ডগীর ঘর

লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১০:১৯:৪১ সকাল

ঠান্ডার জন্য গতসপ্তাহে স্কুল বন্ধ ছিল দুইদিন। এ এলাকার নিয়ম হল তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ এর নীচে গেলে স্কুল বন্ধ থাকে। মা-ই-না -স ফো-র -টি! জীবনেও উপলব্ধি করি নাই। বাসা থাকে স্কুল এক মিনিটের হাটা পথ; হিজাবের উপরে হুডি, তার ওপরে ভারী কুশনের টুপি, তার উপরে জ্যাকেটের হুড , নাকে উলের নাক ঢাকা , সর্বপরে চশমা - তারপরও মনে হয় চোখ ঠান্ডায় জমে যাবে।

এত ঠান্ডায় কুকুরগুলো কিভাবে যে বাঁচে আল্লাহই জানে। ঘরে যত পলিথিন , কাঠের টুকরা ছিল যোগাড় করি , পেছনের ডেকে একটা ভারী কাপড়ের ব্যানারের মত ছিল পেরেক মারা , রান্না ঘরের বাটারের ছুরি দিয়ে অনেকক্ষণ টানা টানি করে কোনো মতে খুলি, উহুরে- হাত দুটোতে যেন হাজার সুচের হুল । গ্লাভস পরে এই হাতুড়ে মিস্ত্রী মার্কা কাজ করা যায়না- তাই এই অবস্থা। চুলার উপর সেকে হাত গরম করি । এরপরও স্নো আর পাগলা বাতাস আটকাতে পারে এমন ঘরের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হলনা। গার্বেজ বিনের কাছে কাদের আসবাবের ভাঙ্গা অংশ পরে আছে - তাও আনা হলো। তারপর অনেক জোড়া তালি দিয়ে তৈরী হলো ডগীর ঘর। ঘরের মধ্যে আরামের জন্য দেয়া হলো বালিশ- আমার husband বলে " ডগীর ফাইভ স্টার" । এবার ডগীকে ঘরে ঢোকানোর পালা। ওকে ঘরের মধ্যে বিস্কিট ছুঁড়ে দিলাম - বিস্কিট খেয়ে বের হয়ে আসে। কি যন্ত্রণা- ঘর কি পছন্দ হয় নাই ? কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম কী সমস্যা হয়েছে - বাতাস আটকানোর জন্য এক কোণে দরজা দিয়েছি। কিন্তু ডগির ঘরের ভেতর থেকে বাহিরের গেট ও পথ দেখা না যাওয়ায় সে সাচ্ছন্দ বোধ করছে না - ফলে পরেরদিন আবার মিস্ত্রিগিরী।

রাতে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করি আমাদের শ্রম কতটা স্বার্থক হলো। দেখলাম ডগি ঘরে ঢুকছে - মিশন একমপ্লিশড। এরপর থেকে এলাকার অন্যরা ওকে কমই দেখে - তার প্রিয় "ফাইভ স্টার" ছেড়ে এই ঠান্ডার মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া সে আর বের হয়না। শুধু স্কুল থেকে আসার সময় দৌড়ে গিয়ে অর্ধেক পথ থেকে এগিয়ে নিয়ে আসে আর আনন্দে লেজ নাড়াতে নাড়াতে চার দিকে ঘুড়ে লাফাতে থাকে। স্বজাতি থেকে অনেক দুরে থাকার ফাকা অনুভুতিটা যেন ফিকে হয়ে আসে।

বিষয়: বিবিধ

৮৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File