মোহরানা মাফ

লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ০৩ জুন, ২০১৪, ০৫:৩৭:১৬ সকাল

আমাদের দেশে অনেক পুরুষ সূরা নিসার ৪নং আয়াতকে ভিত্তি করে স্ত্রীর নিকট মোহরানা মাফের অনুরোধ করেন। এটা কতটুকু ঠিক?

“আর আনন্দের সাথে (ফরয মনে করে) স্ত্রীদের মোহরানা আদায় করে দাও। তবে যদি তারা নিজেরাই নিজেদের ইচ্ছায় মোহরানার কিছু অংশ মাফ করে দেয়, তাহলে তোমরা সানন্দে তা খেতে পারো।” (নিসা-৪)

মূলত: এ আয়াতে যে মাফের কথা এসেছে তা হতে হবে কোন রকম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চাপ ছাড়াই। স্বামীর আবেদনের ভিত্তিতে মাফ এ পর্যায়ে পড়ে না। কারণ স্বামীর আবেদনটিই স্ত্রীর উপর একটি সুস্পষ্ট মানসিক চাপ। যেটাকে অনেকে Emotional blackmail * বলেন। অনেকে একে রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কারণ এ আবেদন গ্রহণ না করলে দাম্পত্য জীবন সুখকর না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, অশান্তির আশংকা থাকে। তাই এক্ষেত্রে সূরা নিসার এ আয়াতটি সামঞ্জস্যশীল নয়। স্বামীর কোন আবেদন ছাড়াই যদি কোন স্ত্রী মাফ করে দেন তবে একমাত্র সেক্ষেত্রেই মাফ পাওয়া যায়।

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য স্ত্রীদের ঘাড়ে জবরদস্তি উত্তরাধিকারীর মতো চেপে বসা হারাম। তাদের নিজস্ব সম্পর্কে স্বাধীনভাবে খরচের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তোমরা তাদেরকে যে মোহরানা দান করছো জ্বালা-যন্ত্রণা বা চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করার চেষ্টাও করো না।” (নিসা-১৯)

এ সম্পর্কে শেখ মুহাম্মদ ইবনে আল-মুখতার আশ্-শানকিটি (President, Islamic Association of Lubbock, Texas, US) বলেছেন : “মোহর পাওয়া স্ত্রীর অধিকার আর দেয়া স্বামীর অবশ্য কর্তব্য। মূলনীতিগতভাবে স্ত্রী তা (আংশিক বা পুরোপুরি) মাফ করে দিতে পারে। কিন্তু স্বামী যদি মনে করে যে স্ত্রী তা লজ্জাবশত করেছে তবে স্বামীর মাফ পাওয়ার অধিকার থাকে না। কারণ ইসলামিক ফিকাহতে একটি নীতি আছে “যা কিছু লজ্জিত করে আদায় করা হয় তা চাপ প্রয়োগ করে নেয়ার শামিল।” তাছাড়া সূরা নিসার ৪নং আয়াত অনুসারে এটাই যথেষ্ট নয় যে মুখে মুখে মোহরানা মাফ করে দিলেই তা মাফ হয়ে যায় বরং স্বামীকে নিশ্চিত হতে হবে যে স্ত্রী নিজ থেকে সত্যিকার অর্থেই মাফ করে দিয়েছে।”

* Emotional blackmail is a form of psychological manipulation, employing a mixture of threats, appeals and emotionally punitive behaviour to control an intimate.It may occur between parents and children, husbands and wives, siblings or close friends.

বিষয়: বিবিধ

১৩২৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

229834
০৩ জুন ২০১৪ সকাল ০৮:১৯
লোকমান বিন ইউসুপ লিখেছেন : ইনসাফ ভিত্তিক মোহরানা নির্ধারনের উপায় কি?
০৩ জুন ২০১৪ সকাল ১১:০৩
176626
কানিজ ফাতিমা লিখেছেন : ১. নিজের বোনদের ও মেয়েদের বিয়ে দেবার সময় তাদের জন্য ইনসাফ ভিত্তিক মোহরানা চাওয়া

২. নামকরা বা ধনী শশুরের জামাই হবার বাসনা ত্যাগ করা

৩. বিয়ের সময় কেমন পাত্রী চাই ( সুন্দরী , লম্বা , ফর্সা , লেখাপড়া - সব চাই )তার লিস্ট কে তুলনামূলক ছোট ও বাস্তব সম্মত করা।
০৩ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৩
176832
হতভাগা লিখেছেন : যেহেতু মোহরানা ছেলেকেই দিতে হয় , সেহেতু ছেলেরই নির্ধারন করা উচিত কতটুকু সে স্পর্শ করার পূর্বেই শোধ করতে পারবে ।

একটা ২৫ বছরের ছেলে যে কি না সবে মাত্র চাকরিতে ঢুকেছে তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা মোহরানা যা কি না সে স্পর্শ করার পূর্বেই দিয়ে দেবে এমন আশা করা ছেলের উপর মেয়ে/মেয়েপক্ষের জুলুমেরই নামান্তর ।

স্ট্যাটাসে না মিললে অন্য জায়গায় মেয়েকে দিবে যেখানে তাদের স্ট্যাটাসের সাথে খাপ খায় । দুনিয়াতে কি পয়সা ওয়ালা ছেলের অভাব পড়েছে ?
229876
০৩ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
egypt12 লিখেছেন : এখন মাফ না করিয়ে কই করবে মোহরানা ১৫-২০ লাখের কমে মধ্যবিত্ত্যের মেয়েও দেয় না আবার সব দিয়ে দিলে নিজে ফকির হয়ে ভৃত্য হতে হবে এবং বউয়ের পরকিয়াও মুখ বুজে সহ্য করা লাগতে পারে Frustrated
০৩ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৬
176840
হতভাগা লিখেছেন : অধিক দেনমোহর যদি কল্যানের হত তাহলে রাসূল (সাঃ)ই তা করতেন । আমাদের মেয়েরা বা মেয়ে পক্ষরা যতই নিজেদের ইসলামমনষ্ক বলে তুলে ধরার চেষ্টা করুক না কেন , অধিক দেনমোহর যা কি না তার স্ট্যাটাস তার অপরাপর বোন বা কাজিনদের সমান তালে বা উঁচুতে নিয়ে যাবে - সেটা ধরতে তার কোন কালেও ভুল হয় না ।
229916
০৩ জুন ২০১৪ দুপুর ১২:২৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মাহর কে এখন অনেক পরিবারেই মেয়ের পরিবারের মর্যাদার সাথে মিলিয়ে ফেলা হয়। যে কারনে অত্যধিক মাহর নির্ধারন করা হয়। এই বিষয়টি নিয়েও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন।
230117
০৩ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৩
হতভাগা লিখেছেন : দেনমোহর একজন স্ত্রীর অধিকার , যেটা স্বামী দিতে বাধ্য ।


এখন , মাফ কথাটি কখন আসে ?

যখন কেউ কোন কিছু অন্যায় করে ফেলে/ কোন কাজ হতে অব্যহতি চায় এবং সংশ্লিষ্ট জনের কাছে তার কৃত কাজের জন্য অনুশোচনা করে - তখন মাফের কথাটি আসে ।

কখন মাফের কথাটি আসে ?

যখন দেনমোহরের বাকী অংশ এখনও দেওয়া হয় নি । সাধারনত বিয়ের সময় হাফ উসুল করে বাকী হাফ পরে শোধ করবে - এরকমটাই হয়ে আসছে আমাদের দেশে ।

একজন স্বামী যার কি না দেনমোহর ৫ লাখ তার স্ত্রীর কাছে ( হাফ মানে ২.৫ লাখ উসুল করা হয়ে গেছে বিয়ে পড়ানোর সময়) দেনমোহর মাফ চাবার সম্ভাবনা বেশী , নাকি যার এখনও ৭.৫ লাখ টাকা (মানে ১৫ লাখ )বাকী।

যে স্বামী সারাটা জীবন তার ভরনপোষন করবে যার পরিমান দেনমোহরের বাকী অংশের চেয়েও কয়েকগুন বেশী হবে , সে কেন মাফ চাইবে ?

হ্যাঁ , মাফ চাইতে পারে । যদি দেনমোহর তার সামর্থ্যের চেয়েও বেশী ধরা হয় ।

সাধারনত মেয়ে/মেয়েপক্ষ উপরে উপরে ভাল ছেলে খুঁজলেও তলে তলে তারা টাকা পয়সাকেই প্রাধান্য দেয় ।

পান চিনির সময় মূলত দেনমোহরের বিষয় নিয়েই কেওয়াস হয় । ''মেয়ের অন্য বোনদের এত নির্ধারন হয়েছিল , ওরটা এর চেয়ে কম ধরলে তার মন খারাপ হবে । তাছাড়া ছেলে তো এটা এক সাথেই দেবে না ( অথচ শরিয়তে বলাই আছে স্পর্শ করার পূর্বে শোধ করতে ) আস্তে আস্তে শোধ করবে । সবসময়ই তো তার এরকম অবস্থা থাকবে না , সেও তো একসময় ভাল কামাতে পারবে '' - এরকম একটা স্ট্যাটাসের প্যাঁচে ফলে মেয়েপক্ষের কথাতেই বেশী দেনমোহর ধার্য্য করা হয় ।

যদি ছেলের নিয়ত ভাল হয় , মানে সে যদি দেনমোহরের ব্যাপারে কনসাস থাকে তাহলে সে মাফই চাইবে স্ত্রীর কাছে , কারণ শরিয়ত মোতাবেক তাকে তো শোধ করার কথা এটা স্পর্শ করার আগে । নিজের লিমিটেশন বুঝে তার মাফই চাওয়া উচিত । কারণ , এই বাকী দেনমোহর যদিও সে ১০ বছর পরে গিয়ে শোধ করতে পারলো , তাকে কিন্তু এই ১০ বছর স্ত্রী ভরনপোষন ছাড়াও বিভিন্ন আবদার ও লাক্সারী পূরন করতে হবে উপহার স্বরুপ যা কি না হিসেব করলে দেখা যাবে যে বাকী দেনমোহরের চেয়েও বেশী ।

কিন্তু স্ত্রীরা এসব নগদ/উপহার ভালই হাতালেও কখনও স্বামীকে এটা বলে না যে , ''আমাকে এসব উপহার না দিয়ে তুমি বরং আগে দেনমোহর শোধ কর ।

তাদের মাথায় থাকে '' নগদ যা পাও হাতে পেতে নাও ''

এই অতি নির্ধারিত দেনমোহরের লায়াবিলিটিজ থেকে স্ত্রীর কাছে অব্যহতি চাওয়াই হল মাফ চাওয়া ।

আল্লাহ তায়ালা এটার প্রতিই ইঙ্গিত দিয়েছেন । উনি সবকিছই জানেন । সামনে কি ঘটবে তাও জানেন । তিনি জানেন যে কিছু কিছু ছেলের বেশী দেন মোহর দিতে হবে , কারও সামর্থ্যের ভিতর থাকবে , কারও থাকবে বাইরে । সে জন্যই তিনি মাফ কথাটি এখানে বলেছেন ।

তবে সব স্বামীই যে মাফ চায় তা না । আর স্ত্রী যদি স্বামীর মাফ চাওয়ার আগেই বা স্বামীর দেওয়ার নিয়ত থাকার পরেও দেনমোহরের বাকী অংশ নিজের থেকে নিতে না চায় সেটা মাফ করা বলা যায় না , সেটা হল ছাড় দেওয়া ।
০৪ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:০৭
177044
egypt12 লিখেছেন : Rose Rose Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File