প্রাচীন ইতিহাসে ফিলিস্তিন
লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ২৮ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৫৫:৪৮ রাত
প্যালেস্টাইন, আরবী ফিলিস্তিন- আসুন জেনে নেই এই দেশের সাথে বনি ইসরাইলদের পূর্ব ইতিহাস।
ফিলিস্তিনের প্রাচীন নাম কানআন (Canaan) । হিব্রু বাইবেলে কানআন নামটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং কানআন এর সীমানা বোঝানো হয়েছে লেবানন এর দক্ষিন থেকে মিশর পর্যন্ত ও জর্দান নদীর পশ্চিম থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত। (এই কারণেই বর্তমান ইসরাইল এই পুরো ভুখন্ড এর দখল চায়, এবং ফিলিস্তিনের অস্তিত্বকে পুরোপুরি মুছে দিতে চায় )
(ম্যাপ - প্রাচীন কানআন)
এই ভুখন্ডটি আফ্রিকা ও এশিয়া কে যুক্ত করেছে বিধায় এর ভৌগলিক গুরুত্ব অনেক বেশী।
হযরত ইব্রাহীম আ: এর জন্ম উর নামক শহরে যা প্রাচীন মেসোপটেমিয়া বা বর্তমানে ইরাকের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু তিনি নবুয়ত প্রাপ্তির পর কেনানে বসতি স্থাপন করেন । ইব্রাহীম আ: এর প্রথম পুত্র ইসমাইল আ: ও তার মাতা হাজরা (মিশরীয় বংশদ্ভুত) আল্লহর নির্দেশে কেনান ছেড়ে মক্কাতে বসতি এর সুচনা করেন এবং অনেক বছর পরে এই বংশেই হজরত মুহাম্মদ স: এর জন্ম হয়। ইব্রাহীম অ এর প্রথম স্ত্রী সারাহ এর পুত্র ইসাক আ:। ইসাক আ: এর ছেলে ইয়াকুব আ:। হযরত ইয়াকুবের (আঃ) অপর নাম ছিল ইসরাইল। বনি ইসরাইল হযরত ইয়াকুবেরই বংশধর। ( সুরা মারিয়াম ৪৯, সুরা আম্বিয়া ৭২-৭৩, সুরা অন আম ৮৪)
ইয়াকুব আ: (ইসরাইল ) তার পিতার আবাস কেনানে বসতি স্থাপন করেন। ইয়াকুব আ: এর ১২ পুত্র। ইউসুফ আ: ও বেনজামিন এক মায়ের সন্তান। ইউসুফ আ: তার দশ বৈমাত্রেয় ভাইদের দ্বারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কূপে নিক্ষিপ্ত হন এবং মিশরে স্থানন্তরিত হন। ( সুরা ইউসুফ ১৮-২১) পরবর্তিতে তিনি মিশরের মন্ত্রিত্ব লাভ করেন ও সেখানেই বসবাস করেন। তার বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা ও আপন ভাই বেনজামিন দুর্ভিক্ষের কারণে মিশরে যান খাদ্যের সন্ধানে ও ইউসুফ আ: এর সঙ্গে মিলিত হন (সুরা ইউসুফ ৫৮)। এবং তারা মিশরে বসবাস শুরু করে ( সুরা ইউসুফ ৯৩)- এভাবেই মিশরে ইয়াকুব আ:এর বংশধর অর্থাত বনি ইসরাইল এর একাংশ বসতি স্থাপন করে।
ঘটনা পরম্পরায় এই মিশরে ফেরাউন বংশ রাজত্ব করে এবং কেনান থেকে আসা বনি ইসরাইল বা ইয়াকুব আ: এর বংশধরদের দাসত্বে বাধ্য করে। বনি ইসরায়েল এর মিশরে অভিবাসনের প্রায় ৪০০ বছর পরে মিশরে বনি ইসরায়েল বংশে জন্ম হয় মুসা আ: এর এবং তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বনি ইস্রায়েল বংশকে ফেরাউনের দাসত্ব ও জুলুম থেকে মুক্ত করে তাদের আদি নিবাস কেনান বা বর্তমান ফিলিস্তিনে ফিরিয়ে নেবার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। মুসা আ: তাদের মিশর থেকে বেরকরে আনেন কিন্তু পথে তারা নানা ভাবে আল্লাহর ও মুসা আ: এর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়; এমনকি ফিলিস্তিনিতে পৌছার পর সেখানে প্রবেশ করতে অস্বীকার করে -
"তারা জবাব দিল, “হে মূসা! সেখানে একটা অতীব দুর্ধর্ষ জাতি বাস করে। তারা সেখান থেকে বের হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা কখনই সেখানে যাবো না। হ্যাঁ, যদি তারা বের হয়ে যায় তাহলে আমরা সেখানে প্রবেশ করতে প্রস্তুত আছি। হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! সেই পবিত্র ভূখণ্ডে প্রবেশ করো, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন। পিছনে হটো না। পিছনে হটলে তোমরা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।কিন্তু তারা আবার সেই একই কথা বললোঃ “হে মূসা! যতক্ষণ তারা সেখানে অবস্থান করবে আমরা ততক্ষণ কোনক্রমেই সেখানে যাবো না। কাজেই তুমি ও তোমার রব, তোমরা দু’জনে সেখানে যাও এবং লড়াই করো, আমরা তো এখানে বসেই রইলাম।”(সুরা মায়েদাহ ২০-২২)
এই নাফরমানির শাস্তি হিসাবে তারা ৪০ বছর ফিলিস্তিনিতে ঢোকার অনুমতি পায়নি (সুরা মায়েদাহ ২৬) । মুসা আ: এর এই অনুসারীরাই ( যাদের মধ্যে তার আনুগত্যহীন লোকের সংখ্যাই বেশী ছিল) ইয়াহুদী নামে পরিচিত।
পরবর্তীতে এই অঞ্চলেই ইসা আ: এর জন্ম হয় এবং ইয়াহুদী পাদ্রীরা তার চরম বিরোধিতা করে। খৃস্টান ধর্মালম্বীরা বিশ্বাস করে ইসা আ: এর ক্রুশবিদ্ধ হবার পেছনে এই ইয়াহুদী পাদ্রীদের অবদান ছিল।
এর হাজার বছর পরে ইসমাইল আ: এর বংশে জন্ম নেন রাসুল স। খ্রিস্টান অধ্যুষিত কেনআন অঞ্চল এই সময়ে বাইজেন্টাইন শাসকদের পদানত ছিল। ওমর রা এর খেলাফত কালে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম সহ ফিলিস্তিন যুদ্ধে মুসলিম শাসনের আওতায় আসে। এবং খলিফা ওমর ও খ্রিস্টান সেইন্ট Patriarch Sophronius এর কৃত চুক্তি অনুযায়ী এখানে খ্রিস্টান, মুসলিম ও সংখ্যালঘু ইয়াহুদীরা সম্প্রিতী নিয়ে শত শত বছর পাশা পাশি বসবাস করেছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ওমর রা: এই পাদ্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সে সময় নামাজের ওয়াক্ত হয়। পাদ্রী তাকে চার্চের ভেতরেই নামাজ আদায় করে নিতে বলেন। ওমর রা: এই আশঙ্কা ব্যক্ত করেন যে পরবর্তিতে মুসলিমরা ওমরের নামাজ আদায়ের স্থানে মসজিদ স্থাপন করতে চাইতে পারে -এতে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অধিকার বিনষ্ট হবে। ফলে তিনি চার্চের বাইরে এসে নামজ আদায় করেন। এই স্থানে মুসলিম ও খ্রিস্টানরা বহু শত বছর পাশা পাশি নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে ইবাদত করে এসেছে।
বাইজেন্টাইন শাসন আমলে ইয়াহুদীদের জেরুজালেম থেকে বের করে দেয়া হয় ও তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও আচার পালনের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হয়। ওমর রা: তাদের বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন ও স্বাধীন ভাবে ধর্ম পালনের অধিকার ফিরিয়ে দেন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শনিবারের ব্যাপারেও তারা নাফরমানি করা শুরু করে দাউদ (আঃ) এর সময়ে ।
আল্লাহ এদের ক্রমাগত নাফরমানী ও কিতাব গ্রহন করতে অনিচ্ছুক হবার জন্য একসময়ে ক্ষিপ্ত হয়ে এদের উপর তুর পাহাড় তুলে ধরেছিলেন ।
তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে যেসব নবী ও রাসূল এসেছিল আল্লাহর পয়গাম নিয়ে তাদেরকে এই বনী ইসরায়েলিরা হয় নির্যাতন করেছে না হয় কাউকে কাউকে মেরেই ফলেছে ।
আর এজন্যই এরা অভিশপ্ত ।
আজকের দুনিয়ার মানুষ এই গাজার হামলার ফলে ইসরায়েল তথা ইহুদীদের ব্যাপারে বেশী বেশী করে জানতে পারছে । এতে অনেকেই মোটামুটি কনভিন্সড যে , এদেরকে শেষ করার সাথে দুনিয়ার শান্তির একটা সম্পর্ক আছে ।
এরা যেখানে গিয়েছে সেখানেই ঝামেলা করেছে , অশান্তির সৃষ্টি করেছে । ফলে এদেরকে ঐসব জায়গার লোকেরা তাদের সাথে আর রাখতে চায় নি.
দুনিয়াবাসীর মধ্যে হিটলারই কেবল এটার ভাল একটা সমাধান শুরু করেছিলেন । তবে শেষ করে যেতে পারেন নি ।
এখন মুসলমানদের পক্ষে এরকম নৃশংস কাউকেই চাইছি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে ।
এখানে এখন আর মানবতার প্রশ্ন আর আসবে না ।
'' প্রতিশোধ ততটুকু নাও যতটুকু তোমার প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে , আর ক্ষমা করে দিলে সেটা হবে উত্তম'' - এরকম কথা আল্লাহ পবিত্র ক্বুরআনে বলেছেন ।
কিন্তু এই ইসরায়েলীরা তো এখন আর ক্ষমা পাবার যোগ্য না । আল্লাহ তায়ালা অসীম দয়ালু আবার কঠোর শাস্তি দাতাও । বার বার অন্যায় করতেই থাকলে আল্লাহ তো তাকে আর ক্ষমা করবেন না ।
এই ইসরায়েলীরা কাদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ? যারা একসময় তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল সুন্দর মনে । খৃষ্টানদের হাতে শতাব্দির পর শতাব্দি মার খেতে খেতে তাদেরকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল এই প্যালেস্টাইনেই । সেই প্যালেস্টাইনের মুসলমানেরাই তাদেরকে পরম মমতায় আশ্রয় দিয়েছিল । এখন তারা সেই আশ্রয় দাতাকেই সমূলে বিনাশ করছে তাদেরকে আগে যারা মেরেছিল তাদেরই সহায়তা ও সমর্থন নিয়ে !
তাই তো এই অভিশপ্ত ইহুদীদের সাথে নাছারা বা খৃস্টানরাও পথভ্রষ্ট ।
পরকালে এদের জন্য কঠিন শাস্তি রেখেছেন আল্লাহ রাব্বুল'আলামিন ।
ইহুদিদের ইতিহাস পড়লে বুঝা যায় তার সবসময়ই আল্লাহর নাফরমানি করে এসেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন