বর্তমান সময় ও মুসলমানদের করনীয়
লিখেছেন লিখেছেন কানিজ ফাতিমা ৩১ জুলাই, ২০১৩, ০৪:৫৭:৩১ রাত
বর্তমান সময় ও মুসলমানদের করনীয়
বাংলাদেশ, মিশর বা বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে আমি কয়েকটি বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি - গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা এ বিশ্বাস কে আরো পাকা করেছে। আমরা যারা ইসলামকে সত্যি ভালবাসি তাদের আবেগ ছেড়ে বাস্তবতায় আসতে হবে। মুসলমানদের চারটি Priority area তে অনেক বেশী কাজ করতে হবে-
১. জ্ঞান ও গবেষণা - আধুনিক জ্ঞান, উচ্চতর লেখাপড়াকে "দুনিয়াবী" হিসাবে দেখার প্রবণতা মুসলমানদের জ্ঞানের দিক থেকে মারাত্বক ভাবে পিছেয়ে রেখেছে। একবার চারপাশে তাকাই - একটা জিনিস ও কি খুঁজে পাই যা মুসলমানদের তৈরী? যে ল্যাপটপ টাতে ইসলাম নিয়ে লিখছি সেটা মুসলমানদের আবিস্কার না, যে বাতির আলোতে লিখছি সেটাও না , যে ফেসবুকে বা ব্লগে এটা প্রকাশ করব এমনকি সেগুলোতেও মুসলমানদের কোনো অবদান নেই. আমরা দুইটাকা ভিক্ষুককে দেয়াকে সোয়াবের কাজ হিসাবে যতটা প্রচার করি, ইলেকট্রিসিটি আবিস্কার করে মানবসভ্যতার অভূত কল্যাণ সাধনকে তার দশভাগের একভাগও সোয়াবের কাজ হিসাবে ওয়াজ করি না. জ্ঞান ও গবেষনার প্রতি এই বৈরী মনোভাব আমাদের যুগে যুগে পেছনের থেকে আরো পেছনের সারিতে ঠেলে দিয়েছে। শুধুকি ব্যবহারিক জ্ঞান? এগুলোকে "দুনিয়াবী" বলে দুরে সরিয়ে যে ইসলামকে নিজেদের বলে দাবী করছি সে ইসলামের জ্ঞানের অবস্থাও ভালো না . সাধারণ লোক বাদই দিলাম , ইসলাম পালন করেন এমন মানুষেদের সঙ্গে কথা বললেও বোঝা যায় ইসলাম নিয়ে জ্ঞান আনুষ্ঠানিক ইবাদতেই সীমাবদ্ধ। বিশ্বের দিকে তাকালে দেখি ইসলাম নিয়ে গবেষণা খুব কম জায়গাতেই হয়. জ্ঞান ও গবেষণাকে আমরা এতটাই দুরে সরিয়েছি যে ইসলামী জ্ঞান ও গবেষণাও এখন প্রায় রহিত। আমরা প্রায় ভুলেই গেছি যে মানুষ সৃষ্টির পর সবার আগে আল্লাহ ফেরেস্তাদের সামনে মানুষের যে বিশিষ্ট্য তুলে ধরে ছিলেন তা ছিল তার জ্ঞান (বাকারা ৩০-৩২); আর রাসুলের (স) কাছে প্রথম যে নির্দেশ এসেছিল তাহলো "পড়"। আমাদের জ্ঞানের দিকে জোর না বাড়ালে আমরা পিছিয়ে থাকব, মারও খাব ।
দেশে তথা সারা বিশ্বে প্রচুর স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি হওয়া দরকার যেখানে ইসলামিক ও ব্যবহারিক সব শাখার জ্ঞানের চর্চা হবে, প্রচুর scholarship / funding থাকা দরকার মেধাবী ছাত্র- ছাত্রী দের জন্য।যাকাত একত্রিত করে এমনটা করা খুব কঠিন কিছুনা। প্রচুর শিক্ষক শিক্ষিকা তৈরী করতে হবে, যারা আদর্শ ও জ্ঞান - দুই দিকেই হবে তুখোর। কিছু শিক্ষকদের বিশ্ব বিখ্যাত বিশ্স্ববিদ্যালয়ে ট্রেনিং করাতে হবে।
২. মিডিয়া - প্রায়ই অভিযোগ শুনি 'মুসলমানদের পক্ষে কোনো মিডিয়া কথা বলে না'। বলবে না এটাই স্বাভাবিক। যারা ইসলাম পছন্দ করে না বা যারা শুধু মাত্র বংশগত মুসলিম, ইসলামের জীবন ব্যবস্থার ৯০ ভাগকে ফেলে দিয়ে শুধু আনুষ্ঠানিক কয়েকটি ইবাদত কোনো রকম পালনকেই যথেষ্ট মনে করেন তাদের টাকায় বা মেধায় চলা মিডিয়া বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দিবে, মুসলমানদের উপর হওয়া নির্যাতনকে তুলে ধরবে, এমনটা আশা করা অর্থহীন। মুসলমানরা যদি চায় যে মিডিয়া তাদের কথা প্রচার করবে তবে মুসলমানদের নিজেদের মিডিয়া , মিডিয়া টেকনোলোজি , মিডিয়া ফিগার থাকতে হবে। প্রচুর নারী - পুরুষ সাংবাদিক তৈরী হতে হবে, বিশ্ব মানের সাংবাদিক তৈরী করার জন্য স্কলারশীপ দিয়ে মেধাবীদের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে। ফিল্ম-নাটক তৈরী করার জন্য যোগ্য লোক তৈরী করতে হবে, প্রয়োজনীয় technology থাকতে হবে।
বেশীরভাগ মানুষই স্রোত যেদিকে যায় সেদিকে ভেসে চলে। বর্তমান সময়ে সমাজের স্রোতকে সবথেকে বেশী প্রভাবিত করছে মিডিয়া। কাজেই বাসের পেছনের সীটে বসে ড্রাইভার' ভুল পথে চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করার থেকে অনেক বেশী কার্যকরী হলো নিজেরাই বাস চালাতে শিখে নিয়ে ওই চালকের সীটে বসা।
বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া তে মুসলমানদের অবদান রাখতে হবে, ধীরে ধীরে নিজেদের সোশাল মিডিয়া তৈরীর দিকে আগাতে হবে;নিজেদের ফেসবুক, ইউ টিউব এর মত মিডিয়া তৈরীরে কথা ভাবতে হবে । আমরা যখন বিতর্ক করি এগুলো ব্যবহার জায়েজ নাকি নাজায়েজ তখন অন্যেরা এই technology তৈরী করে। আমরা technology তৈরীতে তাদের followerও হতে পারিনি; আমরা এগুলোর ব্যবহারকারীদেরও মধ্যেও পেছনের সারির এবং সেখানে থেকে আমরা আশা করছি আমরা বিশ্বের নেতৃত্ব দেব।
৩. Parenting ও চাইল্ড কেয়ার - মুসলমানদের Parenting এ দক্ষ হতে হবে যাতে নিজেদের সন্তানরা হারিয়ে না যায় , উপরন্তু পুরো জাতির ভবিষ্যত নাগরিক তৈরীতে তারা অবদান রাখতে পারে। Parenting নিয়ে প্রচুর গবেষণা দরকার, এবং এর উপরে প্রচুর বই / লেখা প্রকাশিত হওয়া দরকার ; যারা এ নিয়ে কাজ করছে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। শিশুদের জন্য প্রচুর মূল্যবোধ ভিত্তিক বই দরকার, শিশুতোষ বই নিয়ে গবেষণা দরকার ।
৪. Technology - Technology এখন আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। মুসলমানদের অন্ততপক্ষে media technology ও শিশুদের খেলা বিষয়ক technology তে প্রচুর অবদান রাখতে হবে।শিশুদের জন্য মূল্যবোধ ভিত্তিক কার্টুন দরকার।
সব শেষে মুসলমানদের সব কিছুকে না বুঝেই " হারাম" বলে প্রতাখ্যান করার (কিছুদিন পরে সেটাকেই আবার হালাল হিসাবে মেনে নেয়া) অভ্যাস পাল্টাতে হবে। কোনো কিছু নতুন আসলেই আমরা ২০-৩০ বছর সেটাকে হারাম করে রাখি ( যেমন টেলিভিশন, ইন্টারনেট); তারপর অনেক দিন পরে সেটার ব্যবহার বুঝি।এটা আমাদের অনেক বছর পিছিয়ে দেয়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন