স্বামী-স্ত্রীর প্রাইভেসী- ২
লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ০২ জুন, ২০১৪, ১০:১০:৫৪ সকাল
ইমেইলের পাসওয়ার্ড এর ব্যাপারটি আরেকটু সুস্পষ্ট করার জন্য কিছু অনুরোধ এসেছে। এব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গী হলো বিষয়টি স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর ও পরিস্থিতির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। সাধারণ পরিস্থিতিতে পাসওয়ার্ড দেয়া বা না দেয়া কোনটাই নিন্দনীয় নয়। তবে কয়েকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে -
১. পাসওয়ার্ড জানতে না চাওয়া উত্তম। চাইলে সেটা পরোক্ষ ভাবে বলা হয় যে "আমি তোমার প্রাইভেসী কে বিশ্বাস করিনা।" একজন পাসওয়ার্ড চাইলে অন্যের পক্ষে এটা বলা কঠিন যে " আমি দিতে চাই না ". ফলে এটা একধরনের পরোক্ষ চাপ।
২. না চাইতেই যদি একজন আরেকজনকে পাসওয়ার্ড দিয়ে দেয় তবে দোষের কিছু নেই।
৩. স্বামী -স্ত্রী দু'জনকেই বুঝতে হবে প্রাইভেসী মানেই শিথিল সম্পর্ক না। উদাহরণ দিচ্ছি - আমার বোন্ যদি আমার কাছে তার মেয়েলী গোপন কোনো বিষয়ে পরামর্শ চায় ইমেইলে তবে আমার হাসবেন্ডের সেটা না জানা উত্তম। আমার মা যদি আমার বাবা সম্পর্কে কোনো অভিযোগ করে আমার কাছে তবে আমার স্বামীর তা না জানা উত্তম। অন্যদিকে আমার হাসবেন্ডের ভাই বা বন্ধু যদি তাদের পুরুষালী কোনো কিছু নিয়ে মেইল করে সেক্ষেত্রে আমার জন্য সেটা জানা এম্বারাসিং। আমার ননদ যদি আমার সম্পর্কে কোনো অভিযোগ করে আমার স্বামীর কাছে তবে আমার তা না জানাই ভালো ( আমার স্বামীর দায়িত্ব আমাকে না জানিয়ে তার বোনকে বাস্তবতা বুঝিয়ে বলা) । তাই সব সম্পর্কেই একটা প্রাইভেসীর জায়গা থাকে যাকে রেসপেক্ট করতে হয়। যারা বলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো প্রাইভেসী নেই - তারা সেটা বাস্তবতার পুরোটুকু না বিবেচনা করেই বলে।
আমি নিজে দু'টি ঘটনা খুব কাছ থেকে জানি যেখানে স্বামীরা নিয়মিত তাদের স্ত্রীদের মেইল চেক করেন (মজার ব্যাপার হলো দুজন বাংলাদেশী হাসবেন্ডই উন্নত বিশ্ব থেকে পি এইচ ডি করা। আমি এটা একথা বোঝানোর জন্য বলছি যে এ ঘটনা শিক্ষিত মহলেও ঘটছে) - স্ত্রীরা তা ঘৃনা করেন। তারা নিজেরা আমাকে তা অনেকবার বলেছেন (একজন বলেছেন আমি এখানে অসহায় কিন্তু ঠিকই আল্লাহর কাছে বিচার দেব )। মনে মনে ঘৃনা করলেও মুখে তারা কিছু বলতে পারেন না সংসারে অশান্তি হবে এই আশঙ্কায় । এমনটা নিন্দনীয়, কঠিন নিন্দনীয় । মনে রাখতে হবে নতুন ইমেইল আড্ড্রেস খোলা কোনো ব্যাপারই না, ইমেইল দিয়ে কারো ওপর খবরদারী করতে যাওয়া একেবারেই হালকা বুদ্ধির কাজ।
একমাত্র বিশেষ পরিস্থিতি যেখানে স্বামী বা স্ত্রীর নৈতিক ব্যাপারে সন্দেহ তৈরী হয়েই গেছে - সেখানে কেউ চাইলে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারে। এটা বিশেষ পরিস্থিতির জন্য একটা স্ট্রাটেজি মাত্র।
স্বামী স্ত্রীর প্রাইভেসী -৩
কেস স্টাডি -
যদি এমন হয় স্বামী স্ত্রী এক রুমে অবস্থান করছে। এমন সময় স্বামীর পরিবারের কেউ তাকে ফোন করলো। স্বামী ফোন রিসিভ করে স্ত্রীর সামনে থেকে উঠে বাইরে চলে গেল।
এসময় স্ত্রীর কেমন অনুভব হবে ?
খুব সভাবতই স্ত্রী অপমান বোধ (insulting) করতে পারে। অবিশ্বাসের পরে যে বিষয়টি দাম্পত্য সম্পর্ক শিথীল করে তা হলো অবজ্ঞা বা অপমান ( insulting) ।
এক্ষেত্রে করনীয় কি ? প্রশ্ন আসতে পারে যে ফোনের ওপারের জন যদি এমন কিছু বলে যা স্ত্রীরে সামনে আলোচনা না হওয়াই উত্তম তবে কী করতে হবে ?
আমার মনে হয় সেক্ষেত্রে স্ত্রীর সামনে থেকে চলে না গিয়ে স্বামী অন্যভাবে দুই কুল রাখতে পারে। যেমন, ফোনে বলা যেতে পারে - "আমি পরে ফোন করছি " বা " কাল দুপুরে কী আপনি ফ্রি আছেন? আমরা তখন কথা বলি " - এজাতীয় কিছু। আমাদের মনে রাখা দরকার অবিশ্বাসের পরে যে বিষয়টি দাম্পত্য সম্পর্ক শিথীল করে তা হলো অবজ্ঞা বা অপমান।
বিষয়: বিবিধ
১৫১৫ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে আপুকে ধ ন্যবাদ
০ ৩নং- মেয়েলী সমস্যা বা বাবার দোষের আড়ালে পুরনো প্রেমিকের সাথে আলাপ আলোচনা লুকানো হয় । এতই যদি ক্লিন হবে তাহলে স্বামীকে এসব নিয়মিত দেখাতো । ফলে স্বামীই এক সময়ে আর চেক করতে আসতো না ।
এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ মেয়েরাই তাদের পুরনো প্রেমিকের সাথে বা পরকীয়া করে বলে ঢাক ঢাক গুড় গুড় করে ।
ফোন আসলে স্বামী সামনে থাকলে সন্দেহ করবে বা বাইরে গেলে জেনে যাবে কেউ না কেউ । কিন্তু ইমেইল চালাচালি হলে পাসোয়ার্ডের বাধা থাকবে , ফলে কেউ সন্দেহ করতে পারবে না । বলবে যে নেটে কাজ করছিলাম ।
০ [b]স্বামী স্ত্রীর প্রাইভেসী -৩
এই পর্ব ২ নং টার সাথে কন্ট্রাডিকটরী । ২ নং স্বামীকে বুঝাচ্ছেন স্ত্রীর ই-মেইল পাসওয়ার্ডের ব্যাপারে কিউরিয়াস না হতে (কেউ কেউ নাকি আল্লাহর কাছে নালিশ করবে), আবার এটাতে বলছেন স্বামী ফোন রিসিভ করে একটু দূরে সরে গেলে স্ত্রী অপমানিত বোধ করতে পারেন ।
অপমান কি শুধু স্ত্রীরাই বোধ করে , স্বামীরা না ? ই-মেইলের পাসোয়ার্ড যদি স্ত্রীর প্রাইভেসী হয় তাহলে স্বামীর ফোনে কথা বলার প্রাইভেসী থাকবে না ? স্ত্রী যদি ৩ নংয়ে অপমানবোধ করে তাহলে স্বামীও তো ২নং এ আরও বেশী অপমানবোধ করার কথা , কারণ স্বামীর উপরই তো স্ত্রীর টেককেয়ার নির্ভর করে ।
০ একজনকে সন্দেহ করা যাবে না , আরেকজনকে সন্দেহ করা যাবে - কি চমতকার দ্বৈত মানসিকতা !
সবকটি ঘটনারই মূল কথা হচ্ছে - অন্যকে অবিশ্বাস না করা, একইসাথে অন্যর অবিশ্বাসের কারণ তৈরী না করা।
০ এটার সাথে একমত । কিন্তু আপনার উপরের দুটি ঘটনার সাথে কোটেড করা লাইনের কোনই মিল নেই ।
***************************************************************
উভয় ঘটনাতেই স্ত্রীদেরকে গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটা তার প্রাইভেসী রক্ষার্থে ২ নংটাতে এবং ৩নংটাতে পুরুষের প্রাইভেসীর কাছে স্ত্রীদের অপমান বোধকে উপরে এনে।
***********************************************************
২নংটাতে যেখানে স্ত্রীর প্রাইভেসীকে গুরুত্ব দিয়েছেন , ৩নংটাতে পুরুষদের তাদের প্রাইভেসীকে স্ত্রীর অপমানবোধের সাথে কম্প্রোমাইজ করতে বলেছেন ।
কেন , প্রথমটাতে কি স্ত্রীর প্রাইভেসীকে স্বামীর অপমানবোধের সাথে কম্প্রোমাইজ করতে বলা যেত না ?
***************************************************************
২নং এ স্ত্রীর পাসওয়ার্ড প্রাইভেসীর ব্যাপারে স্বামীর কিউরিসিটির কারনে বলতে চাইছেন ''এমনটা নিন্দনীয়, কঠিন নিন্দনীয় ।''
আবার স্বামীর এই জাসুসিগিরি যে আসলে কোন কাজেই আসবে না সেটা বলছেন এরকম বলে --
''মনে রাখতে হবে নতুন ইমেইল আড্ড্রেস খোলা কোনো ব্যাপারই না, ইমেইল দিয়ে কারো ওপর খবরদারী করতে যাওয়া একেবারেই হালকা বুদ্ধির কাজ।''
**************************************************************
৩নং এ স্বামী যদি ফোন পেয়ে দুরে সরে গিয়ে কথা বলে বিধায় স্ত্রীর অপমান হয় , ফলে স্বামীদের বুঝাতে চাইছেন দুকুল রক্ষা করতে -
''আমার মনে হয় সেক্ষেত্রে স্ত্রীর সামনে থেকে চলে না গিয়ে স্বামী অন্যভাবে দুই কুল রাখতে পারে। যেমন, ফোনে বলা যেতে পারে - "আমি পরে ফোন করছি " বা " কাল দুপুরে কী আপনি ফ্রি আছেন? আমরা তখন কথা বলি " - এজাতীয় কিছু। ''
**************************************************************
## আমার আসলে বোঝার সমস্যা হচ্ছে না , আমি আবারও পড়েছি এবং ঠিকই বুঝেছি । ঘটনা ২টি প্রায় একই রকম , তবে লিঙ্গভেদে আপনার দ্বৈত মানসিকতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি বিধায় আপনিই ''আবার পড়েন'' '' খুঁত ধরার জন্য পড়ছেন '' এরকম বলে এড়িয়ে যেতে চাইছেন । এটা খুব কমন ,পুরনো ও ব্যর্থ একটা টেকনিক বর্তমান সাইবার জগতে ।
আমিই আপনাকে বলছি , আমার এই মন্তব্যের প্রতি মন্তব্যে আপনি যা বলেছেন এবং ঘটনা ২ ও ঘটনা ৩ এ আপনি যা লিখেছেন তার জন্য আপনিই আপনার নিজের পোস্টটা আবার পড়ুন ।
দুই নং ঘটনায় একজন আরকেজনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেইল চেক করছে ( সক্রিয় অনুপ্রবেশ )
আর তিন নং ঘটনায় স্ত্রী কোনো সক্রিয় অনুপ্রবেশ করছে না, বা স্বামীকে তার প্রিভেসীর সময় খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে যাতে তা দৃষ্টিকটু না করে সম্মানজনক করা হয়। এতে কেউ তার প্রাইভেসী নিয়ে নিচ্ছে না।
এত বড় পার্থক্যটা চোখে পড়ল না ?
০ কার জন্য সন্মানজনক ? স্ত্রীর জন্য ? কতটুকু সন্মান করে সে তার স্বামীকে যে স্বামীরই বাধ্য হয়ে সক্রিয় অনুপ্রবেশ করতে হয় ? যার সাথে সারাটা জীবন থাকার কথা তার সাথে লুকোচুরির কি আছে ?
তার সংসারের জন্য যদি ক্ষতিকর এমন কিছুর আশংকা থাকে তাহলে সে সক্রিয় অনুপ্রবেশ করতেই পারে । কেনেডির মারা যাবার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের এফবিআই এর রিপোর্ট অনুযায়ী চলতে হয় । জানেন তো ক্লিনটন বাংলাদেশে এসে স্মৃতিসৌধ যান নি কি কারণে ? প্রেসিডেন্টের তথা দেশের ক্ষতি হলে এফবিআইকেই/গোয়েন্দা সংস্থাকেই সবাই দুষবে ।
যেখানে স্বামী একটু আড়ালে গিয়ে কথা বললেই অপমান এসে যায় সেখানে আপনি পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করে যে লুকোচুরি করছেন তা কিছুই না ? কি অবাক করা মানসিকতা নিয়ে আপনারা জীবন যাপন করেন / সংসার করেন ?!
এসব লুকোচুরির ফলে যদি সংসারে আগুন লেগে যায় তখন স্বামীকেই সবার আগে কৈফিয়ত দিবে হবে - তোমার এতটা লিবারেল হওয়া উচিত হয় নি ।
আপনার নিজের ছেলে/মেয়েরও তো প্রাইভেসী আছে । সে কোথায় গেল , কি করলো না করলো , কার সাথে মিশছে - মা হিসেবে আপনাকেই তো তার উপর নজর রাখতে হবে সে ঠিকঠাক চলছে কি না । যদি কোনভাবে সে ডিরেইলড হয়ে যায় - তাহলে আপনি কি এই বলে পার পাবেন যে '' আমি চাই নি তার প্রাইভেসীতে হস্তক্ষেপ বা সক্রিয় অনুপ্রবেশ করতে '' ।
সবাই বলবে , আপনার সন্তান এই রকম অবস্থা হল ! আপনি কি করছিলেন ?
বড় পার্থক্য কোনটাকে বলছেন ? এটাকে তো আমি পার্থক্য মনেই আনি নাই ! একজনের প্রাইভেসী ভাঙ্গা যাবে না , অন্যদিকে তাকে সন্মান করে ফোনকারীকে বলতে হবে '' "আমি পরে ফোন করছি " বা " কাল দুপুরে কী আপনি ফ্রি আছেন? আমরা তখন কথা বলি " ?
এটাকে তো পার্থক্য বলে না , এটা হলো ভাব নেওয়া ।
''আমি নিজে দু'টি ঘটনা খুব কাছ থেকে জানি .....'''
বোঝাই যায় যে আপনি ঐসব ফ্যামিলির খুব আপনজন , কারণ তাদের কাছে গিয়ে দেখতে পেয়েছেন ঘটনাগুলো । এতে কি ঐসব ফ্যামিলি মেম্বারদের প্রাইভেসী নষ্ট হয় না আপনার সক্রিয় অনুপ্রবেশ করার কারণে ?
আপনি স্বামী/স্ত্রীর বাইরের কেউ হয়ে যদি ঐসব ফ্যামিলির ঘটনা কাছ থেকে দেখেন সেটা যদি প্রাইভেসী হেম্পার না করে তাহলে স্বামী তার স্ত্রীর ব্যাপারে যদি ফোর্সফুলিই সক্রিয় অনুপ্রবেশ করে তাহলে সে সঠিক কাজই করেছে - সেটা তার ফ্যামিলির জন্যই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন