তায়েফ বনাম মদিনা : পূর্ব বনাম পশ্চিম

লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ১৪ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:৫৫:৪৮ সকাল

আপাতত লেখাপড়া শেষ, এখন চাকরীর পালা। কানাডায় জীবন যাত্রার মান উন্নত হলেও চাকরীর বাজার ভালনা - বিশেষ করে ইমিগ্রান্টদের জন্য। ভাষার সীমাবদ্ধতা একটা বিরাট বাধা - যত ভালো ইংলিশ বলিনা কেন ওদের মত শোনায় না। সম্ভবও না; আমাদের জেহব্বা ভিন্ন নড়াচরায় অভ্যস্ত - তাছাড়া আমাদের কথাগুলো একটু বুকিশ শোনায়। যাই হোক, এ বাস্তবতা নিয়েই আগানো - সুবিধা ভোগ করব কোনো অসুবিধা ছাড়াই- এটাত পৃথিবীর নিয়ম না । দরজায় তালা দেয়া দুরের কথা, কোনো কোনো দিন দরজা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে যাই - কোনো দিন চুরি হয় নাই- কেউ বলে না " কারো বেড রুম পাহারা দেবার দায়িত্ব আমার না"।

সে যাই হোক, এবার তল্পিতপ্ল্পা গুছিয়ে এশহর ছেড়ে অন্য শহরে আস্তানা গড়ার পালা - কিন্তু কোনদিকে যাব? পূর্বে নাকি পশ্চিমে। পশ্চিমে স্বজাতির (বাংলাদেশী) সংখ্যা কম, শীত বেশী - কিন্তু অনেকেই বলছে ওখানে চাকরীর বাজার ভালো। পূর্বে স্বজাতী বেশী কিন্তু চাকরী নাই বললেই চলে - ডিগ্রীর বোচকা নিয়ে ঘরে বসে থাকা আমার ভালো লাগেনা। পূর্বে রেসুমী পাঠালাম - কিছু নাড়াচাড়াও টের পেলাম। তার মানে চেষ্টা করলে পূর্বে আমার খুব একটা সমস্যা হবেনা - আবার পশ্চিম থেকেও সাড়া পাচ্ছি ; স্বাস্থ্য সেবাটা কোনদিকে ভালো হবে বুঝতে পারছি না। এতদিন পূর্বে ছিলাম তাই পূর্বটা চেনা - কিন্তু এখানে মানুষ খুব বেশী একে অন্যের পিছনে লেগে থাকে (যদিও আমরা সবাই বাংলাদেশী) , একুশে ফেব্রুয়ারীতে একই রাস্তার দুদিকে দু'টা শহীদ মিনার হয় - ভালো লাগেনা। আমদের অতিরিক্ত "চেতনা " সচেতনতা আমাদের এক করতে পারেনি - তাই প্রত্যেকেই যার যার চেতনা নিয়ে খন্ডিত। পশ্চিমের বাংলাদেশীরাও নাকি বিচ্ছিন্ন - খুব একটা দেখা সাক্ষাত নেই একে অন্যের। এভাবে কত কিছু মেলাই , কত কিছু ভাবি , যোগ বিয়োগ করি। চেষ্টা করি বুঝতে- সব মিলিয়ে কোনটা ভালো হবে। মানুষ কি আসলেই জানে তার জন্য কোনটা ভালো? সবসময় না। কোনদিন ভাবিনি কানাডায় আসবো - এমনকি আসার একবছর আগেও ঘুনাখ্খরেও কানাডার কথা মনে আসেনি- ইংল্যান্ড, আমেরিকা , অস্ট্রেলিয়া এমনকি ডেনমার্কের বিশ্ববিদালয়ে এপ্লাই করেছি - কানাডা সার্চও করিনি। কিন্তু কি হল ? শেষ পর্যন্ত সেই কানাডা - সেই দেশ যার নাম শুনলে বাংলাদেশে বসেই শীতে কাপতাম। তাই ভাবছি আল্লাহ শেষে কোথায় নেন দেখা যাক।

মরুভুমির মাঝে গোটা তিনটা বছর নির্বাসীত হয়ে প্রায় অনহারে থেকে যখন রাসুল স: নিজেও দুর্বল তখন এই কষ্টের ধাক্কা সামলে না উঠেতে পেরে খাদিজা রা আর আবু তালিব দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। রাসুল স এমন দুই সহযোগী হারিয়ে নিশ্চিত হলেন মক্কা আর তার ও মুসলমানদের জন্য নিরাপদ নয়। ভাবলেন তায়েফে গেলে ভালো হবে , তায়েফের গোত্রপতি দুই ভাই রাসুলের স বংশের সাথে সম্পর্কিত, তাছাড়া তায়েফ সমৃদ্ধ এলাকা .... তাই রাসুল স পালক পুত্র জায়িদকে নিয়ে রওয়ানা হলেন তায়েফে। তায়েফ এর লোকেরা রাসুল সা কে জায়গা দেয়া দুরের কথা সামান্য মানবিক সম্মানটুকু দেখাতে ব্যর্থ হলো - তায়েফের তরুণ প্রজন্মকে উস্কে দিল দুই গোত্রপতি - কারণ রাসুল স এলে তাদের নেত্রিত্বে টান পড়তে পারে - তরুনরা তা বুঝতে পারল না। তায়েফে তরুণ প্রজন্মকে বলা হলো " ইনি বহিরাগত - তাকে প্রতিহত কর "। তরুণ প্রজন্ম ভুলে গিয়েছিল যে এই দুই গোত্রপতিও মাত্র দুই-এক পুরুষ পূর্বে মক্কা থেকেই এসেছে।....তরুনরা নিজ গোত্র চেতনায় রাসুলের স: দিকে পাটকেল ছুড়তে লাগলো- অপরদিকে আরেক তরুণ জায়েদ নিজের শরীর দিয়ে রাসুলকে আগলাতে চাইলেন, কিন্তু খুব একটা লাভ হলনা - মাথার রক্ত বেয়ে পায়ের চটি ভিজে গেল।

রাসুল স যখন বুঝলেন মক্কা তার জন্য নিরাপদ নয় আর তায়েফও তাকে গ্রহণ করবে না তখন ভগ্ন হৃদয়ে আল্লাহর সাহায্য চাইতে লাগলেন। আর তখনই আসলো মদিনার আহবান - সেই মদিনা যার জনগণ তাকে জীবনের চেয়েও বেশী ভালবাসল - তার নেতৃত্বে গড়ে তুলল এক অনবদ্য সভ্যতা। আমি জানি মক্কা আর তায়েফের রাস্তা বন্ধ হলে মদিনার রাস্তা খুলে যায় - হে আল্লাহ, তুমি জানো আমার মদিনা কোনদিকে - তুমি আমাদের মদিনার পথ দেখিয়ে দাও ....

বিষয়: বিবিধ

১৬৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File