ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নে ক্রমধারার অপরিহার্যতা- শাহ আব্দুল হান্নানের প্রবন্ধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ

লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ২৩ জুন, ২০১৪, ০৬:৩৯:২৮ সকাল

১।

আল্লাহ তায়ালা ইবাদতের জন্য মানুষ সৃষ্টি করেননি। এজন্য ফেরেশতারা যথেষ্ট ছিল। শুধু এ পৃথিবীকে নয়, পুরো বিশ্ব পরিচালনায় তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলামকে এই দৃষ্টিকোণ হতে দেখে না।

তাঁরা মনে করে, ইসলাম অন্যতম একটা ধর্মমাত্র। হতে পারে তা উন্নততর বা শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলামকে বুঝা বা সত্যিকারের মুসলিম হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলো জানা দরকার তার ন্যুনতম জ্ঞানও আমাদের দেশের জনসাধারণের মধ্যে নাই। তাঁরা ইলাহ এই পরিভাষাটির অর্থ বোঝে না, রব শব্দের অর্থ বোঝে না। তাঁরা কালেমা উচ্চারণ করে ঠিক মতো, কিন্তু এর মর্মার্থ বা কনসিকোয়েন্স সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখে না। মক্কার কাফের-মুশরিকেরা কালেমার যে implication পরিষ্কার করে বুঝতে পেরেছিল, আমাদের এখানে শিক্ষিত লোকেরাও সেগুলো বুঝে না। কালেমাকে তাঁরা পবিত্র একটা spell হিসেবে মনে করে। এর practical জিনিসগুলো বোঝে না।......

২।

ইসলাম নিয়ে যারা কাজ করে, ইসলামিক movement হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয় তাঁদের মধ্যেও অনেক সমস্যা আছে। এরা মনে করে যে তাঁরা নিজেরা সবকিছু ভাল করেই বোঝেন। তাঁদের দৃষ্টিতে একমাত্র সমস্যা হলো অন্যদেরকে বোঝানো, অধিকাংশ (?) মানুষকে কনভিন্স করে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা! অথচ, ইসলামী অনেক কনসেপ্ট ও আন্ডারস্ট্যান্ডিং নিয়ে তাঁদের নিজেদের মধ্যেই গভীর মতানৈক্য রয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা তাত্ত্বিকের বুলি কপচানোর বাইরে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করা হয় না বিধায় বাহ্যত মনে হয়, কোনো সমস্যা নাই! কোনো কোনো সেক্টরে তাঁরা কোনো কাজই করেনি। ইসলাম তাঁদের কাছে এক সর্বরোগহরি বড়ি (panacea), কোনোমতে খেতে ও খাওয়াতে পারলেই কেল্লা ফতে! এরই ফলশ্রুতিতে তাঁরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বাদ দিয়ে শাখা-প্রশাখা নিয়ে involve হয়েছেন ও হচ্ছেন। প্রায়োগিক বিষয়ে যে ধরনের understanding দরকার তা প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় না। ইসলামিক সংগঠনগুলোতে intellectual bankruptcy বা বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াপনা বলতে যা বোঝায় সেই জিনিসটা লক্ষ্যণীয় মাত্রায় বিদ্যমান! প্রচলিত ও জনপ্রিয় ধর্মীয় ভাবধারার মতো ইসলামী আন্দোলনের সংগঠনসমূহেও স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে যথাসম্ভব নিরুৎসাহিত করা হয়! ভাবখানা এমন, ক্ষমতা পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে! এই হলো রাজনৈতিক ইসলাপন্থীদের স্ব-নির্মিত গোলক-ধাঁধাঁ!

এ বিষয়ে আর একটা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে ইসলামিস্টরা সাধারণত এ দেশকে, দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে, দেশের মানুষকে আপন মনে করে না, own করে না। জন-বিচ্ছিন্নতাকেও তাঁরা খারাপ বা ক্ষতিকর মনে করে না। বরং এই স্বাতন্ত্র্যকে তাঁরা উপভোগ করেন! ইসলামপন্থীদের মনোভাব হলো, তাঁরা সাধারণ (পাপী!) মানুষের (পরকালীন) মুক্তি বা নাজাতের মহান দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। এ ধরনের মানস গঠনের কারণে তাঁরা সবসময়ে superiority complexity-তে ভোগেন ও একধরনের self satisfaction feel করেন। ফলে তাঁরা মানুষের কাছে যখন যান তখন নিজেদেরকে special status-এর মনে করেন এবং মানুষও তাঁদেরকে (পারলৌকিক বিবেচনায়) একধরনের special (religious) status দিয়ে থাকে। মিউচুয়্যাল এক্সক্লুশানের ভিত্তিতে এ ধরনের একটা সেক্যুলার ফরমেট এখানে কম-বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। এই ধারণা থেকে বের হয়ে এসে সঠিকভাবে ইসলামকে বুঝতে চাইলে deductive approach of understanding Islam এর ভুল পন্থা হতে সরে আসতে হবে। মনে করা হচ্ছে, ইসলামের কোনো একটি বিধান কৌশলে বা জোর করে চাপিয়ে দিতে পারলে কিছু না কিছু ইসলাম তো কায়েম করা গেল! ইসলামকে একটা জীবন-দৃষ্টি বা আদর্শ হিসেবে না দেখে বিধি-বিধানের একটা আঁটি বা সমষ্টি হিসেবে দেখাই হচ্ছে এই ভ্রান্ত ও প্রান্তিক মানসিকতার কারণ

৩।

হক এবং হেকমতের মধ্যকার ভারসাম্যকে বুঝতে হবে, মানতে হবে। একজন সহকর্মী আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি ক্লাসের মধ্যে ইসলাম-এর কথা বলেন?’ আমি বললাম, ‘একেবারেই ক্বদাচিৎ ও নিতান্তই প্রসঙ্গক্রমে।’ তিনি আমাকে বার বার এ বিষয়ে তাগাদা দিয়ে বলছিলেন, ‘আমাদের উচিত এই সুযোগে কিছু দাওয়াতী কাজ করা। তাহলে দশজনে জানল এবং ইসলামের কিছু প্রচার-প্রসার হলো।’ তখন আমি বললাম, ‘ভাই, ইসলাম এমন কোনো ঔষধ না যে কৌশলে খাইয়ে দিলেই হলো!’ কোনোমতে মুসলমান হিসেবে নাম লেখানোর মাধ্যমে আদমশুমারী অনুসারে মুসলমান সংখ্যা যতই বাড়ুক না কেন তাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতিবৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনো ফললাভ হবে না। এসব অ-বুঝ মুসলিমরা খালেস নিয়তে অ-ইসলামকেই লালন করবে এবং সত্যিকারের ইসলাম ও ইসলামপন্থীদেরকে সাওয়াবের নিয়তে (?) সর্বশক্তি দিয়ে বিরোধিতা করবে।

ইসলাম গ্রহণ করতে হবে এর দায়-দায়িত্বকে মেনে নিয়ে। একটা all out intellectual exercise এর the only rational outcome বা conclusion হবে spelling of the kalima-i twaibah। এমন নয় যে কোনোমতে একে বুঝিয়ে দেয়া হলো অথবা লোকেরা সাময়িক কোনো বিদ্যমান পারিপার্শ্বিকতার কারণে ইসলাম গ্রহণ করে নিলো। এভাবে অধিকাংশ লোক ইসলাম মেনে নিলে ইসলামী সমাজ অটোমেটিক্যালি কায়েম হয়ে যাবে! মদীনার অধিকাংশ লোকেরা কি শুরুতে ইসলাম গ্রহণ করে নিয়েছিলো? না, নেয়নি। মুসলিম জনসংখ্যা এক দশমাংশও ছিলো না। মদীনা সনদ স্বাক্ষরের সময় রাসূল (সা) ছিলেন মাইনরিটি লিডার। যোগ্যতার কারণে তাঁকে সবাই নেতা মেনে নিয়েছিলেন। ইসলামাইজেশান বলতে আমি সিস্টেম ম্যানেজমেন্টকেই বুঝি।

হক্ব ও হেকমতের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। কিভাবে এটি সম্ভব? আমাদের প্রত্যেকের বিবেক আছে। Our conscience will say that. আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ফাআলহামা-হা ফুজু-রাহা ওয়া তাক্বওয়াহা।

সোর্স -

https://www.facebook.com/shah.abdulhannan.7/posts/333454736808411

বিষয়: বিবিধ

১১৮২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

237842
২৩ জুন ২০১৪ সকাল ১১:৫৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যবাদ শিক্ষনিয় বিষয়গুলি শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File