হারিয়ে ফেলা পরিচয়
লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:৩৮:২৪ রাত
প্রকৃতিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই, ঘন্টা কেন, দিনের পর দিন একই দৃশ্যে তাকিয়ে থেকেও চোখ ফেরেনা আমার। কেউ হয়ত ভাববে, কি দেখে এত চেয়ে চেয়ে ? নিরত দু'চোখ মেলে পথের ধারের বনফুল দেখি,ছোট্ট ডোবায় হাসের নিস্তব্দ ভেসে যাওয়া দেখি, আকাশের মেঘ দেখি- সাদা মেঘ, ধুসর মেঘ, ঘন মেঘ, তুলির ছোপ মেঘ আর চপলা মেঘ - ক্লান্তিরা কখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায় আমার অক্লান্ত চেয়ে থাকা দেখে। সাদা কয়েকটা মেঘের টুকরায় এত দেখার কি আছে ? আমার আছে। একটা কালো পাখির লেজ দোলানো, গাছের ডালে মৃদু-মন্দ বাতাসে পলকা বরফের ঝুর ঝুর ঝরে পরা, শীতের বাতাসে শুকনো পাতার ফুরুত ফুরুত ওড়া, পথিকের হেটে যাওয়া, হাত নাড়ানো, স্কুলের সামনের গাছটার সোজা উপরের দিকে উঠতে উঠতে হতাঠ বেঁকে যাওয়া, গাড়ীর দরজা খুলে একজন মহিলার বের হয়ে আসা - এসব সাধারণ দৃশ্যেও আমার বিস্তর আগ্রহ। সিনেমা দেখে, গল্প করে, আড্ডা দিয়ে আমার বিনোদনের দরকার হয় না, চারপাশই আমার বিনোদনের উত্স। প্রকৃতির পানে নীরব চাহনীতেই লুকিয়ে থাকে আমার মনের খোরাক।
স্টাফ রুমের পুরো দেয়াল জুড়ে কাচের জানালাটা আমার খুব প্রিয়। অতি ব্যস্ত সিডিউলেও সুযোগ করে জানলার ধরে বসে একটু জিরিয়ে নেই। কলিগরা সবাই যখন গল্পে বা পেশাগত আলাপচারিতায় ব্যস্ত, আমি তখন হারিয়ে যাই আমার গোপন দৃষ্টির ভুবনে, পেছনের কিছুই টানেনা আর - জেগে থাকে শুধু সামনের দিগন্তে দু'চোখের তাপসী ধ্যান। দু'টো বাচ্চা নিয়ে এক মা বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে, মাঝারী ঠান্ডা, তাই ওদের কারো পায়েই ভারী বুট নেই, হালকা জুতো। ওরা হেটে আসছে আমার দিকে। মানুষের হাটাও যে কত বিচিত্র! - উলম্ব হাটা, ঝুলন্ত হাটা , ক্লান্ত হাটা, আত্ববিশ্বাসী হাটা, বিষন্ন হাটা , কৃত্রিম হাটা- আরো কত কী ! মহিলাটি অত্ববিশাসী হাটা হাটছে, বাচ্চা দু'টোকে একটু আগলে নিয়ে। তার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু এত দূর থেকেও তার বাচ্চা আগলে দৃঢ় হাটার ভঙ্গীতে তাকে অপূর্ব লাগছে। ওই যে পেছনের পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে এলেন আরেক মহিলা। বয়স পূর্বের মহিলার মতই হবে বোধ করি, কিন্তু হাটছেন কিশোরী ছন্দে, জ্যাকেটের জীপার এর মধ্যখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা সরু সাদা রেখা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে দু' কানে মিশেছে - আশংকা করি সে গাড়ী চালানোর সময়ও এ দু'টোকে কান থেকে নামাননি। অদ্ভুত ভাবে হাটছেন মহিলা। বরফ কিছুটা গলে গেলেও এখানে সেখানে স্তুপ স্নো এখনো রয়ে গেছে, আর তার নীচে লুকিয়ে থাকা ছোপ ছোপ বরফ জমে আছে কোথাও কোথাও। এর মাঝ দিয়ে মহিলাটা একে বেকে হাটছে, নতুন হাটতে শেখা বাচ্চদের মত - পার্থক্য শধু এইযে তার পুরোটাই কৃত্তিম, বাচ্চদের অকৃত্তিম টলমলে হাটা নয়। দোতলার জানালায় বসে দেখলাম পার্কিং লটের মাঝা মাঝি থেকে স্কুলের গেটে ঢোকা পর্যন্ত এতগুলো পদক্ষেপের একটিতেও মহিলার দৃঢ়তা ছিলনা একফোটা। ভাবছিলাম এই বয়সের এক মহিলা কেন বরফের পিচ্ছিল পথে হাটার জন্য বেছে নিয়েছেন সরু হিলের বুট, কেন তিনি নিজেই নিজের চলাকে করেছেন বিপজ্জনক, কেন তিনি তার নিজের কোমরে, মেরুদন্ডে সৃষ্টি করছেন অতিরিক্ত ক্ষতিকর চাপ? এবং সর্বপরি যে "সৌন্দর্য" বা "স্মার্ট নেস" এর জন্য তিনি এই কষ্ট ও বিপদকে মেনে নিয়েছেন সেটার লেশ মাত্রও তো দেখতে পাচ্ছিনা আমি তার ভীরু, আত্ববিশ্বাসহীন, অনেকটা ভাড়ীয় হাটায়। তারপরও কেনো তিনি এটাকেই মনে করছেন "ফ্যাশন"?
ফেসবুকে ঢাকার উঠতি বয়সের কিছু তরুনীদের ছবি দেখি টাইট জিন্সের প্যান্টে। এসব প্যান্ট তৈরী করা হয় শীতের দেশের জন্য। বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় যে তাদের অনেক কষ্টে এই "ফ্যাশন" কে ধারণ করতে হচ্ছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। কষ্ট হোক তবু "স্মার্ট" তো হতে হবে।
আচ্ছা, স্মার্টনেসের সংগাটা কি? বরফের ওপর বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উচু হিল? গরমে মোটা টাইট প্যান্ট? নাকি আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক পোশাক নির্ধারণের মত মগজের ক্ষমতা? কে বেশী স্মার্ট, যে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে বরফের মধ্যেও হিল পরে ভাড়ীয় হাটা হাটে নাকি যে আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নিজের মাথার ব্যাবহার করে সঠিক জুতা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে? যে হকার্সে গিয়ে টাইট জিন্স কিনে টেনে টুনে শরীরে ঢুকায়, নাকি যে জানে যে গরম আবহাওয়ায় ঢিলা ঢালা পোষাক আর হালকা মেকআপ বেশী উপযোগী? কে বেশী স্মার্ট, যে নিজের মাথার ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেয়, নাকি যে নিজের চোখের মাথা খেয়ে মিডিয়ায় দেখানো অখ্যাদ্য কুখাদ্যকে বিশেষ "সুখাদ্য" হিসাবে চোখ বুজে গেলে?
সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও আমরা কিভাবে নিজের মস্তিস্কের হালটা নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারি মিডিয়ার ওপরে? আমরা যখন নিজের ভাবনা নিজে নাভেবে মিডিয়াকে ভাবিয়ে নিতে দেই তখনই মিডিয়ার প্রচারে মিথ্যা আর অসুন্দর গুলো আমাদের মস্তিস্ককোষে বাসা বাধে সুন্দর আর সত্য রূপে। ক্রমে ক্রমে আমরা মানুষেরা হারিয়ে ফেলি আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ক্ষয়ে যায় আমাদের চিন্তাশক্তি- চরম অসুন্দর দৃশ্যগুলো রুপান্তরিত হর সুন্দরতমে; দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে আকর্ষনীয়, মিথ্যা রুপান্তরিত হয় একমাত্র সত্যে, চক্রান্ত মূর্ত হয় চেতনায়। অবশেষে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে যায় বুদ্ধিহীন মিডিয়াধীন এক পরজীবীতে, এভাবেই হারিয়ে যায় তার স্বাধীনতা আর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৭ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু বাংলাদেশের গ্রিষ্মকালের দুপুরে আল্লাহ এবং তার রসুলের প্রেস্কাইব করা মোটা কালো কাপড়ে আবৃত পোশাকে কি স্মার্টনেস লুকিয়ে আছে?
আল-কোরআন-
সূরা বনী ইসরাঈল (মক্কায় অবতীর্ণ)
أَقِمِ الصَّلاَةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا
(১৭:৭৮) অর্থ- নামায কায়েম করুন সূর্য ঢলে পড়ার সময় (জহুর ও আছরের নামাজ) থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত (মাগরিব ও ইশার নামাজ) এবং প্রত্যুষের কোরআন পাঠ (ফজরের নামাজ); প্রকৃত পক্ষে প্রত্যুষের কোরআন পাঠ তো সাক্ষী-স্বরূপ।
Tafsir Ibn Kathir - Quran Tafsir
(Perform the Salat from midday.) Hushaym narrated from Mughirah from Ash-Sha`bi from Ibn `Abbas: "Midday means when the sun is at its zenith.'' This was also reported by Nafi` from Ibn `Umar, and by Malik in his Tafsir from Az-Zuhri from Ibn `Umar. This was the opinion of Abu Barzah Al-Aslami and Mujahid, and of Al-Hasan, Ad-Dahhak, Abu Ja`far Al-Baqir and Qatadah. It is also understood to generally ﴾ refer to the times of the five prayers. ﴿ Allah said;
(from midday till the darkness of the night,) meaning darkness, or it was said, sunset. This was understood to mean Zuhr `Asr, Maghrib and `Isha'.
(and recite the Qur'an in the early dawn.) meaning Salat Al-Fajr.
_____>
এই কথা গুলো বিশ্বাস করতে হলে আপনাকে মুসলিম হতে হবে। কালিমা পড়ে মুসলিম হোয়ে যান ভাইয়া।
O children of Adam, We have bestowed upon you clothing to conceal your private parts and as adornment. But the clothing of righteousness - that is best. That is from the signs of Allah that perhaps they will remember.- আল আরাফ ২৬
And tell the believing women to reduce [some] of their vision and guard their private parts and not expose their adornment except that which [necessarily] appears thereof and to wrap [a portion of] their headcovers over their chests and not expose their adornment except to their husbands,......নুর ৩১
ভাই, কোথাও তো "কালো মোটা কাপড়"- শব্দটা পেলাম না।
এখানে সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে, এমন কি মেয়েদের প্রকৃতিগত কোমল কন্ঠস্বরে কথা না বলার নির্দ্দেশ দেয়া আছে(সূরা আহজাব-৩২)। তো? নিশ্চয় ঝলমলে জরি বা ফিনফিনে শিফন দিয়ে মাথা, Boobs ঢাকার কথা বালা হয় নি। ব্লগ আসলে প্রানবন্ত আলোচনার মাধ্যম। আলোচনার মধ্য দিয়েই আমরা শিখতে চাই। কিন্তু আপনি আলোচনা করতে যেয়ে ধর্মের অর্ধেক বলবেন, বাকি অর্ধেক লুকাবেন সেটা ধার্মিকের কাজ না। শুধু কোরাণের আয়াত বল্লে হবে না। সেই সাথে আয়াতের তাফরির এবং প্রসঙ্গিক হাদীস জানতে হবে। তবেই না পরিপূর্ণ ইসলাম(তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩/৮২৪, তাফসীরে তাবারী, আদ্দুররুল মানসুর ৫/২২১, আহকামুল কোরআন- জাসসাস: ৩/৩৭১; তাফসীরে কাশশাফ ৩/২৭৪; আহকামুল কোরআন- ইবনুল আরাবী ৩/১৫৮৫-১৫৮৭; যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর ৬/৪২২; আদ্দুররুল মানসুর ৫/২২১; আনওয়ারুত তানযীল ওয়া আসরারুত তাবীল ২/২৮০; তাফসীওে কুরতুবূ ১৪/২৪৩-২৪৪। এবং সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম হাদীস ২৭৭০; জামে তিরমিযী হাদীস ৩১৭৯।)
বাইদ্যা ওয়ে : প্রপিকের ছবিটা কি আপনার? মাথা মন্ডলে আলুথালু তেনা প্যাচনো মনে হছ্ছে, গরম লাগেনা?
আলোচনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তবে এটাও সত্য মানুষকে যেভাবে ইউজটু করা যায় সেভাবেই সে গড়ে উঠে হোক তা ভাল বা মন্দ। আপনাকে ধন্যবাদ....
মায়াবন হরিনীর "প্রপিকের ছবিটা কি আপনার? মাথা মন্ডলে আলুথালু তেনা প্যাচনো মনে হছ্ছে, গরম লাগেনা? "- এই মন্তব্যে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন