ওমরা স্মৃতি

লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ২৯ জুলাই, ২০১৪, ০১:২৪:৩২ রাত

মক্কা পুরোটাই পাহাড়ী। পাথুরে পাহাড়ের উচু নীচু ভাজে গড়ে উঠেছে মক্কা নগরী। কিন্তু জাবাল আল নুর পাহাড়টা অন্য সব পাহাড় থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমানে বেশী উচু। হারাম শরীফ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দুরের এই পাহাড়ের চূড়াতেই হেরা গুহা - যেখানে মক্কার মানুষের মানবিক মূল্যবোধের নিদারুন অবক্ষয়ে মর্মবেদনা ক্লিষ্ট রাসুল সা: ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। আর পঞ্চাশোর্ধ এক প্রৌরা নারী পৌছে যেতেন সেখানে - স্বামীর খোজ খবর নিতে, খাদ্য পানীয় পৌছে দিতে।

জাবালে নুরের পাদদেশে দাড়িয়ে উপরে তাকিয়ে তাকিয়ে চূড়ায় হেরা গুহার অস্তিত্ব খুজছিলাম - আর অঙ্ক মেলানোর চেষ্টা করছিলাম - কেমন করে পঞ্চাশোর্ধ এক নারী খাবার পানীয় বহন করে এই খাড়া উচু পাহাড় বেয়ে উঠলেন? কিভাবে ?

আমি জানিনা কিভাবে। আমি শুধু জানি যে আমি হলে পারতাম না।

এসব চিন্তা মাথায় নিয়ে জাবালে নুর দেখে যখন ফিরছিলাম তখন সফর সঙ্গী পুরুষেরা আলোচনা শুরু করলেন - স্ত্রী হিসাবে খাদিজা রা এর দায়িত্ব পালনের উদাহরণ থেকে স্ত্রীদের করনীয় বিষয়ে । দেখলাম যথারীতি একপেশে ও খন্ডিত চিত্র উঠে আসছে যাতে শুধু থাকে নারীর দায়িত্ব আর পুরুষের অধিকারের কথা। দুই ঠোটকে বিচ্ছিন্ন করতেই হলো - বলতে হলো দুই গল্প ।

রাসুল স: এর বয়স তখন ২৫ বছর। ২৫ বছরের যুবক, অবিবাহিত। ক্যারিয়ারের শুরু কেবল। ম্যানেজার হিসাবে সততা ও যোগ্যতা প্রমান করেছেন সিরিয়ার ব্যবসায়িক প্রজেক্টে। এই ব্যবসায়ের মালিক ৩৫ বছর বয়স্ক খাদিজা। দুই দুইবার বিয়ে হয়েছে - দু'বারই বিধবা হয়েছেন। তিন সন্তানের জননী তিনি।

খাদিজা রা সমভ্রান্ত আর সম্পদশালী পরিবারে জন্মালেও তার জীবন দুক্ষজনক অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। প্রথম বিয়ে চাচাত ভাইয়ের সঙ্গে, জুটিতে মিলেছিল ভালোই । ঘর আলো করে এক সন্তানের জন্মও হয় - কিন্তু সুখ বেশীদিন কপালে টিকে না। স্বামী মারা যান। কিছুদিন পর ভাঙ্গা বুকে আবারও ঘর বাধেন , এই সংসারেও জন্ম হয় দুই সন্তানের। কিন্তু এবারও বিধি বাম - আবারও বিধবা হন তিনি। দুই দুইবার বিধবা হবার বাস্তবতা নিয়ে লড়াকু নারী চালিয়ে যান জীবন সংগ্রাম। পোড়া বুকে স্নেহের শীতল পরশ বুলান বাবা। দুইবারের বিধবা দুঃখী মেয়েকে বাবা গভীর ভালবাসায় স্নেহের ছায়ায় শীতল করেন। কিন্তু হায়, সেই বাবাও যুদ্ধে গিয়ে নিহত হন। শেষ ভালবাসার ছায়াটুকুও হারিয়ে যায়, কাধে এসে পরে বাবার সম্পত্তি ও বিশাল ব্যবসা পরিচালনার ভার। সেই ব্যবসা চালাতেই সাহায্য নেন ২৫ বছরের সত ও দক্ষ মুহাম্মদের। জীবন অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া নারী বুঝে নেন জীবন সঙ্গী হিসাবে এমন একজনকেই দরকার তার। প্রস্তাব পাঠান বিয়ের। ২৫ বছরের টগবগে যুবক বিয়ে করেন ৩৫ বছরের বিধবা তিন সন্তানের জননীকে। আর এতটাই সম্মান আর ভালবাসা দেখালেন সেই নারীকে যে তার জীবদ্দশায় দ্বিতীয় বিয়ে করেননি যদিও তখনকার মক্কার সংস্কৃতিতে একাধিক বিয়ে করাটাই স্বাভাবিক রীতি ছিল।

এর পরের ঘটনা আমাদের সবার জানা - মক্কার রুক্ষ, নির্দয় স্বভাবের মানুষগুলোকে ন্যায় আর সত্যের পথে ডাকার কঠিন পথ পরিক্রমায় খাদিজা তার সম্পদ, শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও নেতৃত্বের দক্ষতা দিয়ে রাসুল সা: কে নিরন্তর সাহায্য করেছেন। এই কঠিন আর দুরূহ কাজ তার মত বয়স্ক, জীবন অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ , দৃঢ়চেতা নারীর পক্ষেই সম্ভব ছিল, ১৯ বছরের নরম তরুনী গৃহবধু দিয়ে সব্ভব ছিলনা।

এ হলো আমার প্রথম গল্প। এবার আসা যাক দ্বিতীয় গল্পে- ছোট্ট করেই বলি এই গল্পটা। কিশোরী আয়েশা - পুরো সংসারের দায়িত্ব নেয়ার বয়স বা অভিজ্ঞতা কোনটাই হয়নি তার। তার উপর নির্ভর করে পাচ সন্তানের সংসার ছেড়ে গুহায় ধ্যান মগ্ন হওয়া যায় না। তিনি আটা মথতে মথতে কখনো কখনো ঘুমিয়ে পরেন আর ছাগল এসে তার আটা খেয়ে ফেলে। স্বামীর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগীতা করতে মজা পান , স্বামীর উরুর উপরে দাড়িয়ে উচু হয়ে খেলা দেখতে চান , স্বামীর কাছে বায়না ধরেন।

এই দুই নারীই রাসুলের স্ত্রী ছিলেন। এই দু'য়ের গল্পের সমন্বয়েই তৈরী হয় একটি পরিপূর্ণ চিত্র। চিত্রটি এরকম-

যদি আপনি খাদিজার সেবা চান তাহলে খাদিজার বয়স, পূর্ব বিবাহের অভিজ্ঞতা ও বৃহৎ ব্যবসা পরিচালনার অংশটাকে সঙ্গে রাখতে হবে। আর যদি তরুনী আয়েশা চান তবে ছাগলের আটা খাওয়া আর উরুর উপর দাড় করিয়ে খেলা দেখানোর অংশটা ভুললে চলবে না। আয়েশার বয়স আর খাদিজার হেরা গুহা আরোহন একসাথে চাইবেন না যেন - সেটা সম্ভব না ।

বিষয়: বিবিধ

১২৪৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

249208
২৯ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:৫৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো
৩০ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:২৭
193823
কানিজ ফাতিমা লিখেছেন : Happy
249210
২৯ জুলাই ২০১৪ রাত ০২:২৪
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
249232
২৯ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৬:৫৫
ইবনে হাসেম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। প্রথমে ভেবেছিলাম ওমরার নানা পর্যায়ের বিচিত্র সব কাহিনী নিয়ে লিখা পোস্ট। কিন্তু পাঠ শেষে মনে হলো এ যেন নর-নারীর চিরন্তন মতভেদের এক খন্ডচিত্র......। তবু ভালো, কাহিনীর চরিত্রে ছিলেন ইসলামের দুই মহয়িসী ও বিদূষী মহিলা, বনাম শেষ নবী (সাঃ)। তাই অতৃপ্ত মনটাকে প্রবোধ দিতে কষ্ট হয়নি....
249236
২৯ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৭:০৫
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ঘটনা অন্য দিকে নিয়ে গেছেন। ভাল লাগল। হেডিং দেখে অন্য কিছু ভেবেছিলাম। তবে ইবনে হিশাম,ইসহাক,ইবনে সাদ,তাবারী..বালাযুরী,ওয়াকিদী সকলে এবং সকল স্থানে খাদিজার বয়স ৪০ ছিল বলেই জানিয়েছেন। যাইহোক, উপস্থাপনা সুপার Happyশিক্ষনীয়....ভাবছি কোন ক্যাটাগরী ভাল Happy
249245
২৯ জুলাই ২০১৪ সকাল ১০:২২
আহমদ মুসা লিখেছেন : ভালো লাগলো
249333
২৯ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৫
কানিজ ফাতিমা লিখেছেন : ধন্যবাদ, বিবাহের সময় খাদিজা রা এর বয়স অধিকাংশ জীবনী তে ৪০ আছে , দুই একটি ইতিহাস ভিত্তিক জীবনীতে ৩৫ এসেছে। দুটোই গ্রহনযোগ্য। ব্যক্তিগত ভাবে ৩৫ তাকে আমার বেশী যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। আমরা ধরে নিতে পারি তার বয়স বিবাহের সময় ৩৫ থেকে ৪০ এর মধ্যে ছিল আর হের গুহার ঘটনায় ৫০ থেকে ৫৫ এর মধ্যে ছিল।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File