ঢাকার মালিবাগ এবং নেপথ্য ষড়যন্ত্র (!)

লিখেছেন লিখেছেন রফিকুল ইসলাম ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:২৫:৫৬ রাত

হায়রে মিডিয়ার কারসাজি!এ কেমন প্রতারণা সাধারণ মানুষের সাথে। আওয়ামী ও বামদের রাজনীতেকে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে জনগনের উত্তাল বলে। শাহবাগে গতকালের মহাসমাবেশের সভাপতি ও চরমপত্র পাঠকারী ব্লগার ইমরান কট্টর আওয়ামী লীগ সমর্থক। তিনি পেশায় চিকিৎসক এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা। শুধু তাই নয়, ইমরান তার ফেসবুকে https://www.facebook.com/dr.imran.bd সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে রাজাকার অভিহিত করে সংসদ ভবন সংলগ্ন জিয়া উদ্যানে অবস্থিত শহীদ জিয়ার মাজার নিয়েও কটাক্ষপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। ব্লগ ও ফেসবুকে ইমরানের যাবতীয় লেখা ও স্ট্যাটাসে আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং বিএনপি-জামায়াতের বিষোদাগারে পূর্ণ। শাহবাগের এ তারুণ্যের স্রোত ও সমাবেশে কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের বক্তব্য দেয়ারই কথা ছিল না। অথচ এ ব্যাপক মহাসমাবেশে বক্তব্য দেয় ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ। সঞ্চালনায় ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের একজন কর্মীকে দেখা গেলেও তার আশপাশে মঞ্চজুড়ে ও সামনে ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দলীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন-ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দীকী নাজমুল আলম, মহাজোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, মহাজোটের শরিক জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি হোসাইন আমহদ তাফসীর, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি প্রবীর রায় প্রমুখ। আর মঞ্চের সামনে বিশাল জায়গা দখল করে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর উত্তর-দক্ষিণের শত শত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিটিভি এটিকে লাইভ দেখাচ্ছে। দেশের হাজার হাজার শিক্ষক ন্যায্য দাবী নিয়ে যখন রাস্তায় নেমে এসে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছে তখন বিটিভি লাইভতো দুরে থাক নিউজ পর্যন্ত করেনি। একেই বলে নির্লিপ্ততা। ইতিহাস সাক্ষী তাহারির স্কয়্যারসহ এ যাবত সকল স্কয়্যারই সংঘঠিত হয়েছে সরকারের জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে। অথচ এখানে তার উল্টো। সরকার ও সরকারের সহযোগীদের দিয়ে অন্তত মালিবাগ স্কয়্যার বানানো লোমহর্ষক ও তামাসা ছাড়া আর কিছুই হবে না।

নির্বাচনকে সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু, পদ্মাসেতু দূর্নীতি, সোনালী ব্যাংক/হলমার্ক দূর্নীতি, পিলখানা হত্যাকান্ড, শেয়ারমার্কেট দূর্নীতি, ছাত্রলীগের নৃসংস বরবরতা (সীমাহীন চাঁদাবাজী, অস্ত্রবাজী, টেন্ডারবাজী, খুন, ধর্ষন, শিক্ষক পেটানো) দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, প্রতিনিয়ত তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সর্বোপরি সরকারের প্রতি জনগনের অনাস্থা; এই বিষয়গুলিতে আড়াল করার জন্যই মূলত আওয়ামী ও বামরা মিলে শাহবাগ স্ক্য়ার বানিয়েছে আর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দলীয় মিডিয়াগুলি তিলকে তাল বানিয়ে জনতার উত্তাল বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সবরে উপরে একজন আছেন। আওয়ামীলীগ যা চাইবে তেমনটিই হবে এটি আর বোধ হয় হবে না। ট্রাইবুনালে ন্যায় বিচারতো নিশ্চিত করতেই হবে পাশাপাশি আওয়ামীলীগের মধ্যে যে সব মন্ত্রী এমপি ও নেতা কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতা বিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিলেন তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুধু তাইই নয় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রক্ষী বাহিনী দিয়ে ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা, সিরাজ শিকদার হত্যা, ২৮ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ এবং এখনো অবদি যে সমস্ত হত্যা, খুন, গুম, ধর্ষন, লুন্ঠন সংঘঠিত হচ্ছে সবগুলিই মানবতা বিরোধী অপরাধ এবং এর বিচার হতেই হবে।

শাহবাগকে কেন্দ্র করে বাম রাজনীতির তল্পিবাহক সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ, কায়সার, মুন্নিসাহা, নুরুল কবির, জরুরী অবস্থায় পিটুনি খাওয়া ড. আনোয়ার, সম আরেফিন সিদ্দিকী যে বিষোদাগার ও নিজেরমত করে আইনী ব্যাখ্যা প্রদান করছেন তাতে কোর্টের আইনজীবি ও বিচারকদের লজ্জা পাবার কথা। আমার প্রশ্ন আইন বিষয়ে যদি তারা এতই পান্ডিত্য লাভ করে থাকেন তবে কেন কোর্টে গিয়ে আইনী পেশায় নিয়োজিত হচ্ছেন না।

নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবি দাবী করে কিছু ব্যক্তি প্রায়শ:ই টিভি টকশোতে অংশ নেন। এমনি ভাব করেন যেন তারাই সবকিছু জানেন। বাকীরা কিছুই বোঝে না। পরশুদিন একটি চ্যানেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের আওয়ামীপন্থি এক শিক্ষক বললেন নূরেনবাগ ট্রায়ালে আসামীদের আপিল করার সুযোগ নেই। এদিক থেকে আমাদের ট্রাইব্যুনাল কতটা ট্রান্সপারেন্সি যে, আসামীকে আপিলের সুযোগ দিয়েছে। কত সালে নুরেনবাগ ট্রায়াল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এটি তিনি বলেননি কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে একটু বলতে চাই নূরেনবাগ ট্রায়াল প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৪৫ সালে যেটি কিনা যুদ্ধের পরের বছর। সুতরাং যুদ্ধের পর পরই যুদ্ধাপরাধীদের চিনতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না এবং এ ব্যাপারে দেশের জনগন সকলেই একমত। তা ছাড়া সেই ট্রায়ালে যুদ্ধপরাধ বিচারে কোন বিতর্ক্ও সৃষ্টি হয়নি।এ ক্ষেত্রে আরো বলা যায় ১৯৪৫ সালের সভ্যতা আর এখনকার সভ্যতা এক নয়। ১৯৪৫ সালে যদি কোন জাতি অসভ্যতা তথা উলঙ্গ জীবন যাপন করে তবে ২০১৩ সালে এসে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবি দাবীদাররা কি পোষাক আশাক ছেড়ে উলঙ্গ জীবন যাপন করবেন। সেটি নিশ্চয়ই কেউ চাইবেন না। সুতরাং সময় ও সভ্যতার বিবর্তনে সব কিছুকেই খাপ-খাওয়াতে হবে বর্তমানের সাথে, হতে হবে যুগপযোগী ও ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসৃত।

এখানে আরো উল্লেখ করতে হবে যে, ১৯৫ জন প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য প্রনীত ১৯৭৩ সালের কলেবরেট এ্যাক্ট আইন। কিন্তু কথা হচ্ছে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে ৪২ বছর পর এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে যার ভিকটিম হচ্ছে আওয়ামী প্রতিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ বিষয়টিইতো পুরো অসচ্ছ। যতদুর জানা যায়, প্রনীত আইনের দ্বারা পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের বিচার করা যাবে পূর্বের ঘটনার নয়। তা ছাড়া ১১ হাজার রাজাকারকে জেল হাজতে আটক করা হয়েছিল সেই তালিকায়ও বর্তমান আটক নেতাদের নাম ছিল না কিংবা তৎকালীন সময়ে তারা জেলেও ছিল না। আর বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে মিডিয়াতে দিন তারিখ ঠিক করে আওয়ামী মন্ত্রীরা বলেছেন আটককৃতদের ফাঁসিতে ঝুলানো হবে। সুতরাং এ কারণেই দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে এই বিচার প্রক্রিয়া অসচ্ছ, বিতর্কিত, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার হাতিয়ার এবং আন্তর্জাতিক অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যমগুলিও তাই বলছে।

বিষয়: বিবিধ

১১৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File