অন্য আরেক জায়গায় খাটায় তা শরিয়তের তীব্র বিরোধী ।

কোন প্রতিষ্ঠান কি তাকে তাদের সময়ের পাশাপাশি আরেকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে এলাউ করবে ?

স্বামীরা অনেক উদার মনের বলেই এই সব তথা কথিত শিক্ষিত নারীদের তাদের পড়াশুনার ফল কাজে লাগানোর বাহানা হিসেবে চাকরি বা ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দেয় তার সংসারের ক্ষতি করে হলেও- যেটা কিন্তু সে না দিলেও পারে।

কোন স্ত্রী কি তার স্বামীকে এলাউ করবে অন্য আরেকটি মেয়ের ভরন পোষন করতে তার বর্তমানে তাকে না দিয়ে ?

রত্ন গর্ভা মায়েদের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন যে উনারা তাদের স্বামীর বাধ্য ছিলেন এবং ছিলেন স্বামীর সংসারের প্রতি ডেডিকেটেড ।

শিক্ষিত ও ক্যারিয়ার মুখী স্বাধীন চেতা মেয়েরা সংসারে কোন ভাল কিছু আনতে পারে না তাদের পূর্বসূরীদের মত এবং এসব পরিবারের সন্তানেরা বখে যায় । কারণ বাবাকে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ভরন পোষনের জন্য বাইরে কাজে থাকতে হয় । তারা তাদের মাকেও কাছে পায় না ।

ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা চলে আসে ।

নারী যখনই ঘরের বাইরে বের হয়েছে প্রয়োজনের বাইরে তখন থেকে সামাজিক অনাচারের সৃষ্টি হয়েছে ।

''বন্যেরা বনে সুন্দর , শিশুরা মায়ের কোলে

পুরুষেরা ঘরের বাইরে , নারীরা ঘরের কোনে''
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০১:১৪
244607
প্রশান্ত আত্মা লিখেছেন : হতভাগার সাথে শতভাগ একমত। Applause
302428
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০১:০৮
কানিজ ফাতিমা লিখেছেন : Brother, I completely disagree with you.

একজন মুসলিম নারী শুধু আল্লাহ এবং রাসুলের প্রতি অনুগত থাকতে বাধ্য। আপনি এখানে যা বলেছেন তা সংস্কৃতি , ইসলাম নয়।

আপনি আপনার সনাস্কৃতিক বিশ্বাস কে ধারণ করার অধিকার অবশ্যই রাখেন - ঠিক যেমনি আমি রাখি আমার বিশ্বাসকে ধারণ করার অধিকার।
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৮
244613
হতভাগা লিখেছেন : সূরা নিসা - আয়াত নং ৩৪
302429
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০১:১৩
প্রশান্ত আত্মা লিখেছেন : বেশী বুঝে বলেই এসব নারীদের সংসারটা টিকেনা!অন্যদিকে গ্রামবাংলার সংসারগুলীতে কত উচ্ছ্বাস,আন্তরিকতা আর ভালবাসার বন্ধন।

আল্লাহ যাকে যে কাজের জন্য পাঠিয়েছেন সে কাজ করাটাই শ্রেয়।ছাগল দিয়ে হালচাষ হলে তো কেউ আর গরু কিনত না!যেভাবেই বলেন বাইরের কাজের জন্য মেয়েরা পারফেক্ট না!
302433
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:১৯
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
302439
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:২২
নারী লিখেছেন : অনেক ভালো লাগল লিখাটি পড়ে। কিন্তু আপু যাদের উদ্দ্যেশে লিখলেন তারা বুঝবেনা। যতই যুক্তি দেন। একটা কথা আছে না? কুকুরের লেজ মেরে পিটেও সোজা হয়না।

নারীদের লেখা পড়া,চাকরি বাকরি সবই জায়েজ যদি পর্দা করে চলে। নারীদেরকে মোটেও ঘরে বসে থাকতে বলেনি।

মুখে অধিংকাশ পুরুষই বলেন নারীদের সম্মান করেন।শিক্ষিত নারী প্রয়োজন কিন্তু তাদের ব্যবহারই বলে দেয় কতটা সম্মান করে। তাদের ধরনা নারীরা ক্রীতদাস।তারা ক্রীতদাসের মতই থাকবে যত শিক্ষিতই হোক।

যুগ যুগ ধরে নারী সহিংসতা চলেছে।আদিম বলেন আর আধুনিক।এটা চলতেই থাকবে পৃথিবী ধ্বংশ হওয়ার আগ পর্যন্ত।
302440
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:২৫
sarkar লিখেছেন : নারীরা বসে নেই।এগিয়ে যাচ্ছে।কিন্তূ কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? বিগত বছরের বিয়ে বিচ্ছেদের পরিসংখান দেখলে মনেহয় এরা শুধু এই একটা জায়গায় শুধু মাত্র এগিয়ে যাচ্ছে।কারণ এখন ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা শরিয়তে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়েজ কাজটি করছে।তাতে বারছে সামাজিক বিশৃংখলা।শিহ্মায় এগিয়ে যাচ্ছে এটা ভাল দিক বটে।তবে যে শিহ্মা সামাজিক মূল্যবোধ থেকে দূরে ঠেলে দেয় সেটাকে আপনি এগিয়ে যাচ্ছে বলবেন? নাকি পিছিয়ে?তবে এটা ঠিক সবাই এমন না।
302466
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চুপ থাকাই ভাল!!!



তবে উঠেছে বা উঠছে কোনটাই ঠিক নয়। কারন এগুলি চলমান প্রক্রিয়া। কোথাও এর সমাপ্তি নাই। আমরা এখন পশ্চিমা ষ্টাইলে নারিদের সামরিক পাইলট কিংবা জাহাজ এর অফিসার পদে নিয়োজিত হওয়া কে অনেক প্রচার করছি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এই গুলি এখন পশ্চিমা দেশগুলিতেই নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। মার্কিন সামরিক বাহিনি বর্তমানে কমব্যাট পাইলট থেকে নারিদের সরিয়ে দিচ্ছে। আর সমগ্র পম্চিমা দুনিয়া জাহাজ এর অফিসার পদে নিয়োজিত নারির সংখ্যা ১% ও নয়।
302505
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:৫৬
কানিজ ফাতিমা লিখেছেন : আমাদের নবীর স্ত্রী খাদিজা রা মাল্টিন্যাশনাল বিজনিসের চিফ ছিলেন। তিনি রাসুলকে স ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ দেন। " বন্যেরা বনে সুন্দর "- রাসুল এমন উধাহরণ দেন নাই। এমন মানসিকতা কালচারাল। ইসলামিক নয়।

গ্রাম বাংলার নারীরা নির্যাতিত ও অসহায় ছিল বলে তাদের সংসার টিকেছে - সুখী ছিল বলে নয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File