আসুন আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করি - কাউকে কাফের/ মুশরিক/ ফাসিক/ দায়ুস / মুরতাদ জাহান্নামী বলবো না - ২

লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ২৩ জুন, ২০১৪, ০৮:১২:০৯ রাত

অনেকে আমাকে বলেছেন যারা ইসলামের ক্ষতি করে তাদেরকে কাফের/ মুনাফিক/ মুরতাদ / ফাসেক জাতীয় গালি দেয়া যাবে কিনা। আল্লাহ যে "নাহি অনিল মুনকার " মন্দ বন্ধ করার আদেশ দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে মন্দ বন্ধ করতে এসব গালি দেয়া যাবে কিনা। অনেকে আবার বলতে চেয়েছেন এসব গালি না দিয়ে কিভাবে ইসলাম প্রচারের ঈমনী দায়িত্ব পালন করা সম্ভব।

খেয়াল করলে দেখবেন ফাসেক / মুরতাদ / বিদায়াতী/ কাফের গালিগুলো সাধারণত দুই ক্ষেত্রে দেয়া হয় -

১. যারা ইসলাম বিরোধী না, বরং নিজেদের মুসলিম হিসাবে পরিচয় দেন, নিজের সামর্থ ও জ্ঞান অনুযায়ী ইসলামের উপকারের নিয়তে কম হোক বেশী হোক কাজ করেন - তাদের কোনো মত যদি আমার মতের মতো না হয় তাহলেই তাকে - ফাসেক / মুরতাদ / বিদায়াতী বলে গালি দেয়া হয়।

যাকে আপনি কাফের / ফাসেক/ বিদায়াতী বলে গালি দিচ্ছেন হয়তো সেই ভাইটি বা বোনটি ইসলাম সম্পর্কে আপনার থেকে অনেক বেশী জেনেছে, হাদিস ও কোরানের ওপর এমন সব বই পড়েছে যার নাগাল এখনো আপনি পাননি, কিম্বা সে আপনার চেয়ে ইসলাম কম বুঝেছে - আপনি এমন সব তথ্য পড়ার সুযোগ পেয়েছেন যা সে পায়নি। সে আপনার চেয়ে কম জানুক বা বেশী - তার ঈমান পরিমাপ করার এবং সে ব্যাপারে রায় দেবার অধিকার আল্লাহ আপনাকে দেয়নি।

বস্তুত এটা যারা করেন তারা নিজেরাই শিরক করছেন। কারণ অন্যের কাজের মুল্যানের ভিত্তিতে রায় দেয়া একমাত্র আল্লাহর কাজ। "মালিকি ইযওমোদ্দীন" তিনি বিচার দিনের মালিক, এক্ষেত্রে তিনিই একমাত্র রায় দেবার মালিক ; আপনি বা আমি না।

ব্যক্তির মত আপনার পছন্দ না হলে আপনি আপনার মত তুলে ধরে তার মতের বিপরীতে আপনার যুক্তি দিতে পারেন। কিন্তু ব্যক্তির বিশ্বাসের মান ও পর্যায় নিয়ে রায় দিতে পারেন না।

২. কিছু কিছু মানুষ যারা নামে মুসলিম (কেউ কেউ নামাজও পরেন) কিন্তু প্রকাশ্যে ইসলামের বিপরীতে যায় এমন সব কাজ করেন। এদের কাজ নিসন্দেহে নিন্দনীয়। তাই কাজের নিন্দা করতে গিয়ে এদেরকে অনেকেই আমরা কাফের/ ফাসেক/ মুরতাদ / মুনাফিক বলে গালি দেই।

এক্ষেত্রে আমাদের সেই হাদিসটি মনে রাখা জরুরী যেখানে বর্ণিত আছে একজন সাহাবী যুদ্ধে একজন ইহুদীকে মাটিতে ফেলে দিলেন - ইহুদীটি লা ইলাহা পড়ল, সাহাবীটি তারপরও তাকে হত্যা করলেন ।

পরবর্তিতে রাসুল স ঘটনা জানার পর সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলেন কেন তিনি ওই ব্যক্তিকে হত্যা করলেন ?

সাহাবী বললেন , তার মনে হয়েছে ইহুদী ব্যক্তিটি জানের ভয়ে কলেমা পড়েছে , মন থেকে ঈমান গ্রহণ করেনি।

রাসুল স এই সাহাবীর প্রতি রাগান্নিত স্বরে সমালোচনা করে বললেন - " তুমিকি তার মনে ঢুকে দেখেছ ?"

কাজেই কেউ ইসলামের সমালোচনা করলে যুক্তি দিয়ে তার যুক্তি খন্ডন করুন , ইসলামের সঠিক শিক্ষা তুলে ধরুন। কিন্তু তার বিশ্বাসের মান নির্ধারণের কাজ আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন। রাসুল সা সাহাবীকে সেই কথাই বলেছেন," তুমিকি তার মনে ঢুকে দেখেছ ?"

ভালো কাজের আদেশ আর মন্দ কাজের নিষেধ করতে আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে আল্লাহ কিভাবে তা করতে হবে তাও বলে দিয়েছেন।

আল্লাহ বলেন -

"হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে। তোমার রবই বেশী ভালো জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়ে আছে এবং সে আছে সঠিক পথে।" সুরা আন নাহল ১২৫

"আর উত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া আহলে কিতাবের সাথে বিতর্ক করো না, তবে তাদের মধ্যে যারা জালেম তাদেরকে বল , “আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছে তার প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছিল তার প্রতিও, আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ একজনই এবং আমরা তারই আদেশ পালনকারী।” সুরা আনকাবুত ৪৬

কাজেই মন্দ বন্ধ করা যেমন ফরজ; সেটার জন্য "উত্তম " উপায় অবলম্বন করাও তেমন ফরজ।

বুখারী শরীফের হাদিসের ভিত্তিতে জানা যায় রাসুল সা জীবনে একবারের জন্যও অশ্লীল কথা বলেননি , গালি দেননি। তার সামনে এসব ঘটলে তিনি মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতেন।

ভাই ও বোনেরা ইসলামের সেবা করতে চাইলে ফাসেকী, মুনাফেকী, কুফরী প্রভৃতির সঙ্গা, ধরন, বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে মানুষকে সাবধান করুন, কিন্তু কোনো ব্যক্তির ঈমানের মান নিয়ে রায় দেয়ার দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নিয়েন না। মনে রাখবেন গালি দেয়া ইসলামে হারাম। হারাম দিয়ে ফরজ আদায় হয় না।

বিষয়: বিবিধ

১২৭৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

238076
২৩ জুন ২০১৪ রাত ০৯:১৫
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : যুক্তি ও তথ্য নির্ভর দারুন লেখনী। অনেক কিছুই জানতে পারলাম। আল্লাহ আপনার উপর রহমত বর্ষন করুন।
238083
২৩ জুন ২০১৪ রাত ০৯:৩১
ভিশু লিখেছেন : খুব গুরুত্বপূর্ণ লেখা... Rose
ভালো লাগছে...Happy Good Luck
238122
২৩ জুন ২০১৪ রাত ১০:৪৮
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আপু, আমাদের মসজিদের এক কনভারটেট
ভাই, এক বার খুদবায়ে দাড়িয়ে মুসলিদের
উদ্দেশ্য বললো আমার মা বাবা উভয়ের পরিবারে সবাই কুফর। কনভারটেট ভাদের বললো, তোমাদের দ্বায়িত্ব হবে, কোরানের ইংলিশ ট্রান্সেলেশন কপি তাদের মাঝে বিতরন
করা। এটা কি ঠিক হয়েছে? আপনার দৃষ্টতে।

২৩ জুন ২০১৪ রাত ১১:০৩
184601
কানিজ ফাতিমা লিখেছেন : আমি ব্যক্তিগত ভাবে এভাবে বলি " ওনারা অন্য বিশ্বাসে আছেন , আমাদের দায়িত্ব ইসলামের দাওয়াত তাদের কাছে পৌছানো"
238159
২৪ জুন ২০১৪ রাত ১২:৩৬
সান বাংলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ Good Luck Rose
238521
২৪ জুন ২০১৪ রাত ১১:১০
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : কোরআন হাদিসের আলোকে সুন্দর করে বিশ্লেষণ করেছেন। ধন্যবাদ আবারও আপনাকে। আমি এর সাথে একটা হাদিস যোগ করছি যা কিছুদিন আগে জেনেছি।

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ-এর উপস্থিতিতে এক কাফির এসে রাসূল সাঃ-কে লক্ষ করে বলেছিল, হে মুহাম্মদ! তুমি ধ্বংস হও। রাসূল সাঃ এতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। কিন্তু আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ ওই কাফিরকে লক্ষ করে একই কথার দ্বারা উত্তর দিয়ে দিলেন। এতে রাসূল সাঃ বিরক্ত হয়ে আয়েশা সিদ্দিকা রাঃকে বললেন ‘আলাইকি বির রিফ্‌কি।’ হে আয়েশা! তোমার বিনয়ী হওয়া প্রয়োজন (যেহেতু তুমি মুসলিম)।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে Good Luck Rose
২৫ জুন ২০১৪ রাত ১২:৩৮
185010
কানিজ ফাতিমা লিখেছেন : ধন্যবাদ Happy
298365
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৮
সমালোচক লিখেছেন : শিরকের একটি সূক্ষ্মতম দিক উপস্থাপন করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ব্লগার কানিজ ফাতেমাকে ।

আপনার বিশ্লেষণের আলোকে আমার একটি প্রশ্ন - কাদের মোল্লা'কে যেভাবে জামাত-শিবির নিশ্চিত 'শহীদ' হিসেবে উপস্থাপন করে চলেছে (এমনকি কবর ঘিরে পাকা দেয়াল নির্মাণপূর্বক সেখানে নামফলক লাগিয়েছে শহীদ আখ্যাদানপূর্বক) তা কি শিরকের পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে না ? কাদের মোল্লা শহীদী মর্যাদা পেয়েছেন কিনা তা কি করে নিশ্চিত হলো জামাত-শিবির ? এটা কি খোদার ওপর খোদকারী নয় ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File