বহুবিবাহ
লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ০৪ আগস্ট, ২০১৪, ১১:৩৭:৫৩ সকাল
ইসলামে বহুবিবাহ প্রসঙ্গটি অনেকের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেউ কেউ এর যথেচ্ছ ব্যবহার করেন। আবার অনেকে এর যথেচ্ছ ব্যবহারের কুফল দেখে এর অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এসবের কারণ হচ্ছে ইসলামে বহুবিবাহের বিধানটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকা। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজে যারা ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামকে ধারণ করতে সচেষ্ট তাদের মধ্যে এর যথেচ্ছ ব্যবহারের প্রবণতা একটু বেশী। আর তাদের এ আচরণের দায় গিয়ে পড়ে ইসলামের উপর। এ কারণেই বহুবিবাহ সম্পর্কে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করা অত্যন্ত জরুরী।
এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে ইসলাম কঠিন শর্তসাপেক্ষে একাধিক বিয়ের অনুমোদন দিলেও এক স্ত্রী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাকেই গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলামী বিধিসিদ্ধ আইনের ৪৩৯নং পৃষ্ঠায় আছে- “কোন ব্যক্তি একজন স্ত্রী নিয়াই সন্তুষ্ট থাকা উচিত।” জামাল আর বাদাবী বলেছেন, “আদর্শ মুসলিম পরিবার বলতে এক স্বামী ও স্ত্রীর পরিবারকে বোঝায়।” (ইসলামী শিক্ষা সিরিজ, পৃষ্ঠ : ২৭৭) আল্লাহ প্রথম যে পরিবার তৈরি করেছিলেন তাতে একজন স্বামী ও একজন স্ত্রীই [হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)] ছিল। বহুবিবাহ প্রসঙ্গে কুরআনের ৪নং সূরার ৩নং আয়াতে এসেছে -
“আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়েদের হক যথাযথভাবে পূরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।”(সূরা নিসা-৩)
“And if you have reason to fear that you might not act equitably towards orphans, then marry from among [other] women such as are lawful to you- [even] two or three, or four but if you have reason to fear that you might not be able to treat them with equal fairness, then only one”.
এ আয়াতটি নাযিল হয় ওহুদ যুদ্ধের পরক্ষণেই। ওহুদ যুদ্ধে অনেক মুসলিম শহীদ হন। তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। তাদের খাদ্য, আশ্রয় ও পারিবারিক পরিবেশের প্রয়োজন ছিল। এ কারণে তাদেরকে বিভিন্নজনের তত্ত্বাবধানে রাখা হলো। বুখারী শরীফে আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, জনৈক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে একটি এতিম মেয়ে ছিল। সে ব্যক্তির একটি বাগান ছিল, যার মধ্যে উক্ত এতিম বালিকাটিরও অংশ ছিল। সে ব্যক্তি উক্ত মেয়েটিকে বিয়ে করে নিল এবং নিজের পক্ষ থেকে ‘দেন মোহর’ আদায় তো করলোই না, বরং বাগানে মেয়েটির যে অংশ ছিল তাও সে আত্মসাৎ করে নিল। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়।
এ আয়াতটি সর্তকতার সাথে পড়লে কয়েকটি ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে আসে।
১) বহুবিবাহ মুসলমানদের জন্য ‘অত্যাবশ্যক’ (ফরজ) বা পছন্দনীয় (মুস্তাহাব) কিছু নয়। বিশেষ কিছু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সুযোগ মাত্র।
২) একের অধিক বিয়ে শর্তযুক্ত। শর্তপূরণের সাপেক্ষেই এটি হালাল হয়।
৩) সমতা বিধান না করতে পারলে একটি বিবাহে সন্তুষ্ট থাকতে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সমতা বিধান না করতে পারলে একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ।
৪) সমতা বিধান ফরজ।
৫) ইসলাম বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করে নি তবে নিরুৎসাহিত করেছে।
“তোমরা কখনো নারীদেরকে সমান রাখতে পারবে না, যদিও এর আকাক্সক্ষী হও।” (সূরা নিসা : ১২৯)
স্ত্রীদের সাথে সমব্যবহার ‘অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত।’ এছাড়া দ্বিতীয় বিয়ের আশা করা অবান্তর। রাসূল (স.) বলেন যে, “যে ব্যক্তি দুই স্ত্রীর একজনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে, সে হাশরের ময়দানে তার শরীরের এক অংশ নীচু অবস্থায় হাযির হবে।” এটি একটি সংকেত যে ঐ ব্যক্তি অসাম্য ব্যবহারের জন্য চিিহ্নত ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হবে হাশরের ময়দানে। যে ব্যক্তি একাধিক বিয়ের চিন্তা করে তার এ দৃঢ়তা ও আস্থা থাকতে হবে যে, সে মানুষের পক্ষে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে সুবিচার করতে পারবে। সমব্যবহার বলতে বুঝায় সকল স্ত্রীকে একমানের খাবার, বস্তু, বাসস্থান, চিকিৎসা, বিনোদন, সময় এবং সহানুভূতি দিতে হবে। শুধু এক্ষেত্রেই হয়তো সমান থাকা সম্ভব নয় তা হচ্ছে আবেগ ও ভালবাসা। এ ব্যাপারে স্বয়ং রাসূল (স.) আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছেন এভাবে, “হে আল্লাহ! এটাই আমার পক্ষে অপক্ষপাতিত্ব (বা বিভাজন) যা আমার নিয়ন্ত্রণে। অতএব, আমাকে তুমি পাপী করো না যা তোমার নিয়ন্ত্রণে।”
অপব্যবহারের একটি নমুনা:
মোহাম্মদ তাহের আলী ধার্মিক মানুষ। ধর্মের প্রতিটি অনুশাসনকে সে কঠোরতার সাথে পালন করতে চায়। লম্বা জামা, পাগড়িসহ সব খুঁটিনাটি সুন্নাতকেও সে ছাড় দিতে নারাজ। সে মনে করে একাধিক বিয়ে একটি বড় সুন্নাত। তার প্রথমা স্ত্রীর বয়স ৪৫ পেরিয়েছে। তাই সে এখন ২য় বিয়ে করে সওয়াব হাসিল করতে চায়। কিছুটা দরিদ্র ও অশিক্ষিত পরিবারের বিশ বছরের মেয়ে জমিলাকে সে বিয়ে করে এবং তাকে নিয়ে মুহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাটে থাকে। অন্যদিকে প্রথমা স্ত্রী ও তিন সন্তানকে সে উত্তরায় একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছে এবং মাসিক খরচ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা পাঠায়। এটার মাধ্যমেই সে প্রমাণ করতে চায় সে দু’স্ত্রীকে সমান দেখছে। কিন্তু বিশ বছরের নববধুকে ছেড়ে ৪৫ বছরের পুরাতন স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে তার ভাল লাগে না, তাই মাসে দু’একবার সে বড় বউকে দেখা দিয়ে আসে।
এ বর্ণনায় তাহের আলী ২য় বিবাহকে যে সুন্নাত মনে করছে তা একটি ভুল ধারণা। আমাকে একজন ভাবী মজা করে বলেছিলেন, “সবাই কম বয়সী দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করে সুন্নাত পালন করে। কিন্তু কেউই ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছরের খাদিজাকে বিয়ে করে কেন সুন্নাত পালন করে না?”
স্বাভাবিক অবস্থায় এক স্ত্রীর সংসার উত্তম ও কাম্য। কিন্তু বিশেষ কিছু পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে যখন একাধিক স্ত্রী গ্রহণ অন্যান্য সম্ভাব্য সমাধান অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। এসব বিশেষ অবস্থার জন্যই আল্লাহ এই পথটি খোলা রেখেছেন। এরূপ কয়েকটি পরিস্থিতি আলোচিত হয়েছে ড: জামাল আল বাদাবীর ইসলামী শিক্ষা সিরিজ বইটিতে -
“ধরুন একজন সুখী যুবক যার স্ত্রী এবং দুই সন্তান আছে, আকস্মিকভাবে তাঁর স্ত্রী মারাত্মক অসুখে পড়লেন অথবা এমন দুর্ঘটনার শিকার হলেন যে, স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ মেলামেশার সামর্থ আর তার থাকল না। এ অবস্থায় ঐ যুবকের সামনে যে কয়েকটি পথ খোলা থাকল তা হলো :
ক) বাকী জীবনের জন্য সে তার জৈবিক কামনাকে দমন রাখতে পারে- যা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব।
খ) সে তার স্ত্রীকে রেখে বিয়ে বহির্ভূত যৌনাচারে লিপ্ত হতে পারেÑ যা অনৈতিক, অসামাজিক।
গ) সে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে নতুন বিয়ে করতে পারেÑ যা অমানবিক। [স্ত্রীর ভরণপোষণ ও দেখা-শুনা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে]
ঘ) সে আর একজন মহিলাকে বিয়ে করতে পারে। এতে সে তার প্রথম স্ত্রীর ও ছেলেমেয়েদের প্রতিও দায়িত্ব পালন করতে পারবে। সুস্থ ও যুক্তিসঙ্গত বিবেচনায় এ পরিস্থিতির সর্বাপেক্ষা উত্তম সমাধান। অর্থাৎ দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কোন নারীই তার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণকে সমর্থন করবেন না বা নিজে কোন পুরুষের দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্ত্রী হতে চাইবেন না। কিন্তু কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে নারীরাও স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহকে সমর্থন দান করবেন। যেমন উপরোক্ত ঘটনায় অসহায় স্ত্রীটি তার নিজের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সন্তানদের মঙ্গলের জন্য স্বামীর নিকট থেকে তালাক অপেক্ষা দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে নেয়াকে শ্রেয় মনে করবেন। আবার “একজন বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্তা মহিলা যার দুই তিনটি সন্তান আছে - এ অবস্থায় কোন অবিবাহিত পুরুষ তাকে বিয়ে করতে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তখন সে অবিবাহিত অবস্থার নিরাপত্তাহীন ও দারিদ্রের মধ্যে থাকার চেয়ে কারও দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্ত্রী হতেও পছন্দ করতে পারে।” (ইসলামী শিক্ষা সিরিজ)
আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে আল্লাহ একাধিক স্ত্রী গ্রহণের সুযোগ রেখেছেন। আল্লাহ স্বাভাবিক অবস্থায় বহুবিবাহকে উৎসাহিত করেন নি। একাধিক স্ত্রী গ্রহণ যদি ন্যায় প্রতিষ্ঠা না করে বরং কারও উপর অন্যায়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তবে সেক্ষেত্রে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করে না।
“আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনেই সন্তুষ্ট থাক।” (সূরা নিসা : ৩)
অর্থাৎ ঢালাওভাবে সবপুরুষের জন্য সব পরিস্থিতিতে বহুবিবাহকে আল্লাহ জায়েয করেন নি। আমাদের দেশে অনেকের এ ভুল ধারণা রয়েছে যে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ সওয়াবের কাজ। ধারণাটি ভুল। বিশেষ অবস্থায় শর্তসাপেক্ষে এটি মুবাহ মাত্র। অপ্রয়োজনে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। (দ্রষ্টব্য- নিসা : ৩)
যারা একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেন তারা আল্লাহর দেয়া শর্ত ‘সমব্যবহার’ অনেক ক্ষেত্রেই করেন না, এক্ষেত্রে সমব্যবহার হলো -
একই মানের বাসস্থান।
একই মানের খাদ্য।
একই মানের পোশাক।
একই মানের সুযোগ সুবিধা (যেমন চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি)।
সমপরিমাণ সময় দান। রাসূল (স.) তার অল্পবয়স্কা স্ত্রী (আয়েশা (রা.)) এর জন্য যতদিন বরাদ্দ করেছিলেন বৃদ্ধা স্ত্রী সাওদা এর জন্যও ততদিনই বরাদ্দ করেছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর নিজের দিনটি আয়েশা (রা.)-কে দিয়ে দেন। কাজেই যারা এরূপ সমব্যবহার করতে পারবে না তাদের জন্য একাধিক বিবাহ হালাল নয় বরং এক স্ত্রী গ্রহণ ফরজ। (সূরা নিসা : ৩)
রাসূলুল্লাহ (স.)-এর একাধিক স্ত্রী বর্তমান বিদ্যমান ছিল। আর তিনি ছিলেন আদল ও ইনসাফের মূর্ত প্রতীক। সকল স্ত্রীকে সমান মর্যাদা দান করতেন। স্ত্রীদের জন্য যতটুকু সময় ব্যয় করতেন, তা সকলের জন্য সমানভাবে ভাগ করতেন। এভাবে সাওদাসহ আরো কয়েকজন স্ত্রী সমানভাবে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর আরাম ও প্রশান্তি লাভের সময়ের ভাগ পেতেন। কিন্তু মূলতঃ তাঁদের বয়সের কারণে তারা রাসূল (স.)-কে প্রশান্তি দিতে অক্ষম ছিলেন। স্বেচ্ছায় নিজের অধিকার সতীন আয়েশা (রা.) এর অনুকূলে ছেড়ে দিয়ে রাসূল (স.)-কে দায়মুক্ত করেন।
অপ্রয়োজনে দ্বিতীয় বিবাহকে রাসূল (স.) অপছন্দ করতেন। ফাতেমা (রা.)-জীবিত থাকাকালীন আলী (রা.) রাসূল (স.)-এর কাছে দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি চাইলে রাসূল (স.) কঠিনভাবে তা ফিরিয়ে দেন- তিনি বললেন, “ফাতেমা আমার অংশ। যে ফাতেমাকে কষ্ট দেয় সে আমাকেও কষ্ট দেয়।” এ হাদীস থেকে এটাও স্পষ্ট যে, রাসূল (স.) স্বীকৃতি দিলেন যে, দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণে প্রথম স্ত্রীর কষ্ট হয় এবং অপ্রয়োজনে স্ত্রীকে এ কষ্ট দেয়া যাবে না। অনেককে আমি বলতে শুনেছি সংকীর্ণমনা নারীরা স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহকে মেনে নেয় না। তারা ভুলে যান রাসূল (স.) আলী (রা.)-এর অপ্রয়োজনীয় দ্বিতীয় বিবাহকে অনুমোদন দেন নি এবং ফাতেমা (রা.) এতে কষ্ট পেতেন। রাসূল (স.) বা ফাতেমা (রা.) কেউই সংকীর্ণমনা ছিলেন না।
দ্বিতীয় বিবাহের ক্ষেত্রে একটি বহুল আলোচিত প্রশ্ন হলো- দ্বিতীয় বিবাহে প্রথম স্ত্রীর অনুমতির প্রয়োজন আছে কি না। এ সম্পর্কে জামাল আল বাদাবি তার ইসলামী শিক্ষা সিরিজ গ্রন্থে বলেন, “যদিও কোন মানুষের দ্বিতীয় বিয়ে করতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি পূর্বশর্ত করা হয় নি এবং প্রথম স্ত্রীকেও এ ব্যাপারে কোন ভেটো ক্ষমাত দেয়া হয় নি তবুও এটা ইসলামী স্পিরিট নয় যে, কেউ প্রথম স্ত্রীর সাথে কোন আলাপ না করে তাকে কোনভাবে না বুঝিয়ে তার অজ্ঞাতে দ্বিতীয় স্ত্রী ঘরে এনে তাকে অবাক করে দেবে। বস্তুত এটা ভীষণ অভদ্রতা। এক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর বাধা দেবার অধিকার রয়েছে, যদি সে বিয়ের কাবিনে এই শর্ত আরোপ করে থাকে যে, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে না। সব আইনবিদ একমত যে, যদি স্বামী বিয়ের কাবিন নামায় এমন শর্ত স্বাক্ষর করে তবে সে প্রথম স্ত্রীর অসম্মতিতে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে না। এক্ষেত্রে (দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলে) অবশ্য তাকে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে।” (ইসলামী শিক্ষা সিরিজ পৃষ্ঠা ৩৯০)
বিয়ের কাবিনের ব্যাপারে আরেকটি ব্যাপার হলো যদি স্ত্রী তালাক দেবার অধিকার নিয়ে নেয়, (ধারা ১৮) সেক্ষেত্রে স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করলে এবং প্রথম স্ত্রী এতে অসন্তুষ্ট হলে প্রথম স্ত্রী তালাকের জন্য আদালতে যেতে পারে। এ অধিকারকে বলা হয় আইসিমা বা বিচ্ছিন্ন হবার দায়িত্ব অর্পণ করা । আমাদের দেশে বিয়ের কাবিনের সময় ধারাগুলো পাত্রীকে জানানো হয় না বলে পাত্রী নিজেও কাবিনটি সম্পর্কে জানতে উদ্যোগী হয় না। প্রত্যেক শিক্ষিত পাত্র-পাত্রীর উচিত বিয়ের পূর্বেই কাবিননামাটি পড়া এবং প্রয়োজনীয় শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করা।
এখন প্রশ্ন বিয়ের চুক্তি বা কাবিননামায় যদি স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে নিষেধাজ্ঞা বা স্ত্রীর তালাকের অধিকার সম্পর্কে লেখা না থাকে সেক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর কি কি সুযোগ থাকে। এ সম্পর্কে জামাল আর বাদাবী বলেন, “কোন স্ত্রী যদি স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে অসুখী হয় এবং বিয়ে চুক্তিতে লেখা না থাকায় আগে বর্ণিত ব্যবস্থাও মেনে নিতে না পারে তারপরও সে স্বামীকে তালাকের উদ্যোগ নিতে পারবে। সে বিচারকের কাছে গিয়ে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কারণে তার স্বার্থ, অধিকার ও মর্যাদ ক্ষুন্ন হবার অভিযোগ তুলে তালাক চাইতে পারে। কাজী বা বিচারক তালাকের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেও ইসলামী আইনমতে স্ত্রী স্বামীকে ‘খোলা’ তালাক দিতে পারে। এটা হচ্ছে যে কোন অবস্থায় নিঃশর্ত তালাক। স্ত্রী শুধু বলবে যে আমার পক্ষে তার ঘর করা অসম্ভব। অবশ্য খোলা তালাকে সে মোহরানা দাবী করতে পারবে না বা মোহরানা ফিরিয়ে দিবে। স্ত্রী স্বামীকে খোলা তালাক দিলে উক্ত স্ত্রীকে বিবাহ বন্ধন থেকে অব্যাহতি দিতে স্বামী বাধ্য এবং এ বিয়ে ভেঙ্গে যাবে।” (ইসলামী শিক্ষা সিরিজ, পৃষ্ঠা : ৩৯0, ৩৯১)
বিষয়: বিবিধ
১২৪৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
“আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনেই সন্তুষ্ট থাক।” (সূরা নিসা : ৩)
এর পরও কি আরো অধিকতর স্বচ্ছ ধারণা দরকার?
তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত, মেয়েরা যে চিজ, তাতে প্রত্যেক পুরুষের অনন্ত দুটি করে বউ থাকরা দরকার; তবে হ্যাঁ যদি সে শক্তসমর্থ হয়।
আমাদের সমাজটা হল এমন, কেন বহু বিবাহ করল এজন্য তাকে মন্দ বলে ! কিন্তু বহু বিবাহ করে ইনসাফ করতে পারবেনা বলে কেউ মন্দ বলেনা ।
হযরত আলী রাঃ বহু বিবাহের অনুমতির বিষয়টি কোন একটি নির্দিষ্ট বংশের কারনে নিষেধ করা হয়েছিল কিনা কনফিউসড ।
সর্বোপরি সম্পূর্ন নারীসুলভ লিখা !
প্রচলিত নিকাহনামা দিয়ে যে বিয়ে পড়ানো এবং রেজিষ্ট্রেশন হয় – সেটা ইসলামিক কোন বিধান নয়! সেটা আমাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া একটা বিষয়! এভাবেই আমরা নিজেদের সুবিধার জন্য ইসলাম এর নাম ব্যবহার করে যাচ্ছে তাই করে যাচ্ছি!
অনেক নবী(আঃ), রাসূল(সাঃ), সাহাবা(রাঃ) এর দের অনেক ইতিহাস আমরা দেখেছি – সেখানে আপনাদের কল্পিত এসব শর্তের কোন তোয়াক্কা তারা করেন-নি! নিজেদের গড়া আইন দিয়ে ইসলাম-কে আবদ্ধ করার কাজটাও হাস্যকর বলে মনে হয়।
একজন পুরুষ খুব সহজেই একাধিক বিয়ে করে স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার+আচরণ করতে পারে ।
সে যেভাবে চলে সাধারনভাবে তার স্ত্রীরাও যদি তার কথা মত সেভাবে চলে তাহলে একাধিক বিয়ে করেও সুখী থাকা যায় ।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন । এখানে একজন স্ত্রী তার স্বামীকে দুনিয়াতে যে নরক উপহার দেয় তাতে কোন স্বামী আর ২য় বিয়ের কথা চিন্তাই করতে পারে না ।
তার অবস্থা হয় '' ছেড়ে দে মা , কেঁদে বাচি'' র মত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন