ভরণপোষণ
লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ০২ আগস্ট, ২০১৪, ১১:১১:৪৬ রাত
ইসলামিক শরীয়াহ মতে একজন স্বামী নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী প্রচলিত সামাজিক অবস্থা অনুসারে তার স্ত্রীর অর্থনৈতিক চাহিদা অর্থাৎ তার ভরণপোষণ, কাপড়-চোপড়, বাসস্থান, চিকিৎসা [বিনোদন] দিতে বাধ্য থাকেন। ভরণপোষণের মধ্যে দিকগুলো পড়ে তা হলো-স্ত্রীর বাসস্থান, পোশাক পরিচ্ছদ, স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা, বিনোদন এবং খাদ্য।
স্ত্রী স্বামীর সঙ্গ পাবার অধিকার রাখেন এবং স্বামীর কাছ থেকে এমন একটি বাসস্থান পাবার অধিকার রাখেন যা তার জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, স্বাচ্ছন্দপূর্ণ। এরপরে আসে পোশাকের ব্যাপার। স্ত্রী ভদ্রোচিত, আরামদায়ক, তার সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রুচিশীল পোশাক পাবার অধিকার রাখে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বিলাসিতা বা অপচয়কে ইসলাম অপছন্দ করে। স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে বিলাসিতা বা অপচয়ের দাবী করতে পারবে না। আবার স্বামীও স্ত্রীর সঙ্গে কার্পণ্য করতে পারবে না। মাঝামাঝি নীতি অবলম্বন করতে হবে। স্ত্রীর স্বাস্থ্যসম্মত ও রুচিসম্মত খাবার খাওয়ার অধিকার রয়েছে। জীবন ধারণের জন্য ও মানসিক আনন্দের জন্য প্রয়োজনীয় বিনোদন স্ত্রীর অধিকার। পরিশেষে সুস্বাস্থ্য ও সুচিকিৎসার অধিকারও স্ত্রীর রয়েছে। সু-স্বাস্থ্যের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক উভয় দিকই আসে। চিকিৎসার মধ্যে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন ও রুগ্ন স্ত্রীর সেবা করা অন্তর্ভুক্ত। অনেকে মনে করে স্ত্রী চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করলেই দায়িত্ব শেষ। সেবার কথাটি তারা ভুলে যান। একজন স্বামী রুগ্ন হলে স্ত্রীর যেমন দায়িত্ব তাকে সেবা করা ঠিক একজন স্ত্রী রুগ্ন হলেও স্বামীর দায়িত্ব সেবা করা। আমাদের সমাজে সেবা পাওয়াটা শুধুমাত্র স্বামীর অধিকার মনে করা হয়। এটি ভুল। এটি ইসলাম সমর্থন করে না।
এসব কিছুই ভরণপোষণের অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে কিছু বাস্তব সমস্যা তুলে ধরছি। কিছুদিন পূর্বে একজন মহিলা তার সমস্যা তুলে ধরেছিলেন এভাবে, “আমার স্বামী বিদেশে থাকে। বিয়ের ২০ দিন পরেই সে বিদেশে চলে যায়। এক/দুই বছর পর পর এসে দশ/বিশ দিন থাকে। সে আমাকে আদেশ করেছে তার বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে থাকতে। কিন্তু আমি তাদের সঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। তাছাড়া আমি একজন মেডিকেল ছাত্রী। আমার শ্বশুড়-শাশুড়ী আমাকে যে ‘দায়িত্বশীল’ স্ত্রীরূপে দেখতে চায় সেসব দায়িত্ব (যেমন- রান্না করা ও ঘরের অন্যান্য কাজ করা, শ্বশুড়-শাশুড়ীর সেবা, দেবর ননদের দেখাশুনা করা) পালন করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া আমার স্বামী দেশে না থাকায় তাদের সঙ্গে থাকতে আমার নানারকম সমস্যা হয়। আমার স্বামী আমাকে বলেছে তার বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে না থাকলে সে আমার ভরণপোষণ দেবে না। উপরন্তু আমি স্বামীর আদেশ অমান্য করার দায়ে দণ্ডিত হবো এবং শ্বশুড়-শাশুড়ীর সেবা না করার কারণে আমার পাপ হবে। এমন অবস্থায় আমার কী করণীয়।” সমস্যাটি একজন নারীর হলেও এ সমস্যার সাথে বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীরই পরিচয় রয়েছে। এখানে ইসলামের কিছু ব্যাপার খুব স্পষ্ট-
১. শ্বশুড়-শাশুড়ীর সাথে থাকতে ইসলাম কোন নারীকে বাধ্য করেনি। কাজেই কোন নারী তাদের সঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলে তার জন্য ঐ নারীর কোন পাপ হবে না।
২. পিতা-মাতার সেবা করা পুত্রের জন্য ফরজ। শ্বশুড়-শাশুড়ীর সেবা করা পুত্রবধুর জন্য ফরজ নয়। কাজেই এখানে পাপের প্রশ্নই ওঠে না। শ্বশুড়-শাশুড়ীর সেবা করা নফল ইবাদাতের মতো। একথা নারী পুরুষ উভয়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। একজন নারী যদি স্বেচ্ছায় তার শ্বশুড়-শাশুড়ীর সেবা করে তবে তার পুণ্য হবে ঠিক ততখানি যতখানি একজন পুরুষ তার শ্বশুড়-শাশুড়ীর সেবা করলে পুণ্য পাবেন। স্বামীর বাবা-মা’র সেবা না করলে স্বামীর পাপ হবার কথা, স্ত্রীর নয়।
৩. স্বামীর জন্য ফরজ স্ত্রীকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ আরামদায়ক ও নিজস্বতা (privacy) রয়েছে এমন বাসস্থান প্রদান। স্বামী বিদেশে থাকার কারণে এমনিতেই আপনি স্বামীর সংস্পর্শ পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তদুপরি আপনি যেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না সেখানে থাকতে বাধ্য করে আপনার আর একটি হক নষ্ট স্বামী কীভাবে করেন?
৪. স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয়া স্বামীর জন্য ফরজ। স্ত্রী স্বামীর অবর্তমানে নিজ বাবা-মা’র সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন এ অজুহাতে স্ত্রীর ভরণপোষণ বন্ধ করলে স্বামীটি সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করবেন।
৫. স্বামী স্ত্রীকে তার (স্বামীর) বাবা-মা’র সঙ্গে থাকতে আদেশ করতে পারেন না, যদি স্ত্রী সেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন। কারণ আল্লাহ স্বামীকে আদেশ করেছেন স্ত্রীকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ বাসস্থানে রাখতে। স্বামীর যে আদেশ দেয়ার অধিকার নেই সেই আদেশ নামানার দায়ে আপনি দণ্ডিত হতে পারেন না।
৬. আপনি স্বামীর আদেশ মানছেন কী মানছেন না তা নিয়ে আপনার স্বামী উদ্বিগ্ন। কিন্তু আপনার ভরণপোষণ না দিয়ে তিনি আল্লাহর আদেশ যে অমান্য করছেন তা নিয়ে তিনি কতটা উদ্বিগ্ন?
৭. আপনার স্বামী এক্ষেত্রে ইসলামকে মানছেন না। অথচ ইসলামের দোহাই দিয়ে তিনি আপনাকে ভয় দেখাচ্ছেন। তিনি হয় ইসলাম ও দেশীয় সংস্কৃতিকে গুলিয়ে ফেলেছেন নয়তো ইসলামকে নিজ স্বার্থে বিকৃত করে ব্যবহার করছেন।
এক্ষেত্রে আর একটি বাস্তব সমস্যা হলো অনেক স্বামী মনে করেন স্ত্রী উপার্জণ করলে স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয়ার দায়িত্ব থেকে স্বামী মুক্তি পান। ইসলাম এটি সমর্থন করে না। স্ত্রী ধনী হলেও বা উপার্জন করলেও স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয়া স্বামীর জন্য ফরজ। স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় নিজ উপার্জন থেকে সংসারের জন্য খরচ করেন তবে তাতে দোষের কিছু নেই। তিনি তা করতে পারেন। কিন্তু এতে স্বামী তার দায়িত্ব থেকে মুক্তি পান না।
বিষয়: বিবিধ
১৯১২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার দ্বিতীয় প্যারার সারসক্ষেক প্রথম প্যারার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত ।
ইসলামিক শরীয়াহ মতে একজন স্বামী নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী প্রচলিত সামাজিক অবস্থা অনুসারে তার স্ত্রীর অর্থনৈতিক চাহিদা অর্থাৎ তার ভরণপোষণ, কাপড়-চোপড়, বাসস্থান, চিকিৎসা [বিনোদন] দিতে বাধ্য থাকেন। ভরণপোষণের মধ্যে দিকগুলো পড়ে তা হলো-স্ত্রীর বাসস্থান, পোশাক পরিচ্ছদ, স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা, বিনোদন এবং খাদ্য।
এর বিনিময়ে স্বামীরা অধিকার রাখে আনুগত্য পাবার । একজন স্ত্রী ততক্ষণ পর্যন্ত স্বামীর আনুগত্য করবে যতক্ষণ না স্বামী তার স্ত্রীকে আল্লাহ ও তার রাসুলের মানে কোরান ও হাদীসের বর খেলাপ হয় এরকম কোন হুকুম করে ।
আপু আপনি লিখছেন , স্বামীর কাছ থেকে এমন একটি বাসস্থান পাবার অধিকার রাখেন যা তার জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, স্বাচ্ছন্দপূর্ণ।
এখানে নিরাপদ টাই আসল ।আরামদায়ক, স্বাচ্ছন্দপূর্ণ এটা নির্ভর করে সামর্থের আর চাহিদার উপর । কারো কাছে ছনের ঘরই আরামদায়ক, স্বাচ্ছন্দপূর্ণ। আবার কারো কাছে এসি রোম ও আরামদায়ক, স্বাচ্ছন্দপূর্ণ নয়. ।
একজন নারী যার স্বামী প্রবাসে থাকে তার একা আলাদা থাকা কতটা নিরাপদ ?
তার স্বামী তার বাবা মায়ের সাথে থাকা টাই স্ত্রীর জন্য হয়ত নিরাপদ মনে করেছে ।
তাহলে এখানে ঐ মহিলার স্বামীর আদেশ স্ত্রীকে বাবা মায়ের সাথে থাকতে বলা কি কোরান হাদীসের বিরুদ্বে যায় ?
পিতা-মাতার সেবা করা পুত্রের জন্য ফরজ। শ্বশুড়-শাশুড়ীর সেবা করা পুত্রবধুর জন্য ফরজ নয়। আবশ্যই ! স্বামী স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক ।স্বামীর অবর্তমানে স্বামীর সম্পতি ঘর বাড়ি হেফাজতের দায়িত্ব স্ত্রীর তাহলে স্বামীর বাবা ,মা ভাই বোন কি এগুলোর মধ্যে পরে না ।
স্ত্রী ধনী হলেও বা উপার্জন করলেও স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয়া স্বামীর জন্য ফরজ। এটা যেমন ঠিক তেমনি এখানেও স্ত্রীকে স্বামীর আনুগত্য করতে হবে স্বামী যদি চায় তবেই সে কাজ করবে না হলে নয় ।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন " তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ,আনুগত্য কর রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কতৃত্বশীল তাদের " (সুরা --নিসা ৫৯ )
আপু আমি বয়স ও জ্ঞানে আপনার চেয়ে অনেক নীচে তাই আমার ভুল হলে ক্ষমা করবেন ।
বাস্তবতা এমন-ই যে, অনেকে মেয়েই ইদানীং বিয়ে বসে এবং বাচ্চা জন্ম দেয় শুধু-ই দেন-মোহর, ভরন-পোষনের নামে কিছু উপার্জনের জন্য আর তা নিয়ে মেয়ের বাপের বাড়ীর পরিবার খায়, নিজের জন্ম দেয়া বাচ্চার মুখেরটা কেড়ে, আর মেয়ে ফুল-টাইম-দাসীগিরির পাশাপাশি পার্ট-টাইম-পরকীয়া করেও সেখান থেকেও বাড়তি আয় করে! সেকালের পতিতাদের ছিলো ফিক্সড-প্রাইস; আর বিয়ে করা বউরা ছিল সুখে-দুঃখে সহযাত্রী। আর একালের মেয়েদের অর্থের চাহিদা, আর তা না আদায় করতে পারলে যে আচরণ করে, তা সেকালের পতিতাদের মতোই!
মেয়েদের পোষাক-চালচলন তো ধর্ষনে উস্কে দেয়-ই, বউদের এ চরিত্রের কারনেও এখন অনেকে বিয়ে না করে অন্য উপায় খুজে নিচ্ছে!
এসব কারণেই মনে হয় মেয়েদের অধিকাংশ জাহান্নামে যাবে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন